শাওয়াল ১৪৪৪   ||   মে ২০২৩

সফল জীবনের এক কুরআনী মূলনীতি
তারা অনর্থক বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে

মুহাম্মাদ এনামুল হাসান

দুনিয়া পরীক্ষাগার। দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষাকাল মাত্র। পরীক্ষার সময় যেমন হয়ে থাকে সংক্ষিপ্ত, তেমনি দুনিয়ার জীবনও সংক্ষিপ্ত। অপরদিকে দুনিয়ায় একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ করণীয় কাজের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তার করণীয় কাজের তালিকায় ইবাদত ছাড়াও আছে, বান্দার হক আদায় করা, লেনদেন পরিষ্কার রাখা, সৎ গুণাবলি অর্জন করা এবং মন্দ কাজ থেকে নিজকে দূরে রাখা, সৎ কাজের আদেশ করা, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ইত্যাদি। যদি সে সংক্ষিপ্ত সময়ের ভেতর জীবিকা উপার্জনের পাশাপাশি এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ যথাযথভাবে আদায় করতে চায়, তাহলে তাকে অনর্থক বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে হবে। নিজের দামী সময়গুলোকে মেপে মেপে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করতে হবে। কুরআন মাজীদের সূরা মুমিনূনের ৩নং আয়াতটিতে আল্লাহ সে কথাই বলেছেন

وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ.

যারা অনর্থক বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে (তারা সফল মুমিন)।

এই আয়াতে আল্লাহ জানিয়েছেন, সফল মুমিনগণ কীভাবে দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করেন। সফল মুমিনগণের একটি গুণ হল, তারা অনর্থক বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখেন। নিজেরা অনর্থক বিষয়ে লিপ্ত হওয়া তো দূরের কথা, অন্যেরা যখন তাদেরকে অনর্থক বিষয়ে জড়াতে চায় তখনও তারা মুখ ফিরিয়ে রাখেন।

অনর্থক বিষয় বলা হয়এমন সকল কথা ও কাজকে, যা দুনিয়ায় বা আখেরাতে কোনো কাজে আসে না। বলা বাহুল্য, যারা অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকেন, তাদের পক্ষে তো ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না। তারা যখন অনর্থক কাজ থেকেই দূরে থাকেন তখন তো পাপ কাজ থেকে আরো বেশি দূরে থাকবেন।

এ বিষয়টি কুরআন মাজীদের আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো পরিষ্কারভাবে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

وَ الَّذِيْنَ لَا يَشْهَدُوْنَ الزُّوْرَ  وَ اِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا.

এবং (রহমানের বান্দা তারা) যারা অন্যায় কাজে শামিল হয় না এবং যখন কোনও বেহুদা (অনর্থক) কার্যকলাপের কাছ দিয়ে যায়, তখন আত্মসম্মান বাঁচিয়ে পাশ কাটিয়ে যায়। সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২

এ যেন ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে একজন ভদ্র মানুষের নাম চেপে সতর্ক পদক্ষেপে চলে যাওয়ার মত। ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে একজন ভদ্র মানুষ খুব সাবধানে পার হন। নাকে রুমাল চেপে ধরেন। অতিক্রমের সময় অতি সাবধানে পা ফেলেন, যেন ময়লার কোনো ছিটা জামা কাপড়ে লাগতে না পারে। ঠিক সফল মুমিনগণ দুনিয়ার জীবনে এভাবে  পাপ থেকে দূরে থাকেন এবং অনর্থক বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে চলে যান। দুনিয়ার জীবন অতিক্রমকালে দুনিয়ার জীবনের নাপাকি ও ময়লাগুলো জীবনে লাগতে না পারে সেজন্য সদা সতর্ক থাকেন। কখনো লেগে গেলে তওবার সাবান দিয়ে এবং নেক আমলের সুগন্ধি দিয়ে জীবনটা আবার সতেজ করতে বিলম্ব করেন না।

বর্তমানে অনর্থক কাজে যুক্ত হওয়ার অন্যতম প্রধাম মাধ্যম হচ্ছে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, পত্রপত্রিকা, সামাজিক মাধ্যম। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় বিশেষভাবে সফল জীবনের এই মূলনীতি মনে রাখতে হবে। যত চিত্তাকর্ষক শিরোনামই হোক, যত চোখ ধাঁধানো ছবিই ডাকতে থাকুক, একজন সচেতন মুমিন তাতে সাড়া দেওয়ার আগে বারবার ভাববেন এটা আমার দুনিয়া-আখেরাতে কী কাজে আসবে? একজন মুমিন সর্বাবস্থায় তার নজরের হেফাজত করবেন।

সত্যি বলতে কী, অনর্থক বিষয়গুলো সত্যিকারের মুমিনদের জন্য একটা আযাবের মতো। যারা স্বচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী মুমিন, তারা অন্যের অনর্থক কথা ও কাজের কারণেও অনেক সময় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। যত মিষ্টিসুরেরই হোক, গানবাদ্য তাদের কাছে আযাবের মতো মনে হয়।

জান্নাত এসব অনর্থক-অসার কাজ থেকে মুক্ত থাকবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

لَّا تَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةً.

সেখানে তারা কোনো নিরর্থক কথা শুনবে না। সূরা গাশিয়া (৮৮) : ১১

لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّ لَا تَاْثِيْمًا، اِلَّا قِيْلًا سَلٰمًا سَلٰمًا.

তারা সে জান্নাতে শুনবে না কোনো অহেতুক কথা এবং না কোনো পাপের কথা। সূরা ওয়াকিয়া (৫৬) : ২৫-২৬

দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষার জায়গা, তাই এখানে অনর্থক বিষয় কিছু থাকবেই। সফল মুমিনের কাজ হল, অনর্থক বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা। আল্লাহ আমাদেরকে আমলের তাওফীক দান করুন আমীন।

 

 

advertisement