রবিউল আখির ১৪৪৩   ||   নভেম্বর ২০২১

সুবহে সাদিক কখন শুরু?
প্রসঙ্গ : সমকালীন কিছু মুশাহাদার বিবরণ-২

মাওলানা মুহাম্মাদ ফয়যুল্লাহ

বিগত কিস্তিতে সমকালীন বেশ কিছু মুশাহাদার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে আলহামদু লিল্লাহ। সেগুলো ছিল আরববিশ্বের কয়েকটি দেশের মুশাহাদা। এসব মুশাহাদা ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক পর্যবেক্ষণের চাক্ষুষ প্রমাণ। সামনে পাক-ভারত উপমহাদেশের এমন আরো কিছু মুশাহাদার বিবরণও উল্লেখ করা হল।

ভারত

দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে মুশাহাদা

ভারতে প্রচলিত সময়সূচিগুলোর মধ্যে একটি হল, (قاسمی جنتری) ‘কাসেমী সময়সূচিহযরত মাওলানা আসলাম কাসেমী রাহ. দারুল উলূম দেওবন্দের পক্ষ থেকে এটি প্রস্তুত করেছিলেন। এই সময়সূচিতে ফজরের সময় দেওয়া হয়েছে ১৮º অনুযায়ী। পরবর্তীতে একসময় দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক প্রধান মুফতী হযরত মাওলানা নিযামুদ্দিন রাহ.-এর কাছে কেউ কেউ উক্ত সময়সূচিতে প্রদত্ত ফজরের সময়ের উপর আপত্তি উঠায় যে, এই সময় সঠিক নয়। তখন তিনি তাদের নিয়ে সুবহে সাদিক মুশাহাদার উদ্যোগ নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি তাদের নিয়ে দেওবন্দের বাইরে খোলা কোনো জায়াগায় গমন করেন। তিনি তাদেরকে বলে দেন, আমরা ও আপনারা সবাই স্বচক্ষে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করে সময় নোট করে নিয়ে আসব এবং এর সাথে সময়সূচিগুলো মিলিয়ে দেখা হবে। অতঃপর যেটি সঠিক প্রমাণিত হয় সে অনুযায়ী আমল করা হবে।

মুফতী ছাহেব রাহ.-এর কথা অনুযায়ী মুশাহাদা করা হয়। তিনি তাদের নিয়ে উপযুক্ত কোনো স্থানে গিয়ে মুশাহাদা করেন। সুবহে কাযিবের পর যখনই দিগন্তে প্রশস্ত আকারের আলো দৃশ্যমান হল, সবাই ঘড়ি দেখে সেই সময় নোট করে নেন। ফিরে এসে নোট করা সময়ের সাথে বিভিন্ন সময়সূচি মিলিয়ে দেখা হয়। তখন প্রমাণিত হয়, কাসেমী সময়সূচিই সঠিক। এরপর আপত্তিকারীরা চুপ হয়ে যায়।

দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ থেকে প্রদত্ত একটি ফতোয়াতে এই মুশাহাদার বিবরণ এসেছে, যে ফতোয়াটিতে মুফতী হাবীবুর রহমান খায়রাবাদী ও মুফতী মাহমুদ হাসান বুলন্দশহরী দা. বা.-এর দস্তখত রয়েছে। বিবরণটি নিম্নরূপ-

اسی طرح جب دارالعلوم دیوبند کی طرف سے حضرت مولانا محمد اسلم صاحب قاسمی دامت برکاتہم (حال استاذ حدیث دارالعلوم وقف دیوبند) کی تیار کردہ جنتری (قاسمی جنتری) جو قدیم وجدید فلکی حسابات کی روشنی میں نہایت احتیاط وکاوش کے ساتھ مرتب کی گئی ہے، اور قدیم جنتریوں کے مطابق ہے شائع کی گئی، تو بعض علماء نے یہ اعتراض کیا کہ اس میں طلوع صبح صادق کا وقت صحیح نہیں ہے، اور وہ حضرات یہ اعتراض لے کر حضرت مفتی محمد نظام الدین صاحب اعظمی (سابق صدر مفتی دارالعلوم دیوبند) کے پاس آئے، تو حضرت مفتی صاحب قدس سرہ نے فرمایا: حسابی بنیاد پر کسی جنتری کی تصحیح یا تغلیط کی ضرورت نہیں، مشاہدہ کر لیا جائے، اور جو جنتری مشاہدہ کی رو سےصحیح ثابت ہو اس پر عمل کیا جائے، اور جو اس کے خلاف ثابت ہو اس پر عمل نہ کیا جائے۔ اور مشاہدہ کے لئے یہ کیا جائے کہ آپ حضرات اور ہم لوگ اپنی اپنی سحری لے کر کل صبح صادق سے پہلے دیوبند سے باہر کسی کھلی فضا میں چلیں، وہیں سحری بھی کھائیں اور سب لوگ اپنی اپنی آنکھوں سے براہ راست طلوع صبح صادق کا مشاہدہ کریں، اور جس وقت صبح صادق کا مشاہدہ ہو اسے نوٹ کر لیں، پھر آکر دیکھیں جو جنتری اس کے مطابق ہو وہ صحیح سمجھی جائے، اور اس پر عمل کیا جائے۔ چنانچہ ایسا ہی کیا گیا اور تین کاریں گئیں اور باہر جاکر خود لوگوں نے دیکھا اور صبح کاذب کے بعد جوں ہی آسمان کے افق پر چوڑائی میں پھیلتی ہوئی روشنی نظر آئی اپنی اپنی گھڑی دیکھ کر وہ ٹائم نوٹ کر لیا، اور واپس آکر وہ ٹائم مختلف جنتریوں سے ملایا گیا، تو قاسمی جنتری کا ٹائم بالکل صحیح نکلا، معترض لوگ خاموش ہو گئے، اور اس جنتری کی صحت بالاتفاق تسلیم کرلی گئی، هكذا سمعته من شيخنا الكبير المفتي حبيب الرحمن الخيرآبادی المفتي الأكبر بالجامعة الإسلامية دار العلوم ديوبند. (مراسلہ شعبہ انٹرنیٹ نمبر৩৫২২/، برائے دار الافتاء، مؤرخہ : ৩৭/১১/১৬ھ)

পাকিস্তান

জুন ১৯৭০ ঈ.-এর যে মুশাহাদার কথা আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে তা যেহেতু অসম্পূর্ণ ছিল, যার উপর বিস্তারিত আলোচনা আমরা সামনে তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ, সেজন্য দারুল উলূম করাচি ও জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বানূরী টাউনের মাশায়েখগণ এর উপর আরো তাহকীক করতে থাকেন। এই তাহকীকের অংশ হিসেবে ১৯৭৩ সালে আরেকবার আরেকটু দীর্ঘ পরিসরে মুশাহাদার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন দারুল উলূম করাচী ও জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বানূরী টাউনের বড় বড় উস্তাযসহ আলেম ও দ্বীনদার অনেক ব্যক্তিবর্গ। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের ভেতর মোট আট দিন এই মুশাহাদা চলে। সামনে এর বিবরণ তুলে ধরা হল।

১৯৭৩ ও ৭৪ সালের মুশাহাদা

এই মুশাহাদা শুরু হয় ১৯৭৩ ঈ. (১৩৯৩ হি.) সালের ৩ এপ্রিল থেকে। ৩ থেকে ৬ এপ্রিল এই চার দিন মুশাহাদা করা হলেও এর দ্বারা তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।  বাকি চারদিন ছিল মুশাহাদার মূল সময়। এই চার দিন হল- ১১, ১২ এপ্রিল ১৯৭৩ ঈ. এবং ১৮ ও ১৯ আগস্ট ১৯৭৪ ঈ.।

