রবিউল আউয়াল ১৪৩১   ||   মার্চ ২০১০

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ কিছু জানা-কথার পুনরাবৃত্তি

মুহাম্মাদ নাজমুল হক

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বভাবজাত প্রেরণা। তাই স্বভাব যদি বিকৃত না হয় তাহলে মানুষ নিজেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে এবং চারপাশের পরিবেশ ও লোকজনকেও পরিচ্ছন্ন দেখতে ভালবাসে। ইসলামী শরীয়তে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সীরাতে পরিচ্ছন্নতার প্রতি অশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জীবনের অন্য বহু প্রসঙ্গের মতো পরিচ্ছন্নতার ধারণাও ইসলামে অনেক ব্যাপক ও গভীর। বর্তমান নিবন্ধে সামান্য কিছু আলেকপাত করতে চাই। এক. শারীরিক পরিচ্ছন্নতা এ প্রসঙ্গে শরীয়তের যে নির্দেশ আছে তা যদি আমরা পালন করি তাহলে আমাদের দৈহিক পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হবে। মানুষকে আল্লাহ তাআলা সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য প্রকাশিত হবে। তাই নিয়মিত মেসওয়াক করা, হাত-পায়ের নখ কাটা, শরীরের বিভিন্ন স্থানের চুল পরিষ্কার করা ইত্যদি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মেসওয়াক করা সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি উম্মতের কষ্টের ভয় না হত তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মেসওয়াক করার আদেশ করতাম।’ হাত-পায়ের নখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের পশম প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করা উচিত। অন্যথায় পনের দিনে। যদি চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে গুনাহগার হতে হবে। অর্থাৎ ইসলামে পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে ধর্মের বিধান। অপরিচ্ছন্ন থাকার সুযোগ শরীয়তে নেই। ক. কাপড় পরিষ্কার রাখা পোশাক-পরিচ্ছদ মূল্যবান হওয়া অপরিহার্য নয়, কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া জরুরি। কেননা, মুমিনকে দুনিয়ার জীবন-যাপনেও সুরুচির পরিচয় দিতে হবে। তদ্রূপ যার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার সামর্থ্য আছে সে যদি অপরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে আল্লাহর নেয়ামতের নাশোকরী করা হয়। এজন্য সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকা চাই। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) ‘তোমরা প্রতি সিজদার সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ কর।’ এই আয়াতে সৌন্দর্য বলে পোশাককে বোঝানো হয়েছে। কেননা, তা মানুষের সতর ও লজ্জাস্থান আবৃত রাখে। শব্দটি পোশাকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও ইঙ্গিত করে। এমনকি ফকীহগণ লিখেছেন যে, কাজকর্মের সময় মানুষ যে সাধারণ পোশাক পরিধান করে তা পরে নামায আদায় করা মাকরূহ। খ. ঘর ও চারপাশকে পরিষ্কার রাখা উপরের মূলনীতিগুলো থেকেও তা অনুধাবন করা যায়। তাছাড়া ঘরের চারপাশে যদি ময়লা-আবর্জনা থাকে তাহলে প্রতিবেশী ও অন্যান্য মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়। এই ঘরের লোকদের ব্যাপারে মানুষ নিচু ধারণা পোষণ করে। কোনো দ্বীনদার পরিবারে অপরিচ্ছন্নতার অভ্যাস থাকলে অনেকে দ্বীন সম্পর্কেও ভুল ধারণায় পড়ে যায়। এজন্য সচেতন থাকা উচিত। ঘরবাড়িতে ঐ সমস- স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত যেগুলো বেশি ময়লা হয়। যেমন রান্নাঘর, গোসলখানা ইত্যাদি। রান্না ঘরের হাউজ বা বেসিন, যেখানে ধোয়ার কাজ করা হয় তা সাধারণত অপরিচ্ছন্ন থাকে। ঐ স্থানগুলো গুরুত্বের সাথে পরিষ্কার করা উচিত। গোসলখানার কমোড ও মেঝে নিয়মিত পরিষ্কার করা চাই। আর একাজ যে শুধু ঘরের মহিলাদেরকেই করতে হবে তা অপরিহার্য নয়, পুরুষরাও যখন গোসলখানা ব্যবহার করেন তখন তা পরিষ্কার করে ফেলতে পারেন। পরিবারের অন্যদের খিদমতের নিয়তে করা হলে অনেক বেশি ছওয়াবও পাওয়া যাবে। দৈনিক অন্তত একবার টয়লেট পরিষ্কার করার নিয়ম করা ভালো। বেশি ব্যবহৃত হলে দৈনিক দুইবার পরিষ্কার করা উচিত। আমরা প্রত্যেকে যদি পরিচ্ছন্নতায় অভ্যস্ত হই তাহলে আমাদের সমাজ থেকেও অপরিচ্ছন্নতা দূর হবে। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই পাবলিক টয়লেটের অপরিচ্ছন্নতার কথা আসে। কোনো কোনো মসজিদেরও টয়লেট ও অযুখানা অপরিচ্ছন্ন থাকে। এসব বিষয়ে সচেতনতা কাম্য। ময়লা ফেলার ঝুড়ি বা ডাস্টবিন পরিষ্কারের ব্যাপারে খুব বেশি অবহেলা হয়। অনেক সময় ময়লার ঝুড়ি এত বেশি ময়লা হয় যে, তা ধরে পরিষ্কার করাও কষ্টকর হয়ে যায়। এটাতে ময়লা ফেলা হয় বলে কি এটাকে অপরিচ্ছন্নই রাখতে হবে? গ. রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার রাখা এটি একটি সামাজিক বিষয়। পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট প্রমাণ করে যে, এই এলাকার অধিবাসীরা রুচিশীল। কিন্তু দুঃখজনক সত্য এই যে, এই বিষয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। নব্বই শতাংশ মুসলমানের এই দেশ যে নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা থেকেও অনেক দূরে তার প্রমাণ তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মাঝেই পাওয়া যায়। আমরা যদি আমাদের ধর্মীয় শিক্ষাগুলোকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতাম তাহলে সর্বদিক থেকে আমরা উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছতে পারতাম। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের দুর্দশা দেখে একজন বিদেশি নাকি মন্তব্য করেছিল যে, ‘এত দিন আমার ইশ্বরে বিশ্বাস ছিল না। কিন্তু এদেশে আসার পর আমার বিশ্বাস হয়েছে। কারণ ইশ্বর যদি না থাকতেন তাহলে এত ধুলার মাঝে এদেশের মানুষ বেঁচে থাকতে পারত না!’ ঢাকা শহরের রাস্তায় যাদের চলাফেরা করতে হয় এ বিষয়ে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। রাস্তার পাশের দোকানের সাটারগুলোতে দেখা যায়, ধুলোবালির কয়েক স্তর জমে গেছে। একটি গাড়ি শহরের রাস্তা দিয়ে ঘণ্টা দুই-এক চালিয়ে নেওয়ার পর কাঁচের উপর ময়লার পুরু আস্তরণ জমে যায়। কোথাও দেখা যায়, রাস্তার পার্শ্বে কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। গাড়িটি ধুলার নিচে ঢাকা পড়ে গেছে। রাস্তার দু’ধারের এবং রোড-ডিভাইডারের গাছগুলো আর সবুজ নেই, ধোঁয়া ও ধুলার সংমিশ্রণে প্রায় কালো হয়ে আছে। সত্যিই এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেঁচে থাকা অনেকটা অলৌকিকই বটে! শুধুই কি ধুলা, অনেক রাস্তায় এখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার স'প জমে থাকে। অনেক জায়গায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে উঠিয়ে নিয়ে যাবে-এজন্য রাস্তার ধারেই পাহাড় পরিমাণ ময়লা স্তুপ করে রাখা হয়। রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। এসব বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা যেমন প্রয়োজন তেমনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও লক্ষ রাখা জরুরি। আমাদের এই দেশে পথঘাট নোংরা হওয়ার আরেকটি বিশেষ কারণ আছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং মানুষ হিসাবে আমাদের চরম রুচিহীনতার পরিচায়ক। পৃথিবীর কোনো সভ্য ও উন্নত দেশে রাস্তার ধারে পেশাব করার রীতি আছে কি না জানা নেই। বলাবাহুল্য, এখানে প্রয়োজনের চেয়ে রুচিহীনতাই বেশি দায়ী। কোনো কেনো রাস্তার অবস্থা তো এত করুণ যে, ফুটপাত ধরে হাঁটা যায় না। নাকে রুমাল চেপে ওই স্থান অতিক্রম করতে হয়। এক বিদেশি ভাই আমাকে বলেছিলেন, এ নোংরা কাজটি পাকিস্থান-বাংলাদেশসহ গুটি কয়েক দেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয় না। দুই. পরিচ্ছন্ন রুচি তৈরি করা পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনের জন্য পরিচ্ছন্ন রুচি অপরিহার্য। কারো যদি রুচিবিকৃতি ঘটে তাহলে শত অর্থ-সম্পদের মধ্যেও সে অপরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করবে। পক্ষান্তরে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রুচি সীমাবদ্ধ সামর্থ্যের মধ্যেও মানুষকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনে সহায়তা করবে। এজন্য ছোট থেকেই শিশুদের মধ্যে ভদ্র, শালীন, সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রুচি গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত। আমাদের সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ দান করেছেন। সেই আদর্শের যথার্থ অনুসরণের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে সুস্থ রুচি গড়ে উঠতে পারে। ইতিপূর্বে দৈহিক পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি, আমরা যদি হাদীসের কিতাবসমূহ অধ্যয়ন করি তাহলে দেখা যাবে যে, পরিচ্ছন্নতার কী বিপুল নির্দেশনা তাতে বিদ্যমান রয়েছে। ইসলাম তো শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, পবিত্রতার নির্দেশনাও দিয়েছে। পবিত্রতা ও অপবিত্রতা সম্পর্কে যে নিখুঁত ধারণা, অপবিত্রতার কারণ আর পবিত্রতা অর্জনের উপায় সম্পর্কে যেভাবে ইসলামে বলা হয়েছে তার মতো বাস্তব ও স্বভাবসম্মত নির্দেশনা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এই নির্দেশনার অনুসরণের মাধ্যমে মানুষের মাঝে পবিত্র রুচিবোধ তৈরি হয়। এছাড়া চরিত্র ও আচরণ সংক্রান্ত একটি বিশাল অধ্যায় রয়েছে, যা মানুষকে উত্তম চরিত্র ও উন্নত রুচিবোধের অধিকারী হতে সাহায্য করে। রুচির বিষয়ে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হচ্ছে, বিজাতীয় অনুকরণ থেকে বেঁচে থাকা। এই মূলনীতির যথার্থতা আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশেই প্রত্যক্ষ করি। ভদ্র ও স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের চরম রুচিবিকৃতির এমন সব দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে যে, কী বলব! বর্তমান প্রজন্মের ‘আপটুডেট’ তরুণ-তরুণীদের মাঝে ক্রমবর্ধমান অশ্লীলতা ও নোংরামি কি ওই রুচিবিকৃতিরই প্রতিফলন নয়? আর এর কারণ পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ তা তো বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এখানে রুচিহীনতা এবং রুচিবৈচিত্রের পার্থক্য পরিষ্কার থাকা দরকার। রুচির একটি স্বাভাবিক পর্যায় আছে, দৈহিক পরিচ্ছন্নতা বলুন, কিংবা চরিত্র ও আচরণগত পরিচ্ছন্নতা, ওই পর্যায়ের মধ্যে থাকা অবস্থায় একাধিক রুচিকে রুচিবৈচিত্র বলা যায়। কিন্তু কারো রুচি যদি ওই পর্যায়ের চেয়ে নিচে নেমে যায় তখন তা আর রুচির বৈচিত্র থাকে না, তা হয় রুচিহীনতা। এ বিষয়েও ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিমালা আছে। অন্য প্রবন্ধে তা বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। তিন. হৃদয়, মস্তিষ্ক ও চরিত্রের পবিত্রতা বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার সাথে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতাও অতি জরুরি; বরং অভ্যন্তরীণ কলুষ ব্যক্তি ও সমাজের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। পাশ্চাত্যের জীবন-ব্যবস্থা এর জ্বলন্ত প্রমাণ। চিন্তা ও হৃদয়ের কলুষ দূর করার প্রথম শর্ত হল, খালিক ও মালিকের নিকট আত্মসমর্পণ। এই সমর্পণ ও আনুগত্যের দ্বারাই মানুষ কলুষমুক্ত হওয়ার পথ খুঁজে পায়। আল্লাহর আনুগত্য মানুষকে বাধ্য করে তাঁর প্রেরিত রাসূলের আনুগত্য ও অনুকরণে। আর স্বয়ং আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। এজন্য চিন্তা-চেতনা, হৃদয়বৃত্তি, মানবিক মূল্যবোধ, আচার-ব্যবহার, চরিত্র ও নৈতিকতা এবং জীবন ও কর্মের সকল ক্ষেত্রে নবী-আদর্শ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার শিক্ষাদান করে। এজন্য নবী-আদর্শের পূর্ণ অনুসরণ দ্বারাই অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, আজকাল বিভিন্ন মাযারে এবং পতাকা-ওড়ানো বিভিন্ন আস্তানায়, এমনকি পথের ধারেও একশ্রেণীর চরম নোংরা লোক দেখা যায়। জটাধারী, উলঙ্গ, অর্ধউলঙ্গ এসব লোকের পিছনে অনেক সুবেশী ‘ভদ্রলোক’কেও ঘুরতে দেখা যায়। তারা এদেরকে কী মনে করে তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন, শরীয়তের দৃষ্টিতে তো এরা মুসলমান কি না তাতেও সন্দেহ আছে। আর যেসব জটাধারী নোংরা লোক রাস্তাঘাটে চোখে পড়ে এরা যে সম্পূর্ণ নাপাক তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। মাথার চুলে জটা রেখে এরা ফরয গোসল করে কীভাবে? যারা শরীয়তের অতি সহজ হুকুম পালন করে সাধারণ পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জনে ব্যর্থ, তাদের অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা কতটুকু আছে তা তো খুব সহজেই অনুমেয়। আমার একটি অভিজ্ঞতা বলি। গত ঈদুল আযহার ছুটিতে তিনদিনের জন্য তাবলীগের সফরে বের হয়েছিলাম। আমাদের রোখ হয়েছিল শাহ আলী মাযার সংলগ্ন মসজিদ। সে সময় মাযারে ‘ওরস’ চলছিল। গোটা এলাকা লোকে লোকারণ্য। ওরস শেষ হতে তখনও দুই দিন বাকি। এ অবস্থায় সেখানে তাবলীগের কাজ করা সম্ভব ছিল না। আমরা মুরব্বীদের পরামর্শে দুই দিন পাশের একটি মসজিদে অবস্থান করলাম। শেষ দিন ওই মসজিদে এসে কাজ করলাম। সে সুবাদে অল্প সময়ের জন্য হলেও মাযারের পাণ্ডাদের কার্যকলাপ দেখার সুযোগ হয়েছে। আধ্যাত্মিকতার নামে নোংরামি ও প্রতারণার যেসব দৃষ্টান্ত চোখে পড়ল তাতে সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা। গোটা চত্বর দুর্গন্ধে ম ম করছে। চত্বরের বিভিন্ন স্থানে যেসব তাবীজ-ব্যবসায়ী পাণ্ডা খদ্দেরের আশায় বসে আছে তাদের কারো কারো পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় নাকে রুমাল দিতে হয়। মাযার-রাজনীতির একটি দৃশ্যও চোখে পড়ল। এক প্রভাবশালী পাণ্ডাকে দেখলাম, রাতের বেলায় মাযারে এসে ঘুরছে, মাথায় জটা, পরনে প্যান্ট, শার্ট। মাযারের নিকটে এসে আরেক পাণ্ডাকে তাবীজ বেঁচতে দেখে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল এবং অল্প সময়েই দু’পাণ্ডার মাঝে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেল। প্রত্যেকেই একে অপরের, আমাদের ‘পবিত্র’ রাজনীতির ভাষায় যাকে বলে ‘চরিত্রহনন’, তা-ই করতে আরম্ভ করল। দরজায় দাড়িয়ে দৃশ্যটা দেখছিলাম। ইতিমধ্যে সেই প্রভাবশালী পাণ্ডা মাস্তানের রূপ ধারণ করল এবং জনবল ও অস্ত্রবলের যে মৌখিক বিস্ফারণ সে ঘটাল তাতে আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম যে, আমাদের দেশের মাজার-রাজনীতিও গুণে-মানে ‘জাতীয়’ রাজনীতির চেয়ে কোনো অংশেই কম যায় না। সম্ভবত চরিত্রগত এই মিলের কারণে আমাদের একশ্রেণীর রাজনীতিবিদকেও এদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে দেখা যায়। আরো চোখে পড়েছে, নারী-পুরুষ মাযারে এসে তাদের ঈমানকে বরবাদ করছে। কিছু লোককে তো সিজদাও করতে দেখলাম। নাউযুবিল্লাহ! তবে আশার কথা এই যে, কিছু মর্দে মুজাহিদ শত বাঁধার মাঝেও এ সমস্ত কুফরি, শিরকী ও নোংরামি ভণ্ডামী দূর করার জন্য মেহনত করছেন। আল্লাহ তাআলার দরবারে দুআ করি, আল্লাহ যেন তাদেরকে সফল করেন। আমার মূল কথা এই ছিল যে, আমাদেরকে খণ্ডিত নয়; বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে। আর এই পথ হচ্ছে নবী-আদর্শের পূর্ণ অনুসরণ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

advertisement