সফর ১৪৩১   ||   ফেব্রুয়ারী ২০১০

দুর্যোগ: আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণই পথ

খসরূ খান

হাইতির রাজধানীতে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের সংবাদ মিডিয়াতে এসেছে। সরকারীভাবে এক লাখ ১০ হাজার নিহতের কথা বলা হলেও পর্যবেক্ষকরা বলছেন সেখানে মৃতের সংখ্যা দু’লাখের কম নয়। আহতের সংখ্যাও প্রায় লক্ষাধিক। আর গৃহ ও আশ্রয়হীন, খাদ্য ও পানীয়হীন মানুষের সংখ্যা তো লাখ লাখ। জরুরি ও দীর্ঘ মেয়াদী উদ্ধার ও ত্রাণতৎপরতা চলছে সে দেশে। দুনিয়ায় মানুষের সাজানো জীবন যে, কত ক্ষণস্থায়ী, কত ভঙ্গুর ভূমিকম্প বিধ্বস্ত হাইতির দিকে তাকালে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। ঘন ঘন ভূমিকম্পের আশঙ্কা ধ্বনিত হচ্ছে আমাদের দেশেও। দুর্যোগ কবলিত হাইতির দিকে চোখ রাখলে তাই আমাদের বুকেও কাঁপন ধরে যায়। আবার একই বিষয়ে বা ওই দুর্যোগ সংগঠনে যদি অন্য কারো বা কোনো দেশের অংশগ্রহণের খবর পাওয়া যায় তখন তো ভয়ে বুক শুকিয়ে যায়। অথচ এরকমই একটি খবর আমরা পেলাম সংবাদমাধ্যমের বরাতে হাইতি-ভূমিকম্পের প্রায় ১১/১২ দিন পর। এ এফপি, বিবিসি, আলজাজিরা ও ইন্টারনেট সূত্রে প্রচারিত খবর বা বক্তব্যটি সত্যাসত্য যাচাইয়ের সুযোগ আমাদের নেই। ২৪ জানুয়ারিতে প্রকাশিত ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে শিরোনামসহ সে খবরটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমরা এখানে তুলে দিচ্ছি। হুগো শ্যাভেজের অভিযোগ মার্কিন অস্ত্র পরীক্ষার ফলেই হাইতিতে ভূমিকম্প! ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন টেকটনিক অস্ত্রের পরীক্ষায় সৃষ্ট ভূমিকম্পে এত বড় বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে হাইতিতে। স্প্যানিশ পত্রিকা এবিসি হুগো শ্যাভেজের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, আবহাওয়া পরিবর্তনের উচ্চপ্রযুক্তি সংবলিত হার্প (হাই ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাকটিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম) অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে ইকো সিগন্যালের মাধ্যমে টেকটনিক প্লেটে অবস্থান পরিবর্তন করে ভূমিকম্প সৃষ্টি করে স্বয়ং ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আধিপত্যবাদী এ দেশটি এখন হাইতি দখলের চেষ্টা করছে। ভেনিজুয়েলার পত্র-পত্রিকাতেও বলা হয়, হাইতির ভূমিকম্পের সঙ্গে হার্প অস্ত্র পরীক্ষার সম্পর্ক থাকতে পারে। আলাস্কায় এ হার্প প্রজেক্টের মাধ্যমে বিশ্ব আবহাওয়ায় বিরূপ পরিবর্তন আনা সম্ভব। এ সম্পর্কে সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্ধৃতিও তারা উল্লেখ করে। ১৯৯৭ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম কোহেন একবার বিশ্ব ইকো টেরোরিজমের বিপদ সম্পর্কে হুশিয়ারি উচ্চরণ করে বলেছিলেন, এ ধরনের ইকো সন্ত্রাসীরা উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্রের মাধ্যমে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ পাঠিয়ে আবহাওয়া পরিবর্তন, ভূমিকম্প সৃষ্টি বা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটাতে পারে। বর্তমানে হাইতির উপকূলে মার্কিন নৌবহরে ১৭টি যুদ্ধজাহাজ ও উদ্ধার জাহাজ আছে। হাইতিতে উদ্ধার ও ত্রাণকাজের জন্য তৎপর ১০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা। গত শুক্রবার জাতিসংঘের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী হাইতির বন্দর, বিমানবন্দর, সীমান্ত এবং সড়ক যোগাযোগের নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। জাতিসংঘ এবং হাইতি সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবে। এদিকে হাইতিতে ভূমিকম্পে সৃষ্ট ধ্বংসস'প থেকে উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেছে সরকার। দেশটির ধ্বংসস'প থেকে ১৩২ লোককে জীবিত উদ্ধারের পর এ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তবে এ কথা মিথ্যা নয় যে, ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মহাপরীক্ষা যেভাবেই আসুক তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কিংবা আল্লাহ না করুন তাতে আক্রান্ত হয়ে গেলেও সুপরিণতি লাভের পথ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার দরবারে আত্মসমর্পণ। তওবা-ইস্তেগফার এবং ইনাবাতের মধ্য দিয়ে সে পথে আমরা যত দ্রুত নিমগ্ন হব ততই আমরা বাস্তব অর্থে বিপদমুক্ত হব।

 

advertisement