১১ এপ্রিল ৭৩ ঈ. : এইদিন মুশাহাদার স্থানের নাম ছিল মিরপুর সাকরো’ (Mirpur Sakro)এর অবস্থান ২৪ : ৩৪ (২৪.৫৬º) অক্ষাংশ ও ৬৭ : ৩৭ (৬৭.৬১৬৬º) দ্রাঘিমাংশে। অ্যাস্ট্রোনমির হিসাব অনুযায়ী এই স্থানে ১৮º -এর সময় হয় ৪ : ৫৪ মিনিটে।

এইদিন মুশাহাদার জন্য উপস্থিত ছিলেন দারুল উলূম করাচি থেকে- মাওলানা আশেক ইলাহী বুলন্দশহরী রাহ., মুফতী মুহাম্মাদ রফী উসমানী ও মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম। আর জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বানূরী টাউন থেকে- মুফতী ওলী হাসান টোংকী রাহ., মুফতী আহমাদুর রাহমান রাহ., মাওলানা আবদুল কাইয়ূম রাহ., মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ., মুফতী আবদুস সালাম (চাটগামী) রাহ., মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ছাহেব ও মাওলানা মিফতাহুল্লাহ ছাহেব। তাদের বাইরে ছিলেন প্রফেসর আবদুল লাতীফ সাহেবসহ আরো ছয়জন। সবাই মিলে মোট ১৭ জন।

এই দিনের আকাশের অবস্থা ছিল ধুলিকণাযুক্ত; দিগন্ত পরিপূর্ণ পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত ছিল না।

এইদিন ৪ : ৫৪ মিনিটে মাওলানা আশেক ইলাহী বুলন্দশহরী রাহ. সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন। আটজন ৪ : ৫৫ মিনিটে, তিনজন ৪ : ৫৯ মিনিটে, একজন ৫ : ০০ টায় ও দুইজন ৫ : ০৪ মিনিটে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন।

এই তারিখে ওই জায়গায় পুরাতন সময়সূচি ও ১৮º অনুযায়ী সুবহে সাদিকের সময় ছিল ৪ : ৫৪ মিনিটে। আর ১৫º হিসেবে ৫ : ১০ মিনিটে।

লক্ষ্য করুন, এইদিনের মুশাহাদাটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মুশাহাদায় অংশ নিয়েছিলেন পাকিস্তানের বড় দুই দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী এক জামাত বড় বড় মুফতী ও আলেম। যারা হলেন আমাদের মুক্তাদা ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। এইদিনের মুশাহাদার ফলাফলও ছিল খুব স্পষ্ট। সেদিন হযরত মাওলানা আশেক ইলাহী রাহ. ঠিক ১৮ ডিগ্রিতেই সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। এর এক মিনিটের ভেতরই বাকি আরো আটজন সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। সর্বশেষ দুইজন মুশাহাদা করেছেন ৫ : ০৪ মিনিটে। অথচ এই তারিখে সেখানে ১৫º -এর সময় হয় ৫ : ১০ মিনিটে। তাহলে দেখা গেল এইদিন ১৭ জন মুশাহাদাকারীর সর্বশেষ ব্যক্তিও সুবহে সাদিক মুশাহাদা করছেন ১৫º-এর ৬ মিনিট আগে।

আমাদের আকাবির উলামায়ে কেরামের এই বিশাল জামাতের সুস্পষ্ট মুশাহাদার পর ১৮º-এ সুবহে সাদিক হওয়ার ব্যাপারে আর সন্দেহ থাকে কীভাবে?!

১২ এপ্রিল ৭৩ ঈ. : পরের দিন ১২ এপ্রিল। এই দিনের মুশাহাদার স্থান ছিল করাচির গাডাপ (Gadap) নামক এলাকার একটি উঁচু টিলায় অবস্থিত হাজ্বী উসমান মসজিদ। যার অবস্থান ২৫º অক্ষাংশ ও ৬৭.১৩২º দ্রাঘিমাংশে।

এইদিনের মুশাহাদায় উপস্থিত ছিলেন জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বানূরী টাউন থেকে- মুফতী ওলী হাসান টোংকী রাহ., মাওলানা আবদুল কাইয়ূম রাহ., মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ. ও মুফতী আবদুস সালাম রাহ. এবং তাদের সাথে আরো চার জন। সবাই মিলে মোট আটজন।

এইদিন সেখানে ১৮º-এর সময় ছিল ৪ : ৫৪ মিনিটে। ৪ : ৫৫ মিনিটে এইদিন তাঁরা সবাই সর্বসম্মতভাবে সেখানে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন। ডিগ্রি হিসেবে যা প্রায় ১৭.৭৮º হয়ে থাকে। এরপর আলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ৫ : ০৮ মিনিটে (১৫º -এর সময়) দিগন্তে এ পরিমাণ আলো ছড়িয়ে পড়ে যে, তখন ইসফারের সময় হয়ে যায়। এর দ্বারা তাদের কাছে ১৫º-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার দাবিটি যে ভিত্তিহীন তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, এইদিন সেখানে ১৮º -এর সময় ছিল ৪ : ৫৪ মিনিটে এবং ১৫º -এর সময় ছিল ৫ : ০৮ মিনিটে।

১৮ আগস্ট ৭৪ ঈ. : এই মুশাহাদার স্থান ছিল টান্ডু মুহাম্মাদ খান নামক এলাকার নিকটবর্তী একটি জায়গা, যার নাম জানহান সূমরো Janhan Soomro এর অবস্থান ২৪.৯২৫২৮৫১º অক্ষাংশ ও ৬৮.৩১১০৬৭৪º দ্রাঘিমাংশে। এই তারিখে সেখানে ১৮º -এর সময় হয় ৪ : ৪০ মিনিটের অল্প কিছু আগে। এই দিনের মুশাহাদায় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর আব্দুল লতীফসহ মোট পাঁচ জন।

এইদিন তারা ৪ : ০০ টা বাজার কিছু আগেই দিগন্তের উপর দিকে লম্বালম্বিভাবে প্রকাশিত পড়হব (শঙ্কু) আকারের সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেন। ৪ : ২০ মিনিট পর্যন্ত এই আলোটি স্পষ্টভাবেই দেখা যায়। এর পর থেকে আলোটি ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকে এবং উচ্চতা কমতে থাকে। যখন ৪ : ৪০ মিনিট হয় তখন তারা নিশ্চিত হন যে সুবহে সাদিক হয়ে গেছে। কেননা তখন স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল যে, আলোটির উচ্চতা থেকে প্রশস্ততা বেড়ে গেছে এবং এর আকার অর্ধ বৃত্তের মত হয়ে গেছে।

আমরা পূর্বেই বলেছি, ওই জায়গায় সেদিন ১৮º অনুযায়ী সময় ছিল ৪ : ৪০ মিনিট। সুতরাং তারা এই দিন ১৮º -এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। আর সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেছেন এরও ৪০ মিনিট আগে।

১৯ আগস্ট ৭৪ ঈ. : পরের দিন ১৯ আগস্ট ওই জায়গাতেই আবার তারা মুশাহাদা করেন। সেদিনও সবাই নিশ্চিতভাবে ৪ : ৪০ মিনিটে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন।

