মুহাররম ১৪২৮   ||   ফেব্রুয়ারি ২০০৭

দু’টি বয়ান

বুধবার সাপ্তাহিক ইসলাহী মজলিসে পাহাড়পুরী হুজুর দামাত বারাকাতুহুম-এর বয়ান হয়েছে। এদিন তাঁর বিশিষ্ট ছাত্র মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। পাহাড়পুরী হুজুরের বয়ানের পর তিনিও সংক্ষিপ্ত বয়ান করেছেন। উভয় বয়ানেই তালিবে ইলমদের জন্য মূল্যবান পাথেয় রয়েছে। এজন্য বয়ান দুটির সারসংক্ষেপ এ পাতায় উপস্থাপিত হল।

 

পাহাড়পুরী হুজুর (দা. বা.)

এর বয়ান

হুজুর বলেছেন, আমরা সবাই আখেরাতের মুসাফির। আমাদের পিছনে সর্বদা দুটি শত্রু লেগে আছে। এক. অভ্যন্তরীন শত্রু নফস ও দুই. বাহিরের শত্রু শয়তান। اِنَّ النَّفْسَ لَاَمَّارَةٌۢ بِالسُّوْٓءِ নিঃসন্দেহে নফস মন্দ কাজের বেশি আদেশ করে থাকে-এটা নফসের স্বভাব। মুজাহাদার মাধ্যমে  একে নফসে লাওয়ামা বানানো এরপর তাকে নফসে মুতমাইন্নার পর্যায়ে উন্নীত করা নাজাতের জন্য জরুরি।

নফসের ধোঁকায় যদি গুনাহ হয়ে যায় তবে ইস্তেগফার করতে থাকবে। খালেস অন্তরে তওবা করবে এবং নফসের বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে।

মুজাহাদার জন্য যে বিষয়টি সহায়ক হবে তা হল দাওয়ামে যিকির ও কাছরতে যিকির অর্থাৎ সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণ ও অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির। যিকরুল্লাহ স্বতন্ত্রভাবেও কাম্য আবার তা নফসের মুজাহাদার ক্ষেত্রে ওষুধও বটে। মৌখিক যিকির সর্বদা করা যায় না কিন্তু অন্তরের যিকির সর্বদা জারি রাখা যায়। আর মৌখিক যিকির সার্বক্ষণিক সম্ভব না হলেও অধিক পরিমাণে করা সম্ভব।

আকাবির যিকিরের বিভিন্ন পদ্ধতি শিখিয়েছেন এবং তাসাওউফের বিষয়াদি বোঝানোর জন্য বিভিন্ন পরিভাষা তৈরি করেছেন। হুজুর যিকিরের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এক যরবী, দুই যরবী, তিন যরবী ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি বাতিয়েছেন। পরিভাষা বিশেষ জরুরি বিষয় নয় এবং শরীয়ত যদি কোনো পদ্ধতি নির্দিষ্ট না করে থাকে তবে পদ্ধতিও বিভিন্ন হতে পারে। তবে তোমরা যদি সাধ্যমত কালেমায়ে তাওহীদ ও ইসমে যাত-এর যিকির করতে থাক তাহলে নফসের সংশোধন ও চরিত্রের উন্নতির ক্ষেত্রে এর অনেক সুফল দেখতে পাবে।

সারকথা আমাদের করণীয় হল,

১. মুজাহাদা, অর্থাৎ নফসের চাহিদা থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করা।

২. গুনাহ হয়ে গেলে তওবা ইস্তেগফার দ্বারা ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা।

৩. আত্মিক ব্যাধিগুলোর চিকিৎসার প্রতি মনোযোগী হওয়া।

৪. দাওয়ামে যিকির (মুরাকাবা) ও অধিক পরিমাণে মৌখিক যিকিরের প্রতি মনোযোগ দেওয়া।

(এ কাজটি তালিবে ইলমরা নিজ নিজ তালীমী মুরব্বীর পরামর্শক্রমে বিশেষ নিযামুল আওকাতের মাধ্যমে সম্পন্ন করবে।)

