শাবান-রমযান ১৪৪৪   ||   মার্চ-এপ্রিল ২০২৩

রাব্বুল আলামীনের গুণ-পরিচয়

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মাজীদ

মহামহিম আল্লাহ তাআলাই হলেন আমাদের সকলের এবং সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রকৃত রব ও প্রকৃত ইলাহ; একমাত্র রব এবং একমাত্র ইলাহ। তিনি ছাড়া আর কোনো রব নেই এবং আর কোনো ইলাহ নেই। দ্বীনুল ইসলামের চিরসত্য ও শাশ্বত বাণী হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ কোনো ইলাহ বা ইবাদত লাভের যোগ্য কোনো সত্তা নেই, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। এই কালিমার মর্মকে যারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এবং স্বীকার করে কেবল তারাই তাওহীদে বিশ্বাসী মুমিনরূপে গণ্য হয়।

তাই শুধু সৃষ্টিকর্তারূপে কোনো এক অজ্ঞাত সত্তাকে বিশ্বাস করা যথেষ্ট নয়। শুধু এতটুকু বিশ্বাসের দ্বারা কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না; বরং আল্লাহ তাআলাই যে সমগ্র বিশ্বজগতের একমাত্র রব এবং একমাত্র সত্য ইলাহ তা জানা ও বিশ্বাস করা জরুরি। সুতরাং একজন ঈমানদারের জন্য জরুরি হল, আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাত ও ইলাহিয়্যাতের তাওহীদ ও একত্ব সম্বন্ধে জানা, যেসব সিফাত ও গুণাবলি রুবুবিয়্যাত ও ইলাহিয়্যাতের ভিত্তি সেগুলোর পরিচয় জানা, রুবুবিয়্যাত ও ইলাহিয়্যাতের অনিবার্য দাবিগুলো সম্বন্ধে জানা এবং রুবুবিয়্যাত ও ইলাহিয়্যাতের আকীদার পরিপন্থী ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা এবং ভ্রান্ত কর্মকাণ্ডগুলো সম্বন্ধে জানা ও সচেতন হওয়া।

ইলাহী গুণাবলির পরিচয় জানার সুফল ও প্রভাব

১. বস্তুত ইলাহী গুণাবলি সম্পর্কে জানার মাধ্যমেই বান্দা তার রবের পরিচয় লাভ করে এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করে। রব ও আবদের মাঝে বিরাজমান সম্পর্কের যথার্থ পরিচয় পেতে হলে সর্বাগ্রে আমাদেরকে আল্লাহর সিফাত ও গুণাবলির একটা নিখুঁত ধারণা অবশ্যই অর্জন করতে হবে। কেননা সিফাত ও গুণাবলিই হচ্ছে বিরাজমান সকল সম্পর্কের উৎস।

২. মহামহিম আল্লাহর গুণাবলিই হল বান্দার হৃদয়ে ভক্তি ও ভালবাসার এবং আবেগ ও অনুভূতির উৎস। গুণাবলির প্রতি দৃঢ় ঈমান ও বিশ্বাসই বান্দার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয়-ভীতি, আশা-প্রত্যাশা, প্রেম ও ভক্তি এবং অনুরাগ ও কৃতজ্ঞতার উন্মেষ ঘটায়। ফলে আল্লাহর শক্তি ও বড়ত্বের সামনে সে অবনত হয়; বিপদে, দুর্যোগে, সমস্যা ও সংকটে তাঁর কাছ কাকুতি-মিনতি করে সাহায্য চায় এবং অভিভূত হৃদয়ে তাঁর বন্দনায় নিমগ্ন হয়।

৩. আল্লাহ তাআলার সিফাত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানই মানুষকে মিথ্যা উপাসনা ও গায়রুল্লাহর আরাধনা থেকে মুক্ত করতে পারে। কুরআন অবতরণের সময় আল্লাহর অস্তিত্বের বিশ্বাস প্রায় সকল জাতি এবং সকল ধর্মেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু তাঁর সিফাত সম্পর্কে সঠিক ধারণা কোথাও ছিল না। এবিষয়ে তখনকার পৃথিবী মারাত্মক বিভ্রান্তির শিকার ছিল। কুরআন মাজীদ নিজের দাওয়াত ও শিক্ষার মাধ্যমে জাতি ও ধর্মসমূহের যেসব সঙ্গীন ভুল-ভ্রান্তির সংশোধন করেছে তার অন্যতম হল খোদায়ী সিফাত ও গুণাবলি বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা। তাই আল্লাহ তাআলার গুণাবলি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।

এজন্যই সকল আসমানী ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থে সর্বাগ্রে সিফাত ও গুণকেই মানুষের কাছে তুলে ধরার উপর অধিক জোর দিয়েছে। অতঃপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ইবাদত-বন্দেগী ও পারস্পরিক লেনদেনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহর প্রেরিত প্রত্যেক নবী তাঁর জাতিকে আল্লাহর সিফাত ও গুণ, কামাল ও পূর্ণতা এবং তাকদীস ও পবিত্রতা সম্পর্কে সহীহ ইলম ও মারিফাত তথা নিভুর্ল শিক্ষাই দিয়েছেন সর্বপ্রথম। মানব জাতির জন্য প্রেরিত আল্লাহর সর্বশেষ ও চিরন্তন পয়গাম আলকুরআনের প্রতিটি ছত্র এ কথার সত্যতার প্রমাণ বহন করছে। বিভিন্ন আঙ্গিকে ও পরিবর্তিত ভঙ্গিতে এই একই বিষয় বারবার উপস্থাপিত হয়েছে সেখানে; বরং বলা চলে এটাই হচ্ছে আলকুরআনের বুনিয়াদী বিষয়।