দেখুন-

صبح صادق وصبح کاذب، پروفیسر عبد اللطیف، ص ৮২-৭৫۔

এসব মুশাহাদা ও অ্যাস্ট্রোনমির বিভিন্ন বই থেকে বিষয়টি তাহকীক করার পর আল্লামা ইউসুফ বানূরী রাহ. ও মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-সহ তখনকার আকাবির আলেম হযরতগণের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, পূর্বের সময়সূচিই সঠিক। সুবহে সাদিক ১৮ ডিগ্রিতেই হয়। ১৫º -এর আগে শুরু না হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। ২ রমযান ১৩৯৩ হি.-এর একটি বক্তব্যে আল্লামা ইউসূফ বানূরী রাহ. বলেন-

لیکن بعد میں بعض مخلصین کی کوشش سے جو معلومات حاصل ہوئیں ان سے یہ بات پایہ تحقیق کو پہنچی کہ تمام نقشوں میں وہی سابق کراچی کا نقشہ جسکو مرحوم حضرت حاجی وجیہ الدین صاحب خان بہادر نے مرتب کرایا تھا اور چھاپا تھا وہ بالکل صحیح ہے۔

এখানে তিনি বলেছেন-

পরবর্তীতে কোনো কোনো মুখলিস ব্যক্তির চেষ্টা-প্রচেষ্টায় যেসব তথ্য-প্রমাণ মিলেছে এর দ্বারা বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেছে যে, করাচির সেই পুরাতন সময়সূচিই পুরোপুরি সঠিক, যা মরহুম হযরত হাজ্বী ওজীহুদ্দীন খান বাহাদুর তৈরি করিয়ে প্রকাশ করেছিলেন।

১৩৯৩ হি.-এরই ২৪ যিলহজে¦র একটি বক্তব্যে প্রায় একই কথা আরেকটু বিস্তারিতভাবে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-ও বলেছেন-

سال رواں میں بعض اہل فن حضرات کے ساتھ بحث وتمحیص اور جدید فلکیات کی بعض کتابوں کی مراجعت سے یہ بات ثابت ہوگئی کہ جدید ماہرین فلکیات نے خود صبح کاذب کو الگ کر کے بیان کیا ہے، اور وہ در حقیقت رات کا

حصہ ہے۔ اس کے بعد جو صبح صادق ہوتی ہے اسکو انہوں نے صبح کہا ہے۔ اس نئی تحقیق اور بحث سے میرا تردد رفع ہو گیا اور میں قدیم جنتری کے اوقات کو حسابی اعتبار سے صحیح سمجھتا ہوں۔

দেখুন-

صبح صادق وصبح کاذب، پروفیسر عبد اللطیف، ص ৯-৮ ۔

মুশাহাদার এই পর্বের সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট নিম্নরূপ-

০        তারিখ   সময়     ডিগ্রি

১        ১১-০৪-১৯৭৩     ৪ : ৫৪  ১৮

২        ১২-০৪-১৯৭৩    ৪ : ৫৫  ১৭.৭৮

৩        ১৮-০৮-১৯৭৩    ৪ : ৪০  ১৮.৩

৪        ১৯-০৮-১৯৭৪    ৪ : ৪০  ১৮.৪

মুশাহাদার আরেকটি পর্ব

মুশাহাদার আরেকটি পর্ব জনাব শাব্বীর আহমদ কাকাখিল সাহেবের। ১৯৮৩ সালের রমযানে প্রায় এক মাস তিনি সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন। তখন তিনি ১৮ ডিগ্রিতে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন।  সে সময় তিনি প্রায় ছয় মাস মাগরিবের পর শাফাকে আহমারও মুশাহাদা করেছেন। তার এই মুশাহাদায় গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য উঠে আসে।  তা হল, দুই বার তিনি ১৫ ডিগ্রির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত শাফাকে আহমার দেখেছেন। আর একবার ১৫.৫º ও আরেক বার ১৬.৫º পর্যন্তও শাফাকে আহমার দেখতে পেয়েছেন। অথচ শাফাকে আহমারের পর শাফাকে আবইয়ায প্রকাশ হয়। শাফাকে আবইয়ায শেষ হওয়ার পর এশার ওয়াক্ত শুরু হয়। আর আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হল, ১৫ ডিগ্রিতেই শাফাকে আবইয়ায শেষ হয়ে এশার ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। এর দ্বারা এশার সময় ১৫ ডিগ্রিতে শুরু হওয়ার কথা যেমন ভুল প্রমাণিত হয়, তেমনি ফজরের ক্ষেত্রে ১৫ ডিগ্রিতে সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথাও ভুল প্রমাণিত হয়। কেননা ডিগ্রির হিসাবে শাফাকে আবইয়ায যত ডিগ্রিতে শেষ হয় সুবহে সাদিকও তত ডিগ্রিতে শুরু হয়। অতএব ১৬.৫º পর্যন্ত যখন শাফাকে আহমার দেখা গেছে তাহলে শাফাকে আবইয়ায শেষ হবে আরো বেশ পরে, পক্ষান্তরে সুবহে সাদিকও শুরু হবে ১৬.৫º -এর বেশ আগে।

কাকাখিল সাহেব আরো বলেন, এরপর ১৯৮৪-এর জানুয়ারিতে মুফতী রশীদ আহমদ রাহ.-এর কাছে এসব বিবরণ আমি পেশ করি। তখন মুফতী সাহেব চুপ থাকেন। এর দু-তিন দিন পর আবার দেখা করলে তিনি বলেন-

میں پہلے صرف ১৫ درجے کے قول کو ہی واقعی قول سمجھتا تھا، لیکن اب ১৮ درجے کے قول کو بلکہ ১৯ درجے کے اقوال کو بھی نظر انداز نہیں کر رہا ہوں۔

আমি আগে শুধু ১৫ ডিগ্রির মতকেই সঠিক মনে করতাম। কিন্তু এখন ১৮ ডিগ্রি এমনকি ১৯ ডিগ্রির মতকেও প্রত্যাখ্যান করি না।

দেখুন-

صبح صادق اور صبح کاذب کے بارے میں ایک علمی اور تحقیقی جائزہ،  سید شبیر احمد کاکاخیل، ص ۔

কাকাখিল সাহেব যে ১৬.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত শাফাকে আহমার মুশাহাদা করেছেন, এটি শাস্ত্রীয়ভাবেও প্রমাণিত। পূর্বে যেসব মুসলিম বিজ্ঞানীদের মত শাফাকের ক্ষেত্রে ১৭ক্ক উল্লেখ করা হয়েছে এটি শাফাকে আহমারের সময়। অর্থাৎ তাদের মতে ১৭ক্ক পর্যন্ত শাফাকে আহমার বাকি থাকে। এরপর শাফাকে আবইয়ায শুরু হয়। যেমন ইলমুল ফালাক ও ইলমুত তাওকীতের বিশেষজ্ঞ আলেম জামালুদ্দীন আলমারদানী রাহ. (মুত্যু ৮০৯ হি./১৪০৬ ঈ.) বলেন-

الثامن والعشرين في معرفة حصتي الشفق والفجر: الشفق هو  الحمرة التي تبقى في أفق المغرب بعد مغيب الشمس، وحصته قوس من مدار الجزء ما بين الأفق والمقنطرة المنحطة تحته سبع عشرة درجة. ... وقال بعض المتأخرين: في الشفق ستة عشر، وفي الفجر عشرين، وهو ضعيف لقلة من قال به من الرصاد ... والذي اعتمد عليه محققو هذا العلم من الرصاد وغيره سبعة عشر في الشفق وتسعة عشر في الفجر.

