রবিউল আউয়াল ১৪৩৫   ||   জানুয়ারি ২০১৪

ফোন-বিষয়ে একটি দরখাস্ত ও একটি মা‘যেরাত

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

আপন মুসলিম ভায়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। আর যদি এমন হয়  যে, কোনো ভাই নিজ আগ্রহেই কথা বলতে চাচ্ছেন তাহলে তো সেটা অনেক বড় গনিমত। কেউ মেহেরবানি করে আমার ফোনের জবাব দিবেন এটাই আমার জন্য অনেক বড় কথা। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, অনেক ভাই ফোন করেন কিন্তু আমি ফোনের জবাব দিতে পারি না। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।

আসলে এটি একটি বাস্তবতা যে, মানুষ জীবনের কিছু কিছু সময় সৌভাগ্য অর্জন ও দায়িত্ব পালন-এ দুয়ের দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। দায়িত্ব পালন করতে গেলে সৌভাগ্য অর্জন থেকে বঞ্চিত হতে হয়, আর সৌভাগ্য অর্জন করতে গেলে দায়িত্ব পালন হয় না। এমন সময় দুয়ের মাঝে সমন্বয় সম্ভব না হলে দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিতে হয়-এই মূলনীতি আমরা বায়তুল্লাহর ছায়ায়-এ পড়েছি।

মুরববীদের পক্ষ থেকে মারকাযুদ দাওয়াহ্র বিভিন্ন খেদমত এই বান্দার দায়িত্বে অর্পিত। পরিমাণ ও ওজনের দিক থেকে তা এমন যা আদায় করতে আমার মত দুর্বল মানুষ যদি রাতদিন ২৪ ঘন্টাও ব্যয় করে সেটাও কম। এইসব যিম্মাদারির কারণে না সফর করার সুযোগ হয়, না সব সময় ফোনে কথা বলা সম্ভব হয়। মাশওয়ারা অনুযায়ী সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ফোনের সময় রাখা হয়েছে। কিন্তু কখনো এমন হয় যে, ঐ সময়ই মারকাযের কোনো জরুরি মজলিশের প্রয়োজন দেখা দেয় বা বিশেষ প্রয়োজনে হযরতপুর (মারকাযের প্রধান প্রাঙ্গণ, হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ) থেকে শহরে আসতে হয় অথবা শহর থেকে ফিরতে হয়। আর রাস্তায় আওয়াযের কারণে কথা বুঝতে কষ্ট হয়। একারণে কখনো কখনো নির্দিষ্ট সময়েও ফোন বন্ধ রাখতে হয়। অথবা রিং-টোনের আওয়ায বন্ধ থাকে, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় হওয়ার পরও আওয়ায চালু করার কথা মনে থাকে না। আবার জুমার  দিন জুমার ব্যস্ততার কারণে ফোনের জবাব দেয়া থেকে মাহরূম থাকতে হয়। এসব কারণে আমার ভাইদের যে কষ্ট হয় তার জন্য আমি অন্তর থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন এবং তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন

এক্ষেত্রে একথাও স্পষ্ট করে দেওয়া মুনাসিব মনে করছি যে, যদিও এ বান্দার দারুল উলূম করাচিতে দুই-আড়াই বছর ফতোয়ার অনুশীলন করার সুযোগ হয়েছিল এবং মাসিক আলকাউসারেআপনি যা জানতে চেয়েছেন বিভাগের মাসায়েল ছাপার পূর্বে একবার শোনার সুযোগ হয়, কিন্তু এই বান্দার কাজের মূল বিষয় হল উলূমুল হাদীস

