যিলহজ্ব ১৪৪০   ||   আগস্ট ২০১৯

চোখের সামনে ভেসে উঠল বাইতুল মাকদিস

আবু আহমাদ

তোমরা হয়ত মেরাজের কাহিনী শুনে থাকবে। এটি ছিল নবীজীর মুজেযাসমূহের অন্যতম প্রধান মুজেযা। 

এক রাতে নবীজী শুয়ে ছিলেন কাবার হাতীমে। হাতীম হল, কাবা ঘরেরই অংশ। একবার কাবা পুনর্নিমাণের সময় কোনো কারণে এ অংশ কাবা ঘরের বাইরে রয়ে গেছে। কিন্তু যেহেতু তা কাবারই অংশ তাই সামান্য উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। উপরে ছাদ নেই। একেই বলে হাতীম।

যাইহোক, নবীজী হাতীমে শুয়ে ছিলেন। তখনও নবীজী ঘুমিয়ে পড়েননি। ঘুম ঘুম ভাব। এমন সময় জিবরীল আমীন এলেন। নবীজীকে জাগালেন। হাজির হল বোরাক। 

বোরাক কী জান? একটি প্রাণি, যা দেখতে গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে ছোট। গায়ের রং ছিল সাদা। যার গতি ছিল খুবই ক্ষিপ্র; চলত খুব দ্রুত গতিতে। মুহূর্তে পৌঁছে যেত দৃষ্টিসীমার শেষপ্রান্তে, দূর-বহুদূরে। বোরাকে করে নবীজী মুহূর্তেই পৌঁছলেন বাইতুল মাকদিসে।

বাইতুল মাকদিস একটি মসজিদের নাম। মক্কা থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যাকে মসজিদে আকসাও বলে। এটি মুসলমানদের প্রথম কিবলা। কাবা শরীফের পূর্বে মুসলিমরা এদিকে ফিরে নামায আদায় করত। এটি বর্তমান ইসরাইলে অবস্থিত। ইহুদীরা মুসলিমদের থেকে তা কেড়ে নিয়েছে। এসো দুআ করি, আল্লাহ আবার তা মুসলিমদের হাতে ফিরিয়ে দিন।

যাইহোক, সেখানে নবীজী অবস্থান করলেন কিছু সময়। সেখানে ঘটল অনেককিছু। এরপর সেখান থেকে শুরু হল ঊর্ধ্বজগতের সফর। নবীজী এক এক করে পৌঁছে গেলেন সাত আসমানের উপরে। আল্লাহ নবীজীকে দেখালেন বিভিন্ন নিদর্শন; দেখালেন জান্নাত-জাহান্নামসহ আরো অনেক কিছু। দান করলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায। এরপর ঐ রাতেই নবীজী মক্কায় ফিরে এলেন।

সকালে যখন নবীজী এ ঘটনা বললেন তখন কাফেররা আশ্চর্য হল ও অস্বীকার করল। এক রাতে কীভাবে সম্ভব শত শত মাইল দূরের বাইতুল মাকদিস সফর করা! তারা বিশ্বাস করতে চাইল না। প্রমাণ চাইল। তাদের মধ্যে যারা বাইতুল মাকদিস দেখেছে তারা জানতে চাইল- বল তাহলে, বাইতুল মাকদিস দেখতে কেমন, এটা কেমন, ওটা কেমন?

নবীজী বলা শুরু করলেন। কিন্তু নবীজী কি সেখানে বাইতুল মাকদিস কেমন, এর দরজা কেমন, জানালা কেমন তা দেখতে গিয়েছিলেন? তিনি তো গিয়েছিলেন এক বিশেষ সফরে। তারপরও নবীজী বলা শুরু করলেন। কিছু বিষয় বর্ণনা করা নবীজীর জন্য একটু কষ্টকর লাগছিল। তখনই প্রকাশ হল আল্লাহর কুদরত, নবীজীর মুজেযা। আল্লাহ নবীজীর চোখের সামনে তুলে ধরলেন বাইতুল মাকদিস আর নবীজী দেখে দেখে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলেন। যেন নবীজী বাইতুল মাকদিসের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে দেখে উত্তর দিচ্ছেন।

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যখন কুরাইশের লোকেরা (মেরাজের ঘটনা) বিশ্বাস করতে চাইল না; আমাকে মিথ্যাবাদী বলতে লাগল (এবং আমাকে বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করতে লাগল) তখন আল্লাহ আমার চোখের সামনে বাইতুল মাকদিস তুলে ধরলেন আর আমি দেখে দেখে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলাম। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৮৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭০)

 

 

advertisement