মুহাম্মাদ আলী হোসেন - কুমিল্লা

৫৬২৭. প্রশ্ন

ঈদের আগে বাজার থেকে গরু আনার সময় রশির টান লেগে আমার হাতের পিঠে ফোসকা ও কালো দাগ পড়ে যায়। বেশ কয়েকদিন পর তা শুকিয়ে গেলে জুমার নামাযের ওযু করার পর নামাযের কিছুক্ষণ আগে তা উঠিয়ে ফেলি এবং দ্বিতীয়বার ঐ জায়গা না ধুয়ে নামায আদায় করি। আমার জানার বিষয় হল, ঐ জায়গাটি দ্বিতীয়বার না ধুয়ে নামায পড়া কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

ওযু করার পর ওযুর কোনো অঙ্গের চামড়া উঠে গেলে বা উঠিয়ে ফেললে ঐ জায়গাটি ধোয়া আবশ্যক হয় না। তাই ঐ জায়গাটি দ্বিতীয়বার না ধুয়ে আপনার নামায পড়া ঠিক হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/৪৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৬৫; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/১৯২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫; রদ্দুল মুহতার ১/১০১

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ আলমাসউদ - রামপুরা, ঢাকা

৫৬২৮. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লায় পানির খুব সমস্যা। শুধু রাতে পানি থাকে। তাই গোসলখানায় একটি ড্রাম রেখেছি। রাতে ভরে রাখি, সারাদিন সেই পানি দিয়ে অযু-গোসলসহ যাবতীয় কাজ করি। গতকাল যোহরের সময় ড্রাম থেকে পানি আনতে গিয়ে দেখি একটি মরা তেলাপোকা পানিতে ভাসছে। তখন দ্বিধান্বিত হয়ে যাই- পানি নাপাক হয়ে গেছে কি না? তারপর পাশের বাসা থেকে অযু করে নামায আদায় করি। আমার প্রশ্ন হল, পানিতে তেলাপোকা পড়ে মারা গেলে পানি কি নাপাক হয়ে যায়?

উত্তর

পানিতে তেলাপোকা পড়ে মারা গেলে তা নাপাক হয় না। কেননা তেলাপোকাতে প্রবাহিত রক্ত নেই এবং তা নাপাকও নয়। অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ড্রামের পানি নাপাক হয়নি। তা দ্বারা ওযু-গোসল করতে পারবেন।

-কিতাবুল আছল ১/২৩; আলইখতিয়ার ১/৬৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৩; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/১৮৩

শেয়ার লিংক

যাকির হুসাইন - দাউদকান্দি, কুমিল্লা

৫৬২৯. প্রশ্ন

একদিন চুল ছাঁটার জন্য বাজারে যাই। সেলুন থেকে চুল ছেঁটে ফেরার পথে এক মসজিদে ইকামতের আওয়াজ শুনে জামাতে শরীক হই। ওযু ছিল বিধায় দ্বিতীয়বার ওযুর প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু পরে সন্দেহ হল যে, নামাযের আগে ওযু করার সময় যেই চুলের উপর মাসেহ করেছিলাম তা তো নেই। চুল ছাঁটার দ্বারা আমার মাসেহ ভেঙ্গে গেল কি না, এ নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়ে আছি।

মুহতারামের কাছে জানতে চাই, চুল ছাঁটা বা মাথা মুণ্ডানোর দ্বারা কি মাসেহ ভেঙে যায়? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

অযু করার পর চুল ছাঁটা বা মাথা মুণ্ডানোর দ্বারা মাসেহ বাতিল হয়ে যায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে পুনরায় মাথা মাসেহ বা অযু করার প্রয়োজন নেই।

عَنِ الْحَسَنِ؛ فِي الرّجُلِ يَأْخُذُ مِنْ شَعْرِهِ وَمِنْ أَظْفَارِهِ بَعْدَ مَا يَتَوَضّأُ؟ قَالَ : لاَ شَيْءَ عَلَيْهِ.