ইলাহী গুণাবলি সম্পর্কে জানার উৎস

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অস্তিÍত্ব ও একত্ব এবং তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে জানার প্রথম উৎস ও মাধ্যম হল, তাঁর সৃষ্টিকর্ম পর্যবেক্ষণ করা অর্থাৎ এই সৃষ্টিজগৎ, যার পরতে পরতে তাঁর রুবুবিয়্যাত ও একত্বের নিদর্শনাবলি ছড়িয়ে রয়েছে, সে সম্পর্কে বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা চিন্তা-ভাবনা করা।

দ্বিতীয় মাধ্যম হল, তাঁর প্রেরিত নবী ও রাসূলের উপর অবতীর্ণ ওহী। যেসব সিফাত ও গুণাবলি এই উভয় মাধ্যমে প্রমাণিত তাকে ইলমুল আকায়েদের বিশেষজ্ঞ আলেমদের পরিভাষায় সিফাতে আকলিয়্যাহ বলা হয় অর্থাৎ এসব সিফাত আকল ও বুদ্ধি দ্বারা প্রমাণ করা ও অনুধাবন করা সম্ভব।

স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই তাঁর রুবুবিয়্যাত তথা প্রভুত্ব ও প্রতিপালকত্বের পরিচয় জানার জন্য এবং একত্বের প্রমাণ জানার জন্য বারংবার সৃষ্টিজগতের নিদর্শনাবলি পর্যবেক্ষণ করার আদেশ করেছেন। তিনি নিজেই কুরআন মাজীদে তাঁর রুবুবিয়্যাত ও তাওহীদের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন নিদর্শন বর্ণনা করেছেন এবং বিভিন্ন ধরনের যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এখানে উদাহরণস্বরূপ কুরআন মাজীদ থেকে কিছু আয়াত উল্লেখ করছি।

দেখুন, আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি কেমন যৌক্তিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন

اَمْ خُلِقُوْا مِنْ غَیْرِ شَیْءٍ اَمْ هُمُ الْخٰلِقُوْنَ، اَمْ خَلَقُوا السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ بَلْ لَّا یُوْقِنُوْنَ.

তারা কি কারও ছাড়া আপনাআপনিই সৃষ্টি হয়ে গেছে, না কি তারাই (নিজেদের) স্রষ্টা? না কি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী তারা সৃষ্টি করেছে? না; বরং (মূল কথা হচ্ছে) তারা বিশ্বাসই রাখে না। সূরা তূর (৫২) : ৩৫-৩৬

আল্লাহ তাআলা বলেন

اَفَلَمْ یَنْظُرُوْۤا اِلَی السَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَیْفَ بَنَیْنٰهَا وَ زَیَّنّٰهَا وَ مَا لَهَا مِنْ فُرُوْجٍ،وَ الْاَرْضَ مَدَدْنٰهَا وَ اَلْقَیْنَا فِیْهَا رَوَاسِیَ وَ اَنْۢبَتْنَا فِیْهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍۭ بَهِیْجٍ،تَبْصِرَةً وَّ ذِكْرٰی لِكُلِّ عَبْدٍ مُّنِیْبٍ،وَ نَزَّلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبٰرَكًا فَاَنْۢبَتْنَا بِهٖ جَنّٰتٍ وَّ حَبِّ الْحَصِیْدِ،وَ النَّخْلَ بٰسِقٰتٍ لَّهَا طَلْعٌ نَّضِیْدٌ،رِّزْقًا لِّلْعِبَادِ وَ اَحْیَیْنَا بِهٖ بَلْدَةً مَّیْتًا كَذٰلِكَ الْخُرُوْجُ.

তবে কি তারা তাদের উপর দিকে আকাশমণ্ডলীকে দেখেনি যে, আমি তাকে কিভাবে নির্মাণ করেছি, তাকে শোভা দান করেছি এবং তাতে কোনও রকমের ফাটল নেই? আর ভূমিকে আমি বিস্তার করে দিয়েছি, তাতে স্থাপিত করেছি পর্বতমালার নোঙ্গর। আর তাতে সব রকম নয়নাভিরাম বস্তু উদগত করেছি যাতে তা হয় আল্লাহঅভিমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য জ্ঞানবত্তা ও উপদেশস্বরূপ। আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করেছি বরকতপূর্ণ পানি তারপর তার মাধ্যমে উদগত করেছি উদ্যানরাজি ও এমন শস্য, যা কাটা হয়ে থাকে। এবং উঁচু-উঁচু খেজুর গাছ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ দানা, বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ। এবং (এমনিভাবে) আমি সেই পানি দ্বারা এক মৃত নগরকে সঞ্জীবিত করেছি। এভাবেই হবে (কবর থেকে মানুষের) উত্থান। সূরা ক্বফ (৫০) ৬-১১

আল্লাহ তাআলা বলেন

اَوَ لَمْ یَرَوْا كَیْفَ یُبْدِئُ اللهُ الْخَلْقَ ثُمَّ یُعِیْدُهٗ  اِنَّ ذٰلِكَ عَلَی اللهِ یَسِیْرٌ،قُلْ سِیْرُوْا فِی الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَیْفَ بَدَاَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ یُنْشِئُ النَّشْاَةَ الْاٰخِرَةَ  اِنَّ اللهَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ.

