শাবান-রমযান-১৪৪১   ||   এপ্রিল- মে ২০২০

কুরআনের বিকৃত অনুবাদের প্রদর্শনী করছে কাদিয়ানী সম্প্রদায়
প্রসঙ্গ : বিভিন্ন ভাষায় কাদিয়ানীদের অনূদিত কুরআনে বিকৃতি

মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ঘ) নবী-রসূলগণের মুজেযার অপব্যাখ্যা

আমরা জানি, আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য পৃথিবীতে যত রাসূলকে পাঠিয়েছেন, তাঁদের সকলের সত্যতা অকাট্যরূপে প্রমাণ করার জন্য সকল যুগেই তিনি বিভিন্ন অলৌকিক এবং বাস্তব নিদর্শন প্রকাশ করেছেন। পরিভাষায় এধরনের নিদর্শনকে মুজেযা বলা হয়। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনÑ

لَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَیِّنٰتِ.

অর্থ : বস্তুত আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ দিয়ে প্রেরণ করেছি। -সূরা হাদীদ (৫৭) : ২৫

মনে রাখতে হবে, নবী-রাসূলগণের মুজেযার উপর ঈমান আনা ফরয। মুজেযার প্রতি ঈমান আনা ব্যতীত নবীগণের উপর ঈমান অসম্পূর্ণ। কেউ যদি কোনো একজন রাসূলের একটি মুজেযাও অস্বীকার করে অথবা অপব্যাখ্যা করে তাহলে সে কাফের, ইসলাম বহির্ভূত। কাদিয়ানীদের অমুসলিম হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ।

যেহেতু কাদিয়ানীদের ধর্মগুরু মির্যা গোলাম আহমদ নবী দাবি করা সত্তে¡ও বাস্তব জীবনে কোনোদিন কোনো অলৌকিক নিদর্শন দেখাতে পারেনি। সারা জীবন অলীক স্বপ্ন-কাশ্ফ, মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী আর তালগোল পাকানো বক্তৃতা-লেখনী দিয়েই ভক্তদের মাথা খেয়েছে, তাই তার ধূর্ত অনুসারীরাও  কুরআনে বর্ণিত নবী-রাসূলগণের সমস্ত মুজেযার অপব্যাখ্যা করে সেগুলোর অলৌকিকত্বকে অস্বীকার করেছে। তাদের নাপাক উদ্দেশ্য হলো, নবী-রাসূলগণকে মির্যা কাদিয়ানীর স্তরে নামিয়ে নিয়ে আসা; বরং ক্ষেত্রবিশেষে তারচেও আম মানুষরূপে সাব্যস্ত করা। তাদের অনুবাদগুলোতে সমগ্র কুরআনব্যাপী এ ধৃষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখুনÑ

১. সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ১    

سُبْحٰنَ الَّذِیْۤ اَسْرٰی بِعَبْدِهٖ لَیْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَی الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِیْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِیَهٗ مِنْ اٰیٰتِنَااِنَّهٗ هُوَ السَّمِیْعُ الْبَصِیْرُ.

আয়াতের প্রকৃত অনুবাদ : পরম পবিত্র ও মহিমময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি; যাতে আমি তাঁকে কুদরতের নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।

আয়াতের মর্ম ও কাদিয়ানীর বিকৃতি : আলোচ্য আয়াতটি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেরাজের প্রসিদ্ধ ঘটনা সংশ্লিষ্ট। এ আয়াতসহ অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস এবং সাহাবা তাবেঈনের ইজমার আলোকে মুসলিম উম্মাহ্র সুদৃঢ় ঈমান হল, আল্লাহ্র হুকুমে এবং বিশেষ ব্যবস্থায় একরাতে প্রিয় নবীজি সম্পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায় এবং সশরীরে মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা গমন করেছেন এবং তারপর আল্লাহর ইচ্ছায় উর্ধ্বজগত সফর করেছেন। এটি কোনো কাশ্ফ, দিব্যদর্শন কিংবা আধ্যাত্মিক ভ্রমণ ছিল না। প্রিয়নবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক ও বাস্তব মুজেযা ছিল। এটাই ইসলামের সর্বসম্মত অকাট্য আকীদা।

কিন্তু কাদিয়ানী সম্প্রদায় আল্লাহ তাআলার কুদরত অস্বীকার করে এ আয়াতে বর্ণিত রসূলের সশরীরের মেরাজকে কাশ্ফী তথা আধ্যাত্মিক ভ্রমণবলে অপব্যাখ্যা করেছে। এমনিভাবে আয়াতে উল্লেখিত মসজিদুল হারাম এবং মসজিদুল আকসা ইসলামের দুটি সুনির্দিষ্ট এবং সুবিখ্যাত মসজিদ হওয়া সত্তে¡ও তারা এ শব্দদুটির শাব্দিক অর্থ করেছে। এমনকি তাদের গুরুর সত্তার মধ্যে আল্লাহ্র রসূলের কথিত দ্বিতীয় আগমনের ইঙ্গিতও এখানে তারা আরোপ করেছে! লক্ষ্য করুনÑ