মুরাকাবার একটি উদাহরণ হল, রাস্তা-ঘাটে চলতে গিয়ে বদনযরের অবস্থা সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে এই আয়াতের কথা স্মরণ করা- یَعْلَمُ خَآىِٕنَةَ الْاَعْیُنِ وَ مَا تُخْفِی الصُّدُوْرُ অর্থাৎ আল্লাহ চোখসমূহের খিয়ানত ও অন্তরে লুকায়িত বিষয়গুলো সর্ম্পকেও জানেন। এই চিন্তার সাহায্যে ইনশাআল্লাহ নযর হিফাজতে সাহায্য পাওয়া যাবে।

পাহাড়পুরী হুজুর বয়ান শেষে মজলিস থেকে যাওয়ার সময় মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ সাহেবকে অনুরোধ করেন, তিনিও যাতে সংক্ষিপ্ত বয়ান রাখেন। এ প্রসঙ্গে পাহাড়পুরী হুজুর বলেন,

দেখো, বিদ্যুতের সকল উপকরণ যদি বিদ্যমান থাকে, সবকিছু ঠিকঠাক মতো লাগানো আছে, লাইনে বিদ্যুতও আছে কিন্তু যতক্ষণ সুইচ টিপে বাতি ও পাখায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া না হবে ততক্ষণ বাতিও জ্বলবে না, পাখাও ঘুরবে না। তদ্রূপ ইলমের সকল উপকরণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও উস্তাদের সঙ্গে যদি তোমাদের সংযোগ মজবুত না হয় তবে তোমাদের ইলমে নূরও থাকবে না এবং ইলমে বরকতও হবে না।

এই যুগে যদি উস্তাদের সঙ্গে সর্ম্পকের যথার্থ কোনো দৃষ্টান্ত তোমরা দেখতে চাও তাহলে এই মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ সাহেব আছেন তাকে দেখ। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। এই কথাটিও দুআ হিসেবে বললাম, তারীফ হিসাবে নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন।

 

মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ ছাহেব-এর বয়ান,

পাহাড়পুরী হুজুর ইলমের সাথে সম্পর্কিত কিছু কথা বলার জন্য হুকুম করেছেন। কথা যুগ যুগ ধরে একই বলে আসা হচ্ছে। নতুন কোনো কথা নেই। দ্বীন যেহেতু নতুন নয়, ইলম যেহেতু নতুন নয়, তাই কথা একই কথা হবে। আলফাযের কিছু বেশ কম হয়। যামানার হালাতের কারণে কিছু বেশ কম হয়। কথা একই। এবারের (যিলক্বদ সংখ্যা) আলকাউসারে একটা মজমুন প্রবন্ধ দেখেছি। আমার মনে হয় যে, প্রত্যেক তালিবুল ইলমের এই যামানায় এ মজমুনটা অন্তত উসবুয়ীঅর্থাৎ সাপ্তাহিক মোতালাআর বিষয় বানানো উচিত। এমনি তো ছড়ানো মজমুন অনেক থাকে, কিন্তু গোটানো মজমুন, গোছানো মজমুন খুব কম। বিশেষত তালিবুল ইলমদের লক্ষ করে যে মজমুনগুলো লেখা হয় ওই মজমুনগুলো সাধারণত গোছানো থাকে। ওই মজমুনগুলো لأئحه عملবানিয়ে নিলে খুব ফায়দা। মজমুনটা তালিবুল ইলমদের ইলমের মহব্বত কীভাবে পয়দা হবে, ইলমের পিপাসা কীভাবে জাগ্রত হবে, এই বিষয়ে আমার কাছে মজমুনটা খুব যুগোপযোগী, সময়োপযোগী এবং পাত্র উপযোগী মনে হয়েছে। আমি নিজেও এটার উপর আমল করার চেষ্টা করব। আমরা সবাই এটার উপর আমল করার চেষ্টা করব।

