মুহাররম ১৪৪১   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৯

চামড়া : পরিস্থিতি ও প্রস্তাবনা

ইবনে নসীব

এবার কুরবানী ঈদে কুরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে যা ঘটে গেল তা এককথায় নজিরবিহীন। চামড়া-ব্যবসার সাথে জড়িত পাইকারী ব্যবসায়ী, আড়তদার, ট্যানারি-মালিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলরা কিছুতেই এর দায় এড়াতে পারেন না। রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রনহীনতার এক ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত এই ঘটনা। বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে দেশপ্রেম ও নাগরিক অধিকারের কথা যত আবেগসহকারে উচ্চারিত হয় বাস্তবে যেন এই দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থ ঠিক ততটাই অবহেলিত। এর বহু দৃষ্টান্তের মধ্যে সাম্প্রতিক চামড়া-কোলেঙ্কারি অন্যতম।

চামড়া-শিল্প এদেশের সম্ভাবনাময় প্রধান শিল্পগুলোর একটি। এটি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনেরও অন্যতম প্রধান খাত। এই খাতের সাথে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন স্তরের বহু ব্যবসায়ীসহ দেশের এক বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়-উপার্জন। একারণে এই শিল্পের উন্নতি ও ক্রমবিকাশের প্রয়োজনীয় উদ্যোগের পাশাপাশি যথাযথ নজরদারিও অতি প্রয়োজন। মিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশীয় এই পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতাপের সাথে মাঠ দখল করে রেখেছিল, কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে হঠাৎ করে রফতানীমুখী চামড়া-ব্যবসায় ধ্বস নামে। এ বছর অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনা ভয়াবহরূপে প্রকাশিত হল।

চামড়া-শিল্পের জন্য কুরবানীর ঈদ একটি উল্লেখযোগ্য মওসুম। এ মওসুমেই সংগৃহীত হয় মোট চামড়ার সর্ববৃহৎ অংশ। এর সাথে জড়িত হন কুরবানীদাতা থেকে শুরু করে চামড়া-সংগ্রহকারী অনেক মওসুমী ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের কর্মী। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত হন বহু শ্রমিক। তবে চামড়া ব্যবসার মূল লাগামটি থাকে চামড়ার স্থায়ী-অস্থায়ী আড়তদার ও ট্যানারি-মালিকদের হাতে।

প্রক্রিয়াটা অনেকটা এরকম- কুরবানী হয়ে যাওয়ার পর মৌসুমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারী এবং বিভিন্ন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। এরপর সে চামড়া তারা বিক্রি করে দেন পাইকারী ব্যবসায়ী বা অস্থায়ী আড়তদারদের কাছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কিছু মুনাফা হয়, দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর দরিদ্র ছাত্রদের ভরণ-পোষণের কিছু ব্যবস্থা হয়। কুরবানীদাতাদের মধ্যেও যারা চামড়া বিক্রি করেন তারাও শরীয়তের বিধানের কারণে সেই অর্থ দরিদ্রদের দান করেন। এককথায়, এই পর্যায়ে চামড়া-বিক্রির টাকাটা প্রধানত কাজে লাগে সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। এ কারণে এর সাথে জড়িয়ে আছে দেশের ধর্মপ্রাণ কোটি জনতার সহানুভূতিও ধর্মীয় আবেগ।

মাঠপর্যায় থেকে চামড়া সংগৃহীত হওয়ার পর আড়তদারেরা প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতের পর তা সংরক্ষণ করেন। এ পর্যায়েও অনেক দরিদ্র শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়। আড়তদারেরা চামড়া ক্রয়, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ, গোডাউন ভাড়া ইত্যাদির পর আরো কিছু মুনাফায় তা বিক্রি করেন ট্যানারি-মালিকদের কাছে। ট্যানারি মালিকেরা চূড়ান্ত প্রক্রিয়াজাতের পর তা বিদেশে রফতানি করেন, দেশীয় চামড়া-জাত পণ্য প্রস্তুতকারীদেরও পাকা চামড়ার যোগান দেন। বাইরের ক্রেতাদের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে চীন, ভারত ও ইউরোপের ক্রেতারা।

