মুহাররম ১৪৪০   ||   অক্টোবর ২০১৮

এটা আমার পথ, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি

প্রফেসর হযরত মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান

نَحْمَدُه وَنُصَلِّيْ عَلَى رَسُوْلِه الْكَرِيْم، أما بعد :

আল্লাহ পাকের কাছে শোকর আদায় করছি, যিনি আমাদেরকে মাগরিব নামায জামাতের সঙ্গে পড়ে এই মাহফিলে আসার সৌভাগ্য দিয়েছেন। এসকল মাহফিল সম্পর্কে বহু আলোচনা হাদীস শরীফে এসেছে। আমার কাছে কুরআন মাজীদের যে আয়াতটা বার বার শুনেছেন সেই আয়াতটা পড়ি, হারদুঈ হযরত যে আয়াতটা বেশি বেশি পড়তেন-

وَ ذَكِّرْ فَاِنَّ الذِّكْرٰی تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِیْنَ.

আপনি নসীহত করুন, নসীহত করলে ঈমানদারদের ফায়দা হবেই। আপনি মনে করিয়ে দিন। মনে করিয়ে দিলে ঈমানদারের ফায়দা হবে।

আর এই হাদীসটা শুনেছেন অনেকবার, ওটাই আমি ৎবঢ়বধঃ করছি। ফেরেশতাদের একদল ঘুরে ঘুরে খুঁজতে থাকে- কোথায় আল্লাহর যিকিরের মহফিল হচ্ছে। একেক দল একেক দিকে যায়। কোনো একটা দল যখন এরকম কোনো মহফিল দেখতে পায়, বলে- ‘এই যে পেয়েছি!’ অন্য দলকে ডাকে, ‘আসো এদিকে আসো, আসো এদিকে আসো’। কোনো জায়গায় আল্লাহ পাকের জিকির করছে, কুরআন পড়ছে, কুরআনের কথা শুনছে। ওরা ডেকে ডেকে অন্য গ্রুপগুলোকে জমা করে। সবাই মিলে আল্লাহর কাছে রহমতের ও মাগফিরাতের দুআ করে। তাদের উপর রহমত নাযিল হয়, আল্লাহ তাআলার খাস রহমত নাযিল হয়। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সঙ্গে নিয়ে গর্ব করেন। এজন্য এ ধরনের মাহফিল অনেক দামী। ঘেরাও করার জন্য ফেরেশতারা আসবেন এবং সবার জন্য দুআ করবেন। এজন্য জন-মানবের সংখ্যার কোনো প্রশ্ন নাই; কম হোক, বেশি হোক এই ফযীলত, এই বরকত পাওয়া যাবেই।

হযরত আবরারুল হক ছাহেব রাহ.-এর কাজগুলো দেখেন। তাঁর কতগুলো কাজ আপাত-বিসদৃশ মনে হয়। কিন্তু অত্যন্ত দামী। একটা হল, ঘরে ঘরে ছোট ছোট মাহফিল করার জন্য কোনো হাদিয়ার ব্যবস্থা নাই, দুই নম্বর খাবারেরও ব্যবস্থা নাই। এইটাকে আমি নাম দিয়েছি “No food, No drink”  কোনো খাবার নাই, কোনো পানীয় নাই। উনার কথা হল ‘দ্বীন কি বাত সুনাও’, দ্বীনের কথা মানুষকে শুনিয়ে দাও।

হযরত মাওলানা আবরারুল হক ছাহেব রাহ. দ্বীনের কথাই বলতেন। ‘দ্বীন কি বাত সুনাও’, দ্বীনের কথা শোনাও। ঘরোয়া মাহফিলের কথা আমরা অনেকবার বলেছি। আলহামদু লিল্লাহ আমাদের এই এলাকায় অনেকেই শুরু করে দিয়েছেন। মাহফিলে শরীক হওয়ার পরে কোনো কিছু খেতে হবে, তা জরুরি না।

