যিলকদ ১৪৪৩   ||   জুন ২০২২

সাহচর্য থেকে শিক্ষা

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম

তিনি ছিলেন হাদীস ও ফিকহের ইমাম। চার মাযহাবের একটি তাঁর নামের প্রতিই সম্বন্ধিত এবং সুপরিচিত। বিখ্যাত হাদীস-গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ তাঁরই অমর সংকলন। হাঁ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর কথাই বলছি। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তাঁর কাছে হাদীস ও ফিকহ আহরণের জন্য ছুটে আসত। প্রয়োজনে কেউবা রাতেও তাঁর কাছে থেকে যেত। আবু ইসমাহ আলবায়হাকী (২৬১ হি.) বলেন, আমিও একবার আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর কাছে এলাম এবং রাতে থেকে গেলাম। ঘুমানোর আগে তিনি ওযুর পানি রেখে গেলেন। সকালে এসে দেখেন পানি আপন জায়গায়। অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের সময় পানি ব্যবহার করা হয়নি। এ দেখে তিনি বলে উঠলেন-

سُبْحَانَ اللهِ رَجُلٌ يَطْلُبُ الْعِلْمَ لَا يَكُونُ لَهُ وِرْدٌ مِنَ اللَّيْلِ!

সুবহানাল্লাহ, এ কেমন লোক! ইলম শিখছে, কিন্তু রাতে তার কোনো ওযিফা-আমল নেই! -আলজামে লিআখলাকির রাবী, খতীব বাগদাদী, ১৭৬; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১১/২৯৮ তারীখু দিমাশক, ইবনে আসাকির ৫৭/২৪৫

এমনই ছিলেন আমাদের সালাফ; ইলমের সাথে আমলি তরবিয়তও করতেন। জ্ঞানের আলো যেমন জ্বালতেনতেমনি ইলম-পিপাসুর হৃদয়ে আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রেরণা যোগাতেন এবং সুস্থ চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দিতেন। কখনো উপদেশের মাধ্যমে, কখনো মৃদু ভর্ৎসনা করে, আবার কখনো ঈষৎ শাসিয়ে। ছাত্ররাও সব মাথা পেতে গ্রহণ করত এবং নিষ্ঠার সাথে উস্তাযের সাহচর্য থেকে শিখত।

এমন শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণের নমুনা ও দৃষ্টান্ত অসংখ্য। ছোট্ট একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আবু জাফর আহমাদ ইবনে হামদান রাহ. (৩৮৬ হি.)। তিনি অনেক বড় বুযুর্গ ও মুসতাজাবুদ দাওয়াহ’ (যার দুআ আল্লাহ্ কবুল করেন) হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি বলেন, একদিন আমি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে নাস্র আলমাররূযীর (৩১২ হি.) মজলিসে ছিলাম। যখন নামাযের সময় হল, ইমাম মাররূযী নিজেই আযান দিলেন। আযান শুনে আমি ওযুর জন্য মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম, উসতায মাররূযী আমাকে ডেকে বললেন, আবু জাফর! কোথায় যাচ্ছ?

বললাম,ওযু করতে যাচ্ছি।

তিনি বললেন- আহা, তোমার ব্যাপারে তো আমার ধারণা ছিল ভিন্ন কিছু! (অর্থাৎ, তোমাকে তো আরও বুদ্ধিমান মনে করতাম!)

يَدْخُلُ عَلَيْكَ وَقْتُ الصَّلَاةِ وَأَنْتَ عَلَى غَيْرِ طَهَارَةٍ!

সালাতের সময় হয়ে গেল, অথচ তুমি ওযু অবস্থায় নেই! -আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে, খতীব বাগদাদী, পৃ. ১৪৩ 

চিন্তাকে বিস্তৃত ও উন্নত করার কী অসাধারণ দীক্ষা! ব্যাপারটি যে কত সূক্ষ্ম, কত গভীর এবং সংবেদনশীল, কখনো কি চিন্তা করে দেখেছি? আল্লাহর পক্ষ থেকে মুআযযিনের মাধ্যমে আমাকে ডাকা হল, অথচ আমি অপ্রস্তুত! ডাকার পর নিতে হচ্ছে প্রস্তুতি!

বিখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, ‘ত্রিশ বছর যাবৎ এক দিনও এমন হয়নি যে, মুআযযিন আযান দিয়েছে অথচ আমি মসজিদে উপস্থিত নেই।’ -আলইলাল ওয়া মারিফাতির রিজাল ২/২১

শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. তাঁর সূক্ষ্ম অনুভূতি থেকে একটি চমৎকার মন্তব্য করেছেন বক্তব্যটির উপর। তিনি বলেন, ‘এটি হল আল্লাহর সামনে হাযিরীর চূড়ান্ত প্রকাশ ও নমুনা। কারণ গোলামের তো দায়িত্ব ডাকার আগেই মনিবের সামনে উপস্থিত থাকা। এমন নয় যে, ডাকার পরে হাজিরা দেবে!’ -রিসালাতুল মুসতারশিদীন, পৃ. ২৪৫

আসলে নূরানী হৃদয়ের নূরানী অনুভূতিগুলো এমনই হয়ে থাকে। ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর ঘটনা। জটিল জটিল বিষয়ে তিনি তো একা সিদ্ধান্ত দিতেন না; মজলিসের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করতেন। কিন্তু যখন কোনো মাসআলা বেশি জটিল আকার ধারণ করত, সহকর্মীদের বলতেন, বুঝি আমার কোনো গোনাহের কারণেই আজ সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না! এ বলে তিনি আল্লাহর কাছে তাওবা-ইসতেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা শুরু করে দিতেন। কখনো কখনো নফল নামাযেও দাঁড়িয়ে যেতেন। একপর্যায়ে যখন মাসআলার সমাধান হয়ে যেত, তিনি আল্লাহর শোকর আদায় করতেন এবং বলতেন- আমি যেহেতু আল্লাহর দিকে ফিরলাম আল্লাহর রহমতও আমার অভিমুখী হল!ব্যাপারটি যখন ফুযাইল ইবনে ইয়াযের কানে গেল তিনি অঝোরে কান্না আরম্ভ করলেন। এরপর ইমাম আবু হানীফা রাহ. সম্পর্কে যা বললেন তা উদ্ধৃত করার জন্যই এখানে এই ঘটনার অবতারণা। তিনি বললেন- আরে! আবু হানীফার এই অনুভূতি তো তাঁর গোনাহের স্বল্পতার কারণে। অন্যদের তো এই অনুভূতিটাই জাগে না!’ -তবাকাতুল হানাফিয়্যা, মোল্লা আলী কারী ২/৪৮৭

যাহোক, আযানের সময় মসজিদে ওযুবিহীন না থাকার মত এত সূক্ষè অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ইমাম মাররূযী রাহ. তাঁর শাগরিদকে। এভাবেই আমাদের জন্য আমাদের পূর্বসূরিগণ উসতাযের সাহচর্য থেকে শেখা ও গ্রহণের নকশা এঁকে গিয়েছেন।

ইমাম শাফেয়ী রাহ. ইমাম মালেক রাহ.-এর কাছে মুয়াত্তা মালেকের পাঠ গ্রহণ করেছেন। প্রথম সাক্ষাতেই তিনি ইমাম শাফেয়ী রাহ.-কে উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর, গোনাহ থেকে বেঁচে থাক! ভবিষ্যতে এটিই হবে তোমার জন্য শান ও মর্যাদার সিঁড়ি। -মানাকিবুশ শাফেয়ী, বায়হাকী ১/১০২

এ যুগের একটি ঘটনাও উল্লেখ করা যায়। দারুল উলূম দেওবন্দের প্রসিদ্ধ উসতায ছিলেন মিয়াঁ আসগর হোসাইন ছাহেব রাহ.। বড় সাদা দিলের বুযুর্গ মানুষ ছিলেন তিনি। বলা হত, ‘তাঁর কথা শুনলে সাহাবা-যুগের স্মরণ তাজা হয়তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণে ধন্য হয়েছেন তাফসীরে মাআরিফুল কুরআনের রচয়িতা মুফতী শফী রাহ.। তিনি বলেন, একবার আমি আমার উসতায মিয়াঁ আসগর হোসাইন রাহ.-এর খেদমতে গেলাম। হুজুর বললেন, খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, চলো, খেয়ে নিই! আমি হুজুরের সাথে খাবার খেলাম। খাওয়ার পর দস্তরখানটা বাইরে নিয়ে পরিষ্কার করার জন্য আমি ভাঁজ করতে চাইলাম। হুজুর আমার হাত ধরে ফেললেন। তারপর বললেন, কী করতে চাচ্ছ?

বললাম, হযরত! দস্তরখান পরিষ্কার করতে যাচ্ছি।

হুজুর বললেন, দস্তরখান পরিষ্কার করতে জানো তো? শিখেছ?