 

কাদিয়ানীদের উর্দু অনুবাদে বিকৃতি :

(میں) اس خدا کی  پاکیزگی (بیان کرتا ہوں) جو رات کے وقت اپنے بندے کو (اس) حرمت والی مسجد سے (اس) دور والی مسجد تک جس کے ارد گرد کو (بھی) ہم نے برکت دی ہے(اس لیے) لے گیا کہ تا ہم اسے اپنے بعض نشان دکھلائیں یقینا وہی (خدا) ہے جو (اپنےبندوں کی پکار کو) خوب سننے والا (اور ان کی حالتوں کو) خوب دیکھنے والا ہے۔تفسیر صغیر

কাদিয়ানীদের বাংলা অনুবাদে বিকৃতি : তিনি পরম পবিত্র ও মহিমাময়, যিনি রাত্রিযোগে স্বীয় বান্দাকে মসজিদুল হারাম (সম্মানিত মসজিদ) হইতে মসজিদুল আকসা (দূরবর্তী মসজিদ) পর্যন্ত লইয়া গেলেন....। -কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত কুরআন মজীদ

 

কাদিয়ানীদের ইংরেজি অনুবাদে বিকৃতি:

Glory be to him Who carried His servant by night from the Sacred Mosque to the Distant Mosque, the environs of which We have blessed, that We might show him some of Our Signs. Surely, He alone is the Hearing, the Seeing. -THE HOLY QUR'AN by Maulawi sher Ali

কাদিয়ানীদের কৃত বাংলা অনুবাদের টীকায় অপব্যাখ্যা : এই আয়াতে হযরত রসূলে করীম সা:-এর এক কাশ্ফ (দিব্য-দর্শন)-এর কথা ব্যক্ত হইয়াছে যাহা অধিকাংশ তফসীরকারকগণের মতে মেরাজ (আধ্যাত্মিক স্বর্গারোহণ) বলিয়া পরিচিত। সাধারণ্যে প্রচলিত ধারণার বিপরীতে আমাদের মতে এই আয়াতে নবী করীম সা:-এর ইস্রা (রাত্রিকালীন আধ্যাত্মিক স্বর্গারোহণ) সম্বন্ধে ব্যক্ত হইয়াছে, যাহাতে আঁ-হুযুর সা: কাশ্ফ যোগে মক্কা হইতে জেরুযালেম পর্যন্ত সফর করিয়াছেন।..... হযরত নবী করীম সা: সশরীরে উর্দ্ধাগমন করেন নাই বা জেরুযালেম গমন করেন নাই।-বকশী বাজার থেকে প্রকাশিত কুরআন মজীদ’, টীকা নং- ১৫৯০, পৃ. ৫৫৩

* ... এই কাশ্ফ দ্বারা ভবিষ্যতে কোন দূরবর্তী দেশে মহানবী সা.-এর আধ্যাত্মিক সফরের ইঙ্গিতরূপেও ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে। ইহার অর্থ হইল যে, যখন আধ্যাত্মিকভাবে অন্ধকার সারা বিশ্বকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিবে তখন নবী করীম

সা.-এরই কোন অনুগামীর মধ্যে তাঁহারই আত্মিকরূপে দ্বিতীয় আবির্ভাব ঘটিবেÑতাঁহার প্রথম আবির্ভাবের ঘটনাস্থল হইতে বহুদূরের কোন অঞ্চলে। -টীকা নং- ১৫৯১-ক, পৃ. ৫৫৪

কাদিয়ানীদের কৃত ইংরেজি অনুবাদের টীকায় অপব্যাখ্যা :

The verse which seems to mention a vision of the Holy Prophet is supposed by most Commentators of the Qur’an  to refer to his Mi‘raj (Spiritual Ascension). Contrary to  popular opinion we are inclined to the view that the verse deals with the Isra’ (Spiritual Night Journey) of the Holy Prophet in a vision from Mecca to Jerusalem,...

the Holy Prophet did not physically go up to heaven or travelled to Jerusalem. -THE HOLY QURAN, P. 777, Commentory No : 1590 ( Edited by Malik Ghulam Farid.)