এখানে তিনি বলেছেন, এই শাস্ত্রের মুহাক্কিকগণের নিকট শাফাকে আহমার শেষ হয় ১৭º-এ। মুতাআখখিরীনদের কেউ কেউ ১৬º-এর কথা বললেও তা দুর্বল।

দেখুন-

الدر المنثور في العمل بربع الدستور، مخطوط المكتبة الأزهرية، الرقم:৭৬৬০، ق ৫১.

শাব্বীর আহমদ কাকাখিল সাহেব কর্তৃক ১৬.৫º পর্যন্ত শাফাকে আহমার মুশাহাদা এবং শাস্ত্রজ্ঞগণ থেকে ১৭º-এ শাফাকে আহমার শেষ হওয়ার বক্তব্যও এর প্রমাণ যে, ১৫º-এর আগে সুবহে সাদিক শুরু না হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ অবাস্তব।

দারুল উলূম ওয়াজিরিস্তানের আলেমগণের মুশাহাদা

ওয়াজিরিস্তানের ওয়ানা এলাকার জন্য প্রফেসর আবদুল লতীফ মরহুম ১৮º অনুযায়ী নামাযের সময়সূচি তৈরি করেন। দারুল উলূম ওয়াজিরিস্তানের মুহতামিম মাওলানা নূর মুহাম্মাদ সাহেবের নিকট এই সময়সূচি সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রফেসর সাহেব বরাবর একটি চিঠি লেখেন। উক্ত চিঠিতে তিনি বলেন-

مكرمى جناب عبد اللطيف صاحب زيد مجدكم، السلام عليكم،

مزاج گرامى، آپ كے مطلوبہ اوقات كے متعلق پہلے بھی تحقيق ارسال كرچكا ہوں، اب بھى  گذارش ہے كہ ميں نے دار العلوم وزيرستان وانا كےجيد علماء كى حسب ذيل كميٹی مقرر كى، انہوں نےمؤرخہ ১৩ جون ৮৮ سے২১ جون تك صبح صادق اور غروب كے اوقات چيك كئے اور پھر مجھے ديدئے، جب ميں نے آپ كے ارسال كرده اوقات كےساتھ چيك كيا تو بالكل آپ كے نقشہ كے سو فيصد مطابق تھے، حالانكہ ميں نے مذكوره علماء كو آپ صاحب كے نقشے كے اوقات نہيں بتائے تھے، اس لئے آپ كو خوش خبرى ديتاہوں كہ وانا كے اوقات كے متعلق آپ كا نقشہ بالكل درست ہے، كميٹى  كےعلماء كےنام يہ ہيں: مولانا عبد الوارث صاحب، مولانا عبد المجيد صاحب، مولانا صلاح الدين صاحب، مولانا فريد احمد صاحب۔

এখানে তিনি বলেছেন, প্রফেসর আবদুল লতীফকৃত এই সময়সূচিটি সঠিক কি না তা যাচাইয়ের জন্য তার নিজ মাদরাসা দারুল উলূম ওয়াজিরিস্তানের চারজন  যোগ্য আলেমকে সুবহে সাদিক ও সূর্যাস্তের সময় মুশাহাদার জন্য পাঠান। মুশাহাদার জন্য যাওয়ার আগে তিনি প্রফেসর আবদুল লতীফকৃত এই সময়সূচিতে প্রদত্ত সময় তাদেরকে জানাননি। তাদের মুশাহাদার তারিখ ছিল ১৯৮৮ সালের ১৩ জুন থেকে ২১ জুন। এই কয়দিন মুশাহাদা করে তারা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নূর মুহাম্মাদ ছাহেবের কাছে এর ফলাফল জমা দেন। তারপর তিনি প্রফেসর আবদুল লতীফকৃত এই সময়সূচির সাথে তাদের প্রদত্ত সময় মিলিয়ে দেখেন। দেখা গেল, মুশাহাদা করে তারা সুবহে সাদিকের যে সময় দিয়েছেন প্রফেসর আবদুল লতীফকৃত এই সময়সূচিতে হুবহু এই সময়ই আছে।

দেখুন-

تسہیل الفلکیات، پروفیسر عبد اللطیف، ص ১২۔

এ থেকে স্পষ্ট যে, দারুল উলূম ওয়াজিরিস্তানের আলেমগণ ১৮º-এ সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন।

***

এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশের বহু দিনের মুশাহাদার বিবরণ উল্লেখ করা হল। যার সংখ্যা ত্রিশের অধিক। সমকালে বিভিন্ন দেশে এতগুলো দিনে এই অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। আলোচ্য বিষয়ে এই মুশাহাদাগুলো এতই সুস্পষ্ট প্রমাণ, যা আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার পর্যায়ের। এরপরও তাতে কীভাবে সংশয়-সন্দেহের অবকাশ থাকে?! এত সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন স্থানে এত দিন ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদা করলেন। বিভিন্ন দেশের এই বিশাল জামাতের চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণের পর আর কোনো কথা থাকে না।

মুশাহাদার আরো কয়েকটি পর্ব

আলহামদু লিল্লাহ, এ পর্যন্ত মুশাহাদার অনেকগুলো পর্ব উল্লেখ করা হয়েছে। এই পর্বগুলো ছিল এমন, যাতে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করা গেছে ১৮º-এর ভেতর। সামনে আমরা মুশাহাদার আরো কয়েকটি পর্ব উল্লেখ করছি। যেগুলোতে ঠিক ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদা না করা গেলেও এর দ্বারা ১৮º-এ সুবহে সাদিক বৈ অন্য কিছু প্রমাণিত হয় না। কারণ, তারা ঠিক ১৮º-এ সুবহে সাদিক দেখতে না পেলেও ১৭º-এর আগেই তা মুশাহাদা করেছেন। স্পষ্টত, এর দ্বারা ১৮ ডিগ্রিই প্রমাণিত হয়। কেননা এই পর্বগুলোতে যে সুবহে সাদিক দেখতে অল্প কিছু দেরি হয়েছে তা মূলত ওজরের কারণে ছিল। মুশাহাদার স্থান আলোকসজ্জামুক্ত ছিল না, কিংবা দিগন্ত পুরোপুরি দূষণমুক্ত ছিল না। এসব কারণেই কিছুটা দেরি হয়েছে। যার বিবরণ এই মুশাহাদাগুলোর রিপোর্টেই বিদ্যমান আছে। অতএব এর থেকে স্পষ্ট যে, এই প্রতিবন্ধকগুলো না থাকলে তারাও সহজভাবেই ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদায় সক্ষম হতেন।

সর্বোপরি কথা হল, এসব মুশাহাদা দ্বারা  এটা তো দৃঢ়ভাবেই প্রমাণিত যে, ১৫º-এর আগে সুবহে সাদিক না হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিরোধী।

আরো লক্ষণীয় যে, সুবহে সাদিক ১৫º-এর আগে হয় না- আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি শুধু এটুকুতেই শেষ নয়; বরং আহসানুল ফাতাওয়ার পূর্ণ দাবি হল, ১৮º থেকে ১৫º-এর আগ পর্যন্ত সুবহে কাযিবের সময়। সুবহে কাযিব ১৫º-এ শেষ হয় এবং এর পর থেকেই মিলিতভাবে সুবহে সাদিক শুরু হয়। অর্থাৎ ১৫º-এর আগ মুহূর্ত সুবহে কাযিবের সময়। আর ১৫º থেকে সুবহে সাদিকের সময়। তাহলে আহসানুল ফাতাওয়ার সাথে এখানে ইখতেলাফের মূল জায়গাটি হল, ১৮º থেকে ১৫º-এর সময়টুকু। এর পুরোটিই হয়তো সুবহে কাযিব হবে; নতুবা সুবহে সাদিক। তৃতীয় কোনো অবস্থা হতে পারে না। অতএব ১৫º-এর আগে সুবহে সাদিক না হওয়ার দাবিটি ভুল প্রমাণিত হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮º-এ সুবহে সাদিক হওয়ার বিষয়টি সঠিক প্রমাণিত হয়ে যায়। আর ১৫º-এর কিছু আগেও যদি সুবহে সাদিক মুশাহাদা করা যায় তাহলেই এর আগে সুবহে সাদিক না হওয়ার দাবি ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়।

