রবিউল আউয়াল ১৪৩৬   ||   জানুয়ারি ২০১৫

হযরত গাঙ্গুহী রাহ.-এর মেয়ে

মাসুমা সাদিয়া

ইমামে রাববানী হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহ.-এর এক মেয়ের নাম ছিল ছাফিয়্যাহ। অত্যন্ত আল্লাহওয়ালা পরহেযগার নারী ছিলেন তিনি। এলমে দ্বীনের শিক্ষাও পুরোপুরিভাবে পিতার কাছ থেকে অর্জন করেছেন। তাঁর সম্পর্কে ‘‘তাযকিরাতুর রশীদ’’-এ বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এক অসাধারণ নারী ছিলেন তিনি। দুনিয়াবিমুখতা, সাদাসিধা জীবন যাপন, রিয়াযাত-মুজাহাদা এসব গুণ তার মাঝে পুরোপুরিই বিদ্যমান ছিল।

গাংগুহী রাহ. নিজেই তাঁর এই মেয়ের খুব প্রশংসা করতেন। একবার বললেন, যদি মহিলাদের মধ্যে মুরীদ করার অনুমতি দেয়া হত তাহলে আমার ছাফিয়্যাহ মুরীদ করতে পারত।

আরেকদিন খুব আনন্দের সাথে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ আমার মেয়ের অন্তর থেকে দুনিয়ার মহববত বের হয়ে গেছে।

শিক্ষা-দীক্ষা : ছাফিয়্যাহর পীর এবং উস্তায উভয়টাই ছিলেন গাংগুহী রাহ. নিজেই। কুরআন শরীফ খতম করার পর পিতার কাছে কুরআনের অর্থ পড়ার আগ্রহ পেশ করলেন। তখন গাংগুহী রাহ. ছাত্রদেরকে দরস দেয়ার পর যখন খাওয়ার জন্য ঘরে আসতেন তখন প্রথমে আহলিয়ার কুরআন মাজীদ শুনতেন এবং শব্দে শব্দে মশক করাতেন। এরপর মেয়েকে কুরআনের অর্থ শিক্ষা দিতেন। মেয়েকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার সময় আত্মীয়-স্বজনের কিছু মেয়ে এসে তাদের ইলম শিক্ষার মজলিসে শরিক হত। তিনি সহজ উর্দূ ভাষায় আয়াতের অর্থ পড়াতেন। দ্বীনের অন্যান্য বিষয়াদি শিক্ষা দিতেন। মাসআলা বর্ণনা করতেন, আমলের উৎসাহ প্রদান করতেন। আল্লাহর নাফরমানীর বিষয়ে সতর্ক করতেন, সুন্দর আখলাকের তাকীদ করতেন।

মোটকথা তিনি তাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে কুরআন হাদীস তথা দ্বীনী ইলম শিক্ষাদান করেছেন। (তাযকিরাতুর রশীদ)

বাইআত : ছাফিয়্যাহ নিজেই তার বাইআত হওয়ার ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেন, আমার বাইআত হওয়ার খুবই তামান্না ছিল। কিন্তু আববাজানের কাছে বলার সাহস পেতাম না। শেষে একদিন বলেই ফেললাম, আববাজান আমাকেও বাইআত করে নিন। এই আবেদনের পর তিনি বললেন, বেটি! তোমার এত কাকুতি-মিনতি করে বলার প্রয়োজন নেই। যদি মুরীদ হওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে খুবই ভালো। একদিন আছরের পর ঘরে এসে আমাকে ডাকলেন। তারপর আমার উভয় হাত নিজের হাতের উপর রেখে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, আরবী و إذا جاءك المؤمنات يبايعنك الخ  তারপর বাইআতের যে সমস্ত আমল দেয়া হয় সেগুলো বুঝিয়ে দিলেন। কিছু হাদীসের দুআ পড়তে বললেন। (তাযকিরাতুর রশীদ)

দুনিয়া বিমুখতা : অত্যন্ত সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন তিনি। তার স্বামী মাওলানা ইবরাহীম ছাহেব রাহ. তৎকালীন আড়াইশ রুপি বেতনে চাকরি করতেন। তাঁদের উপর কোন সময় যাকাত ফরয হয়নি। ছাফিয়্যাহ সবটাই অকাতরে বিলিয়ে দিতেন। তার বিবাহের ব্যাপারে হযরত গাংগুহী রাহ. বলেছেন, আমার এই মেয়ের বিবাহ হয়েছে ফাতিমাতুয যাহরা রা.-এর বিবাহের মত। আর ফাতিমাতুয যাহরার বিবাহ কিরূপ আড়ম্বরহীনতার সাথে হয়েছে আমরা তার ঘটনা পড়লেই তা জানতে পারি।

হযরত খলীল আহমদ সাহারানপুরী রাহ.-এর ইহতেরাম

হযরত সাহারনপুরী রাহ. ছাফিয়্যাহকে অত্যন্ত তাযীম করতেন। নিজে পরিপূর্ণ কামালিয়্যাতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ছাফিয়্যাকে বড় বোনের মত সম্মান করতেন।

ছাফিয়্যাহ যখন সাহারানপুর আসতেন তখন সাহারানপুরী রাহ. ইহতেমামের সাথে বাসায় চলে আসতেন। যতক্ষণ ছাফিয়্যাহ অবস্থান করতেন ততক্ষণ তিনি হাসি-খুশী থাকতেন। মনে হত গাংগুহী রাহ. এসে গেছেন। পরিবারের কেউ কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে বলতেন, যা জানার আমার বোনের কাছেই জেনে নাও। আমাকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই।

একবার ছাফিয়্যাহ হজ্বে গেলেন তখন হযরত রাহ. তাকে দিল্লী পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলেন। ঘটনাক্রমে ঐবার তিনিও হজ্বে গেলেন। তখন মক্কায় পৌঁছে তার সমসত্ম প্রয়োজনাদী নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিলেন। মদীনায় এসেও তার প্রতি পুরোপুরি খেয়াল রাখলেন। পথে তিনি সওয়ারীতে ভালোভাবে না বসা পর্যন্ত হযরত রাহ. সওয়ারীতে আরোহন করতেন না। (তাযকিরাতুল খলীল)

হযরত আশেকে এলাহী মিরাঠী রাহ. বলেন, তাকে যুগের রাবেয়া বসরীর সাথে উপমা দেয়া যায়।

এত কিছু অর্জন করার পরও যদি কেউ তাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করত তখন তিনি বলতেন, আমি তো কিছুই জানি না। নিজেকে নিজে খুব ছোট মনে করতেন। অথচ উপযুক্ত পিতার উপযুক্ত সন্তানই ছিলেন তিনি। সর্বদা দ্বীন-ঈমানের উন্নতি নিয়ে ভাবতেন। আখেরাতের ফিকির তার অন্তরে খুবই গালিব ছিল।

আল্লাহ পাক তাঁদেরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন এবং আমাদেরকেও তাদের চলার পথ অনুরসণ করার তাওফীক দিন, আমীন। 

 

 

advertisement