হযরত হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি অযু করার পর তার চুল বা নখ কাটলে তার উপর কোনো কিছু আবশ্যক নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস ৫৭৬)

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ ১/৭২; কিতাবুল আছল ১/৩৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/১০১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ যুবায়ের - লালবাগ, ঢাকা

৫৬৩০. প্রশ্ন

গতকাল জোহরের নামাযের সময় ইমাম সাহেব এক রাকাত পড়ে ফেলার পর আমি জামাতে শরীক হই। নামায শেষে ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পর ভুলে আমিও এক দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। তারপর ছুটে যাওয়া রাকাতটির কথা মনে পড়ার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যাই এবং সাহু সিজদাসহ বাকি নামায স্বাভাবিকভাবে পূর্ণ করি। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত অবস্থায় আমার উপর আসলেই কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। কেননা মাসবুক ব্যক্তি যদি ইমামের সালাম ফিরানোর পর ভুলে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে তার নিজের নামায শেষে সাহু সিজদা দেয়া ওয়াজিব হয়। সুতরাং আপনি সাহু সিজদা দিয়ে ঠিকই করেছেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৬৮; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৩৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৮; মাজমাউল আনহুর ১/২২২; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নাসির - মোমেনশাহী

৫৬৩১. প্রশ্ন

আমি মাগরিবের প্রথম রাকাতে মাসবুক হই। ইমাম সাহেব ভুলে প্রথম বৈঠক ছেড়ে দেন। শেষ বৈঠকে যখন ইমাম সাহেব সাহু সিজদার জন্য এক দিকে সালাম ফেরান তখন আমি আমার বাকি নামায স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধারণা করে এক দিকে সালাম ফিরাই যে, সাহু সিজদার আগে এক দিকে সালাম ফিরাতে হয়। নামায শেষ করলে পাশের এক ব্যক্তি বলেন, আপনি যেহেতু মাসবুক ছিলেন, তাই সাহু সিজদার আগে ইমামের সাথে সালাম ফিরানো ঠিক হয়নি। তারপর ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে ইমাম সাহেব বলেন, আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাম ফিরিয়ে থাকেন তাহলে আপনার নামায নষ্ট হয়ে গেছে, তা পুনরায় পড়তে হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে সালাম ফিরিয়ে থাকেন তাহলে আপনার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমার জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক?

উত্তর

হাঁ, ইমাম সাহেবের কথা সঠিক। তাই আপনি ওই নামাযটি দ্বিতীয়বার না পড়ে থাকলে তা পড়ে নেবেন। কেননা প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি ইচ্ছাকৃত ইমামের সাথে সাহু সিজদার সালাম ফিরিয়েছিলেন। আর মাসবুক ইমামের সাথে ইচ্ছাকৃত সাহু সিজদার সালাম ফিরালে তার নামায ফাসেদ হয়ে যায়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১০০; রদ্দুল মুহতার ২/৮২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হেলাল - কুমিল্লা

৫৬৩২. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আমি রুমে যোহরের সুন্নত পড়ছিলাম। নামায পড়া অবস্থায় এক সাথী এসে তাড়াহুড়ার মধ্যে অন্য কেউ না থাকায় আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, ভাই! আজ কি এক তারিখ? তখন আমি তার তাড়াহুড়ার প্রতি লক্ষ্য করে মাথায় ইশারা করে উত্তর দিই। আমার জানার বিষয় হল, এভাবে মুখে উচ্চারণ ছাড়া শুধু মাথা ইশারা করার কারণে কি আমার নামায নষ্ট হয়ে গেছে?

উত্তর

না, মাথা দিয়ে ইশারা করার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। তবে নামাযে এমন কাজ খুশু-খুযুর খেলাফ। ফকীহগণ নামাযে মাথা বা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা মাকরূহ বলেছেন।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযরত ব্যক্তিকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা অন্যায় হয়েছে। এ কারণে ইস্তেগফার করতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৬৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৪৫; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৪

শেয়ার লিংক

রায়হান কাবীর - সূত্রাপুর, ঢাকা

৫৬৩৩. প্রশ্ন

আমি গত শুক্রবার ফজরের নামাযে মসজিদে এসে দেখি ইমাম সাহেব নামাযে সূরা সিজদা তিলাওয়াত করছেন। তখন আমি সুন্নত পড়া শুরু করি। আমার সুন্নতে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা দিয়েছেন। পরে সুন্নত শেষ করে আমি ওই রাকাতের রুকুতে গিয়ে ইমাম সাহেবের সাথে শরীক হই।

হুজুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেবের সাথে জামাতে শরীক হওয়ার দ্বারা কি আমার তিলাওয়াতে সিজদা আদায় হয়ে গিয়েছে, নাকি নামাযের পরে ভিন্ন করে আমাকে ওই তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করতে হবে? সঠিক উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ইমাম সাহেব যে রাকাতে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করেছেন সেই রাকাতেই ইমামের সাথে নামাযে শরীক হয়েছেন, তাই আপনার সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় হয়ে গিয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। তাই নামাযের পরে ভিন্ন করে তা আদায় করতে হবে না।

-কিতাবুল আছল ১/২৭৯; আলজামিউস সাগীর, পৃ. ১০২; খিযানাতুল আকমাল ১/৬৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/১১০

শেয়ার লিংক

সাইফুদ্দীন - লক্ষীপুর

৫৬৩৪. প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে আমার বাবা মারা যান। মহল্লার কবরস্থানে আমরা তাকে দাফন করি। এখন আমরা চাচ্ছি, বাবার কবরের পাশে তার নাম-ঠিকানা সম্বলিত একটা ফলক লাগিয়ে দিতে। যেন আত্মীয়-স্বজনের কবর চিনতে সুবিধা হয়। আর ভবিষ্যতে কবর বেড়ে গেলে আমরাও কবর শনাক্ত করতে সংশয়ে না পড়ি। জানার বিষয় হল, শরীয়তে এটার বৈধতা আছে কি?

উত্তর

হাঁ, চিহ্নিত রাখার জন্য কবরের পাশে নাম এবং সংক্ষিপ্ত ঠিকানা সম্বলিত ফলক লাগানোর অবকাশ রয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

لَمّا مَاتَ عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُونٍ، أُخْرِجَ بِجَنَازَتِهِ فَدُفِنَ، فَأَمَرَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ رَجُلًا أَنْ يَأْتِيَهُ بِحَجَرٍ، فَلَمْ يَسْتَطِعْ حَمْلَهُ، فَقَامَ إِلَيْهَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَحَسَرَ عَنْ ذِرَاعَيْهِ، قَالَ كَثِيرٌ: قَالَ الْمُطّلِبُ: قَالَ الذِي يُخْبِرُنِي ذَلِكَ: عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، قَالَ: كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ ذِرَاعَيْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، حِينَ حَسَرَ عَنْهُمَا ثُمّ حَمَلَهَا فَوَضَعَهَا عِنْدَ رَأْسِهِ، وَقَالَ: أَتَعَلّمُ بِهَا قَبْرَ أَخِي، وَأَدْفِنُ إِلَيْهِ مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِي.

অর্থাৎ, উসমান ইবনে মাযউন রা. ইন্তিকালের পর তাঁর দাফন শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাথর তাঁর মাথার কাছে রাখেন এবং বলেন, এর দ্বারা আমার (দুধ) ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করে রাখলাম। পরবর্তীতে আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে যেন তাঁর কাছাকাছি তাকে দাফন করতে পারি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২০৬)

তবে কবরের পাশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু লেখা যাবে না। যেমন কুরআনের আয়াত ইত্যাদি লিখে রাখা নিষেধ। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

نَهَى النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ تُجَصّصَ القُبُورُ، وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهَا، وَأَنْ تُوطَأَ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করা, তার উপর লেখা, কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা এবং কবর পদদলিত করা থেকে নিষেধ করেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫২)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রাহ. বলেন-

محمول على الزائد على ما يعرف به حال الميت.

মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করতে যতটুকু লেখা প্রয়োজন তার চাইতে বেশি লেখার ক্ষেত্রে এই হাদীস প্রযোজ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ৪/১৬৬)

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭

শেয়ার লিংক

সুলতানা পারভীন - রাজশাহী

৫৬৩৫. প্রশ্ন

রাজশাহী অঞ্চলে মৃত ব্যাক্তিকে (মহিলা) যেভাবে গোসল করানো হয় তা মাসআলার কিতাবে পাওয়া যায় না। যেমন-

(ক) যাকে দিয়ে ইস্তেঞ্জা করানো হয় তাকে আর সেখানে থাকতে দেয়া হয় না। সে নাকি নাপাক হয়ে গেছে। গোসল না করে সে আর কোনো কিছু স্পর্শ করতে পারবে না।

(খ) গোসল শেষে চোখে সুরমা দেওয়া হয়, নাকে কানে তুলা গুঁজে দেওয়া হয়।

(গ) সারা শরীরে তিনবার করে সাবান দেওয়া হয়।

(ঘ) নানান রকম গীত গাওয়া হয়।

(ঙ) গোসল শেষে হাত তুলে মুনাজাত করা হয়।

এসব কাজ কি ঠিক?

