জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩৬   ||   এপ্রিল ২০১৫

এটি হাদীস নয় : মুহূর্তকালের ধ্যানমগ্নতা বছরকালের/ ষাট বছর ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।

تفكر ساعة خير من عبادة سنة/ ستين سنة

এটি হাদীস নয়। যে সনদে (বর্ণনাসূত্রে) হাদীস হিসেবে কথাটি বর্ণিত হয়েছে তা নির্ভরযোগ্য নয়। তাই কথাটি হাদীস নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন শাস্ত্রের ইমামগণ। ইবনুল জাওযী রাহ. বলেন,

هذا حديث لا يصح  ...

অর্থাৎ এটি সহীহ নয়। আহমদ গুমারীও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন।

দ্রষ্টব্য : কিতাবুল মাওযূআত : ৩/৩৮৬ (টীকাসহ);আল মুগীর,পৃ.৭৬;আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ, পৃ.২৪২-২৪৩ (টীকাসহ)

তবে ব্যতিক্রম শব্দে কথাটি সাহাবী আবুদ দারদা রা. ও হাসান বসরী রাহ. থেকে প্রমাণিত। তাঁদের উক্তিটি নিম্নরূপ, 

تفكر ساعة خير من قيام ليلة

অর্থাৎ কিছু সময় চিন্তা-ভাবনা করা এক রাত নফল ইবাদত-বন্দেগী করার চেয়ে উত্তম।

আবুদ দারদা রা.-এর উক্তির জন্য দেখুন: আত তবাকাতুল কুবরা:৭/১৮৭;মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা:১৯/১৭৯ (৩৫৭২৮);কিতাবুয যুহদ,ইমাম আহমদ,পৃ.১৭৩;কিতাবুয যুহদ,হান্নাদ ইবনুস সারী, বর্ণনা:৯৪৩;হিলয়াতুল আউলিয়া:১/২৬৮;শুআবুল ঈমান:১/১৩৫-১৩৬

হাসান বসরী রাহ.-এর উক্তির জন্য দেখুন:কিতাবুয যুহদ,ইমাম আহমদ,পৃ.৩৩২;মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা:১৯/৩৭৪

উল্লেখ্য, উক্তিটি সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তবে তার সনদ কিছুটা দুর্বল। দেখুন: কিতাবুল আযামাহ,আবুশ্ শায়খ ইবনে হাইয়ান,বর্ণনা:৪২

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন,মোল্লা আলী কারী রাহ. উল্লেখ করেছেন,এটি সাররী সাকাতী রাহ.-এর উক্তি। কিন্তু এর কোনো সনদ (বর্ণনাসূত্র)  আমরা খুঁজে পাইনি।

মোটকথা,কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী নয়। (ব্যতিক্রম শব্দে) আবুদ দারদা রা. ও হাসান বসরী রাহ.-এর উক্তি।

তাফাক্কুর-এর অর্থ: তাফাক্কুর অর্থ চিন্তা-ভাবনা করা। এই চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। আল্লাহর বড়ত্ব-মহত্ব ও অসীম কুদরত নিয়ে চিন্তা করা। মানুষের জীবনের সূচনা-সমাপ্তি,হাশর-নশর,জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা করা। নিজের ঈমান-আমলের উন্নতির ফিকির করা আল্লাহর হক,মাখলুকের হক সম্পর্কে ফিকির করা। আত্মসমীক্ষা করা,আত্মসমালোচনা করা,আত্মসংশোধনের সম্ভাব্য পথ ও পন্থা সম্পর্কে চিন্তা-ফিকির করাও এর অন্তর্ভুক্ত। ইলমী তাদাব্বুর-ও (দ্বীনী ইলমের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা) এই তাফাক্কুর-এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে দ্বীনের হেফাযত ও দ্বীন প্রচারের জন্য চিন্তা-ভাবনা করাও এর অন্তর্ভুক্ত।

তাফাক্কুর-এর অর্থ থেকে এর গুরুত্বের বিষয়টি স্পষ্ট। কুরআন মাজীদের বহু আয়াতে মানবজাতিকে বিশেষ করে মুমিন বান্দাদেরকে তাফাক্কুরকরতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত,উপরের আলোচনা দ্বারা  তাফাক্কুর-এর গুরুত্ব অস্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়,বরং শুধু এ-কথা বলা উদ্দেশ্য যে,তাফাক্কুরু সাআতিন খাইরুম মিন ইবাদাতি সানাতিন/সিত্তীনা সানাতিন শীর্ষক কথাটি হাদীস নয়।

উল্লেখ্য,যারা উপরোক্ত উক্তিটিকে হাদীস মনে করে তাদের অনেকে তাফাক্কুর শব্দের অর্থ করে ধ্যানমগ্নতা,যেভাবে শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ঠিক নয়। তাফাক্কুর অর্থ ধ্যানমগ্নতা নয়। ধ্যানমগ্নতা ইবাদত অপেক্ষা উত্তম বলে ইবাদত পালনের আবশ্যকতাও অস্বীকার করে তাদের অনেকে। ধ্যান-সাধনা করে ইবাদত রহিত হয়ে যাওয়ার ধারণা একটি সুস্পষ্ট কুফরী মতবাদ। এ ধরনের কথায় বিভ্রান্ত  হওয়া উচিত নয়।

 


 

 

advertisement