The Vision may also be taken as referring to a spiritual journey of the Holy Prophet to a distant land in some future time. It meant that when spiritual darkness would envelop the entire world, the Holy Prophet would appear in a spiritual sense a second time in the person of one of his followers, in a land far away from the scene of his First Advent. - P. 779, Commentory No : 1591-A

 

লক্ষ্য করুন : কাদিয়ানীরা এ আয়াতের অনুবাদ ও টীকায়  ছয়টি দাবি করেছেÑ

এক. এ আয়াতে আল্লাহ্র রসূলের কাশ্ফ তথা দিব্যদর্শন এবং আধ্যাত্মিক স্বর্গারোহণের কথা ব্যক্ত হয়েছে।

দুই. আয়াতে বর্ণিত মসজিুদল হারামমানে সম্মানিত মসজিদ। আর মসজিদুল আকসামানে দূরবর্তী মসজিদ। (অর্থাৎ তাদের বিশ্বাসমতে এ ঘটনা শুধু মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা পর্যন্ত হওয়া জরুরি নয়। বরং এক সম্মানিত মসজিদ থেকে এক দূরবর্তী মসজিদ পর্যন্ত হয়েছে। এ বিকৃত অর্থ দিয়েই মির্যা কাদিয়ানীর উপাসনালয়কে তারা এখানে উদ্দেশ্য নেয়।

তিন. আল্লাহ্র রসূল কাশ্ফ যোগে অর্থাৎ আধ্যাত্মিকভাবে মক্কা হতে জেরুযালেম সফর করেছিলেন।

চার. আল্লাহ্র রসূল সশরীরে উর্ধ্বগমন করেননি এবং জেরুজালেম যাননি।

পাঁচ. এ আয়াতে বর্ণিত কাশফে ভবিষ্যতের কোন দূরদেশে আল্লাহ্র রসূলের আধ্যাত্মিক সফরের ইঙ্গিত রয়েছে।

ছয়. এ ইঙ্গিতের অর্থ হলো, যখন আধ্যাত্মিক অন্ধকার পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে, তখন নবীজির কোন অনুসারীর সত্তার মধ্যে নবীজি দ্বিতীয়বার আবির্ভূত হবেন।

বলাবাহুল্য, এসব দাবি থেকে কাদিয়ানীদের কুফুরি বিশ্বাসগুলো প্রকটভাবে ফুটে ওঠে। কাদিয়ানীরা আল্লাহ্র রসূলের সশরীরের অলৌকিক মেরাজকে অস্বীকার করার জন্য, মির্যা গোলাম আহমদকে নবীজির দ্বিতীয় বিকাশ সাব্যস্ত করার জন্য এবং তার কাদিয়ানের উপাসনালয়কে মসজিদুল আকসা দাবি করার জন্য আয়াতের মধ্যে এসব অপব্যাখ্যার স্পর্ধা করেছে।

২. সূরা আরাফ, আয়াত ১০৭

فَاَلْقٰی عَصَاهُ فَاِذَا هِیَ ثُعْبَانٌ مُّبِیْنٌ

সূরা তোয়াহা, আয়াত ২০

فَاَلْقٰىهَا فَاِذَا هِیَ حَیَّةٌ تَسْعٰی

আয়াতের প্রকৃত অনুবাদ : অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করল এবং তৎক্ষণাৎ তা এক সাক্ষাৎ অজগরে পরিণত হল।    -আরাফ ১০৭

অতঃপর সে তা নিক্ষেপ করিল, সঙ্গে সঙ্গে তা সাপ হয়ে ছুটোছুটি করতে লাগল। -সূরা ত্বহা ২০

কাদিয়ানীদের বিকৃতি : এ আয়াতদ্বয়ে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর একটি বিখ্যাত মুজেযার কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা অন্যান্য নবীগণের ন্যায় হযরত মূসা আলাইহিস সালামকেও বেশ কিছু মুজেযা দান করেছিলেন। তন্মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল, তাঁর হাতের লাঠি বাস্তব সাপে পরিণত হওয়া এবং তা দেখে উপস্থিত যাদুকরদের ঈমান গ্রহণ করা। এর মধ্যে স্বপ্ন কিংবা কাশফের কোন বিষয় নেই।

কিন্তু কাদিয়ানীরা এই মুজিযার অস্বীকার করে বলেছে, মূসা আ.-এর লাঠি কখনো জীবন্ত লাঠিতে পরিণত হয়নি। বরং কাশ্ফ ও আধ্যাত্মিকভাবে দেখতে সাপের মতো ছিল। লক্ষ্য করুনÑ

 

কাদিয়ানীদের উর্দু অনুবাদে বিকৃতি :

اس پر اس (موسی)نے اپنا سونٹا (زمین پر) ڈال دیا اوراچانک وہ ایک کھلا کھلا سانپ نظر آنے لگ گیا۔

سو اس نے اسے زمین پر پھینک دیا۔ جس کے بعد اس نے اچانک دیکھا کہ وہ سانپ ہے جو دوڑ رہا ہے۔

কাদিয়ানীদের বাংলা অনুবাদে বিকৃতি :

* সুতরাং সে তাহার লাঠি নিক্ষেপ করিল, এবং কি আশ্চর্য! নিমিষে উহা এক স্পষ্ট অজগর রূপে পরিদৃষ্ট হইল।    -কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত কুরআন মজীদ