সুতরাং ১৭º-এর আগে, এমনকি ১৬º-এ সুবহে সাদিক দেখা গেলে এর দ্বারা যেমন ১৮º-এ সুবহে সাদিক হওয়াই প্রমাণিত হয়, তেমনি ১৫º-এর কিছু আগেও যদি সুবহে সাদিক মুশাহাদা করা যায় তবে এর দ্বারাও ১৫º-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার দাবি ভুল প্রমাণিত হয়, ফলে ১৮º-এ সুবহে সাদিক হওয়া সঠিক প্রমাণিত হয়।

এখন সামনে এমন কিছু মুশাহাদার বিবরণও পড়ে দেখুন।

জর্দান

গত সংখ্যাতে জর্দানের একটি মুশাহাদার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি ছিল ১৪০১ হি. মোতাবেক ১৯৮১ ঈ. সালের। জর্দান ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত মুশাহাদায় সুবহে সাদিক ১৮.৬º-এ পর্যবেক্ষণ করা হয়। কাছাকাছি সময়ে জর্দানে আরেকটি মুশাহাদার আয়োজন হয়।

জর্দান এস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির সদস্যগণ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে গঠিত একটি জামাত ১৪৩০-১৪৩১ হিজরী মোতাবেক ২০০৯-২০১০ সালের ভেতর মোট বারো দিন পুনরায় সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন। মুশাহাদার পর তারাও ১৮ ডিগ্রিতে প্রচলিত সুবহে সাদিকের সময় সঠিক হওয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করে।

তাদের এই বারো দিনের মুশাহাদার মাঝে এক দিন (১২-০৩-১০) জর্দানের রাজধানী আম্মান শহরের ভেতর মুশাহাদা করায় ১৮º-এর ৩০ মিনিট পর সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। আরেকদিন (১০-০৪-১০) প্রায় একই কারণে শহরের আলোকসজ্জা বেশি থাকায় ১৩ মিনিট পর সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। তাদের বাকি দশ দিনের মুশাহাদার সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট এই-

২০০৯

তারিখ   স্থান      সময়     ডিগ্রি

১৮.০৯  أرينبة    ৫:০৪    ১৭.১

০২.১০   سواقة   ৫:১৭    ১৬.২৫

১৭.১০   سواقة   ৫:২৫    ১৬.৬

৩০.১০  أرينبة    ৪:৩৭    ১৬

২৫.১২   أرينبة    ৫:১১    ১৭

 

২০১০

২২.০১   أرينبة    ৫:১৬    ১৬.৬

১৯.০২   سواقة   ৪:৫৯    ১৬.৬

১৮.৬    سواقة   ৩:৫৪    ১৭.৫৬

১৬.৭    أرينبة    ৪:১০    ১৭.৩

১৭.৯    أرينبة    ৫:০৬    ১৬.৬৫

দেখুন-

تحديد موعد حلول الفجر الصادق في الأردن بالرصد الفلكي المباشر بالعين المجردة، الأستاذ الدكتور عبد القادر عابد، المجلة الأردنية في الدراسات الإسلامية، مجلد ১১ ()، ২০১৫، ص.

দেখুন, ১৪৩০-১৪৩১ হিজরী মেতাবেক ২০০৯-২০১০ সালের এই মুশাহাদায় তারা ঠিক ১৮º-এ সুবহে সাদিক মুশাহাদা করতে না পারলেও এর অনেক কাছাকাছি সময়ে (১৭.৫৬º-এ) তা পর্যক্ষেণ করেছেন। তাই এই মুশাহাদার ভিত্তিতে তারা এই সিদ্ধান্ত প্রদান করেন-

قامت مجموعة من أعضاء جمعية الفلك الأردنية والفقهاء وغيرهم برصد الفجر الصادق بالعين المجردة مرة كل شهر ولمدة عام كامل ১৪৩১-১৪৩০هـ وفي عدة مواقع من الأردن. وقد توصّل الراصدون إلى أن الفجر الصادق لا يُتَحَرّى إلا في ظلام دامس، لأنه يبدأ خافتا ثم ينتشر أفقيا بالتدريج. وعليه لا تُقبل مراقبته من داخل المدن بسبب إضاءتها العالية التي تتغلب على إضاءة  الفجر الصادق في البدايةومن ثم، تُرَدّ دعوى القائلين بتأخير أذان الفجر والإمساك في رمضان ৩০-২০ دقيقة.

نوصي بأن يبقى أذان الفجر كما هو الآن أي عندما تكون الشمس على مستوى ১৮ درجة تحت الأفق الشرقي. وهو ما تعمل به المملكة الأردنية الهاشمية منذ زمن طويل. ذلك لأننا رأينا الفجر الصادق عدة مرات بعد- ৫  دقائق من بدء الأذان في ظروف غير تامة الإظلام وغير خالية من التلوث الجوي، مما يشير إلى إمكانية رؤية الفجر الصادق مع بدء لحظة الأذان لو كانت الظروف أفضل. ونقبل تأخير الأذاندقائق فقط، وهو أفضل زمن يقيني حصل عليه فريق الرصد.

এখানে তারা বলেছেন-

জর্দান অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির একদল সদস্য, কয়েকজন ফকীহ ও অন্যান্য আরো কয়েকজনকে নিয়ে ১৪৩০-১৪৩১ হিজরীর ভেতর পুরো এক বছর প্রতি মাসে একবার করে জর্দানের বিভিন্ন স্থানে গমন করে খালি চোখে সুবহে সাদিক পর্যবেক্ষণ করেছেন। পর্যবেক্ষকগণ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সুবহে সাদিক পুরো অন্ধকার ব্যতীত পর্যবেক্ষণ করা যায় না। কারণ, এটি অস্পষ্টভাবে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে অনুভূমিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অতএব, শহরের অভ্যন্তরে থেকে এটি দেখা যাবে না। সুতরাং যারা ফজরের আযান দেরিতে দেওয়ার কথা বলেছে এবং রমযানে ২০-৩০ মিনিট পর পর্যন্ত সেহরি খাওয়ার কথা বলেছে তাদের দাবি প্রত্যাখ্যাত।

আমরা প্রস্তাব দিচ্ছি যে, বর্তমানে ফজরের আযান যেমন ১৮º-এ দেওয়া হয় তা এভাবেই বহাল রাখা হোক। যার উপর দীর্ঘকাল ধরে জর্দানে আমল চলে আসছে। এর কারণ হল, বেশ কয়েকবার এমন স্থান থেকে আমরা আযান শুরু হওয়ার (১৮º-এর) ৪-৫ মিনিট পরই সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছি যা পুরোপুরি অন্ধকার ছিল না এবং বায়ু দূষণমুক্ত ছিল না। যা এর দিকে ইঙ্গিত করে যে, অনুকূল পরিবেশে আযানের শুরুতেই (১৮º-এ) সুবহে সাদিক দেখা সম্ভব।

দেখুন-

تحديد موعد حلول الفجر الصادق في الأردن بالرصد الفلكي المباشر بالعين المجردة، ص .