দেশের ভেতরে ও বাইরে চামড়াজাত পণ্যের বিরাট বাজার আছে। দেশের ভিতরেই আছে প্রায় পাঁচ শতাধিক চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। দেশের বাজারেও চামড়াজাত পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী। কাজেই স্বাভাবিকভাবে চামড়া-ব্যবসায় ধ্বস নামার কোনো কারণ নেই। এর পরও এবারের কুরবানীর ঈদে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখা দরকার।

চামড়া নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণ হিসেবে বিশ্লেষকদের আলোচনায় সাধারণভাবে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। যেমন, এক. চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের চামড়া না কেনা।

সবাই জানেন, মাঠপর্যায়ে চামড়া-সংগ্রহকারীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের। কাজেই আড়তদারেরা অসহযোগিতা বা সিন্ডিকেট করলে চামড়া-সংগ্রহকারীদের বিপদে পড়তে হয়। মাঠপর্যায়ের চামড়া-সংগ্রহকারীদের কাছে প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা থাকে না। সেটা থাকে আড়তদারদের কাছে। ফলে কাঁচা চামড়া-সংগ্রহকারীদের খুব দ্রুত আড়তদারদের কাছে চামড়া হস্তান্তর করতে হয়। এতে যত দেরি হয় চামড়া নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে। মূলত এটি হচ্ছে চামড়া-সংগ্রহকারীদের দুর্বলতার দিক। আড়তদারেরা সাধারণত এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যথাসম্ভব কম দামে কাঁচা চামড়া সংগ্রহের চেষ্টা করে থাকেন। এবার এটা দেখা গেছে একেবারে অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে। মিডিয়ায় পরিবেশিত ভুক্তভোগী অনেকের বিবরণ থেকে চামড়ার পাইকারী ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের বিষয়টি সামনে এসেছে।

এই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই চামড়া-সংগ্রহকারীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকে চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে যাবার গাড়ি ভাড়াও উঠবে না বিধায় ক্ষোভে-দুঃখে সারাদিনের সংগৃহীত চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে এসেছেন, কেউ কেউ মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন- এভাবে অসংখ্য চামড়া নষ্ট হয়েছে। যার দ্বারা প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

চামড়ার আড়তদারেরা চামড়া কিনতে না চাওয়ার যে ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে যে কথাটি বলতে চাই, তা হচ্ছে, চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের এই অবস্থানের কারণে বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক দ্বীনী প্রতিষ্ঠানও। যেগুলোর লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের আয়ের একটি বড় উৎস কুরবানীর চামড়া-বিক্রির অর্থ। পরিস্থিতি-দৃষ্টে মনে হয়েছে চামড়ার পাইকারী-ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকাটা ক্ষতিগ্রস্ততার এক বড় কারণ। তারা চামড়া নিতে টালবাহানা করলেই প্রতিষ্ঠানগুলোর আর কোনো উপায় থাকে না। কাঁচা চামড়া জিনিসটাও এমন যে, প্রক্রিয়াজাত করা ছাড়া ১/২ দিন অপেক্ষা করারও সুযোগ থাকে না। এই জিম্মিদশা থেকে বের হওয়ার অপেক্ষাকৃত সহজ উপায় সম্ভবত এটাই যে, কাঁচা চামড়া কেনার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি কিছুদিনের জন্য হলেও নিজস্ব উদ্যোগে চামড়া-সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া। যে কাজটা আড়তদারেরা বড় পরিসরে করেন তা যদি প্রতিষ্ঠানগুলো ছোট পরিসরে করার ব্যবস্থা নেয় তাহলে এই জিম্মিদশা থেকে বের হওয়ার একটা উপায় হতে পারে। দেশের কোনো কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে এরকম ব্যবস্থা আছেও। এটা যেমন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মী দ্বারা হতে পারে তেমনি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ শ্রমিকের দ্বারাও হতে পারে। তবে কাজটি হতে হবে এ কাজে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে। এরকম প্রস্তুতি থাকলে, ঈদের দিন যদি যথাসময়ে কাঁচা চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা যায় ভালো নতুবা প্রথমিক প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করা গেলে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। এরপর এই লবণ দেয়া চামড়া যেমন আড়তদারদের কাছে বিক্রি করা যাবে তেমনি ট্যানারি মালিকদের কাছেও বিক্রি করা যাবে। দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে যদি বাইরের ক্রেতার কাছে বিক্রির ব্যবস্থা হয় তাহলে তো বিক্রির তৃতীয় ক্ষেত্র উন্মুক্ত হল।