কাদিয়ানীদের ইংরেজি অনুবাদে বিকৃতি 

So he flung down his rod, and behold! it was a serpent plainly visible. -THE HOLY QUR'AN by Maulawi sher Ali

 

কাদিয়ানীদের কৃত বাংলা অনুবাদের টীকায় অপব্যাখ্যা : ..... হযরত মূসা আ. কর্তৃক প্রদর্শিত অলৌকিক ঘটনা বা মোজেযা জনসাধারণ্যে প্রচলিত ধারণানুযায়ী ঘটে নাই।.... কুরআন করীম এই ধারণা বা মতের সমর্থন করে না যে, লাঠি বাস্তবে সত্য সত্যই জীবন্ত সর্পের আকার ধারণ করিয়াছিল। এইরূপে কোন ব্যাপার ঘটিয়াছিল বলিয়া প্রতিয়মান হয় না। লাঠিটি দেখিতে কেবল দ্রæতগতিসম্পন্ন সাপের মত মনে হইয়াছিল। ... যষ্ঠি যষ্ঠিই রহিয়াছিল, মূসা আ. এবং অন্যান্যদের নিকট উহা কেবল সাপের মত দেখাইতেছিল। ইহা সার্বজনীন বিস্ময়কর এক আধ্যাত্মিক ব্যাপার যে, কাশফে মানুষ যখন জড়দেহের উর্ধ্বে উন্নীত হয় এবং ক্ষণকালের জন্য আধ্যাত্মিক গগণমÐলে পরিভ্রমণ করিয়া বেড়ায়, তখন সে এমন ব্যাপার ঘটিতে দেখে যাহা তাহার জ্ঞানের সীমার বাহিরে এবং তাহার জড়চক্ষে সম্পূর্ণ অদৃশ্য। হযরত মূসা আ.-এর লাঠি সর্পরূপে দেখিতে পাওয়ার ঘটনা এইরূপ এক আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। -বকশী বাজার থেকে প্রকাশিত কুরআন মজীদ’, টীকা নং- ১০২৩, পৃ. ৩৩১

* লাঠিটি সর্পে পরিণত হয় নাই, কিন্তু সর্পের মতো দেখাইতেছিল। সুতরাং ইহা প্রাকৃতিক নিয়মের বিপরীত ছিল না। -টীকা নং ১৮১৬-ক, পৃ. ৬৩৭

কাদিয়ানীদের কৃত ইংরেজি অনুবাদের টীকায় বিকৃতি : the miracle shown by Moses did not take place in the manner in which it is popu

larly understood to have occurred.... the Qur’an lends no support to the view that the rod actually had turned into a real and living serpent. No such thing seems to have taken place. The rod only looked like a rapidly moving serpent....

The rod remained a rod, only it appeared to Moses and others as a serpent. It is a common spiritual phenomenon that in a vision when man rises above the encumbrances of the flesh and becomes temporarily transported to a spiritual sphere, he can see things taking place which are beyond his ken and are quite invisible to his physical eyes. The miracle of the rod turning into a serpent was one such spiritual experience. -THE HOLY QURAN, P. 472, Commentory No : 1023 ( Edited by Malik Ghulam Farid.)

* The rod did not actually turn into a serpent but was merely made to appear like one. It, therefore, contradicted or contravened no law of nature. - P. 892, Commentory No : 1816-A

লক্ষ্য করুনÑ কাদিয়ানীরা এখানে আয়াতের অনুবাদ ও টীকায় চারটি দাবি করেছেÑ

এক.  হযরত মূসা আ. কর্তৃক প্রদর্শিত অলৌকিক ঘটনা সাধারণ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ঘটেনি।

দুই. লাঠিটি দেখতে দ্রæতগতিসম্পন্ন সাপের মতো মনে হয়েছিল। বাস্তব সাপে পরিণত হয়নি।

তিন. কুরআন মাজীদ এ মতের সমর্থন করে না যে, লাঠিটি বাস্তবেই জীবন্ত সাপ হয়ে গিয়েছিল।

চার. কাশফে যেমন জড়চোখে সম্পূর্ণ অদৃশ্য বিষয় ঘটতে দেখা যায়, তেমনি মূসা আ.-এর লাঠি সাপরূপে দেখতে পাওয়াও একটি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।

বলাবাহুল্য, এসবই তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা। কুরআন মাজীদের স্পষ্ট বর্ণনার সাথে এসব প্রলাপের কোনো সম্পর্ক নেই। মুসলিম উম্মাহ্র অকাট্য বিশ্বাসকে অস্বীকার করতে কাদিয়ানীরা এগুলো আবিষ্কার করেছে।

 