তুরস্ক

২০১৯ সালে তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সেপ্টেম্বরের ২৯ ও ৩০ তারিখ দুই দিন সুবহে সাদিক ও সুবহে কাযিব মুশাহাদা করা হয়। এই মুশাহাদায় অংশ নিয়েছিলেন তুরস্ক, জার্মানি, ফ্রান্স ও আমিরাতের ১২ জন শরীয়া বিশেষজ্ঞ আলেমেদ্বীন ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এই ১২ জনের নাম ও পরিচয় আরবীতে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

-د. أكرم كلش (رئيس المجلس الأعلى للشؤون الدينية التركية)

-محمد أكيم (خبير في المجلس الأعلى للشؤون الدينية التركية)

-أميد أرتم (فلكي من رئاسة الشؤون الدينية التركية)

-محمد شوكت عودة (مدير مركز الفلك الدولي، الإمارات)

-غرهان أرن (فلكي من رئاسة الشؤون الدينية التركية)

-عبد الرحمن شن أغلو (مفتي منطقة "جريدة"، تركيا)

-حميراء نور أيشلك (فلكية من رئاسة الشؤون الدينية التركية)

-إلهامي آشق قيا (فلكي من رئاسة الشؤون الدينية التركية)

-عز الدين عوير (ممثل تقويم مسجد باريس في فرنسا)

-১০ عزيز أزترك (خبير في المجلس الأعلى للشؤون الدينية التركية)

-১১ د. خالد حنفي (رئيس لجنة الإفتاء في ألمانيا)

-১২ إلهان بلجو (ممثل تقويم ملي كروش في ألمانيا)

মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা مركز الفلك الدولي (International Astronomical Center) -এর ওয়েবসাইটে প্রচারিত তাদের এই মুশাহাদার রিপোর্টটি সামনে তুলে ধরা হল-

نتيجة رصد الفجر من تركيا:

نظمت رئاسة الشؤون الدينية في تركيا حملة لرصد الفجر الصادق، وشارك في الرصد فريق من رئاسة الشؤون الدينية التركية وفقهاء وفلكيين من عدة دول من الخارج مثل ألمانيا وفرنسا والإمارات، وقد قام الفريق المكون من ১২ راصدا بمراقبة الفجر الصادق من منطقة بعيدة عن المدن من أعلى قمة يبلغ ارتفاعها ১৮০০ متر عن سطح البحر في منطقة "جريدة" في محافظة "بولو"، وكانت السماء صافية جدا ومظلمة بشكل مقبول، مع وجود إضاءات بسيطة في جهة الشرق أثرت بشكل طفيف على رؤية بداية ظهور الفجر الصادق.

وقام الفريق برصد الفجر يومي ২৯ و ৩০ سبتمبر ২০১৯، وتطابقت نتائج اليومين تقريبا، حيث تمكن الجميع من رؤية الفجر الكاذب بشكل واضح، وذلك على هيئة إضاءة بيضاء باهتة مستطيلة إلى أعلى على شكل هرم قاعدته على الأفق ورأسه في الأعلى، وبعد ذلك بدأت إضاءة الفجر الصادق بالظهور والانتشار على الأفق الشرقي بشكل مستطير منبسط على الأفق، وتراوحت الزاوية التي تمكن الراصدون عندها من رؤية الفجر الصادق ما بين الزاوية ১৫.والزاوية ১৭.، ويشار إلى أن إضاءة القرى الصغيرة المتواجدة في جهة الشرق كان لها الأثر في تأخر بسيط في رؤية بداية الفجر الصادق، فلو كان الأفق الشرقي مظلما تماما لتمكن الراصدون من رؤية الفجر الصادق بسهولة أكثر وبزاوية أبكر، إلا أن مثل هذه الأماكن التي ينعدم فيها التلوث الضوئي تماما أصبحت في وقتنا الحاضر نادرة جدا ويصعب الوصول إليها.

وفيما يلي بعض الملاحظات التي تجدر الإشارة لها:

-فور وصول الراصدين إلى منطقة الرصد قبيل ظهور الفجر الصادق، أثارت إضاءة بعض القرى في جهة الشرق تخوف فريق الرصد من عدم رؤية

الفجر إلا على زوايا متأخرة، وخشي البعض من عدم التمكن من إجراء الرصد بشكل مقبول. وعليه قرر الفريق المضي قدما بالرصد مع أخذ هذه الملاحظة بعين الاعتبار عند دراسة نتائج الرصد. إذ أنه لا يمكن اعتبار هذه الحملة قد تمت من مكان تام الإظلام.

-إن بعض المشاركين لم يشارك سابقا بتوقيت بداية ظهور الفجر الصادق، وكانت هذه الحملة هي التجربة الأولى له، وبالتالي لا يمتلك الخبرة الكافية بهذا الموضوع، ومن خلال الاطلاع على نتائج الحملات السابقة التي أجريت في دول أخرى، نلاحظ أن الراصد في بدايات أرصاده لا يلاحظ طلوع الفجر الصادق في أول وقته، ولكن مع تمرسه وازدياد خبرته تصبح لديه الخبرة بملاحظة أول وقت طلوع الفجر الصادق في وقت أبكر. ويجب أخذ هذه الملاحظة بعين الاعتبار عند دراسة نتائج هذه الحملة، إذ أنها حملة سريعة استمرت لمدة يومين فقط. فعلى سبيل المثال كان الراصدون في الحملة الإماراتية التي استمرت أربع سنوات لا يلاحظون الفجر الصادق في بداية حملتهم إلا على زوايا تتراوح بين ১৪ و ১৬، ولكن مع اكتسابهم الخبرة المطلوبة بعد إجراء عدة أرصاد أصبحوا قادرين على تمييز الفجر الصادق على زوايا تتراوح ما بين ১৮ و ১৯..

-لا يصح أخذ معدل نتائج الأرصاد في مثل هذا النوع من الرصد، فعادة بمثل هذا النوع من الأرصاد تأخذ القيم الأولى وليس المعدل، إذ أن نتائج الرصد بالعين المجردة تتأثر بخبرة الراصد وحدة بصره ومدى إرهاقه وقت الرصد.

بناء على ما تقدم، يمكن القول بأن نتائج هذه الحملة القصيرة تؤكد صحة الزوايا المعتمدة في تقاويم الدول الإسلامية، ومنها أن الفجر يحين ما بين الزاوية ১৯ و ১৮، مع ملاحظة أن الزاوية ১৮ أنسب للمناطق الشمالية، كونها أيسر في وقت الفجر ولا تخالف ما استقر عليه أمر الأمة الإسلامية وقول علمائها، وهذا يتفق مع الحملات الأخرى التي أقيمت في مختلف الدول الإسلامية الأخرى.

فيما يلي جدول يبين نتائج الراصدين يوم ২৯ سبتمبر ২০১৯م وجدول لنتائج يوم ৩০ سبتمبر ২০১৯م.

