সফর ১৪৩১   ||   ফেব্রুয়ারী ২০১০

আমরা হব তাদের মতো: ইলমের জন্য বিনয়

মুহাম্মাদ আওয়ামাহ

আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া বিন যিয়াদ (২০৭ হিজরী) ছিলেন তৃতীয় শতাব্দীর একজন বিখ্যাত ইলমে নাহ্‌ববিদ। হাদীসেও তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি ইমাম ফাররা নামে (যে নামটি ইলমে নাহ্‌বের কিতাবসমূহের পাতায় পাতায় বিদ্যমান) সমধিক প্রসিদ্ধ। তখন ছিল আব্বাসী খেলাফতকাল। খলীফা মামুন তার দুই ছেলেকে ইমাম ফাররার কাছে ইলমে নাহবের জ্ঞানার্জনের জন্য পাঠালেন। দুই শাহযাদাও তার কাছে দো জানু হয়ে বসে দিন রাত ইলম শিখতে লাগলেন। একদিনের ঘটনা। ইমাম ফাররা রাহ. কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছিলেন। তার দুই শাগরিদ উস্তাদের জুতা এগিয়ে দিতে দৌড়ে এলেন এবং তাদের দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হল। কেউ উস্তাদের পাদুকা বহনের সৌভাগ্য ছাড়তে রাজি নয়। অবশেষে তারা সম্মত হল, প্রত্যেকে একটি করে জুতা এগিয়ে দিবে। হলও তাই। দুজনই একটি করে জুতা উস্তাদজীর পায়ের দিকে এগিয়ে দিল। এই সংবাদ যখন খলীফার দরবারে পৌঁছল তখন খলীফা ইমাম ফাররা রাহ.কে ডেকে পাঠালেন। দরবারে এলে খলীফা তাকে প্রশ্ন করলেন, কে সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি? ইমাম ফাররা : খলীফাতুল মুসলিমীন-এর চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো ব্যক্তির কথা তো আমার জানা নেই। খলীফা : কেন নয়। যার জুতা এগিয়ে দিতে সিংহাসনের ভাবী অধিকারী দুই শাহযাদা প্রাণ দেয়, এবং প্রত্যেকে একটি করে জুতা এগিয়ে দিয়ে তাদের বিবাদের ফয়সালা করে তাঁর চেয়ে অধিক মর্যাদাবান আর কে আছে? ইমাম ফাররা : আমীরুল মুমিনীন, আমি তো তাদের বারণ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার আশঙ্কা হল, এতে তাদেরকে মহৎ কাজের প্রতিযোগিতায় বাধা দেওয়া হবে এবং তাদেরকে বঞ্চিত করা হবে!! হযরত ইবনে আব্বাস রা. সম্পর্কে রেওয়ায়েতে এসেছে, প্রিয় নবীজীর দৌহিত্র হযরত হাসান ও হুসাইন রা. যখন সফরে বের হতে চাইতেন তখন তিনি তাদের সওয়ারির পাদানী ধরে রাখতেন। উপস্তিত এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে বললেন, আপনি এই দুই তরুণের জন্য সওয়ারীর পাদানী টেনে ধরেছেন। অথচ আপনি তাদের চেয়ে কত বড়! ইবনে আব্বাস রা. বললেন, চুপ করো নির্বোধ! গুণীদের কদর তো গুণীরাই বোঝে। খলীফা মামুন বললেন, আপনি যদি তাদেরকে বারণ করতেন, তাহলে আমি আপনাকে দোষারোপ করতাম। এতে তাদের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, তারা তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। এতে তাদের বুদ্ধিমত্তা প্রমাণিত হল। বস্তুত মানুষ যত বড়ই হোক, তার শাসনকর্তা, পিতা-মাতা এবং উস্তাদের সামনে বিনয় প্রদর্শন থেকে কখনো উর্ধ্বে উঠতে পারে না। তাদের এই কাজের জন্য তারা পাবে বিশ হাজার দিরহাম আর সুন্দর শিক্ষাদানের জন্য আপনি দশ হাজার দিরহাম। সূত্র : তারীখে বাগদাদ ১৪/১৫০ অনুবাদ : ইবনে দানিশ

 

advertisement