আমরা মনে করি, আমাদের বাসায় ২০ জন মানুষ এসেছে, ২৫ জন মানুষ এসেছে, মেহমানদারি করব না? কী কথা বলেন আপনারা? মেহমানদারি আপনি অবশ্যই করেন। কিন্তু মহফিলের সঙ্গে মিলাবেন না। আমরা নাম দিয়েছি, যে মহফিল মিস্টান্ন ছাড়া, খাবার  ছাড়া করতে পারবে সে A+  পেল। আপনাদের বাচ্চারা পরীক্ষায় A+  পেলে আপনি খুশি হন না? A+ পাওয়ার জন্য শর্ত হল “No food, No drink” কোনো খানা খাওয়াতে পারবেন না।

অনেক জায়গায় মেজবান খুব চান- আপনারা মহফিল শুনতে এসেছেন, খালি মুখে কী করে যান। কোনো খাতির নাই। মাওলানা আবরারুল হক ছাহেব নিষ্ঠুর, নির্মম গাড়ী চালিয়ে যেতেন, যে গাড়ীতে “No food, No drink”  লেখা আছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে একবার হযরতের সঙ্গে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ গেলাম। ভোর রাতে মেজবান নাস্তা দিয়ে দিলেন- রুটি, গোস্তু, কিছু ভাজি, ফ্লাস্ক ভরে চা। আমরা ধানমণ্ডি থেকে দুই-তিন গাড়ী রওয়ানা হলাম। ফজরের বেশ খানিক আগে রওয়ানা হয়েছি। আমরা প্রথমে গেলাম মাসদাইল। জায়গাটা চাষাড়ার কাছে। মসজিদটার একটা বিশেষত্ব হল, এক পাশে মুসলমানদের কবরস্থান আর পুকুরের অপর পাড়েই হিন্দুদের মাটি দেয়ার জায়গা আছে। সেই গোরস্তান মসজিদে ঢুকলেন। মসজিদের ইমাম ছিলেন খুবসম্ভব মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ, তিনি খাওয়ার আবদার করলেন। না, তোমার এখানে বয়ান হবে না, খাওয়াও হবে না। এখানে বিশ্রাম করার জন্য ঢুকেছি, নামায পড়ার জন্য ঢুকেছি। ফেরার পথে দেখা যাবে।

নামায পড়ে আমরা আমলাপাড়া গেলাম। ওখানে এক বড় মাদরাসা আছে, এর মসজিদে বয়ান করলেন। বয়ানের পরে দস্তরখানায় খাবার দাবার সব সাজানো, উনি তার পাশ দিয়ে গট্ গট্ করে হেঁটে গেলেন। মুহতামিম ছাহেব, ওখানকার মুহাদ্দিস ছাহেবানরা বললেন হুযূর, নাস্তা!  তিনি বললেন, না, বলেছি না- “No food, No drink” । তিনি অবশ্য ইংরেজিতে বলেন নাই। নিষ্ঠুর না? মাদরাসার কর্তৃপক্ষ কত কষ্ট করে নাস্তা প্রস্তুত করেছেন, কয়েক শ টাকা খরচ করেছেন, দস্তরখানায় দেওয়া আছে, বসলেই হয়, খেলেই হয়। না, কোনো কথা নাই, কোনো খাদ্য নাই, কোনো পানীয় নাই। নিষ্ঠুর না? কতগুলো মানুষের দিল ভেঙ্গে দিলেন, একটু খেলে কী হত?

এরপর গেলেন কালীবাড়ীর এক মাদরাসায়। যারা নারায়ণগঞ্জের সাথে পরিচিত আছেন তারা বুঝবেন। মাদরাসায় গেলাম। একই কিস্সা। এরপর ওখানে ছোট একটা মাদরাসা, কী যেন নাম, ওখানে গেলেন। চার নম্বরে গেলেন নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত মাদরাসা দেওভোগে মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন মাওলানা আলতাফ হোসেন ছাহেব রাহ., খুব বিখ্যাত মানুষ, খুব আল্লাহওয়ালা। ওখানেও একই রকম। মাওলানা আলতাফ হোসেন ছাহেব আমাকে খুব স্নেহ করতেন, বললাম, খাতির নাই। “No food, No drink”   হযরত এটা ইংরেজিতে বলেন নাই, আপনাদেরকে বললাম আর কি!