 

  ২৯       سبتمبر ২০১৯ 

الراصد

الزاوية

وقت طلوع الفجر الصادق

رؤية الفجر الكاذب

محمد أكيم

17.1

05:18

نعم

04:30

أميد أرتم

17.1

05:18

نعم

شوكت

17.1

05:20

نعم

غرهان أرن

16.8

05:22

نعم

عبد الرحمن

16.4

05:22

نعم

حميراء نور

16.4

05:22

نعم

إلهامي آشق

16.4

05:23

ليس واضحا

د.أكرم

16.2

05:23

نعم

عز الدين

16.2

05:23

نعم

عزيز أزترك

16.2

05:23

نعم

خالد حنفي

15.8

05:25

نعم

إلهان بلجو

15.8

05:25

نعم

 

৩০  سبتمبر ২০১৯

الراصد

الزاوية

وقت طلوع الفجر الصادق

رؤية الفجر الكاذب

أميد أرتم

17.3

05:18

نعم

شوكت

17

05:20

نعم

حميراء نور

16.8

05:21

نعم

غرهان أرن

16.8

05:21

نعم

محمد أكيم

16.6

05:22

نعم

د.أكرم

16.4

05:23

نعم

عبد الرحمن

16.4

05:23

===

عزيز أزترك

16.4

05:23

نعم

إلهامي آشق

16.2

05:24

ليس واضحا

خالد حنفي

15.7

05:27

نعم

عز الدين

15.7

05:27

نعم

إلهان بلجو

15.1

05:30

نعم

 

 

দেখুন-

http://www.astronomycenter.net/articles/2020/07/04/TurkeyFajer

সমকালীন মুশাহাদাগুলোর মধ্যে তুরস্কের এই মুশাহাদায় অংশ নিয়েছিলেন চারটি দেশের শরীয়া ও জ্যোতির্বিজ্ঞান উভয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। তাদের এই মুশাহাদার লক্ষণীয় দিকগুলো হল-

১. এই বিবরণটিতে বলা হয়েছে, মুশাহাদার স্থানটি ছিল, তুরস্কের বোলু (Bolu) শহরের জারীদা (Gerede) নামক এলাকা। আর এই এলাকাটি ৪০.৭৯১২৩৭º অক্ষাংশ ও ৩২.২০৫৮১৬৪º দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।

২. ২৯ সেপ্টেম্বর তারা সেখানে ০৪ : ৩০ মিনিটে সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেছেন। আর তাদের মাঝে তিনজন সুবহে সাদিক দেখেছেন ০৫ : ১৮ মিনিটে। ডিগ্রি হিসেবে তা হয় ১৭.১º

এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হল, ১৭.১º -এর সময় থেকে ৪৮ মিনিট পূর্বে সেদিন তারা সুবহে কাযিব দেখেছেন। হিসাব করে দেখা গেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর উক্ত স্থানে ০৪ : ৩০ মিনিটে সূর্য দিগন্তে ২৬º নিচে থাকে। অর্থাৎ এই দিন তারা সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেছেন ২৬º-এ আর সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন ১৭.১º-এ।

৩. এই দুই দিনের মুশাহাদায় তাদের ১২ জনের সবাই ১৫º -এর আগেই সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। প্রথম দিনে ১২ জনের মধ্যে ১০ জন ১৭.১º থেকে ১৬.২º -এর ভেতর সুবহে সাদিক দেখেছেন। বাকি দুইজন ১৬º -এর অল্পক্ষণ পরই ১৫.৮º-এ সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। দ্বিতীয় দিনের ফলাফলও প্রায় কাছাকাছি। এইদিন একজন ১৭.৩º-

সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন।

৪. উক্ত স্থানে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৮º-এর সময় হয় ০৫ : ১৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে। দ্বিতীয় দিন ০৫ : ১৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডে। কিন্তু উভয় দিনই তাদের কেউ এই সময় সুবহে সাদিক দেখতে পাননি। বরং উভয় দিনই ০৫ : ১৮ মিনিটে সর্বপ্রথম সুবহে সাদিক দেখেছেন। অর্থাৎ প্রথম দিন ৩ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড পর এবং দ্বিতীয় দিন ২ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড পর দেখেছেন। এতটুকু দেরি হওয়ার কারণ তারা বলেছেন, ‘এখানে লক্ষণীয় যে পূর্ব দিকের ছোট ছোট গ্রামগুলোর আলোকপাত সুবহে সাদিকের শুরু দেখতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ার কারণ ছিল। নতুবা পূর্ব দিগন্তটি পুরোপুরি অন্ধকার হলে পর্যবেক্ষকরা সহজেই আরও কিছু আগেই সুবহে সাদিক দেখতে পেতেন। কিন্তু আজকাল এমন স্থান পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে পড়েছে যেখানে দিগন্ত পুরোপুরি দূষণমুক্ত থাকবে।

আর উভয়দিন যারা অন্যদের তুলনায় কিছুটা দেরিতে দেখেছেন, তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তাদের পূর্বে মুশাহাদার অভিজ্ঞতা ছিল না। আর মুশাহাদাও ছিল কেবল দুই দিনের। আর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সুবহে সাদিকের উদয়ের প্রথম ক্ষীণ আলো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রথম মুশাহাদাতেই দেখে ফেলা যায় না; বরং কিছুদিন মুশাহাদার পর অভ্যস্ত হয়ে গেলে তখন এই ক্ষীণ আলো যথা সময়ে মুশাহাদা করা সহজ হয়।

৫. এই মুশাহাদার ভিত্তিতে তাদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে যে, মুসলিমবিশ্বে যে ১৮º থেকে ১৯º অনুযায়ী ফজরের সময় হিসাব করা হয় তা সঠিক।

দারুল উলূম করাচির ফতোয়া বিভাগের উস্তাযগণের মুশাহাদা

১৪২৯ হি. মোতাবেক ২০০৮ ঈ. সালে দারুল উলূম করাচির কয়েকজন উস্তায ও ইফতার তালিবে ইলমগণও সিন্ধ প্রদেশের মিট্ঠি নামক এলাকায় গিয়ে এর নিকটস্থ একটি মরুভূমিতে কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেন। এই মুশাহাদা স্থলের অবস্থান ২৪:২৯ (২৪.৪৮৮º) অক্ষাংশ ও ৬৯:৫৫ (৬৯.৯২৮০º) দ্রাঘিমাংশে।

তাদের মুশাহাদার বিবরণ নিম্নরূপ-

৬ মে : প্রথম দিন ৬ মে দিগন্তে ১০º/১২º উঁচু মেঘ ছিল। ৪ : ৩৪ মিনিটে মেঘের উপরে প্রশস্ত আলো নযরে আসে। ওই দিন সেখানে ১৮º-এর সময় ছিল ৪ : ২০ মিনিট এবং ১৫º হিসেবে ছিল ৪ : ৩৫ মিনিট।

৭ মে : পরের দিন ৭ মে। এই দিনও দিগন্তে প্রায় ১০º উঁচু মেঘ ছিল। ৪ : ২৭-এ মেঘের উপর অর্ধ বৃত্তাকারের আলো দেখা যায়। হিসাব অনুযায়ী সূর্য তখন দিগন্তের ১৬.২৩º নিচে ছিল। আর ১৮º-এর সময় ছিল ৪ : ১৯ মিনিটে এবং ১৫º-এর সময় ছিল ৪ : ৪৩ মিনিটে।

৮ মে : পরের দিন ৮ মে। সেদিন ৪ : ২১ মিনিটে মেঘের উপর অর্ধ বৃত্তাকারের হালকা আলো দেখা যায়। ৪ : ২৬ মিনিটে এই আলো আরো প্রখর হয় এবং প্রশস্ততায় আরো অনেক বেড়ে যায়। এই দিন সেখানে ১৮º-এর সময় ছিল ৪ : ১৮ মিনিটে এবং ১৫º হিসেবে ৪ : ৩৩ মিনিটে। আর সেখানে ওই দিন ৪ : ২১ মিনিটে সূর্য দিগন্তে ১৭.২৬º নিচে থাকে এবং ৪ : ২৬-এর সময় ১৬.২৬º নিচে থাকে।