৩. সূরা নামল, আয়াত ১৭, ১৮

وَ وَرِثَ سُلَیْمٰنُ دَاوٗدَ وَ قَالَ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ عُلِّمْنَا مَنْطِقَ الطَّیْرِ وَ اُوْتِیْنَا مِنْ كُلِّ شَیْءٍ  اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الْفَضْلُ الْمُبِیْنُ. وَ حُشِرَ لِسُلَیْمٰنَ جُنُوْدُهٗ مِنَ الْجِنِّ وَ الْاِنْسِ وَ الطَّیْرِ فَهُمْ یُوْزَعُوْنَ. حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَوْا عَلٰی وَادِ النَّمْلِ  قَالَتْ نَمْلَةٌ یّٰۤاَیُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوْا مَسٰكِنَكُمْ  لَا یَحْطِمَنَّكُمْ سُلَیْمٰنُ وَ جُنُوْدُهٗ  وَ هُمْ لَا یَشْعُرُوْنَ. وَ تَفَقَّدَ الطَّیْرَ فَقَالَ مَا لِیَ لَاۤ اَرَی الْهُدْهُدَؗاَمْ كَانَ مِنَ الْغَآىِٕبِیْنَ.

আয়াতের প্রকৃত অনুবাদ : সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকার লাভ করল এবং সে বলল, হে মানুষ! আমাদেরকে পাখির বুলি শেখানো হয়েছে এবং আমাদেরকে সমস্ত (প্রয়োজনীয়) জিনিস দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটা (আল্লাহ তাআলার) সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। সুলাইমানের জন্য তাঁর সমস্ত সৈন্য সমবেত করা হয়েছিল। যা ছিল জিন, মানুষ এবং পাখি সম্বলিত। তাদেরকে রাখা হত নিয়ন্ত্রণে।

একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল, তখন এক পিঁপড়ে বলল, ওহে পিঁপড়েরা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়, অন্যথায় সুলাইমান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।

এবং সে (সুলাইমান একবার) পাখিদের হাজিরা নিল। বলল, কী ব্যাপার! হুদহুদকে দেখছি না যে? সে কি কোথাও গায়েব হয়ে গেল?

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিকৃতি : আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে একটি বিশেষ মুজেযা দান করেছিলেন। তা হলো, প্রাণিজগতের ভাষা বোঝার ক্ষমতা। উপরিউক্ত প্রথম আয়াতটিতে আল্লাহ স্বয়ং সুলাইমান আ.-এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন যে,

عُلِّمْنَا مَنْطِقَ الطَّیْرِ

আমাদেরকে পাখির বুলি শেখানো হয়েছে।

এরপর এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদ দুটি অলৌকিক ঘটনার বিবরণও দিয়েছে। একটি হযরত সুলাইমানের পিঁপড়ার ভাষা বুঝতে পারার ঘটনা। যার সংশ্লিষ্টতায় আলোচ্য সূরাটির নাম দেয়া হয়েছে সূরা নামল, অর্থাৎ পিঁপড়ের ঘটনা সম্বলিত সূরা। দ্বিতীয় অলৌকিক ঘটনাটি হচ্ছে, হুদহুদ নামক পাখির সঙ্গে কথোপকথন। এ উভয় ঘটনাই ছিল হযরত সুলাইমানের জন্য আল্লাহ পাকের অপার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ।

কিন্তু নবুওতের মিথ্যা দাবিদারের অনুসারীদের প্রবণতা যেহেতু সত্য নবীদের মুজেযাকে অস্বীকার করা, তাই তারা এখানে পাখির ভাষারঅপব্যাখ্যা করেছে- আকাশে উড্ডয়নশীল পবিত্র মানুষদের ভাষাএবং পক্ষীকুলকে নিজের কাজে ব্যবহার করার জ্ঞানপিঁপড়ার উপত্যকার এক পিঁপড়ে’-এর অর্থ করেছে- নামল উপত্যকার একজন নামলীয়। আর হুদহুদপাখিকে বানিয়েছে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম-এর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও সেনাপ্রধান! শুধু তাই নয়; মুসলিম উম্মাহ্র অকাট্য আকীদাকে তারা আখ্যা দিয়েছে ভ্রান্ত ধারণা এবং ভিত্তিহীন উপকথা।

কাদিয়ানীদের উর্দু অনুবাদে বিকৃতি :

.... یہاں تک کہ جب وہ وادی نملہ میں پہنچے تو نملہ قوم میں سے ایک شخص نے کہا  اے نملہ قوم اپنے گھروں میں چلے جاؤ۔تفسیر صغیر.

