শাবান-রমযান ১৪৪৪   ||   মার্চ-এপ্রিল ২০২৩

তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প
আসুন, আল্লাহর কাছে তওবা করি

গত ০৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটেছে তা এখনও বহু মুসলিমকে ভারাক্রান্ত করে রেখেছে। প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন, যা ক্রমেই বাড়ছে। বহু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল সাত দশমিক আট।

এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর অনেক মানুষ উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদ্ধারকারী দলের সাথে বাংলাদেশী উদ্ধারকারীও এতে অংশগ্রহণ করেছেন। ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে অনেক মৃতদেহ বের করে আনার পাশাপাশি অনেক জীবিত মানুষকেও উদ্ধার করা হয়েছে। বিপদাপদে মানুষ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে?

জীবন-যাত্রার সকল ক্ষেত্রেই মানুষ যদি সহমর্মিতার প্রেরণা নিয়ে চলতে পারে তাহলে এই পৃথিবী সত্যিকারের মানুষের পৃথিবী হয়ে উঠবে।

বন্যা-খরা-ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়Ñ আমরা কত দুর্বল ও অসহায়। এই দুর্বল মানুষের কি অহঙ্কার করা সাজে? মানুষের কর্তব্য, অহঙ্কারী না হয়ে এই জগতের স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার সামনে বিনীত ও সমর্পিত হওয়া।

ভূমিকম্পে যারা নিহত হয়েছেন তাদের দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে, আখেরাতের জীবন শুরু হয়েছে। এই অমোঘ বাস্তবতা শুধু এই মানুষগুলোর জন্যই নয়, প্রতিটি মানুষের জন্যই। প্রত্যেক প্রাণিকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যেতে হবে। কে জানে, কখন কার শেষ সময় এসে উপস্থিত হবে। তুরস্কে বা সিরিয়ায় শেষ রাতে  যে মানুষগুলো মারা গেলেন তারা কি ঘুমানোর সময় বুঝতে পেরেছিলেন আজকের ঘুমই তাদের শেষ ঘুম! আজকের রাতটিই তাদের পৃথিবীর জীবনের শেষ রাত!

পৃথিবীতে মানুষের কত স্বপ্ন থাকে, কামনা-বাসনা থাকে, কিন্তু যখন সময় আসে তখন দপ করে সব নিভে যায়। কাজেই আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি তাদের সবারই কি উচিত নয়, শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা?

গুনাহ ও পাপাচার থেকে তওবা করে, আল্লাহর হক ও মানুষের হকগুলো আদায় করে, ধার দেনা পরিশোধ করে, সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফেলা? যাতে শেষ সময়ে আমরা পবিত্রতা ও সূচি-শুভ্রতার সাথে তাঁর ডাকে সাড়া দিতে পারি?

আমাদের চারপাশের ঘটে যাওয়া এইসকল ঘটনা আমাদের জন্য গভীর শিক্ষার উপকরণ। এইসকল ঘটনার বার্তা আমাদের অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করা উচিত। নিজের দিকে চোখ ফেরানো উচিত। যেমন ফিরিয়েছিলেন আল্লাহর নবী হযরত ইউনুস আ.। গভীর সাগরে মাছের পেটের ঘন অন্ধকারে তিনি কাতর-চিত্তে মহান সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে বলেছিলেন

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ.

আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি মহান, পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি জালিমদের একজন।

এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রিয় বান্দা এই দুআ  করেছিলেন, যা থেকে মুক্তির বাহ্যত কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকেও তাঁকে মুক্তি দিয়েছিলেন। কুরআন কারীমের পাঠকমাত্রেরই জানা আছে, হযরত ইউনুস আ.-এর এই আহ্বানকে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তাআলা সমগ্র মানবজাতিকে এই প্রতিশ্রম্নতি জানিয়ে দিয়েছেন যে, এভাবেই আমি মুমিনদের রক্ষা করব

وَ كَذٰلِكَ نُـنْجِی الْمُؤْمِنِیْنَ.

কাজেই মহান স্রষ্টার পক্ষ হতে নাজাত ও মুক্তি পেতে হলে আমাদের অবশ্যই মুমিন হতে হবে। মুমিনের বৈশিষ্ট্য বিনয় ও সমর্পণ। নিজেকে অপরাধী জ্ঞান করা এবং আল্লাহ তাআলার বাণী ও বিধানের প্রতি সমর্পিত হওয়া। অন্যদিকে শয়তানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দাম্ভিক ও অহংকারী হওয়া আর সৃষ্টিকর্তার বাণী ও বিধানকে ভুল আখ্যায়িত করার মূর্খতা প্রদর্শন করা।

আজ ব্যক্তি থেকে সমাজ সর্বস্তরে মুমিনসুলভ বিনয় ও আনুগত্যের অতি বড় প্রয়োজন। তাহলেই আমরা আমাদের চারপাশের সমূহ বিপদ ও ঘন অন্ধকার থেকে মুক্তি পাব, যে অন্ধকার তুরস্কের ভূমিকম্পের চেয়েও বহু গুণ বেশি ভয়াবহ। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুযোর্গগুলোতে বড় জোর মানুষের প্রাণহানী বা অঙ্গহানী ঘটে; কিন্তু চারপাশের আদর্শিক অবক্ষয়ে মানুষের ঈমানহানী ঘটে যায়, যা তার দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানকে ধ্বংস করে।

তুরস্ক-সিরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের লাখো ভাই-বোনের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এই বিপদের আঘাত কাটিয়ে ওঠার তাওফীক দান করুন আমীন।

 

 

advertisement