মোটকথা, শুধু একশ্রেণির ক্রেতার কাছে জিম্মি না থাকার উপায় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। চামড়া-শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। কুরবানীর চামড়া দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর গোরাবা ফান্ডের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসও বটে। এই উৎসটি রক্ষায় দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুচিন্তিত ও সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন আছে।

আড়তদারেরা চামড়া না কেনার কারণ হিসেবে বলেছেন ট্যানারি-মালিকদের বকেয়া পরিশোধ না করা। ঈদের আগে প্রাপ্য বকেয়া না পাওয়ায় তারা এবার চামড়া কিনতে পারেননি। অর্থাৎ নিজস্ব তহবিল  থেকে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাননি। একই কারণে তারা সরকারের কাছে দাবি করেছেন, তাদের যেন ‘ওয়েট ব্লু’ (রাসায়নিকের মাধ্যমে পশম ও ঝিল্লি-মুক্ত চামড়া) চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়া হয়। অর্থাৎ তারাও শুধু ট্যানারি-মালিকদের হাতে জিম্মি থাকতে চাইছেন না। চাইছেন ক্রেতা বাড়াতে। সরকারের তরফ থেকেও ইতিবাচক ঘোষণা এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে, আড়তদারেরা যেমন মাঠপর্যায়ের ক্রেতাদের কাছ থেকে পানির দরে চামড়া কিনেছেন ট্যানারির মালিকদের কাছে তারা এত সস্তায় বেচবেন না। ট্যানারি মালিকেরা নির্ধারিত দর না দিলে আড়তদারেরা ওয়েট ব্লু চামড়া বাইরে বিক্রি করবেন। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের ট্যানারীগুলোতেও এ চামড়ার চাহিদা আছে।

ট্যানারি-মালিকদের সংগঠন বিটিএ (বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন) সরকারের ঐ ঘোষণার প্রতিবাদ করলেও আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কেনা শুরুর বিষয়ে সুর নরম করেছেন।

দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গতবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। প্রতিবর্গফুট খাসির চামড়ার দাম নির্ধারিত হয় ১৮ থেকে ২০ এবং ছাগলের চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা। এই দর অনুযায়ী ৩০ থেকে ৩৫ বর্গফুট লবণযুক্ত বড় গরুর চামড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় ট্যানারি মালিকদের কেনার কথা। প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে লবণ, গুদাম ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি, পরিবহণসহ মোট ব্যয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এর সাথে ১০০ টাকা মুনাফা ধরলেও ১ হাজার ২০০ থেকে দের হাজার টাকায় মাঠপর্যায়ে কেনাবেচা হওয়ার কথা। কিন্তু চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। ১৫ থেকে ২৫ বর্গফুটের ছোট ও মাঝারি চামড়ার যৌক্তিক দাম ১ হাজার টাকা হলেও ৫০০ টাকার বেশি কোথাও বিক্রি হচ্ছে না।’ এখান থেকে এক শ্রেণির আড়তদারের অতিমুনাফাখোরির মাত্রাটা বোঝা যায়। আর এর সাথে যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ট্যানারি মালিকসহ অন্যরাও যুক্ত নন তা কি হলপ করে বলা যাবে?

দুই. ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধ না করা

চামড়ার আড়তদার সমিতি বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ট্যানারি-মালিকদের কাছে আমাদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। অনেকেই টাকা পাননি। আমাদের প্রায় আড়াইশ আড়তদারের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জন চামড়া কিনতে পারছেন। তাই বাজারে ক্রেতা কম। আর তাতে দাম পড়ে গেছে। (প্রথম আলো ১৩.০৮.২০১৯)

