রবিউল আখির ১৪৪২   ||   ডিসেম্বর ২০২০

ভাস্কর্য-বিতর্ক
ইসলামের বিধান ও মুসলিম জনগণের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন

অর্থহীন-অবিবেচনাপ্রসূত কাজ মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিন যে কাজই করবে ভালো-মন্দ চিন্তা করে করবে। মহান আল্লাহ মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করার যোগ্যতা এজন্যই দান করেছেন। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের এই মুসলিম-সমাজের সর্বস্তরে এমন অনেক জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি আছেন, যারা শান্তি ও আদর্শের পক্ষে, যারা দেশ ও জাতির সত্যিকারের কল্যাণ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন। সিদ্ধান্তের জায়গাগুলোতে তাদের সক্রিয় হওয়া উচিত। তাদের একটুখানি তৎপরতাও আল্লাহর ইচ্ছায় দেশ ও জাতির জন্য অনেক কল্যাণকর হতে পারে, অনেক অনিষ্ট-অকল্যাণের দুয়ার বন্ধ করতে পারে। সম্প্রতি দেশে ভাস্কর্য নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, আমরা আশা করি, এক্ষেত্রেও তারা সঠিক বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।

মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক এদেশে নতুন নয়। ইতিপূর্বে এ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ইসলামের বিধান অনুসারে কোনো প্রাণীর মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। প্রাণীর প্রতিকৃতি নির্মাণ ও এর মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার দুটোই ইসলামে নিষিদ্ধ ও হারাম। পাশাপাশি নিকট অতীতে ভাস্কর্য-বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে এদেশের মুসলিম জনগণের আবেগ-অনুভূতির বিষয়টিও পরিষ্কারভাবে সামনে এসেছে। কাজেই ইসলামের বিধান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের আবেগ-অনুভূতি- কোনো দিক থেকেই যে বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয় তা একেবারেই স্পষ্ট ও মিমাংসিত।

এমন একটি স্পষ্ট বিষয়কে কেন বারবার ইস্যু বানানো হচ্ছে? রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে যারা আছেন তাদের ভেবে দেখা দরকার যে, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে আঘাত দেয়া তাদের জন্য কতটুকু লাভজনক হবে। এটা কে না জানে যে, কীর্তিমান ব্যক্তিরা অমর থাকেন তাঁদের কর্মের দ্বারা; ভাস্কর্য, ব্যানার বা কারো অনুগ্রহের দ্বারা নয়।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে, মানুষমাত্রই মরণশীল; তবে মৃত্যুর পরও মুমিন বান্দার পুণ্যের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় কাজের নির্দেশনা যেমন আছে, তেমনি আছে মানব-সেবামূলক কাজেরও নির্দেশনা। ইসলামী শিক্ষার মানবিক ও বাস্তববাদী দিকটি এখান থেকে ফুটে ওঠে।

আমরা মনে করি, দায়িত্বশীলদের এমন কাজই করা উচিত, যা দেশের জনগণের ঐক্যকে জোরদার করবে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক হবে। এর বিপরীতে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা বিভেদ-বিশৃঙ্খলা ও হানাহানির পরিবেশ তৈরি করে।

ভাস্কর্য-স্থাপনে দেশের উলামায়ে কেরামের বিরোধিতা কোনো রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ থেকে নয়; বরং ভাস্কর্য-স্থাপন ইসলামী বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হওয়ার কারণে। আর সেকারণেই ইতিপূর্বে থেমিস বা লালনের ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেও উলামায়ে কেরাম সরব হয়েছেন।

রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক যত প্রাণী-মূর্তি বা ভাস্কর্য যত জায়গায় আছে, উলামায়ে কেরাম কোনোটারই পক্ষে নন। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এর সবগুলোরই বিলুপ্তি ও উচ্ছেদের দাবি করে আসছেন। এদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় মরহুম কোনো বুযুর্গের ভাস্কর্য নির্মাণের প্রস্তাবও যদি করা হয় -নাউযু বিল্লাহ- তাহলেও আলিমগণ প্রতিবাদে সরব হবেন। আমাদের দায়িত্বশীলদের বিষয়টা সঠিকভাবে উপলব্ধি করা উচিত এবং সহনশীলতার সাথে বিচার-বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা উচিত, যা ইসলামের বিধান ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনতার বিশ্বাস ও আবেগের পরিপন্থী না হয়।

সর্বশেষ কথা এই যে, আমাদের সকলকেই এই নশ্বর পৃর্থিবী থেকে চলে যেতে হবে। আমাদের রেখে যাওয়া কর্ম যেন আমাদের জন্য পরকালে শান্তির উপায় হয়, অশান্তি ও আযাবের কারণ না হয়- এ বিষয়েও সচেতন থাকা প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সুমতি দিন ও সুপথে পরিচালিত করুন- আমীন।

 

 

advertisement