মুরববীগণ মারকাযুদ দাওয়াহ্য় আত তাখাস্সুস ফী উলূমিল হাদীসিশ শারীফদারুত তাসনীফ-এর দায়িত্ব এই বান্দার যিম্মায় দিয়েছেন। এদিকে বর্তমানে বেশি অবস্থান করা হয় মারকাযুদ দাওয়াহ্র প্রধান প্রাঙ্গণে (হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ)। আর মারকাযুদ দাওয়াহ্র দারুল ইফতা মারকাযের প্রধান দফতর ৩০/১২ পল্লবী, ঢাকাতে। দারুল ইফতার রঈস (প্রধান) আমার বড় ভাই হযরত মাওলানা মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ছাহেব এবং তাঁর সহযোগী হিসেবে আছেন মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া। তাঁদের দুজনের তত্ত্বাবধানে ইফতা বিভাগের তালিবুল ইলমগণ ফতোয়ার কাজ করেন। তাঁরা কখনো কোনো মাসআলার মাশওয়ারায় আমাকে শরিক করেন, এটা তাঁদের মহানুভবতা। সুতরাং মাসআলা জানার প্রয়োজন হলে সবচেয়ে উত্তম হল সরাসরি দারুল ইফতার দায়িত্বশীলগণকে ফোন করা। ফারায়েয-মিরাছ, মুআমালা-লেনদেন, ব্যাংক-বীমা এবং যাবতীয় আধুনিক সমস্যা সংক্রান্ত যে প্রশ্নই আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় আমি তো এটাই বলি যে, দয়া করে মুফতী আব্দুল্লাহ ছাহেবের সাথে কথা বলুন অথবা মাওলানা ইয়াহইয়াকে ফোন করুন। আর মাশাআল্লাহ দেশে ফতওয়া দেওয়ার মত নির্ভরযোগ্য আলেম ও প্রতিষ্ঠান অনেক। সুতরাং পেরেশানির কোনো কারণ নেই।

অনুরূপভাবে যে ভায়েরা সাধারণত ফোন করেন তাদের জানা আছে যে, খুব কম মাসআলারই আমি নগদ উত্তর দিই; বলি, পরবর্তীতে আবার যোগাযোগ করুন। কিন্তু এক্ষেত্রেও দেখা যায় কিতাব দেখা বা মাশওয়ারা করার বিষয়টি আমার স্মরণ থাকে না। ফলে বার বার তাদের ফোন করতে হয় ও কষ্ট পেতে হয়। এসকল কারণে আমি নিজেই কষ্ট পাই। কিন্তু এর কোনো সমাধান আমার কাছে নেই। তাই একরকম বাধ্য হয়েই আমার ভাইদের খেদমতে নিজের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরলাম। যাতে আমার কারণে তারা নিজেদেরকে কষ্টে না ফেলেন। আর যে ভায়েরা যোগাযোগ করবেন তাদের যেন সার্বিক অবস্থাটা জানা থাকে এবং বেশি কষ্ট না হয়।

সাথে সাথে এই দরখাস্তও পেশ করছি যে, কখনো কোনো কোনো ভাইয়ের সাথে একটু শক্ত কথাও হয়ে যায়। এছাড়া আমার আওয়াজ একটু উঁচু হওয়ার কারণে কেউ কেউ ভুল বোঝাবুঝিরও শিকার হতে পারেন। আর হযরতপুরে শাবাকা (নেটওয়ার্ক) খুব দুর্বল হওয়ার কারণে অনেক সময় কথা বোঝা যায় না। এছাড়াও আরো অনেক কারণে যে ভাইয়েরা আমার সাথে যোগাযোগ করেন তাদের কষ্ট হয়ে থাকে। আমি সকলের খেদমতে ক্ষমার দরখাস্ত পেশ করছি। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন এবং তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।

 কোনো কোনো তালিবুল ইলম ভাইয়ের অভিযোগ, শনিবার থেকে জুমাবার তো মাদরাসা খোলা থাকে, এবং বেলা এগারোটা থেকে দুপুর বারোটার মধ্যবর্তী সময়ে সবক চলে। এজন্য নির্ধারিত সময়ে তাদের ফোন করার সুযোগ হয় না। এ কথা ঠিক আছে। তবে তালিবুল ইলম ভাইয়েরা তো নিজেদের  তালীমী মুরববী এবং নিজেদের মাদরাসার আসাতিযায়ে কেরামের কাছে খুব সহজেই মুরাজাআত করতে পারেন। আর একান্ত ইচ্ছা হলে মাদরাসার বিরতির দিনগুলোতেও তো ফোন করা যায়।

এরপর আমার যা পছন্দ তা হলো, উলামায়ে কেরাম নিজেদের সালাফের তরীকায় চিঠি পত্রের ধারা চালু রাখবে। এতে ফায়েদাও বেশি বরকতও বেশি। এক্ষেত্রে পত্রের সাথে ঠিকানা লেখা ফেরত খাম না হলেও অন্তত নিজের ঠিকানাটা পরিষ্কারভাবে লেখা থাকা কাম্য। ষ

বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

১০/০২/১৪৩৫হি.

 

 

advertisement