তবে কি তারা লক্ষ করেনি, আল্লাহ কিভাবে মাখলুককে প্রথমবার সৃষ্টি করেন? অতঃপর তিনিই তাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আল্লাহর পক্ষে এ কাজ অতি সহজ। বল, পৃথিবীতে একটু ভ্রমণ করে দেখ, আল্লাহ কিভাবে মাখলুককে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। তারপর আল্লাহই (তাদেরকে) আখেরাতকালীন উত্থানে উত্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। সূরা আনকাবুত (২৯) : ১৯

আল্লাহ তাআলা বলেন

اَوَ لَمْ یَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَیْدِیْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مٰلِكُوْنَ، وَ ذَلَّلْنٰهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَ مِنْهَا یَاْكُلُوْنَ، وَ لَهُمْ فِیْهَا مَنَافِعُ وَ مَشَارِبُ  اَفَلَا یَشْكُرُوْنَ.

তারা কি দেখেনি যে, আমি নিজ হাতে সৃষ্ট বস্তুরাজির মধ্যে তাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তারাই তার মালিক হয়ে গেছে? আমি সে জন্তুগুলিকে তাদের বশীভূত করে দিয়েছি। সুতরাং সেগুলোর কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা আহার করে। এবং তাদের জন্যে এর মধ্যে আছে আরও বহু উপকারিতা এবং আছে পানীয় বস্তু। তথাপি কি তারা শোকর আদায় করবে না? সূরা ইয়াসিন (৩৬) : ৭১-৭৩

আল্লাহ তাআলা বলেন

اَوَ لَمْ یَرَوْا اِلَی الطَّیْرِ فَوْقَهُمْ صٰٓفّٰتٍ وَّ یَقْبِضْنَ مَا یُمْسِكُهُنَّ اِلَّا الرَّحْمٰنُ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَیْءٍۭ بَصِیْرٌ.

তারা কি তাদের উপর দিকে তাকিয়ে পাখিদেরকে দেখে না, যারা পাখা ছড়িয়ে দেয় আবার তা গুটিয়েও নেয়? দয়াময় (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কেউ তাদেরকে স্থির রাখেন না। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু পরিপূর্ণরূপে দেখেন। সূরা মুলক (৬৭) : ১৯

আল্লাহ তাআলা বলেন

وَ لِلّهِ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ اللهُ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ،اِنَّ فِیْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ اخْتِلَافِ الَّیْلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الْاَلْبَابِ،الَّذِیْنَ یَذْكُرُوْنَ اللهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوْدًا وَّ عَلٰی جُنُوْبِهِمْ وَ یَتَفَكَّرُوْنَ فِیْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًا  سُبْحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.

আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব কেবল আল্লাহরই। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃজনে ও রাত-দিনের পালাক্রমে আগমনে বহু নিদর্শন আছে ওই সকল বুদ্ধিমানদের জন্য যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে (এবং তা লক্ষ্য করে বলে ওঠে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এসব উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। আপনি (এমন ফজুল কাজ থেকে) পবিত্র। সুতরাং আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। সূরা আলেইমরান (৩) : ১৮৯-১৯১

এমনিভাবে আমরা দেখতে পাই, পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণও তাওহীদের আকীদার প্রতি দাওয়াত দেয়ার সময় সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন নিদর্শন এবং বুদ্ধিগম্য যৌক্তিক প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছেন; সেকথা কুরআন মাজীদের বহু আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এখানে আমরা উদাহরণস্বরূপ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করছি।

আল্লাহ তাআলা বলেন

اَلَمْ تَرَ اِلَی الَّذِیْ حَآجَّ اِبْرٰهٖمَ فِیْ رَبِّهٖۤ اَنْ اٰتٰىهُ اللهُ الْمُلْكَ  اِذْ قَالَ اِبْرٰهٖمُ رَبِّیَ الَّذِیْ یُحْیٖ وَ یُمِیْتُ  قَالَ اَنَا اُحْیٖ وَ اُمِیْتُ  قَالَ اِبْرٰهٖمُ فَاِنَّ اللهَ یَاْتِیْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَاْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِیْ كَفَرَ وَ اللهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الظّٰلِمِیْنَ.

তুমি কি সেই ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করেছ, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপাল সম্পর্কে ইবরাহীমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইবরাহীম বলল, আমার প্রতিপালক তিনিই, যিনি জীবনও দান করেন  এবং  মৃত্যুও! তখন  সে  বলতে লাগল, আমিও জীবন দেই এবং মৃত্যু ঘটাই!

ইবরাহীম বলল, আচ্ছা! তাহলে আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত কর তো!

এ কথায় সে কাফির নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ (এরূপ) জালিমদেরকে হিদায়াত করেন না। সূরা বাকারা (২) : ২৫৮ 