উত্তর

(ক) মৃত ব্যক্তিকে যিনি ইস্তেঞ্জা করাবেন (ইস্তেঞ্জার জায়গা পরিষ্কার করবেন) তার নাপাক হয়ে যাওয়ার ধারণাটি ভুল। সুতরাং এ কারণে তাকে সেখানে আর থাকতেই না দেওয়া এবং তাকে নাপাক মনে করা সবই ভুল ও কুরসমের অন্তর্ভুক্ত। এসব ধারণা ও কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

প্রকাশ থাকে যে, মৃত ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি গোসল দেবে সে-ই তাকে ইস্তেঞ্জা করাতে পারবে। এর জন্য ভিন্ন লোকের প্রয়োজন নেই। -কিতাবুল আছল ১/৪৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৭; ফাতহুল কাদীর ১/৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭০

(খ) মৃত ব্যক্তির চোখে সুরমা লাগানো নিষেধ। হাদীস শরীফে মৃতকে সিঁথি বা সৌন্দর্যবর্ধনমূলক কোনো কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আর নাকে কানে তুলা দেওয়ার বিষয়টিও শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কোনো কোনো ফকীহ তা ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই বলেছেন। তাই কেউ দিলে বাড়াবাড়ি করার প্রয়োজন নেই। -কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ৩৮১, ৩৮২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩, ২/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮

(গ) মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় একবার সাবান দেয়াই যথেষ্ট। তিনবার নিয়ম করে সাবান দেবে না। সুন্নত মনে না করে পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে দিলে সমস্যা নেই। তবে পুরো শরীরে তিন বা ততোধিক বার পানি ঢালার কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। হযরত উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

تُوُفِّيَتْ بِنْتُ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ لَنَا: اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا، أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، إِنْ رَأَيْتُنّ.

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে যায়নাব রা.-এর ইন্তেকাল হলে তিনি আমাদের বললেন, তোমরা তার পুরো শরীরে তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনে আরো বেশিবার পানি ঢালো। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৫৭)

(ঘ) মৃত ব্যক্তির শোকে গীত গাওয়া ও সম্মিলিতভাবে কান্নাকাটি করা নিষিদ্ধ। এগুলো হাদীস শরীফে নিষিদ্ধ নিয়াহার অন্তর্ভুক্ত। হযরত উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَهَانَا عَنِ النِّيَاحَةِ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়াহা থেকে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১২৭)

মোল্লা আলী আলকারী রাহ. নিয়াহার ব্যাখ্যায় বলেন, নিয়াহা হল মৃত ব্যক্তির জন্য নারীদের একত্রিত হয়ে সমস্বরে ক্রন্দন করা, মৃতের শোকে শ্লোক-কবিতা আবৃত্তি করা, মৃতের প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করতঃ বিলাপ করা ইত্যাদি। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৮৮)

(ঙ) গোসল শেষে হাত তুলে মুনাজাত করা বিদআত। মৃতের জন্য সম্মিলিতভাবে দুআ করার শরীয়তসম্মত পন্থাই হল জানাযার নামায। তাই গোসলের পর মুনাজাতের এই প্রথাটি পরিহার করতে হবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫

শেয়ার লিংক

আহমাদ - ফেনী

৫৬৩৬. প্রশ্ন

আমি রমযানের এক রোযায় দুপুর বেলায় ভুলে পানি পান করে ফেলি। পরে আমি মনে করি, আমার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ইচ্ছা করেই দুপুরের খাবারও খেয়ে ফেলি। তারপর আমাদের ইমাম সাহেবকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, রোযাদার ভুলবশত পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয় না। আপনি যেহেতু তারপরও ইচ্ছাকৃত খেয়েছেন তাই এর কারণে রোযাটি ভেঙে গেছে। এখন আপনাকে ঐ দিনের রোযা কাযা করতে হবে। এখন মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমাকে ঐ দিনের রোযা কাযা করে নিলেই হবে, নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ দিনের রোযার শুধু কাযা করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না। তবে এক্ষেত্রে কোনো আলেম থেকে মাসআলা না জেনে নিজ ধারণার ভিত্তিতে পরবতীর্তে ইচ্ছাকৃত রোযাটি ভেঙে ফেলা বড় অন্যায় হয়েছে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬৬; মাজমাউল আনহুর ১/৩৫৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৫৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১