আমি বললাম, হযরত! দস্তরখান পরিষ্কার করা- এ আবার এমন কী বিষয়, যা শিখতে হবে আলাদা করে? হযরত বললেন, এজন্যই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, দস্তরখান পরিষ্কার করতে জানো কি না? বোঝা গেল, তুমি দস্তরখান পরিষ্কার করতে জানো না!

আমি বললাম, তাহলে আপনি দয়া করে আমাকে শিখিয়ে দিন!

হুজুর বললেন, দস্তরখান পরিষ্কার করা- এটাও একটা ফন ও শিল্প।

তারপর হুজুর নিজে দস্তরখানটা আবার খুললেন। মাছের কাঁটাগুলো এক পাশে রাখলেন। হাড্ডিগুলো আরেক পাশে রাখলেন। আর উচ্ছিষ্ট রুটির টুকরোগুলো আরেক পাশে। তারপর আমাকে বললেন, দেখ, আমার এখানে কুকুর-বিড়াল এবং পাখির জন্য আলাদা আলাদা জায়গা নির্ধারিত আছে। এই যে কাঁটাগুলো, এগুলো ওখানে রাখি। বিড়াল জানে, খাওয়ার পরে এখানে কাঁটা রাখা হবে। সে সময়মতো এসে খেয়ে যাবে। হাড্ডিগুলো ওপাশে রাখি, মহল্লার কুকুরগুলো জানে, এখানে হাড্ডি রাখা হয়, তারাও সময়মতো এসে খাবে। আর বেঁচে যাওয়া রুটির টুকরোগুলো আমি ওই যে দেয়াল দেখা যায়, তার উপরে রেখে দিই, পাখ-পাখালি এসে সেখান থেকে খাবে। তারপর হুজুর বললেন, এসব রিযিক আল্লাহর দান; তার কোনো অংশই নষ্ট করা উচিত নয়।

মুফতী শফী রাহ. বলেন, সেদিন আমি বুঝলাম, দস্তরখান সাফাই করাও একটি  শেখার বিষয়। -ইসলাহী খুতুবাত ৫/১৬৩; শাইখুল ইসলাম কে পসন্দীদাহ ওয়াকিআত, পৃ. ২০৩

আমাদের মুরব্বিগণ এভাবে শিখেছেন তাঁদের মুরব্বিদের থেকে। বড়দের স্নেহছায়ায়, আমলিভাবে হাতে-কলমে বা চোখ-কান খোলা রেখে তাদের দেখে দেখে। ফলে ইলমের পাশাপাশি তাঁরা দ্বীনের রুচি-প্রকৃতি ও শিষ্টাচারের সাথেও পরিচিত হয়ে উঠতেন উসতায ও বুযুর্গদের সোহবত থেকে। দ্বীন-দুনিয়ার অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ও রপ্ত করে ফেলতেন উসতায বা মুরব্বির সাহচর্য ও সংস্পর্শের বরকতে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি, শেখার প্রবল আগ্রহ ও পিপাসা।

তরবিয়তের ছোট্ট আরেকটি ঘটনাও উল্লেখ করছি, যা খুবই মর্মস্পর্শী। ড. শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ায। বিখ্যাত আলেম আবদুল কারীম রিফায়ী রাহ.-এর বিশেষ শিষ্য ছিলেন। একদিন মসজিদে তিনি চাশতের নামায আদায় করলেন। সালাম ফিরিয়েই তাড়িঘড়ি উঠে গেলেন। শায়েখ আবদুল কারীম রিফায়ী  ব্যাপারটি লক্ষ্য করলেন এবং পেছন থেকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তার দিকে।  আক্ষেপ হল তাঁর। তিনি হে শায়েখ মুহাম্মাদ!বলে ডাক দিলেন। তারপর তাঁকে বিষণ্ন গলায় কোমলমধুর একটি শাসন উপহার দিলেন। বললেন, তুমি কি তোমার মালিক থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে গেলে?! সালাম ফিরিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু না চেয়ে চটজলদি উঠে চলে যাচ্ছ! -মাআলিমু ইরশাদিয়্যাহ, পৃ. ৪১২

আহা, জীবনের এত ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম বিষয়গুলো আমাদের সালাফ শেখাতেন! এভাবে হাতে ধরে ধরে শাসন ও তরবিয়তকরতেন! যাকে শাসন ও তরবিয়ত করা হত তিনিও এর প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব বুঝতেন এবং গ্রহণ করতেন! এ যেন আমাদের গুপ্তধন! ঐতিহ্যের স্মারক! যার সূচনা হয়েছিল অমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পবিত্র সাহাবীগণের মাধ্যমে। অনেক ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তাঁরা নবীজীর সাহচর্য থেকে রপ্ত করেছেন।

কীভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সাহাবীদের সবকিছু শেখাতেন, সাহাবায়ে কেরামও কীভাবে ধারণ ও গ্রহণের মানসিকতা লালন করতেন, তার একটি চিত্র ফুটে ওঠে বিখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসী রা.-এর এক ঘটনা থেকে। ইহুদীরা তাঁকে খোঁচা দিয়েছিল- হায়! তোমাদের নবী বুঝি তোমাদেরকে সবকিছু ধরে ধরে শেখান, এমনকি হাম্মামের বিষয়াদি পর্যন্ত!সালমান ফারসী রা. ইহুদীদের এই খোঁচাকে পাত্তা তো দিলেনই না, উল্টো বুক টান করে দরাজ কণ্ঠে উত্তর ছুঁড়ে দিলেন ইহুদীদের প্রতি-

أَجَلْ لَقَدْ نَهَانَا -صلى الله عليه وسلم- أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ وَأَنْ لاَ نَسْتَنْجِىَ بِالْيَمِينِ...

অবশ্যই! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কেবলামুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। ডান হাতে ইস্তিনজা করতে নিষেধ করেছেন।... -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭

ছোট্ট শিশুকে যখন বাবা হাত ধরে শেখান এতে কি তার কোনো কষ্ট হয়? লজ্জাবোধ করে? সে বরং স্বচ্ছন্দে বাবার থেকে সব শিখতে পারে। আর না বাবাও এতে বিরক্ত হন বা কার্পণ্য করেন। নবীজীর সাথে সাহাবায়ে কেরামের মনোভাব এবং আচরণে অমায়িকতার মাত্রা ছিল তার চেয়েও অনেক বেশি। সেটিও সামান্য আঁচ করা যায় সালমান রা. থেকে বর্ণিত পরবর্তী হাদীস থেকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ بِمَنْزِلَةِ الْوَالِدِ أُعَلِّمُكُمْ فَإِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْغَائِطَ فَلاَ يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ وَلاَ يَسْتَدْبِرْهَا وَلاَ يَسْتَطِبْ بِيَمِينِهِ.

নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য। তোমাদেরকে (সবকিছু) শেখাই। যখন তোমরা বাইতুল খালায় (হাম্মামে) যাবে কেবলার দিকে মুখ করে অথবা কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে বসবে না। আর ডান হাতে ইস্তিনজা করবে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮

নবীজীর প্রিয় সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর ঘটনা তো স্মরণ রাখার মতো। রাতে নবীজী ঘরে কী আমল করেন, কীভাবে করেন, সেটি দেখার জন্য, বরং দেখে শেখার জন্য তিনি নবীজীর ঘরে রাত যাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি আমার খালা নবীজীর স্ত্রী হযরত মাইমুনা বিনতে হারেসের ঘরে রাত যাপন করছিলাম। সেদিন নবীজীও তাঁর ঘরে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামায পড়ে ঘরে এলেন। তারপর চার রাকাত নামায পড়ে বিশ্রামে গেলেন। তারপর উঠে  বললেন-

نَامَ الغُلَيِّمُ؟

বাচ্চাটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে? বা এজাতীয় কিছু বলে আমার খোঁজ নিলেন। এরপর নামাযে দাঁড়ালেন, আমি গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি ধরে আমাকে ডানপাশে আনলেন। পাঁচ রাকাত নামায পড়লেন, তারপর আরও দুই রাকাত পড়ে ঘুমিয়ে গেলেন। তখন আমি তাঁর নাকডাকার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তারপর ফজরের সময় উঠে মসজিদে গেলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৭

হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, এ থেকে ইবনে আব্বাস রা.-এর ফযীলত, ধী-শক্তির প্রখরতা, ইলমে দ্বীন শেখার প্রবল আগ্রহ প্রমাণিত হয়। -ফাতহুল বারী ২/৪৮৫

এভাবে সোহবত তথা সাহচর্য থেকে শেখার নজির অসংখ্য। আমরাও যদি শেখা ও গ্রহণের মানসিকতা রাখি তাহলে আমাদের মুরব্বিদের সাহচর্য থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারি। আল্লাহই উত্তম তাওফীকদাতা। হ

 

 

advertisement