রবিউল আউয়াল ১৪৩১   ||   মার্চ ২০১০

মৃত্যুর স্মরণ (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

হযরত মাওলানা মুফতি তকী উছমানী

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন দ্বীন দান করেছেন, যাতে বস্তুত কোনো কাঠিন্য ও জটিলতা নেই। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে এমন কোনো বিধান পালনে বাধ্য করিনি, যা তোমাদের সাধ্যের বাইরে। আমার সকল বিধান তোমরা পালন কর। তোমাদের রান্না-বান্না, পানাহার, অতিথি-আপ্যায়ন, বিশ্রাম, মোটকথা দুনিয়ার যাবতীয় কাজ ইবাদতে পরিণত হবে। সঠিক নিয়তে, সঠিক পন্থায় এ কাজগুলো সম্পাদন করা হলে তা ইবাদত হয়ে যাবে। এতই সহজ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। পরিশেষে আপনাদের খেদমতে কিছু আবেদন করছি। দেখুন ভাই, রসমী ওয়াজ-নসীহতে কোনো ফায়দা নেই। তা কেবল কিছু সময়ের জন্য বসা আর ওয়াজ শেষে কাপড় ঝেড়ে উঠে যাওয়া। ওয়াজ-নসীহতে ফায়দা তখন হবে যখন আমরা চিন্তা-ভাবনা করব এবং আমাদের ভবিষ্যত জীবন উন্নত করতে সচেষ্ট হব। আমি আপনাদের নিকট কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করছি। এসবের উপর আমল করতে চেষ্টা করুন, ইনশাআল্লাহ এর বরকতে আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবনের ধারা পরিবর্তন করে দিবেন। সর্বপ্রথম কথা হল, নিজের দৈনন্দিন জীবনের চব্বিশ ঘণ্টা থেকে কিছু সময় দ্বীনী ইলম অর্জনের জন্য নির্ধারণ করুন। প্রত্যেকের আলেম হওয়া জরুরি নয়। ৮-১০ বছর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে দরসে নেযামীর পাঠ সমাপ্ত করা সকলের প্রয়োজন নেই। তবে এতটুকু ইলম অর্জন করা প্রতিটি নারী ও পুরুষের জন্য আবশ্যকীয়-ফরয, যা একজন মুসলমানের ইসলামী জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য-ফরয। অর্থাৎ যতটুকু ইলম অর্জন করলে মানুষ দ্বীন অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারে-এতটুকু ইলম অর্জন করা ফরযে আইন। কোনো মাদরাসায় ভর্তি হয়ে তা অর্জন করাও জরুরি নয়। আলহামদুলিল্লাহ, প্রায় সকল ভাষায় ওলামায়ে কেরাম এমন পঠনসামগ্রী প্রস্তুত করে দিয়েছেন, যা অধ্যয়ন করে অতি সহজেই ইলমে দ্বীন লাভ করা যায়। এটা কঠিন কিছু নয়। তাই চব্বিশ ঘণ্টা থেকে কিছু সময় বের করুন। অন্তত আধা ঘণ্টাই বের করুন। এবং তা যত্নের সঙ্গে ব্যয় করুন। যেন দ্বীনের অপরিহার্য বিষয়গুলোর ইলম এ সময়ে লাভ করা যায়।

আমি কয়েকটি কিতাবের পরামর্শ দিচ্ছি :

  • ১. হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.-এর ‘ইসলাহী নেসাব’। শুনেছি, বাংলা ভাষায়ও এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এটি সংগ্রহে রাখুন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ুন এবং সন্তানদেরকেও পাঠ করে শোনান।
  • ২. ‘উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ এ কিতাবটিরও বাংলা অনুবাদ হয়েছে। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতসমূহ অধিক পরিমাণে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি কাজের সুন্নত তরীকা বলে দেওয়া হয়েছে। দেখুন, অনেক কাজই আমরা করি। তা সুন্নত তরীকায় করলে কোনো কষ্ট-জটিলতা নেই, কোনো পেরেশানী নেই। অতিরিক্ত সময়ও ব্যয় হয় না। আলাদা কোনো মেহনত করারও প্রয়োজন নেই।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

advertisement