এই যামানায়, হুজুর (পাহাড়পুরী হুজুর দামাত বারকাতুহুম) যে কথাটা বললেন খুব দামি দামি পাখা লাগানো হচ্ছে, দামি দামি বাতি লাগানো হচ্ছে কিন্তু আলোর জন্য যে সংযোগের প্রয়োজন সে সংযোগের চিন্তা করা হচ্ছে না। এখন আলহামদুলিল্লাহ তালিবুল ইলমরা খুব দামি দামি কিতাব সংগ্রহ করে থাকে এবং ইলমের জন্য অভিভাবকরা আগের তুলনায় বেশি ব্যয় করে থাকেন। মানে এই সব দিক থেকে ইযাফা হয়েছে। কিন্তু ইলম ও ইলমের নূর যে সংযোগের মাধ্যমে আসে সেই সংযোগটা আসলেই কমে গেছে। আমার জন্য এটা খুব শোকরের বিষয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি পাহাড়পুরী হুজুর যে বলেছেন উস্তাদদের সঙ্গে কি রকম সম্পর্ক রাখতে হয় তার নমুনা বর্তমানে দেখতে চাইলে আবু তাহের মিছবাহকে দেখ, এটা আমার জন্য সতর্কবাণী, আসলে যে পরিমাণ তাআল্লুক থাকা দরকার সেই পরিমাণ তাআল্লুক রাখতে পারিনি। মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব আজকে একটা সুন্দর কথা বলেছেন, ফানা ফিশশায়খ যেমন আধ্যাত্মিক জগতে কামিয়াবীর জন্য জরুরি তেমনি ইলমের জগতে ফানা ফিলউস্তাদ জরুরি। এই ইবারতটা আমি নতুন শুনেছি। আমার দিল খুব আনন্দের সাথে কথাটা কবুল করেছে। ইলমের জগতে ইলমের হদ তক কামিয়াবীর জন্য ফানা ফিল উস্তাদ, অর্থাৎ যখন যার থেকে আমি ইলম হাসিল করব তখন প্রতিটি বিষয়ে তার নেগরানী ও রহনুমায়ী কবুল করে মেহনত করব অন্তত যখন যার থেকে যে বিষয়টি আমি ইস্তেফাদা করি, যার কাছ থেকে যে বিষয়ের ইলম হাসিল করি, সমস্ত নেগরানী, তত্ত্বাবধান সবকিছু তার কাছ থেকেই গ্রহণ করি এবং তার ইজাযত ছাড়া এই ইলমটাকে কোনো কাজে ব্যয় না করি। এটাকে ব্যয় করতে হলেও তার ইজাযত নিয়ে ব্যয় করা উচিত। এটা শারাফাতের দাবি। এই যে মনে করেন আপনারা এখানে হাদীস পড়বেন কিংবা ফিকহের ইস্তেফাদা করবেন এ ক্ষেত্রেও একথাটি প্রযোজ্য। ফানা ফিলউস্তাদ হওয়ার এটাও একটা দাবি যে, পরবর্তীতে এটা আমি যখন ব্যবহার করব ব্যবহারটা যেন উস্তাদের মানশা মোতাবেক হয়। এটা যদি করতে পারি তাহলে ওই বিষয়ের যেটাকে রূহ বলে সেটা ইনশাল্লাহ অর্জন করতে পারব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। মনে হয় হুজুরের আদেশ হিসাবে মোটামুটি যথেষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব বললেন, কিছু অভিজ্ঞতা শুনাবেন না? জীবন থেকে শিক্ষা?

হুজুর বললেন, জীবন থেকে শিক্ষা একটা বিস্তৃত বিষয়। একজন আলেম যেমন তার জীবনের অভিজ্ঞতা অন্যকে দিতে পারে, একজন সাধারণ মানুষও তার জীবনের অভিজ্ঞতা অন্যকে দিতে পারে এবং এই অভিজ্ঞতা দ্বারা অন্যেও উপকৃত হতে পারে। আমাদের তো ঘটনাই আছে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. ডাকাতের কাছ থেকে সবক হাসিল করেছিলেন। এ জন্য অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞাসা করলে আমি একটু স্বতস্ফূর্তভাবে বলার হিম্মত করি। কারণ যে কেউ যে কাউকে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা সরবরাহ করতে পারে। তালিবুল ইলম তার জীবনের অভিজ্ঞতা উস্তাদকে সরবরাহ করতে পারে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে উস্তাদও উপকৃত হতে পারে।