কাদিয়ানীদের বাংলা অনুবাদে বিকৃতি :

..... এমনকি যখন তাহারা নামলের উপত্যকায় পৌঁছিল তখন এক নামলীয় বলিল, হে নামলীয়রা! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর, যেন সোলায়মান ও তাহার সেনাদল তাহাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদিগকে পদতলে পিষিয়া না ফেলে। -কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত কুরআন মজীদ

কাদিয়ানীদের ইংরেজি অনুবাদে বিকৃতি : Until when they came to the Valley of Al-Naml said, `O ye naml, enter your habitations, lest Solomon and his hosts crush you, while they know not. -THE HOLY QUR'AN by Maulawi sher Ali

 

কাদিয়ানীদের কৃত উর্দু অনুবাদের টীকায় বিকৃতি :

٭ ہم دوسری جگہ لکھ چکے ہیں کہ طیر  کے معنے آسمانی پرواز کرنے والے لوگوں (یعنی بر گزیدہ لوگوں) کے ہوتے ہیں۔ وہی معنے اس جگہ پرندوں کے ہیں۔ تفسیر صغیر، ص : ৬১৯ ، ح : ১

٭ وادئ نمل ساحل سمندر پر یروشلم کے مقابل پر یا اس کے قریب  دمشق سے حجاز کی

طرف آتے ہوئے ایک سچ مچ کی وادی ہےجسے استعارۃ وادئ نمل کہتے ہیں... اور نملہ ایک قوم تھی جو وہاں رہتی تھی۔ ص : ৬২০ ، ح: ১

٭ کئی ادومی بادشاہوں نام  هدد تھا۔ جس کو عرب لوگ اپنے لہجہ کے لحاظ سے ھدھد کہتے تھے۔یہ نام بنو اسماعیل میں عام رائج تھا۔ حضرت سلیمان علیہ السلام کے دربار کے ایک سردار کا نام بھی ھدھد تھا۔ص : ৬২০، ح : ৩

 

কাদিয়ানীদের কৃত বাংলা অনুবাদের টীকায় অপব্যাখ্যা :

* হযরত দাউদ এবং দাউদ এবং সোলাইমান আ. কে পাখীর ভাষা শিক্ষা দেওয়া হইয়াছিল বলিয়া এখানে বর্ণিত হইয়াছে। ইহার অর্থ হইতে পারে যে, তিনি পক্ষীকুলকে তাঁহার কাজে ব্যবহার করার জ্ঞান অর্জন করিয়াছিলেন। -বকশী বাজার থেকে প্রকাশিত  কুরআন মজীদ’, টীকা নং- ২১৫২, পৃ. ৭৮৫

* ‘নমলশব্দ যেহেতু নামবাচক বিশেষ্য সেহেতু আন-নামলএর অর্থ পিপীলিকার দেশ বুঝায় না, যেমনটি সাধারণভাবে ভ্রান্ত ধারণা করা হইয়া থাকে, বরং সেই উপত্যকায় নমলনামীয় এক উপজাতি বাস করিত।... অতএব, নামলাহ্ অর্থ আন্ নামল উপজাতির এক ব্যক্তি অর্থাৎ এক নমলবাসী। উল্লিখিত এ নমলবাসী সম্ভবত তাহাদের নেতা ছিল। -টীকা নং- ২১৫৬, পৃ. ৭৮৬

* সোলাইমান আ. তাঁহার সৈন্যবাহিনীকে এবং হুদ্হুদকে নিরীক্ষণ করিল। রাজকীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, সম্ভবতঃ প্রধান সেনাপতি হুদ্হুদ, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুপস্থিত ছিল, এই জন্য তিনি তাহার সম্বন্ধে পুনঃ পুনঃ জিজ্ঞাসার করিলেন।    -টীকা নং- ২১৫৯, পৃ. ৭৮৭

* হুদ্হুদ সম্বন্ধে জনসাধারণ্যে ভিত্তিহীন উপকথা এবং অলীক কাহিনী প্রচলিত আছে যাহা যুক্তি-প্রমাণ এবং বিবেক-বুদ্ধি কোন দিক দিয়া গ্রহণযোগ্য নহে। হুদ্হুদ্ হযরত সোলায়মান আ. কর্তৃক নিয়োজিত কোন সংবাদ বাহক পাখি ছিল না। .... হুদহুদ আসলে পাখী ছিল না; বরং মানুষ ছিল। সে অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা অথবা সেনাপতি ছিল, যাহার উপর হযরত সোলাইমান আ. সাবা দেশের রাণীর নিকট গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়িত্ব অর্পণ করিয়াছিলেন।’ -টীকা নং-২১৬০, পৃ. ৭৮৭

 

কাদিয়ানীদের কৃত ইংরেজি অনুবাদের টীকায় অপব্যাখ্যা :

* Prophets David and Solomon are here stated to have been taught the language of birds which may be taken as signifying that they had learnt how to make use of birds. -THE HOLY QURAN, P. 1094, Commentory No : 2152         (Edited by Malik Ghulam Farid)

* Naml being a proper noun, "the Valley of An-Naml" does not mean the valley of ants as is generally misunderstood but the valley where a tribe named Naml lived.... Thus Namlah means a person of the tribe of An- Naml—a Namlite. The said Namlite was possibly their leader. - P. 1095, Commentory No : 2156        

* Solomon seemed to have reviewed his army and Hud-hud, an important officer of the State, possibly a general, was absent at the important occasion. -P. 1096, Commentory No : 2159