সূরা আনআমে আল্লাহ তাআলা বলেন

وَ اِذْ قَالَ اِبْرٰهِیْمُ لِاَبِیْهِ اٰزَرَ اَتَتَّخِذُ اَصْنَامًا اٰلِهَةً اِنِّیْۤ اَرٰىكَ وَ قَوْمَكَ فِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ، وَ كَذٰلِكَ نُرِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ مَلَكُوْتَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ وَ لِیَكُوْنَ مِنَ الْمُوْقِنِیْنَ،فَلَمَّا جَنَّ عَلَیْهِ الَّیْلُ رَاٰ كَوْكَبًا  قَالَ هٰذَا رَبِّیْ فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَاۤ اُحِبُّ الْاٰفِلِیْنَ، فَلَمَّا رَاَ الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هٰذَا رَبِّیْ ۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَىِٕنْ لَّمْ یَهْدِنِیْ رَبِّیْ لَاَكُوْنَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّآلِّیْنَ، فَلَمَّا رَاَ الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هٰذَا رَبِّیْ هٰذَاۤ اَكْبَرُ  فَلَمَّاۤ اَفَلَتْ قَالَ یٰقَوْمِ اِنِّیْ بَرِیْٓءٌ مِّمَّا تُشْرِكُوْنَ، اِنِّیْ وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِیْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ حَنِیْفًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ، وَ حَآجَّهٗ قَوْمُهٗ قَالَ اَتُحَآجوْٓنِّیْ فِی اللهِ وَ قَدْ هَدٰىنِ  وَ لَاۤ اَخَافُ مَا تُشْرِكُوْنَ بِهٖۤ اِلَّاۤ اَنْ یَّشَآءَ رَبِّیْ شَیْـًٔا وَسِعَ رَبِّیْ كُلَّ شَیْءٍ عِلْمًا اَفَلَا تَتَذَكَّرُوْنَ، وَ كَیْفَ اَخَافُ مَاۤ اَشْرَكْتُمْ وَ لَا تَخَافُوْنَ اَنَّكُمْ اَشْرَكْتُمْ بِاللهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ عَلَیْكُمْ سُلْطٰنًا فَاَیُّ الْفَرِیْقَیْنِ اَحَقُّ بِالْاَمْنِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ،اَلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ لَمْ یَلْبِسُوْۤا اِیْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓىِٕكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَ هُمْ مُّهْتَدُوْنَ،وَ تِلْكَ حُجَّتُنَاۤ اٰتَیْنٰهَاۤ اِبْرٰهِیْمَ عَلٰی قَوْمِهٖ  نَرْفَعُ دَرَجٰتٍ مَّنْ نَّشَآءُ اِنَّ رَبَّكَ حَكِیْمٌ عَلِیْمٌ.

এবং (সেই সময়ের বৃত্তান্ত শোন) যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বলেছিল, আপনি কি মূর্তিদেরকে মাবুদ বানিয়ে নিয়েছেন? আমি তো দেখছি, আপনি ও আপনার সম্প্রদায় স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছেন। আর এভাবেই আমি ইবরাহীমকে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রাজত্ব প্রদর্শন করাই। আর উদ্দেশ্য ছিল, সে যেন পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনকারীদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে যায়। সুতরাং যখন তার উপর রাত ছেয়ে গেল, তখন সে একটি নক্ষত্র দেখে বলল, এই আমার প্রতিপালক। অতঃপর সেটি যখন ডুবে গেল, সে বলল, যা কিছু ডুবে যায় আমি তা পছন্দ করি না। অতঃপর যখন সে চাঁদকে উজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখল তখন বলল, এই আমার রব্ব। কিন্তু যখন সেটিও ডুবে গেল, তখন বলতে লাগল, আমার রব্ব আমাকে হিদায়াত না দিলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্ট লোকদের দলভুক্ত হয়ে যাব। তারপর যখন সে সূর্যকে সমুজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখল, তখন বলল, এই আমার রব্ব। এটি বেশি বড়। তারপর যখন সেটিও ডুবে গেল, তখন সে বলল, হে আমার কওম! তোমরা যে সকল জিনিসকে (আল্লাহর সঙ্গে) শরীক কর, তাদের সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তভুর্ক্ত নই। এবং (তারপর এই ঘটল যে,) তার সম্প্রদায় তার সাথে হুজ্জত শুরু করে দিল। ইবরাহীম (তাদেরকে) বলল, তোমরা কি আল্লাহ সম্পর্কে আমার সঙ্গে হুজ্জত করছ, অথচ তিনি আমাকে হিদায়াত দান করেছেন? তোমরা যে সকল জিনিসকে (আল্লাহর) শরীক সাব্যস্ত করছ, (তারা আমার কোনও ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতা রাখে না। তাই) আমি তাদেরকে ভয় করি না। অবশ্য আমার প্রতিপালক যদি (আমার) কোনও (ক্ষতি সাধন) করতে চান (তবে সর্বাবস্থায়ই তা সাধিত হবে)। আমার প্রতিপালকের জ্ঞান সবকিছু পরিবেষ্টন করে রেখেছে। এতদসত্ত্বেও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তোমরা যে সকল জিনিসকে (আল্লাহর) শরীক বানিয়ে নিয়েছ, আমি কিভাবেই বা তাদেরকে ভয় করতে পারি, যখন তোমরা ওই সকল জিনিসকে আল্লাহর শরীক বানাতে ভয় করছ না, যাদের বিষয়ে তিনি তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি? সুতরাং তোমাদের কাছে যদি কিছু জ্ঞান থাকে, তবে (বল,) দুই দলের মধ্যে কোন দল নির্ভয়ে থাকার বেশি উপযুক্ত? (প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো কেবল তাদেরই অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পৌঁছে গেছে। এটা ছিল আমার ফলপ্রসূ দলীল, যা আমি ইবরাহীমকে তার কওমের বিপরীতে দান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা উচ্চ মর্যাদা দান করি। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। সূরা আনআম (০৬) : ৭৪-৮৩

সারকথা হল, সৃষ্টিজগতের নিদর্শনাবলি সম্পর্কে সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা যৌক্তিক চিন্তা-ভাবনাই হল আল্লাহর পরিচয় লাভের একটি মৌলিক ও প্রাকৃতিক উপায়।