জীবনের অভিজ্ঞতা এমন জিনিস যে, ইলমের কমতি জীবনের অভিজ্ঞতা পূর্ণ করে দেয়। এটা ইলমের একটা প্রকার। তো আজকের এই পরিবেশের সাথে মুয়াফিক একটা অভিজ্ঞতার কথা উনি বলার সাথে সাথে আমার মনে পড়ে গেল।

আমরা কিন্তু ক্ষুদ্র সময়, সময়ের অংশগুলোকে বেশ ভালো কাজে লাগাতে পারি। কিন্তু আমরা তা করি না। অথচ দুনিয়ার ক্ষেত্রে মানুষ তার মেধা, তার যোগ্যতা, তার যাবতীয় সাধ্য ব্যয় করে তার সময়ের ভগ্নাংশগুলিকে হেফাজত করার জন্য। কাগজের টুকরা পড়ে থাকে, এই কাগজের টুকরাগুলো সংগ্রহ করে করে একটি শিল্প গড়ে উঠেছে। ফেলে দেওয়া বোতল, প্লাস্টিকের এই টুকরাগুলিকে জোগাড় করে করে। এগুলো কিন্তু মৌলিক কোনো উপাদান নয় এবং পণ্যসামগ্রী নয়, কিন্তু এইগুলিকে জোগাড় করে করে মানুষ একটা শিল্প গড়ে তুলছে। এসব হল অব্যবহৃত বর্জ্য, অপ্রয়োজনীয় বলে ফেলে দেওয়া জিনিস। এগুলিকে সংগ্রহ করে কাজে লাগাচ্ছে। এতে মানুষের জীবনে অনেক সাশ্রয় আসছে। অনেক ফায়দা হচ্ছে। আমাদের জীবনের সময়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলিকেও এভাবে কাজে লাগানো চাই। কোনো কাজ করার ফাঁকে দুই মিনিট থাকে, তিন মিনিট থাকে, এমনকি অনেক সময় দশ পনের মিনিটও চলে যায় অন্য একটা কাজের অপেক্ষায়। এ কাজটা হয়ে গেলে আমরা ভাবি যে, যে জন্য এসেছিলাম কাজটা হয়ে গেছে। আসলে আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে সময়ের এই আজযাগুলিকে হেফাজত করতে পরা। আল্লাহর সাথে যাদের সর্ম্পক তারা তো সময়ের হেফাজতের সবচেয়ে সুন্দর নুসখা বলেন যিকিরের কথা, ফিকিরের কথা। আমরা ইলমের ময়দানে যারা থাকার চেষ্টা করছি, আমরাও যদি সময়ের আজযাগুলিকে হেফাজত করি, কিছু কাজ নির্ধারিত করে রাখি, যখন বড় কাজ না থাকে, যখন দুই তিন মিনিট চার-পাঁচ মিনিটের একটা অবসর থাকে, তখন যদি এই কাজগুলি করি তাহলে সময়ের হেফাযত হবে।