* Contrary to popular belief, based on fable and fiction, Hud-hud was not a bird employed by Solomon as his message-bearer since....  It follows from these facts that Hud-hud was not a bird but a man, even a very responsible officer of State or a general who had been entrusted with an important political mission by Solomon to the Queen of Sheba. - P. 1097, Commentory No : 2160      

লক্ষ্য করুনÑ উপরের অনুবাদ ও টীকাগুলোতে কাদিয়ানীরা হযরত সুলাইমান আ.-এর মুজেযার সাতটি অপব্যাখ্যা করেছেÑ

এক. হযরত সুলাইমান আ. পাখির ভাষা জানতেন- মানে পাখিকে নিজের কাজে ব্যবহার করার জ্ঞান জানতেন। অথবা পাখির মতো আকাশে উড্ডয়নশীল পবিত্র মানুষদের ভাষা জানতেন

দুই. আরবি শব্দ নামল’-এর উপত্যকার অর্থ পিপীলিকার দেশ বুঝায় না। বরং জেরুজালেম বা সিরিয়ার আশপাশের কোন নামল নামক উপত্যকা বুঝায়।

তিন. নামল’-এর উপত্যকার অর্থ পিঁপড়ার দেশমনে করা মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। (যা মুসলমানদের স্বতঃসিদ্ধ বিশ্বাস।)

চার. নামলাহ্ অর্থ পিঁপড়া নয়; বরং আন-নামলাউপজাতির একজন ব্যক্তি অর্থাৎ এক নমলবাসী। যে সম্ভবত ঐ উপজাতির নেতা ছিল।

পাঁচ. হুদহুদ হযরত সুলাইমান আ.-এর সংবাদবাহী কোনো পাখি ছিল না; বরং একজন মানুষ ছিল।

ছয়. হুদহুদ হযরত সুলাইমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কোন কর্মকর্তা ছিল অথবা সেনাপতি ছিল। যার উপর হযরত সুলাইমান সাবা দেশের রাণীর নিকট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেন।

সাত. হুদহুদকে পাখি মনে করা- যেমনটি মুসলমানদের বিশ্বাস- ভিত্তিহীন উপকথা, অলীক কাহিনী এবং যুক্তি-বিবেকের নিকট অগ্রহণযোগ্য।

বলার প্রয়োজন নেই, এসবই কাদিয়ানীদের ভিত্তিহীন প্রলাপ এবং গোটা উম্মতের স্বীকৃত ও মুতাওয়াতির আকীদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কুরআন ও সুন্নাহ্র কোথাও এর নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নেই। কাদিয়ানীদের এজেÐাই হচ্ছে, মনগড়া অর্থ দাঁড় করিয়ে নবী-রাসূলগণের মুজেযার অলৌকিকত্বকে নিঃশেষ করা। যাতে মহান রাসূলগণকে মুজেযাহীন সাব্যস্ত করে নিজেদের ভÐ-গুরুর সমান্তরালে নামিয়ে আনা যায়। কুরআন বিকৃতির, ইসলাম অবমাননার এবং নবীগণের সম্মানহানির এরচে ঘৃণ্য দুঃসাহস আর কী হতে পারে!

 

৩.  সূরা মারয়াম, আয়াত ৩০

قَالَ اِنِّیْ عَبْدُ اللهِ  اٰتٰىنِیَ الْكِتٰبَ وَ جَعَلَنِیْ نَبِیًّا.

সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৪৬

وَ یُكَلِّمُ النَّاسَ فِی الْمَهْدِ وَ كَهْلًا وَّ مِنَ الصّٰلِحِیْنَ .

আয়াত দুটির প্রকৃত অনুবাদ : অমনি শিশুটি বলে উঠল, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী বানিয়েছেন। Ñসূরা মারয়াম-৩০                                                                                                                                               

এবং সে দোলনায়ও মানুষের সাথে কথা বলবে এবং পূর্ণ বয়সেও। আর সে হবে পুণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত। Ñসূরা আলে ইমরান ৪৬

আয়াতের মর্ম ও কাদিয়ানীদের বিকৃতি :

আলোচ্য আয়াত দুটিতে মায়ের কোলে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর অলৌকিকভাবে কথা বলার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। কুরআনে কারীমের দ্ব্যর্থহীন বর্ণনা অনুযায়ী যখন অলৌকিকভাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর পিতাবিহীন জন্ম হয়, তারপর হযরত মারয়াম তাঁকে নিয়ে স্ব গোত্রে ফিরে আসেন, তখন গোত্রের লোকেরা পিতৃ-পরিচয়হীন এ সন্তানের জন্ম নিয়ে নানান কথা বলতে থাকে।

ঐ মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা দুধের শিশু হযরত ঈসার যবান খুলে দেন। আর অমনি তিনি আল্লাহ্র হুকুমে বলে উঠেন যে, ‘আমি আল্লাহ্র বান্দা’....। সূরা মারয়ামের শুরুর আয়াতসমূহে বিশদভাবে এ মুজেযার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে।

কিন্তু কাদিয়ানীরা তাদের টীকায় এই অলৌকিক ও অকাট্য মুজেযাকে অস্বীকার করে বলেছে, ইহা আশ্চর্যজনক বা অপ্রাকৃতিক নহে। বহু মেধাবী ও ধীমান শিশুর মাঝেও এই প্রতিভা দৃষ্টিগোচর হয়!

