শাওয়াল ১৪৩০   ||   অক্টোবর ২০০৯

আদব-কায়েদা

আবিদা

বিগত এক মজলিসে আমি ইঙ্গিত করেছিলাম যে, নানাজী আমাদের তরবিয়তের জন্য প্রতিদিনের সাধারণ মেলামেশা ও কথাবার্তার মুহূর্তগুলো কাজে লাগাতেন। ফলে ঘরোয়া আলাপচারিতার সাধারণ বৈঠকগুলোও তা’লীমের নিয়মিত মজলিসের মতো ফলপ্রসূ হয়ে উঠত। আর যখন শুধু তা’লীম-তরবিয়তের উদ্দেশ্যেই আমাদের একত্র করতেন তখন আরো বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় আসত। মায়েরা আমাদেরকে যে আদব-কায়েদা শেখাতেন নানাজীর কাছে তার অনুশীলন হয়ে যেত। যেমন একটি বিষয় হচ্ছে বড়দের সম্মান করা। মায়েদের কাছ থেকে আমার এ বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছি। তাই আমরা বড়দের সামনে আদবের সঙ্গে বসতাম, তাঁদের কণ্ঠস্বরের চেয়ে আমাদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করতাম না এবং তাঁদের নিজস্ব কথাবার্তায় প্রবেশ করতাম না। নানাজীর সাহচর্য আমাদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন ও অভ্যস- করে তুলত। তাঁর কক্ষে যখন বড়রা যেতেন তখন নানাজী বলতেন, আমরা যেন মজলিসকে প্রশস- করি এবং বড়দেরকে সামনে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। তদ্রূপ তাঁর কক্ষে যখন আমরা ছোটরা থাকতাম তখন এই নিয়ম কার্যকর থাকত। আমাদের মধ্যে বয়সে যে সবার বড় নানাজী তাকে সর্বোত্তম স'ানে বসার সুযোগ দিতেন। এভাবে বয়স অনুসারে প্রত্যেককে বসতে বলতেন। অথচ আমরা সবাই প্রায় সমবয়সীই ছিলাম। কথা বলার ক্ষেত্রেও বড়কে আগে বলার সুযোগ দিতেন। তাঁর বলা শেষ হলে অন্যজন বলার সুযোগ পেত। এভাবে সবারই সুযোগ আসত, কিন' বয়সের ক্রমঅনুসারে, সুশৃঙ্খলভাবে। সাথে সাথে তিনি আমাদের সান-্বনাও দিতেন যে, যদিও আজ তোমরা ছোট, আর তাই কখনো কখনো তোমাদেরকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং বড়দেরকে সম্মান জানিয়ে অগ্রাধিকার দিতে হয় কিন' একদিন আসবে যেদিন তোমরা হবে বড় এবং ছোটরা তোমাদেরকে সম্মান করবে ও অগ্রাধিকার দিবে। কথাবার্তার একটি আদব হচ্ছে, কেউ যখন কথা বলে তখন তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। কিছু বলার থাকলে তার কথা শেষ হওয়া পর্যন- অপেক্ষা করা। আমরা এই আদব রক্ষা করার চেষ্টা করতাম। কেউ এর অন্যথা করলে তাকে নানাজীর তাম্বীহ শুনতে হত। এভাবে আমাদের গৃহই ছিল যেন একটি আদর্শ স্কুল, যেখানে আমরা প্রতিদিনের জীবনের সাধারণ আদব-কায়েদায় অভ্যস- হয়ে উঠেছিলাম। নানাজী কখনো সরাসরি তাম্বীহ করতেন। এর দ্বারা আমাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও সৌজন্যবোধ সৃষ্টি হয়েছে। অতএব তাঁর তাম্বীহ আমাদের অনেক উপকার করেছে। কখনো পরোক্ষভাবে তাম্বীহ করতেন। যেন তিনি আমাদের সান-্বনা দিচ্ছেন। কখনো আমাদের মায়েদেরকে লক্ষ্য করে কিছু বলতেন, তাঁদের কথোপকথন থেকেই আমরা কোনো বিষয়ে উপদেশ পেয়ে যেতাম। এভাবে কখনো আমাদের কোনো ভুল-ত্রুটি সংশোধন করতেন, কখনো ভদ্রতা ও সৌজন্যপূর্ণ কোনো আচরণের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। তরবিয়তের বিষয়ে তাঁর সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ছিল যে, তিনি প্রাত্যহিক জীবনের আদব-কায়েদাগুলোকে পরিণত করেছিলেন সাধারণ নিয়মে, যা ছোট-বড় সকলেই অনুসরণ করত। ফলে আমাদের ছোটদের মনে কখনো না-ইনসাফীর অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি এবং আমরা সকল নিয়ম সন'ষ্ট চিত্তে মেনে চলার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

 

advertisement