এটা আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি। আমি কয়েকদিন আগেও ছাত্রদেরকে বলেছি, সময়ের ক্ষুদ্রতম অংশগুলোকে কীভাবে হেফাজত করা যায় এবং কিভাবে তা থেকে ইস্তেফাদা করা যায়। আমি একটা কিতাবের পুরা পরিকল্পনা তিন মিনিট, চার মিনিট পাঁচ মিনিট এগুলো হেফাযত করে করে তৈরি করেছি। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে আমি একটা নোটবুক সাথে নিয়েছিলাম। যখনই দুই মিনিট, পাঁচ মিনিট অন্য কাজের অপেক্ষায় থাকি তখন আমি ওই কাজটি কীভাবে করব চিন্তা করতাম এবং নোট করে রাখতাম। পরে লিখতে গিয়ে আমি দেখেছি যে, এই কিতাবটা লিখতে যত সময় ব্যয় হত তার চেয়ে অনেক কম সময়ে আমার কাজটা হয়ে গেছে। সময়ের আজযা হেফাজত করার আরও ছোট ছোট বিষয় হতে পারে। ছোট রিসালা যদি সাথে রেখে দেই এটার মোতালাআ দুই তিন মিনিট করে করা যায়। বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আমি এই কাজটা করতাম। বই সাথে নিয়ে নিতাম। বিয়ে বাড়িতে গিয়েছি, দেখেছি যে, বিয়ে বাড়িতে যে সময়টা আমার কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ ছিল না কিন্তু আমার যেতে আর আসতে মাঝখানে-এই সময়ের মধ্যে পুরা একটা বই পড়া হয়ে গেছে। সময়ের أجزاء গুলো হেফাজত করার জন্য আমরা একটু মুনাযযাম হই। আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমাদের যিন্দেগীর সময়ের আজযাগুলি একত্র করলে জীবনের একটা বিরাট অংশ দেখা যায় এভাবে নষ্ট করেছি। অথচ সময় আমাদের এত কম, যিন্দেগীর তিন ভাগের একভাগ তো চলে যায় মূল কাজ ছাড়া। তো এই সময়ের ভগ্নাংশগুলোকে হেফাজত করার চেষ্টা করি। এটার জন্য  মোতালাআ করতে হলে ছোট্ট রেসালা রেখে দেই। নিয়মিত দুই তিন পৃষ্ঠা মোতালাআ করলাম, আরেক সুযোগে এক পৃষ্ঠা মোতালাআ করলাম। এভাবে একটা কিতাব যদি আমি তিন-চার বারে মোতালাআ করি তো দেখা যাবে যে, ওই কিতাবটা বসে একেবারে পড়ে যে ফায়দা হত এর চেয়ে বেশি ফায়দা হবে। লেখার ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। আমরা সাহিত্য চর্চার কথা অনেকে বলি। সময় পাই না। যদি হালকা মজমুন, এমন কোনো বিষয় যা বাসের অপেক্ষায় থেকেও লেখা যায় বা কারও সাক্ষাতের অপেক্ষায় বসে থেকেও লেখা যায়, তাহলে ওই লেখাগুলো চলতে থাকলে দেখা যাবে এক বছরে লেখার যোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে। তো লেখার ক্ষেত্রেও আমরা সময়ের আজযাগুলি হেফাজত করতে পারি। পড়ার ক্ষেত্রেও সময়ের আজযাগুলি হেফাজত করতে পারি। আবার কোনো মজমুন, কোনো পরিকল্পনা বা কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষেত্রেও খুচরা সময়গুলি  হেফাজত করতে পারি। ওই সময় যদি ফিকির করি, আর ফিকিরটা একটা কাগজে টুকে রাখি  তাহলে দেখা যাবে, কয়েক দিনের মধ্যে আমার খাতায় অনেকগুলি চিন্তা জমা হয়ে গেছে। সেগুলো আমি একসাথে বসে বের করতে পারতাম না। এই চিন্তাগুলি পরে আমি কাজে লাগাতে পারি। এটা আমার জীবনের একটা ভালো অভিজ্ঞতা। খুচরা সময়গুলি হেফাজত করার চেষ্টা করা এবং এটা থেকে লাভবান হওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।

মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ সাহেব হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সেই কিতাব কোনটা? আদীব সাহেব হুজুর বললেন, এটা আমার الطريق الى العربية‘ -র সর্বশেষ সংস্করণ, যার পরিকল্পনা আমি ফাঁকে ফাঁকে লিখে রাখতাম। এগুলি পরে যখন গ্রন্থরূপ দিতে গিয়েছি দেখেছি, অনেক অল্প সময়ে হয়ে গেছে। সর্বশেষ সংস্করণটা আগাগোড়া পরিবর্তিত। পুরো পরিকল্পনাটাই খুচরা সময়গুলোতে লিখে লিখে করেছি। এখন الطريق الى النحو সংস্কারের জন্য চেষ্টা করছি। খেতে বসেও দেখি যে, খাবারের আয়োজনে পাঁচ মিনিট লেগে যায়। ওই সময় কোনো কিছু ফিকির করে কাগজে টুকে রাখা যায় কিংবা মোতালাআও করা যায়। প্রথম দিকে খুব অস্বস্তি লাগে বা হয়ে উঠতে চায় না। কিন্তু অভ্যাস হলে দেখা যায় যে আল্লাহ চাহে তো সময়ের একটা জযও নষ্ট হয় না।

-সংকলনে: মাওলানা হাসিবুর রহমান

 

 

advertisement