কারণ, এই বিশ্বজগৎ আল্লাহর সৃষ্টিকর্ম, আর যে কোনো কর্মই কর্তার কর্মসংশ্লিষ্ট গুণাবলির সাক্ষী। যে কোনো কারিগরি কারিগরের, যে কোনো নিমার্ণ নির্মাতার এবং যে কোনো শিল্পকর্ম শিল্পীর যোগ্যতা ও প্রতিভার প্রমাণ বহন করে। কোনো কর্ম ঘটানোর জন্য প্রয়োজন হয় কর্মশক্তি, জ্ঞানশক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও প্রাণশক্তির। এসব কর্মসংশ্লিষ্ট গুণাবলি অন্যদের কাছে কর্তার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অন্যসব গুণাবলির চেয়ে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে থাকে। বোঝার জন্য একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি। যদি আমরা কোনো মানুষকে লিখতে, সেলাই করতে অথবা অন্য কোনো মহৎ কাজ করতে দেখি, তবে তার জীবন্ত হওয়া আমাদের কাছে সর্বাধিক স্পষ্ট হবে। এমনিভাবে তার কর্মক্ষমতা থাকা, কর্মজ্ঞান ও কর্মদক্ষতা থাকা এবং কর্মের ইচ্ছা  থাকা আমাদের কাছে তার অন্যান্য বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গুণাবলির তুলনায় অধিক স্পষ্ট হবে। কেননা তার অভ্যন্তরীণ গুণাবলি যেমন, তার প্রবৃত্তি, ক্রোধ, অভ্যন্তরীণ আখলাক ও মানসিকতা, সুস্থতা ও অসুস্থতা ইত্যাদি তো আমরা শুধু তার সেই লেখার কর্ম বা সেলাই কর্ম দেখে বুঝতে পারি না। আর বাহ্যিক গুণাবলির মধ্যে কিছু বিষয় তো আমরা জানতেই পারি না আর কিছু বিষয় সম্পর্কে আমরা সন্দেহে থাকি যেমন, তার দৈর্ঘ্য এবং তার চামড়ার রং ইত্যাদি। কিন্তু তার কর্মক্ষমতা, কর্মেচ্ছা, কর্মজ্ঞান এবং তার জীবিত থাকা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ স্পষ্ট, যদিও বাস্তবে এসব গুণ ও ক্ষমতা সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায় না; বরং আমরা প্রত্যক্ষ করি কেবল তাঁর কর্ম, যা তাঁর উক্ত গুণাবলির প্রভাব ও ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হয়। এভাবে আমরা কর্তার কর্ম দেখে সেই  কর্মের কার্যকারণরূপে বা প্রভাবকরূপে কর্তার কর্মসংশ্লিষ্ট গুণাবলির অস্তিত্ব পরোক্ষভাবে বুঝতে পারি। এর জন্য কর্তাকে সরাসরি দেখার প্রয়োজন নেই; বরং শুধু কর্ম দেখেই কর্তার গুণ ও যোগ্যতার পরিচয় লাভ করা সম্ভব।

তদ্রƒপ এই রহস্যপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগৎকে দেখে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, এর একজন সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালনাকারী রয়েছেন, যিনি অবশ্যই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী, চিরজীবী, ইচ্ছাময়, ও প্রজ্ঞাময় সত্তা। এমনিভাবে জগতের স্থিতি ও শৃঙ্খলা এবং বৈচিত্র্যের মাঝেও যে ঐক্য অর্থাৎ সবকিছু যে একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে সুশৃঙ্খলভাবে চলছে তা প্রমাণ করে, এই জগতের ¯্রষ্টা ও পরিচালক একজনই। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে

لَوْ كَانَ فِیْهِمَاۤ اٰلِهَةٌ اِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحٰنَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا یَصِفُوْنَ.

যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং তারা যা বলছে, আরশের মালিক আল্লাহ তা থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। সূরা আম্বিয়া (২১) ২২

শুধু যুক্তি-বুদ্ধি দ্বারা স্রষ্টার সব গুণ জানা সম্ভব নয়

একটু আগে আমরা আলোচনা করেছি, বিশ্বজগতের সর্বত্র মহান সৃষ্টিকর্তার কারিগরির নিদর্শনাবলি ছড়িয়ে আছে, যা একথার সাক্ষ্য দেয় যেসমগ্র বিশ্বজগতকে কেবল একজন কারিগরই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই এর ব্যবস্থাপক ও নিয়ন্তা। বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা এসব নিদর্শনাবলির মধ্যে আমরা মহান আল্লাহর সিফাত ও গুণরাজির প্রকাশ ও প্রতিফলন দেখতে পাই। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, কুদরত ও ক্ষমতা, দয়া ও করুণা এবং প্রতাপ ও পরাক্রম ইত্যাদি গুণরাজি তাঁর কার্যাবলির মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে সমুদ্ভাসিত।

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, মানবীয় জ্ঞান ও বুদ্ধি অনেক সময় এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন ও প্রমাণাদি পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। যুগে যুগে অনেক বুদ্ধিমান মানুষও এমনকি বিখ্যাত অনেক দার্শনিকও আল্লাহর সঠিক পরিচয় লাভে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর কুদরত ও হেকমতের নিদর্শনাবলি এবং তাঁর তাওহীদ ও একত্বের নিদর্শনাবলি চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও কেউ দুই খোদায় বিশ্বাস করেছে, কেউ তিন খোদায় এবং কেউ বিশ্বাস করেছে অসংখ্য খোদায়। কেউ খোদাকে বহু ভাগে বিভক্ত করে একজনকে বৃষ্টির দেবতা, একজনকে বাতাসের দেবতা, একজনকে অগ্নির দেবতা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ একেক প্রকার শক্তির জন্য তারা একেক কল্পিত দেবতা তৈরি করেছে। তারপর একজনকে তাদের সরদার বা পরমেশ্বর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে নাউযুবিল্লাহ। এভাবে খোদার সত্তা ও গুণাবলি বোঝার ক্ষেত্রে যুগে যুগে মানুষের বুঝ ও বুদ্ধি বহু প্রতারণার শিকার হয়েছে, যার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ।