৯ মে : এর পরের দিন ৯ মে অনেক মেঘ থাকায় দিগন্তে সুবহে সাদিকের আলো দেখা সম্ভব হয়নি।

১০ মে : পঞ্চম দিন ১০ মে। ৪ : ১৮ মিনিটে হালকা প্রশস্ত একটি আলো দেখা যায়। এই আলো যতটুকু লম্বা ছিল এরচে প্রশস্ত ছিল বেশি। ৪ : ২২ মিনিটে আলো এ পরিমাণ বেড়ে যায় যে, কাগজের লেখা পুরোপুরি পড়া না গেলেও দেখা যাচ্ছিল। ৪ : ৩৯ মিনিটে আলো কিছুটা লাল বর্ণের হয়ে যায়। ৪ : ১৮ মিনিটে ওইদিন সেখানে ১৭.৪৪º হয়। আর  সেখানে ওই দিন ১৮º-এর সময় ছিল ৪ : ১৬ মিনিটে এবং ১৫º-এর সময় ছিল ৪ : ৩১ মিনিট।

তাদের এই মুশাহাদার সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট নিম্নরূপ-

০        তারিখ   সময়     ডিগ্রি

১        ০৭.০৫.২০০৮     ৫:০৪    ১৭.১

২        ০৮.০৫.২০০৮    ৫:১৭    ১৬.২৫

৩        ১০.০৫.২০০৮     ৫:২৫    ১৬.৬

দেখুন-

صبح صادق اور صبح کاذب کے بارے میں ایک علمی اور تحقیقی جائزہ،  سید شبیر احمد کاکاخیل، ص

এই মুশাহাদার রেকর্ড দারুল উলূম করাচির ফতোয়া বিভাগে সংরক্ষিত আছে। এবং এর কপি আমাদের সংগ্রহেও রয়েছে।

এখানে লক্ষণীয় যে, তাদের এই মুশাহাদার বিবরণ থেকেই সুস্পষ্ট যে, তখন সেখানকার আবহাওয়া মুশাহাদার জন্য অনেক প্রতিকূল ছিল। এই প্রতিকূলতার মাঝেই তারা ১৭º-এর আগে প্রায় ১৭.৫º-এ সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন।

আলকাসীম ইউনিভার্সিটির মুশাহাদা

গত সংখ্যাতে সৌদি আরবের একটি মুশাহাদার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে মুশাহাদাকারীগণ ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক মুশাহাদা করছেন। এখানে মুশাহাদার আরেকটি পর্ব উল্লেখ করা হচ্ছে। আলকাসীম ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষক কর্তৃক এই মুশাহাদাটি হয়েছিল আলকাসীম অঞ্চলেরই একটি এলাকায় ২০১০ থেকে ২০১২ সালের ভেতর মোট দশ দিন। তাদের মুশাহাদার সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট এই-

০        তারিখ   সময়     ডিগ্রি

১        ১৭.০৯.২০১০     ০৪:৩৯  ১৫.৮

২        ০৭.১০.২০১০     ০৪:৪৬   ১৬

৩        ০৫.১১.২০১০     ০৫:০০  ১৬.৩

৪        ০৯.১২.২০১০     ০৫:২০  ১৬.৭

৫        ১৩.০২.২০১১     ০৫:২৮  ১৬.৫

৬        ১০.০৬.২০১১     ০৩:৪৩  ১৬.৫

৭        ৩০.০৬.২০১১     ০৩:৪৯  ১৬.২

৮        ৩০.০৭.২০১১     ০৪:০৮  ১৬.২

৯        ০৬.০১.২০১২     ০৫:৪০  ১৫.৬

১০       ৩০.০৩.২০১২     ০৪:৪৭   ১৫.৬

দেখুন-

تحديد وقت دخول صلاة الفجر عمليا بمنطقة القصيم (المرحلة الأولى)، ص ২৫.

এখানে লক্ষ্য করুন, এই মুশাহাদাতে অবস্থানগত কোনো কারণে ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি। কিন্তু এই দশ দিনের মুশাহাদার প্রতিদিনই তাঁরা ১৫º-এর বেশ আগেই সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। দশ দিনের সাত দিনই তাঁরা সুবহে সাদিক দেখেছেন ১৬º -এ এবং তারও আগে প্রায় ১৭º -এর কাছাকাছি সময়ে। বাকি তিন দিনও দেখেছেন ১৫.৬º ও তার আগে। অতএব তাঁদের এই মুশাহাদা দ্বারাও ১৫º-এর আগে সুবহে সাদিক না হওয়ার দাবি ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী প্রমাণিত হয়। এবং এর দ্বারাও প্রকারান্তরে ১৮º-এর ভেতর সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার বিষয়টি সঠিক প্রমাণিত হয়।

উপসংহার

এ পর্যন্ত মুসলিম বিশে^র উল্লেখযোগ্য অনেকগুলো দেশের সমকালীন বহু মুশাহাদার বিবরণ আলহামদু লিল্লাহ আমরা তুলে ধরেছি। ১৮º-এর ভেতরই যে সুবহে সাদিক হয়ে যায়; ১৫º পর্যন্ত দেরি হয় না- এই মুশাহাদাগুলো এর সপক্ষে একেবারেই প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট প্রমাণ। যুগ পরম্পরায় চলে আসা (মুশাহাদা নির্ভর) মুসলিম উম্মাহর তাআমুল ও মুসলিম ফালাকীগণের সুস্পষ্ট বক্তব্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমকালীন এই অসংখ্য মুশাহাদা দ্বারাও বিষয়টি সুপ্রমাণিত হয়ে গেল।

১৮º-এ সুবহে সাদিক মুশাহাদার এত অসংখ্য প্রমাণ থাকার পরও কেউ যদি মুশাহাদা করে, আর তখন সুবহে সাদিক দেখতে না পায়, তাহলে তার নিজের মুশাহাদার ক্রটি না খুঁজে এর ভিত্তিতে উল্টো এ দাবির কি সুযোগ আছে যে, আমি যেহেতু ১৮º-এ সুবহে সাদিক দেখতে পারিনি, তাই যারা ১৮º-এ সুবহে সাদিক দেখেছেন তাদের দেখা ভুল?! কিন্তু নেহাত পরিতাপের বিষয়, আহসানুল ফাতাওয়াতে এমন দাবিই করা হয়েছে-

১৮ درجہ زیر افق کے وقت دائرہ کی شکل ہرگز نظر نہیں آسکتی، جب چاہیں جہاں چاہیں مشاہدہ کر کے فیصلہ کریں۔

১৮º-এর সময় বৃত্তাকারের আলো (সুবহে সাদিক) কখনোই দেখা সম্ভব নয়। যখন চান যেখানে চান মুশাহাদা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/২২৬)

এই দাবির উপর আমরা শুধু এটুকুই বলব, আলহামদু লিল্লাহ, অনেক দেশে বহু জায়গায় অসংখ্যবার ১৮º-এর ভেতর এবং ১৫º-এর অনেক পূর্বে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করা হয়েছে।

فَلِلّهِ الْحَمْدُ أَوَّلًا وَآخِرًا، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيْلًا.

 

(সামনের সংখ্যায় পড়ুন-

সুবহে সাদিক কখন শুরু? প্রসঙ্গ : আহসানুল ফাতাওয়ার উল্লেখকৃত মুশাহাদা ও তার পর্যালোচনা ’)

 

 

advertisement