কাদিয়ানীদের কৃত বাংলা অনুবাদের টীকায় অপব্যাখ্যা :

* ইহুদি বয়োবৃদ্ধের নিকট ঈসা আ. যে কথাগুলি বলিয়াছিলেন এবং যাহা ৩১-৩৪ আয়াতসমূহে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে, সেইগুলি নিশ্চয়ই কোন শিশুর মুখের কথা হইতে পারে না। দৃঢ়তা সহকারে এই সকল ঘোষণা এক বাচ্চার মুখ হইতে নিঃসৃত কতকগুলি মিথ্যা উক্তির মতো শোনায়। বয়স ও কথার মধ্যে এইরূপ অসমাঞ্জস্য ও অসঙ্গতি থাকায় কেহ এইগুলিকে সত্য বলিয়া স্বীকার করিতে পারে না। -বকশী বাজার থেকে প্রকাশিত কুরআন মজীদ’, টীকা নং- ১৭৬৬, পৃ. ৬১৯                                                             

* ঈসা আ. অতি শিশুকালেই জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন কথা বলিতেন, ইহা আশ্চর্যজনক বা অপ্রাকৃতিক নহে। বহু মেধাবী, ধীমান শিশু যাহারা সুপরিবেশে, সযতেœ লালিত হয়, তাহাদের মাঝেও এই প্রতিভা দৃষ্টিগোচর হয়। -টীকা নং ৪১৮-খ, পৃ. ১৩১

 

কাদিয়ানীদের কৃত ইংরেজি অনুবাদের টীকায় অপব্যাখ্যা :

* The talk which Jesus gave to the elders of the Jews and which is contained in these verses (31-34) could not possibly be the talk of a child. All these affirmations from the lips of a child sound like so many lies; and who would call these lies a miracle? -THE HOLY QURAN, P. 869, Commentory No : 1766         (Edited by Malik Ghulam Farid)

* That Jesus spoke words of wisdom in his childhood has nothing miraculous or supernatural about it. Many intelligent and well brought up children speak like that. - P. 192, Commentory No : 418 -B        

         

 

লক্ষ্য করুনÑ এখানে কাদিয়ানীরা আল্লাহ তাআলার কুদরতের উপর নিজেদের যুক্তির ঘোড়া চালিয়ে কয়েকটি অসার দাবি করেছেÑ

এক. এ কথাগুলো কোন শিশুর মুখের কথা হতে পারে না।

দুই. দৃঢ়তাসহ এসব ঘোষণা একজন বাচ্চার মুখ হতে মিথ্যা উক্তির মতো শোনায়।

তিন. বয়স ও কথার মধ্যে এরূপ অসমাঞ্জস্য ও অসঙ্গতি থাকায় কেউ কথাগুলো সত্য বলে স্বীকার করতে পারে না।

চার. অতি শিশুকালে ঈসা আ. কথা বলতেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। বহু মেধাবী শিশু সুপরিবেশে, সযতেœ লালিত হলে তাদের মধ্যেও এ প্রতিভা দেখা যায়।

আফসোস, কাদিয়ানী ভাইয়েরা যদি আল্লাহ তাআলার কুদরত ও ক্ষমতায় বিশ্বাস রাখতেন! যদি তারা এ খুঁটিহীন নীলাকাশ, শূন্যে ভাসমান পৃথিবী এবং অন্তহীন গ্রহ-নক্ষত্রের জগত নিয়ে সামান্যতমও চিন্তা-ভাবনা করতেন! অথবা অন্তত নিজেদের হাড়-কলকব্জা এবং রক্ত-মাংসের আশ্চর্য দেহব্যবস্থা নিয়ে হলেও কিছুটা মাথা খাটাতেন, তাহলে তাদের কুরআন মাজীদের স্পষ্ট বাণী ও নবীগণের মুজেযার মধ্যে এসব কুফরি বিকৃতির মহাপাপের দিকে যেতে হত না। তারা তখন গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট অসম্ভব বলে কিছু নেই। তিনিই তো সকল কিছুর অস্তিত্বদানকারী। কী আছে তার ক্ষমতার বাইরে (!)  এরপর তিনি যখন সুস্পষ্ট ভাষায় এসব অলৌকিক ঘটনার সংবাদও দিয়েছেন তখন সে সংবাদকে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে অস্বীকার করা তো সম্পূর্ণ কুফরি। হ

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

 

advertisement