তাই দয়াময় আল্লাহ তাআলা মানুষকে শুধু তাঁর নিজস্ব জ্ঞান ও বুদ্ধির উপর ছেড়ে দেননি; বরং নিজ দয়ায় মানুষের হেদায়েতের জন্য তাঁর মনোনীত নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদেরকে তিনি তাঁর সিফাতের সঠিক জ্ঞান দান করেছেন, বিধান ও শরীয়ত দান করেছেন এবং সবোর্পরি আখেরাতের জীবন সম্পর্কে অবহিত করেছেন। যে মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে জ্ঞান দান করেছেন তার নাম ওহী এবং যে কিতাবের মাধ্যমে সেই জ্ঞান দান করেছেন তাই আল্লাহর কিতাব ও আল্লাহর কালাম। আল্লাহ সম্পর্কে এবং গায়েবের জগৎ সম্পর্কে নবীদের জ্ঞান হল আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে ইয়াকীন বা সুনিশ্চিত জ্ঞান, যাতে ভুল-ভ্রান্তির কোনো আশঙ্কা নেই। আর দুনিয়ার অন্যসব চিন্তাবিদ, দার্শনিক এবং মুনি-ঋষিদের জ্ঞান ও ধ্যান হল অনেকটা অনুমান-নির্ভর, যাতে সত্যের সাথে মিথ্যারও মিশ্রণ থাকে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি নবী ও রাসূলের শিক্ষার বিপরীতে নিজস্ব চিন্তাধারার উপর বা অন্য কোনো চিন্তাবিদ ও গবেষকের ধারণার উপর আকীদা-বিশ্বাসের ভিত্তি রাখে, তবে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে

اِنْ هِیَ اِلَّاۤ اَسْمَآءٌ سَمَّیْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَ اٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ  اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَهْوَی الْاَنْفُسُ  وَ لَقَدْ جَآءَهُمْ مِّنْ رَّبِّهِمُ الْهُدٰی.

(এদের স্বরূপ এর বেশি কিছু নয় যে,) এগুলি কতক নাম মাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ রেখেছ। আল্লাহ এর স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ নাযিল করেননি। প্রকৃতপক্ষে তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) কেবল ধারণা এবং মনের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের কাছে এসে গেছে পথ-নির্দেশ। সূরা নাজাম (৫৩) : ২৩

আরো ইরশাদ হয়েছে

اِنَّ الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ لَیُسَمُّوْنَ الْمَلٰٓىِٕكَةَ تَسْمِیَةَ الْاُنْثٰی، وَ مَا لَهُمْ بِهٖ مِنْ عِلْمٍ اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنَّ الظَّنَّ لَا یُغْنِیْ مِنَ الْحَقِّ شَیْـًٔا.

যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না, তারা ফেরেশতাদের নাম রাখে নারীদের নামে। অথচ তাদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। তারা কেবল ধারণার পেছনে চলে। প্রকৃতপক্ষে সত্যের ব্যাপারে ধারণা কিছুমাত্র কাজে আসে না। সূরা নাজম (৫৩) : ২৭-২৮

মোটকথা সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে এবং বিশুদ্ধ যুক্তি-বুদ্ধি দ্বারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব এবং তাঁর কিছু মৌলিক গুণাবলি সম্পর্কে কেবল সংক্ষিপ্ত ও সাধারণ জ্ঞানটুকু লাভ হয়। কিন্তু তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এবং সঠিক ও স্বচ্ছ জ্ঞান লাভের জন্য নববী শিক্ষা অনিবার্য।

তাছাড়া কোনো শিল্পকর্ম শিল্পীর শিল্প-সংক্রান্ত গুণ ও যোগ্যতার সাক্ষী। কোনো আবিষ্কার অবিষ্কারকের আবিষ্কার সংক্রান্ত গুণ ও যোগ্যতার সাক্ষী। এমনকি আবিষ্কারক ও শিল্পীকে সরাসরি না দেখেও শুধু তার কর্ম দেখেই তার গুণ ও যোগ্যতার পরিচয়  আমরা পাই। কিন্তু শিল্পকর্মের মাঝে শিল্পীর সকল গুণের পরিচয় মেলে না এবং আবিষ্কারের মধ্যে আবিষ্কারকের সকল গুণের পরিচয় পাওয়া যায় না। বিশেষত তাদের ব্যক্তিগত ও অভ্যন্তরীণ গুণাবলি তাদের শিল্প ও আবিষ্কার দেখে জানা যায় না। যেমন একজন আবিষ্কারক বা কারিগর দেখতে কেমন? সে উদার না কৃপণ? এবং তার পছন্দ-অপছন্দ, রুচি-অভিরুচি ইত্যাদি যেসব গুণ সরাসরি কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় তা সম্পর্কে শুধু তার শিল্পকর্ম ও কারিগরি দেখে নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়। এসব ব্যক্তিগত ও সত্তাগত বিষয়াবলি জানার উপায় হচ্ছে ব্যক্তিকে দেখা ও পর্যবেক্ষণ করা কিংবা তার বিষয়ে তার নিজস্ব বক্তব্যের উপর বা তার প্রেরিত প্রতিনিধির বার্তার উপর নির্ভর করা। وَلِلهِ الْمَثَلُ الْأَعْلى সর্বোচ্চ উদাহরণ কেবল আল্লাহর। সুতরাং সৃষ্টিকর্ম দেখে আমরা মহান স্রষ্টার কর্ম-সংক্রান্ত কিছু গুণাবলি তো জানতে সক্ষম, কিন্তু তাঁর সত্তাগত গুণাবলি এবং তাঁর পছন্দ-অপছন্দ, সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি সম্পর্কে জানতে হলে তাঁর কালাম এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কালামের উপর নির্ভর করতে হবে।

আর তাই সিফাত সংক্রান্ত কুরআন করীমের কোনো আয়াত বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদীসকে অস্বীকার করা যেমন কুফর, তেমনি কুরআন ও হাদীসের মুহকাম নস (দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য) দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত কোনো সিফাত ও বিশেষণকে অস্বীকার করাও কুফর।

আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন

وَ لِلهِ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰی فَادْعُوْهُ بِهَا وَ ذَرُوا الَّذِیْنَ یُلْحِدُوْنَ فِیْۤ اَسْمَآىِٕهٖ سَیُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ.