চার মাদরাসায় গেছেন। ফিরে এসে এই আনুমানিক এগারটা-সাড়ে এগারটায়, সেই মাসদাইল মাদরাসায় আবার ঢুকলেন। আমাদের খাবার তোমাদের মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে খাব, খেলেন। সাড়ে এগারটার মধ্যে চারটা বড় বড় মাদরাসা শেষ, ঢাকায় আসলেন।

তখন মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাহেবের সঙ্গে হযরতের পরিচয় হয় নাই, তাঁর কথা শুনেছেন। মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাহেব, যিনি এখনো মুহতামিম আছেন। তার মাদরাসা কোথায় যেন? আমরা যারা চিনতাম তারা বললাম, হুযূর! যাত্রাবাড়ীর মোড়। যাত্রাবাড়ীর মোড় থেকে কাঁচপুর ব্রীজের দিকে গিয়ে তারপর ঢুকার রাস্তা আছে কি? হুযূর রাস্তা ভালো না। এদিকে পশ্চিম দিকে ওয়াপদা কলোনীর ভিতর দিয়ে যাওয়া যায়। খুব কষ্ট করে ওর ভিতর দিয়ে গেলেন, গাড়ী রাখলেন, তারপর মাদরাসায় ঢুকলেন। হুযূরকে খবর দেওয়া হল। হুযূর দৌড়ে আসলেন। হারদুঈর হুযূর বয়ান করলেন। যোহর ঢাকায় এসে পড়লেন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, পাঁচটা মহফিল। যাত্রবাড়ীতে এসে শেষ।

আল্লাহ হযরতের দরজা বুলন্দ করুন, কবরকে নূরে ভরে দিন। মাহমুদুল হাসান ছাহেব বাংলাদেশের দাওয়াতুল হকের আমীর। তিনি আমাকে নিজে দেখিয়েছেন চিঠিটা। হযরতের কাছে চিঠি লিখেছিলেন, সেই চিঠির জন্য এই কাহিনী বললাম।

আলেমদের সাথে থাকলে বোঝা যায়, আসলে আমরা কত পেছনে। আমরা ইংরেজি শিক্ষিতরা অহমিকায় ভুগি। বিন্দুমাত্র জ্ঞান নাই। কোনো খবর শুনলেই বলি, ‘ওহ্ হো, আগে জানতাম না’ Standard কথা। আমাদের ইংরেজি শিক্ষিতদের  ‘ওহ্ হো, আগে জানতাম না’। এই আগে জানতাম না করতে করতেই আমাদের কবরে যেতে হবে। নতুন কিছু আসলে ‘ওহ্ হো, আগে জানতাম না। আমাদের ইংরেজি শিক্ষিতদের কপালে- ‘ওহ্ হো, আগে জানতাম না’।

এই মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭৫ সাল থেকে। তাবলীগে সময় লাগাতাম। একবার জামাতের মধ্যে ছিল আবদুল আহাদ। তিন দিনের জামাত। এই একটা অপূর্ব কাজ, তাবলীগ জামাতের কাজ। এখন যে ঝগড়া-ঝাটির কথা শুনি, আমাদের ওগুলোতে কান দেওয়ার দরকার নাই। আমরা উলামায়ে কেরামের নেগরানীতে এই কাজে লেগে থাকব। তাবলীগে প্রতিদিন কিছু সময় লাগাবেন। তিন দিন সময় লাগালেই নিজের কাছে প্রমাণ হয়ে যায়- এই কাজে কী ফায়দা। ফায়দা বর্ণনার দ্বারা হবে না। রসগোল্লা, বিদেশী কারো কাছে রসগোল্লার খুব ফায়দা বয়ান করলেন, এক পৃষ্ঠা এর ফযীলত লিখলেন। কাজ হবে? যার যেমন ফল, ফলটা খেলে আপনি নিজেই বলবেন এর ফযীলত।

আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ পাক আমাকে সৌভাগ্য দিয়েছেন, মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে মিলিয়েছেন। জামাতের মধ্যে আমাদের এক সাথী বলল, ‘আমাদের মহল্লায় এক বোম্বাই মরিচ এসেছে’। বললাম, বোম্বাই মরিচ এসেছে- মানে কী? আমাদের মসজিদের ইমাম, কী ডাট, বাপরে বাপ। ছোট মানুষ, সেদিন করাচী থেকে ফিরেছেন। আমি গল্প বলছি আপনাদের কাছে। গল্পগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাহেব দাওয়াতুল হকের আমীর, হযরত হারদুঈ তাকে সারা বাংলাদেশের আমীর বানিয়েছেন। দাওয়াতুল হক হল মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া। কুরআন শরীফের পাতায় পাতায় আল্লাহ পাক এ বিষয়ে ইশারা করেছেন। 

وَ مَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَاۤ اِلَی اللهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ.

ঐ ব্যক্তির কথার চাইতে কার কথা অধিক সুন্দর হবে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে। Who can be better in speach than one who invites towards Allah.

আবার আছে-

اُدْعُ اِلٰی سَبِیْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَ جَادِلْهُمْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ،  اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِیْلِهٖ وَ هُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِیْنَ.

আপনার রবেব পথের দিকে, আপনার রবের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেন। এই রকম আয়াত কুরআনে আরো আছে। এক সুরায় আছে-

قُلْ هٰذِهٖ سَبِیْلِیْۤ اَدْعُوْۤا اِلَی الله.

আপনি বলুন, এটা (তাওহীদ ও শরীয়ত) আমার পথ। আমি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি।

আল্লাহর দিকে ডাকার ফযীলত অনেক বেশি। এই জন্য আমাদের নিজেদের আমলের সাথে সাথে এটা মনে রাখা চাই, অন্য ভাইদের দাওয়াত দিতে হবে। তাবলীগে সময় লাগাতে পারেন তো ভালো আর না হয় আমাদের এই রকম মাহফিলে শরীক হতে হবে। বরং আমি বলব, দোনো কাজই করেন।

দুটো কাজে অনেক ফারাক। আমাকে এক ভাই বলেন- ‘আপনারা ওয়াজ মাহফিলগুলোতে এরকম করেন ক্যান, তাশকিল করতে পারেন না? এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা বয়ান হয়, মানুষের মনটা নরম হয়, দোয়া কইরা ছাইড়া দেন, তশকিল করণ যায় না?’ আমি বলি, দুটো কাজ দুই রকম। একটা কাজ মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব রাহ. শুরু করেছেন; আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিয়েছেন, আর একটা যুগ যুগ ধরে চলে আসা পুরনো পদ্ধতি। সাদামাটাভাবে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের কথা, আখেরাতের কথা হয়, দুআ করা হয়, তশকিল ছাড়া ছেড়ে দেওয়া হয়। তাবলীগের মত খাতা নিয়া বলা হয় না- ‘নাম লেখান’। কোনো নাম লেখানো হয় না। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই কাজ। আর নতুন এটাও বড় কাজ। আল্লাহ তাআলা ইলিয়াস রাহ.-এর কবরকে নূরে ভরে দিন। তাঁর মাধ্যমে শুরু হয়েছে এই পদ্ধতি। এর জন্য দুআ করা চাই। এটা নিয়ে এখন যে ফেতনা চলছে, আল্লাহ আমাদেরকে এই ফেতনা থেকে মাহফুয রাখেন। মহব্বতের সাথে যতটুকু পারেন এই কাজের সঙ্গে সময় ব্যয় করেন।

