জুমাদাল আখিরাহ ১৪২৮   ||   জুলাই ২০০৭

নিজের সঙ্গে সংলাপ
আত্মশুদ্ধির পূর্বশর্ত আত্মোপলব্ধি

মুহাম্মাদ মাহফুজুল হক

তোমার জামার পকেটে অথবা টাকার থলিতে, ব্যাংকে কিংবা গোপন একাউন্টে ও অতি সংগোপনে অর্জিত অর্থকে গচ্ছিত করে ভাবছো তা তোমারই। দিনরাত খেটে বিশ্বের তাবৎ নামী দামী সামগ্রী দিয়ে গৃহনির্মাণ করে তাতে অবস্থান করে ভাবছো তা বুঝি তোমারই। দামী গাড়ী খরিদ করে দামী অলংকার, দামী পোশাক পরিধান করে ভাবছো তা বুঝি তোমারই, একান্তই তোমারই। অনেক অর্থের বিনিয়োগ করে তার সঙ্গে সুদের উপর ভিত্তি করে ব্যাংক-ঋণ নিয়ে শিল্প-প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে আত্মতৃপ্তি নিয়ে ভাবছো তা বুঝি তোমারই। একান্তই তোমার। কিন্তু একটি বার ভেবে দেখ এ সকল কিছু বহন করাকালীন অর্থাৎ আইন এবং যুক্তি মোতাবেক তা তোমার আয়ত্ত্বাধীন থাকা অবস্থাতেই যদি তোমার মৃত্যু ঘটে যায় তবে তা আর তোমার থাকছে না। তোমার মৃত্যুর অব্যবহিত পরই তা হস্তগত হবে তোমারই কোনো ওয়ারিশের অথবা ব্যাংকের অথবা হবে তোমার ব্যবসায়িক অংশীদারের নতুবা সরকারের। এমন কোনো ব্যবস্থাই নেই যে, তাতে এগুলো তোমার সাথে তোমার কবরে যাবে। অথবা তার বিনিময়ে কবরে অথবা কবর পরবর্তী জীবনে কোনো লাভ অর্জিত হবে।

অতিব্যস্ত থেকে হয়তো বা নামায পরিহার করে অথবা মিথ্যা বলে ঘুষ কিংবা সুদের ভিত্তিতে এ ধন-সম্পদ অর্জিত হয়েছে। অর্জনকারী তুমি, তাই এ অর্জনের সকল দায়ভার তোমাকেই বহন করতে হবে। তোমার এই অর্জনের যারা ফল ভোগ করবে তোমার সেই অতি প্রিয় অতি আদরের পরিবার-পরিজন এই উপার্জন প্রক্রিয়ার  কোনো দায় দায়িত্বই বহন করবে না। তোমার জীবদ্দশায় অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তোমার মৃত্যুর পর তা তাদের জন্য পুরাটাই বৈধ। তাদের জন্য বৈধ এ কারণেই যে তুমি এই অবৈধ উপার্জন করেছ নিতান্ত সংগোপনে। অপর পক্ষে তারাও যদি তোমার সহযোগী হয়, হারাম উপার্জনের হয় মদদাতা, সমর্থনকারী তাহলে তো তাদের জন্যও অবৈধ। তাই প্রশ্ন, এই যদি হয় বাস্তবতা তবে আর নয় ভুল করা, শুধরে যাওয়াই শ্রেয়।

ধরে নেওয়া যাক উর্পাজনটা সঠিক ছিল তাতে কি? সে বৈধ উপার্জন যদি শুধুই মজুদ থাকে ব্যাংকে কিংবা ব্যবহৃত হয় উন্নত খাবার-দাবার, পোশাক-অলংকারাদি ক্রয়ে তাহলে শুধু ফায়দা হবে পৃথিবীর জীবনে, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব বাহবা দেবে, সমাজে নাম প্রতিপত্তি হবে, আর মৃত্যু সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই সকল সম্পদের মলিকানা চলে যাবে অন্য জনের কাছে।

এর অর্থ এই নয় যে, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে বৈরাগ্য বেশ ধারণ করতে হবে। ইসলাম ধর্ম বিধানে বৈরাগ্যের কোনো স্থান নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠিত কর আর সালাতের পর জমীনে ছড়িয়ে পড় হালাল জীবিকার সন্ধানে।

যে অর্থ সকল অনর্থের মূল সেই অর্থই হতে পারে ব্যক্তির পার্থিব জীবনের সুখের এবং জান্নাত যাবার বাহন। চালক যদি গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন না করে নিজের গাড়িটিকে পরিচালিত করে তবে মহান রবের দয়ায় সে নিরাপদ পৌছে যাবে গন্তব্যে। ঠিক তেমনি হালাল পথে উপার্জনে সচেষ্ট হতে হবে। হালাল উপার্জনকে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে ব্যয় করতে হবে। নিজের পরিবারের একান্ত যৌক্তিক প্রয়োজনেও ব্যয় হবে।

কিছু সঞ্চয় থাকতেই পারে। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হোক মানবতার কল্যাণে, দরিদ্রকে সাহায্য সহযোগিতা করায়, দ্বীনী শিক্ষা প্রচার প্রসারে। মহান রব পবিত্র কালামে পাকে আহবান করেছেন, কে আছ যে আমাকে উত্তম কর্জ দেবে? আসুন সেই কাতারে শামিল হই। দান করা চাই মৃত্যু আসবার আগেই আর সেটাই আল্লাহর আদেশ।

 

 

advertisement