সুন্দরতম নামসমূহ আল্লাহরই। সুতরাং তাঁকে সেই সব নামেই ডাক। যারা তার নামের ব্যাপারে বক্র পথ অবলম্বন করে, তাদেরকে বর্জন কর। তারা যাকিছু করছে, তাদেরকে তার বদলা দেওয়া হবে। সূরা আরাফ (৭) : ১৮০

লক্ষ করুন, উক্ত আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তাআলাকে তাঁর গুণবাচক সুন্দরতম নামে ডাকার আদেশ করা হয়েছে। তারপর সেসব গুণবাচক নামের ক্ষেত্রে যারা ইলহাদ বা বক্রপথ অবলম্বন করে, তাদেরকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। আল্লাহর গুণবাচক কোনো নামকে অস্বীকার করা, তাঁর কোনো নামের অপব্যাখ্যা করা, তাঁর কোনো নামকে অন্য কারো উপর আরোপ করা, কিংবা অনুপযোগী ও ভ্রান্ত অর্থপূর্ণ কোনো নাম আবিষ্কার করে আল্লাহর উপর আরোপ করা এ সবই ইলহাদ ও গোমরাহীর শামিল।

মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ তাআলার রহমান নামকে অস্বীকার করত এবং অপছন্দ করত। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে

وَ اِذَا قِیْلَ لَهُمُ اسْجُدُوْا لِلرَّحْمٰنِ قَالُوْا وَ مَا الرَّحْمٰنُ  اَنَسْجُدُ لِمَا تَاْمُرُنَا وَ زَادَهُمْ نُفُوْرًا.

তাদেরকে যখন বলা হয়, রহমানকে সিজদা কর, তারা বলে রহমান কী? তুমি যে-কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব? এতে তারা আরও বেশি বিমুখ হয়ে পড়ে। সূরা ফুরকান (২৫) : ৬০

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে

وَ هُمْ یَكْفُرُوْنَ بِالرَّحْمٰنِ  قُلْ هُوَ رَبِّیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ عَلَیْهِ تَوَكَّلْتُ وَ اِلَیْهِ مَتَابِ.

এবং তারা রহমানকে অস্বীকার করে। বলে দাও, তিনিই আমার প্রতিপালক। তিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। তাঁরই উপর আমি নির্ভর করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে। সূরা রাদ (১৩) : ৩০

উল্লেখ্য, মক্কার মুশরিকরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অস্বীকার করত না। সুতরাং উক্ত আয়াতে রহমানকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্য এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তাঁরা রহমান নাম ও গুণকে অস্বীকার করত। তাই তো হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধিপত্রের শুরুতে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ লিখতে বলেছিলেন তখন মুশরিকদের প্রতিনিধি আপত্তি জানিয়ে বলেছিল

أما الرحمن، فوالله ما أدري ما هو ولكن اكتب باسمك اللهم كما كنت تكتب.

রহমান কী তা আমি জানি না! বরং তুমি লেখ হে আল্লাহ তোমার নামে শুরু করছি যেমনটা তুমি আগে লিখতে। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৩১)

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে

قُلِ ادْعُوا اللهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ اَیًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰی.

বলে দাও, তোমরা আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে ডাক, যে নামেই তোমরা (আল্লাহকে) ডাক, (একই কথা। কেননা) সমস্ত সুন্দর নাম তো তাঁরই। সূরা বানী ইসরাঈল (১৭) : ১১০

এতক্ষণের আলোচনা থেকে আশা করি আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আল্লাহ তাআলার সিফাত ও গুণাবলি সঠিভাবে জানা এবং বিশেষত তাঁর আলআসমাউল হুসনা সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন করা ওহীর শিক্ষার উপর নির্ভরশীল।

আল্লাহ তাআলার গুণাবলি আমরা কতটা জানতে পারি

আমরা জানি, মহামহিম আল্লাহ তাআলা সকল মহৎ ও উৎকৃষ্ট গুণে গুণান্বিত এবং সকল দোষ-ত্রুটি থেকে চিরপবিত্র। তাঁর নজীর ও উদাহরণ নেই কিছুই, বেমিছাল তিনি। তাই তাঁর গুণ ও বিশেষণ অগণিত, যার কোনো শেষ নেই, সীমা নেই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে ইরশাদ করেন

لِلّٰهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ اسْمًا، مِائَةٌ إِلَّا وَاحِدًا، لَا يَحْفَظُهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَ الجَنَّةَ.

আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি এমন নাম রয়েছে, যে তা আয়ত্ত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪১০

উপরোক্ত হাদীসে নিরানব্বইটি নামের বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। অন্যথায় তাঁর গুণবাচক নাম অসংখ্য অগণিত। তাই তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দুআয় আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা এভাবে করেছেন

لَا أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلٰى نَفْسِكَ.

আমি আপনার গুণগান করে শেষ করতে পারব না। আপনি তো ঐ প্রশংসারই উপযুক্ত, যা স্বয়ং নিজের সম্বন্ধে করেছেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮৬

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে একটি দুআ শিখিয়েছেন এবং অন্যদেরকেও শেখাতে বলেছেন। দুআটির শব্দমালা এই

اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِيْ بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ،عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيْعَ قَلْبِيْ، وَنُوْرَ بَصَرِيْ، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي.

হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনার বান্দার ও আপনার বাঁন্দীর পুত্র। আমি আপাদমস্তক আপনার কবজার ভেতর। আমার সম্পর্কে আপনার হুকুম সতত কার্যকর। আমার সম্পর্কে আপনার ফয়সালা সম্পূর্ণ ন্যায়ভিত্তিক। আপনি যেসব নামে নিজেকে অভিহিত করেছেন, যা আপনি নিজ কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন বা আপনার কোনো সৃষ্টিকে অবহিত করেছেন কিংবা নিজের কাছেই গায়েব রেখে দিয়েছেন, সেই সকল নামের ওসীলায় আমি আপনার কাছে দরখাস্ত করছি যে, কুরআন মাজীদকে আমার হৃদয়ের সজীবতা, আমার চোখের আলো, আমার দুঃখ-নিবারক ও আমার পেরেশানী বিদূরক বানিয়ে দিন। আদদুআ, তবারানী, হাদীস ১০৩৫, আলআসমা ওয়াস সিফাত, বায়হাকী, হাদীস ৭-

হাশরের ময়দানে নবীজীর শাফাআত সংক্রান্ত এক হাদীসে আছে

وَيُلْهِمُنِي مَحَامِدَ أَحْمَدُه بِهَا، لاَ تَحْضُرُنِي الآنَ.

আল্লাহ তাআলা তখন আমাকে এমন সব প্রশংসাবাক্য ইলহাম করবেন, যা দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব। সেসব প্রশংসাবাক্য এখন আমার অন্তরে হাজির নেই। সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৫১০

আর একারণে আকীদাশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক আলেম আল্লামা নূরুদ্দীন আসসাবূনী (ওফাত : ৫৮০ হি.) বলেন

قال أهل السنة: إن الله تعالى موصوف بصفات الكمال، منزه عن النقيصة والزوال، ليست بأعراض تحدث وتنعدم، بل هي أزلية أبدية قديمة قائمة بذاته، لا تشبه صفات الخلق بوجه من الوجوه، فهو حي، عالم، قادر، سميع، بصير، مريد، متكلم إلى ما لا يتناهى من صفات الكمال.

আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে আল্লাহ তাআলা সকল পূর্ণতা গুণে গুণান্বিত এবং দোষ-ত্রুটি ও ক্ষণস্থায়িত্ব থেকে চিরপবিত্র। তাঁর গুণাবলি ক্ষণস্থায়ী কোনো অবস্থার নাম নয়, যা নির্দিষ্ট কোনো ক্ষণে আপতিত হয় এবং পরে একসময় তা আবার বিলুপ্ত হয়। বরং তাঁর সকল গুণ অনাদি ও অনন্ত, তাঁর গুণ তাঁর সত্তায় স্থায়ীভাবে বিদ্যমান। তিনি চিরজীবী, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, ইচ্ছাময়, কথন গুণের অধিকারী এবং এছাড়াও অসংখ্য কামালাত ও প্রশংনীয় গুণের অধিকারী। আলবিদায়াহ ফী উসূলুদ্দীন, পৃ. ৪৯ ইমাম সাবূনী রাহ. আরো বলেন

ويجوز أن يكون لله تعالى صفات لا نعرفها على التفصيل عندنا، خلافا للمعتزلة، وكذا في الأسماء، لقول النبي عليه السلام: أنا أعلمكم بالله وأخشاكم لله، وكذا قوله عليه السلام في دعائه المعروف: أسألك بكل اسم هو لك، سميت به نفسك، أو أنزلته في كتابك، أو علمته أحدا من خلقك، أو استأثرت به في علم الغيب عندك.

ولكن مع هذا لما عرفناه بالاجمال أنه موصوف بصفات الكمال فقد عرفناه حق معرفته. انتهى من البداية في أصول الدين، ص : 52

আমাদের মতে, আল্লাহ তাআলার এমন অনেক সিফাত থাকা সম্ভব (এবং বাস্তবে রয়েছে,) যা আমরা বিস্তারিতভাবে জানি না। এমনিভাবে তাঁর এমন অনেক নাম থাকা সম্ভব, (এবং বাস্তবে রয়েছে,) যা আমরা জানি না। একথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক বাণী দ্বারা প্রমাণিত। তবে আমরা যখন সংক্ষেপে ও মোটামুটিভাবে এতটুকু জানি ও বিশ্বাস রাখি যে, আল্লাহ তাআলা সকল কামালাত ও পূর্ণতা গুণে গুণান্বিত, তখন সেই জানাটাও যথেষ্ঠ জানা। আলবিদায়াহ ফী উসূলুদ্দীন, পৃ. ৫২

মোটকথা, আল্লাহ তাআলা সকল কামালাত ও পূর্ণতা গুণে গুণান্বিত। তবে আমরা তাঁর  সকল গুণ এবং গুণবাচক সকল নাম ও অভিধা সম্পর্কে অবহিত নই এবং তা সম্ভবও নয়। তিনি তো তাঁর সকল নাম ও গুণ আমাদেরকে অবহিত করেননি। তাই আমাদের জানার বাইরেও রয়েছে তাঁর বহু নাম ও গুণ। আমরা তাঁর গুণাবলি কেবল ততটুকু জানতে পারি, যতটুকু তিনি আমাদেরকে সৃষ্টিজাগতিক নিদর্শনাবলির মাধ্যমে জানিয়েছেন এবং আসমানী কিতাব ও নবী-রাসূলের মাধ্যমে জানিয়েছেন। হ

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

 

advertisement