মাওলানা মাহমুদুল হাসান ছাহেবের কথা বলছিলাম। তিনি হযরতের কাছে চিঠি লিখেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে আপনার ছোহবতে দাওয়াতুল হকের কাজ বুঝে এসেছে। সারা দেশে যদ্দুর পারছি সফর করছি। আমার মনে চায় মাদরাসার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখি, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা দাওয়াতুল হকের কাজ করি’। তিনি লিখেছেন সেই চিঠির পাশে লাল দাগ দিয়ে- “তাআজ্জুব হ্যায়, আপনার কথা শুনে অবাক লাগে, আপনি দরস-তাদরীসের কাজ থেকে এটাকে বড় মনে করলেন? ওটাই তো প্রাণ”। মাদরাসায় পড়াইন্যাগো আমরা বলি- “মৌলভীরা কী জানে? আমরা যাগো কাছ থিকা দ্বীন পাইছি তাগো কথা শুনলেই হইব। কাগো কাছ থিকা দ্বীন পাইছেন? আমার ভাই পড়াশুনা জানে না, তিন দিন লাগাইছে, তাগো থাইকা দ্বীন পাইছে। কিন্তু মৌলভীরা বলেন, চৌদ্দশ বছর ধরে কাদের উসিলায় দ্বীন টিকে আছে?”

মাওলানা মওদুদী সাহেবের একটা বিখ্যাত পরিচয় আছে, তিনি এবং তার ভক্তরা মাদরাসার আলেমদের কোনো মূল্য দিতে চান না। বলা হয়, মাদরাসায় যারা পড়ে, বড় বড় কিতাব- আবু দাউদ শরীফ, বুখারী শরীফ- বিরাট বিরাট সাইজ, তাদের কেউ এক মাদরাসার দাওরার ছাত্রদেরকে লক্ষ করে বলেছিলেন- “বগলে করিয়া মোটা মোটা কিতাব লইয়া কী হইবে, ময়দানে আসো।” ‘বগলে করিয়া মোটা মোটা কিতাব লইয়া...’- তিনি এটাকে ঠাট্টা করেছেন।

হযরত মাওলানা আবরারুল হক ছাহেব লেখেন- তাআজ্জুব হ্যায়- অবাক কাণ্ড আপনার! আপনি দরস-তাদরীসের মূল কাজ করেই তরতিবের সঙ্গে সময় লাগাবেন। কুরআনের খেদমত আগে, এটা পূর্বশর্ত। কোনটা আগে করব, ক্রমটা বলে দেওয়া হয়। দরস-তাদরীসের কাজে সাহায্য করেন, দুই নম্বরে দাওয়াতুল হক। মজলিসের শেষে দুআ হয়। সেই প্রসঙ্গে হযরত বললেন, আমাদের মুহতামিম ছাহেব অসুস্থ। তার জন্য দুআ করেন। আর একটা কথা বলি। মাওলানা আজিজুল হক শাইখুল হাদীস ছাহেব রাহ. অনেক বার বলেছেন, আমি অনেকবার শুনেছি-

‘দুআর মধ্যে কোনো ইমামতি নাই। একজন হাত উঠালেন আমরা শুধু আমীন আমীন বলব, নাহ। আপনার মনে চাইলে আমীন আমীন বলতে পারেন, শুনলেও আমীন, না শুনলেও আমীন অথবা আপনার মনে চাইলে পাশাপাশি নিজের মতো দুআ করতে পারেন। হাত উঠিয়েছেন একজন, তিনি দুআ করছেন, আবার আপনি নিজের খুশি মতো দুআ করতে পারেন (তারপর দুআ হল)।

 

[সংকলনে : আবু সানিন

৬ই আগস্ট ২০১৮ঈ., রোয সোমবার

 উত্তরার সাপ্তাহিক মাহফিলের বয়ান

সংকলনের নযরে ছানী :

বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক গুফিরালাহু

১৪/০১/১৪৪০হি.]

 

 

advertisement