জুমাদাল আখিরাহ ১৪২৮   ||   জুলাই ২০০৭

সালমান রুশদীর নাইট খেতাব
পাশ্চাত্যের অভদ্রতা ও অন্তর্জ্বালার আরেকটি দৃষ্টান্ত

মেরুদণ্ডহীন লেখক সালমান রুশদীকে নাইট খেতাব দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ জুন শনিবার বৃটিশ সরকার তাকে এই খেতাবটি প্রদান করে। এতে রুশদীর প্রাপ্তি এই হল যে, এখন থেকে তার নামের মাথায় একটি যুক্ত হবে এবং মেরুদণ্ডহীনতার এই মুকুটটি মস্তকে ধারণ করেই তাকে বিচরণ করতে হবে। আর বৃটিশ সরকারের প্রাপ্তি এই হল যে, তারা তাদের মুসলিম-বিদ্বেষের আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল এবং ভদ্রতা ও শিষ্টতার যে মুখোশ তারা সর্বদা মুখে এঁটে রাখে তা-ও অনেকখানি আলগা হয়ে গেল।  তাদের একাজটি পৃথিবীর ভদ্র ও চিন্তাশীল মানুষদের বিরক্ত করেছে।

এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর স্বভাবতই মুসলিম জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিক্ষোভের সংবাদ মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সর্বসম্মতভাবে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেছে এবং গোটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ একে একটি উসকানীমূলক কাজ বলে অভিহিত করেছেন। ১৫০ কোটি মুসলিমের পবিত্র অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা এ আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন যে, বৃটিশ মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো একটি ছুতা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেও এ কাজটি করা হয়ে থাকতে পারে। বৃটেনের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে এ আশঙ্কা আরো জোড়ালো হয়।

বর্তমান সময়ে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগৎ বহু কিছু দ্বারা কলুষিত। মিথ্যা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং ঘৃণা ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার এক সুবেশী মাধ্যম হিসেবেই তা আজকাল পরিচিত হতে আরম্ভ করেছে। একসময় সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিল সমাজ-বিপ্লবের হাতিয়ার, কিন্তু ক্রমেই তা চাটুকারিতা ও স্বার্থসিদ্ধির উপায় হিসেবে এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি ও ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমরূপে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সাহিত্যের এহেন ব্যবহার কখনো কাম্য নয়।

ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের জন্য সাহিত্যের ব্যবহার এ সময়ের একটি ট্রাজেডি। এ সৃজনশীলতার ইতিহাসে এটি একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে এ পথের যারা পথিকৃত ও পান্থ, মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষক, ইতিহাস তাদেরকেও ধিক্কারের সঙ্গে স্মরণ করবে।

রুশদী তার সাহিত্য ও সৃজনশীলতার জন্য এই খেতাব পেল এমন ভাবার কোনোই কারণ নেই। গোটা বিশ্বে রুশদীর পরিচিতি তার সৃষ্টিশীল প্রতিভার কারণে নয়; বরং মুসলিম জাহানের ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করার কারণে। স্যাটানিক ভার্সেসের কুখ্যাত লেখক হিসেবেই মানুষ তাকে চেনে।

এহেন রুশদীকে খেতাব প্রদানে বৃটিশ সরকারের কী লাভ তা আমাদের বোধগম্য নয়। বরং এতে করে বিশ্বের শান্তিকামী ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষের কাছে তাদের ভাবমূর্তি আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হল। পরাজিত ক্রুসেডারদের প্রেতাত্মা যে এখনো তাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং ইসলাম ও ইসলামের নবী সম্পর্কে তারা যে এখনো অন্তর্জ্বালায় ভোগে এগুলো হল তারই দৃষ্টান্ত। অবশ্য বৃটিশ সরকারের হীনম্মন্যতা ও ইসলাম বিদ্বেষের আরো কিছু দৃষ্টান্ত বিশ্ববাসী এর আগেও লক্ষ করেছে। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল, আফগানিস্তান, ইরাক প্রভৃতি মুসলিম দেশগুলোতে সামরিক আগ্রাসনের সময় তাদের নতজানু নীতি। এসময় মার্কিনীদের একান্ত অনুগতরূপে বৃটিশ সরকারের অবস্থান তাদের ভাবমূর্তিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। খোদ বৃটেনেই প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ সইতে হয়েছিল। আমরা মনে করি, রুশদীর মতো মেরুদ-হীন লেখককে নাইট খেতাব দেওয়ার মধ্য দিয়ে বৃটিশ সরকার এরকম আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

বৃটেনের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। দি টেলিগ্রাফ একে অযৌক্তিক অবিচার বলে আখ্যায়িত করেছে। মুসলিম জাতির আবহমান কালের ঐতিহ্য অনুসারে আমরা শান্তি, ভদ্রতা ও সংযমের পক্ষে। কোনো ধরনের অশিষ্ট আচরণ ও উসকানীমূলক কর্মকা-কে আমরা সমর্থন করি না।

আমরা বৃটিশ সরকারের এই অশিষ্ট আচরণের জোর প্রতিবাদ জানাই এবং আশা করি, আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারও দেশের মুসলিম জনগণের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কুটনৈতিক পর্যায়ে এর দৃঢ় প্রতিবাদ জানাবেন এবং বৃটেনের মুসলিম জনগণ যাতে কোনোরূপ ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে নিগৃহীত না হন সে জন্য তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করবেন।

 

 

advertisement