প্রশ্ন হচ্ছে, ট্যানারি-মালিকেরা আড়তদারদের বকেয়া শোধ করছেন না কেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ‘বাইরে চামড়ার বাজার মন্দা, বিগত বছরের সংগৃহীত চামড়া এখনো বিক্রি করা যায়নি।’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই অজুহাত কিছু কিছু ট্যানারির ক্ষেত্রে বাস্তব হলেও হতে পারে, কিন্তু ট্যানারি শিল্পের সামগ্রিক অবস্থাটা এই অজুহাতকে সমর্থন করে না। কারণ, একে তো বাইরের চামড়ার বাজার অনেক বড়।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য অনুসারে, যার আকার ২২০ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ট্যানারিগুলো প্রায় ৯৪৫ কোটি টাকার বিদেশী চামড়া আমদানী করেছে। (সূত্র : প্রথম আলো ২০-০৮-২০১৯)

তিন. খোদ বিটিএ-এর বক্তব্য অনুসারে সাভারের চামড়া-শিল্পনগরে ট্যানারি মালিকদের বিনিয়োগের পরিমাণ সাত হাজার কোটি টাকা। এত বিপুল বিনিয়োগ কি কোনো ভঙ্গুর খাতে করা হয়েছে?!

তবে হাঁ, ট্যানারি-মালিকদের এই অভিযোগ অবশ্যই আমলে নিতে হবে যে, চামড়া-শিল্পনগরের কর্মপরিবেশ উন্নত না হওয়ায় ইউরোপের বড় ক্রেতারা এখান থেকে সরাসরি চামড়া নিতে চায় না। এর ফলে চামড়ার মূল ক্রেতা হয়ে উঠেছে চীন। চীন এখান থেকে চামড়া নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় বিক্রি করে। এরা সুযোগ বুঝে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ট্যানারি মালিকদের অনেকটা জিম্মি করে ফেলেছে। (সূত্র : প্রথম আলো ১৯-০৮-২০১৯)

এখানেও দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের বাজার ধরতে না পারার কারণে এদেশের ট্যানারিগুলো চীনাদের কাছে আটকা থাকছে। আর এর কারণ চামড়া-শিল্প-নগরের অনুন্নত কর্ম-পরিবেশ। বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান অবশ্য বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে (সাভার চামড়া-শিল্পনগরের) সিইটিপির কাজ শেষ হবে। তার পরই লেদার ওয়াকিং গ্রুপের সনদের জন্য আবেদন করা হবে। সেটি হলে এক ডলারের চামড়া তিন-চার ডলারে ইউরোপের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন ট্যানারি মালিকেরা। (সূত্র : প্রথম আলো ১৯-০৮-২০১৯)

অনুমিত হয় যে, চামড়া-শিল্পের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। আর এধরনের ক্ষেত্রে মাঠে খেলোয়াড় বেড়ে যাওয়ার এবং অতি মুনাফাখোরির প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে যথার্থ নজরদারি ও সু-ব্যবস্থাপনা আরো অপরিহার্য হয়ে ওঠে। যাই হোক, ফিলহালের এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিষয় ও পরিস্থিতির কিছুটা লম্বা আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে মোটামুটি একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা। আমাদের দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলোর চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ যেন বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন। কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো একটি শ্রেণি তথা শুধু পাইকারি ব্যবসায়ী বা আড়তদারদের কাছেই আবদ্ধ না থেকে প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ক্রেতা বাড়ানোর বিষয়টি ভেবে দেখেন। দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো এই অঙ্গন ছেড়ে দিলে যেমন অন্যরা এসে সেই স্থান দখল করবে তেমনি চামড়া বিক্রির অর্থ কাজে লাগানোর একটি উত্তম ও উপযুক্ত খাত থেকে কুরবানীদাতা ধর্মপ্রাণ মানুষও বঞ্চিত হবেন।

এই দেশের সর্বস্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের কর্তব্য, দেশের উন্নতি-অগ্রগতি এবং দেশের জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণের বিষয়ে আন্তরিক হওয়া। ভুলে গেলে চলবে না যে, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। কাজেই এদেশের উন্নতি-অগ্রগতি, শান্তি-শৃঙ্খলার দ্বারা বেশি উপকৃত হবেন মুসলিম জনগোষ্ঠী ও তাদের দ্বীনী দুনিয়াবি কর্ম ও প্রতিষ্ঠানগুলোই।

আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

 

advertisement