শেয়ার লিংক

উম্মে আহমাদ - চিতলমারী, বাগেরহাট

৫৬৩৭. প্রশ্ন

গত রমযানের তিন মাস পূর্বে আমার একটি শিশু সন্তানের জন্ম হয়। রমযানের শুরু থেকে রোযা রেখেই আমার সন্তানকে দুধ পান করাচ্ছিলাম। কিন্তু এতে আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। মাথা ঘুরত। অন্যদিকে বুকে দুধও খুব কম আসছিল। এতে আমার সন্তানের খুব কষ্ট হচ্ছিল। সারাদিন কান্নাকাটি করত। তখন আমি রমযানের বাকি রোযাগুলো আর রাখি না।

মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল, উল্লেখিত পরিস্থিতিতে আমার জন্য রমযানের রোযা না রাখাটা কি বৈধ হয়েছে? ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর ক্ষেত্রে আমার জন্য করণীয় কি? শরীয়তের সঠিক সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

দুগ্ধদানকারিনী মহিলা রোযা রেখে সন্তানকে দুধ পান করানোর কারণে যদি তার খুব বেশি কষ্ট হয়, অথবা রোযা রাখার কারণে বুকে দুধ এত কম আসে যে, সন্তানের খাবার পূর্ণ হয় না এবং সন্তান অন্য খাবারেও অভ্যস্ত নয় বিধায় তার শারীরিক ক্ষতির প্রবল আশংকা হয়, সেক্ষেত্রে উক্ত মহিলার রোযা না রাখার অনুমতি আছে। হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إِنَّ اللهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصّوْمَ، وَشَطْرَ الصّلاَةِ، وَعَنِ الحَامِلِ أَوِ الْمُرْضِعِ الصّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের ওপর হতে রোযা (ঐ সময়ের জন্য) এবং অর্ধেক নামায রহিত করেছেন। আর গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারিনী মহিলার ওপর হতে রোযাকে (ঐ সময়ের জন্য) রহিত করেছেন।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ৭১৫; কিতাবুল আছল; ২/১৭২ ; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জসিম - কুমিল্লা

৫৬৩৮. প্রশ্ন

গত রমযানের শেষের দিকে আমার তৃতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে মনে করে শেষের তিনটি রোযা রেখে ভেঙে ফেলি। পরীক্ষা শেষ করে যখন ওই রোযাগুলোর কাযা করার ইচ্ছা করি, মসজিদের ইমাম সাহেব আমার অবস্থা শুনে বলেন, আপনি যেহেতু শরয়ী কারণ ছাড়া ওই রোযাগুলো ভেঙেছেন তাই আপনার উপর ওই রোযাগুলোর কাযা-কাফফারা উভয়টি আবশ্যক হবে। মুহতারামের কাছে আমি জানতে চাই, ওই তিন রোযার জন্য কি ভিন্ন ভিন্ন তিনটি কাফফারা আবশ্যক হবে। নাকি শুধু একটি কাফফারা যথেষ্ট হবে?

উত্তর

 প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর একটি কাফফারা আদায় করা জরুরি। আর যে কয়টি রোযা ভেঙেছেন সেগুলোর প্রত্যেকটির কাযা করতে হবে।

তবে ভালোভাবে মনে রাখা দরাকার, শরয়ী কোনো ওজর ছাড়া রমযানের রোযা ভেঙে ফেলা মারাত্মক গুনাহের কাজ। এর জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৫৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪২৪; খিযানাতুল আকমাল ১/২৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৩০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭

শেয়ার লিংক

আবুল হাশেম - শেরপুর

৫৬৩৯. প্রশ্ন

আমার ছেলে বিদেশে চাকরি করত। ৯ মাস আগে সে সেখানে গিয়েছিল। গতমাসে সে সেখানে একটি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। সে বিদেশে যাওয়ার আগে আমরা তাকে আমাদের এবং তার পছন্দ অনুযায়ী আমার বন্ধুর মেয়ের সাথে এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিবাহের আকদ সম্পন্ন করেছিলাম এবং কাবিননামাও করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমরা মেয়েকে উঠাইনি এবং আমার ছেলে তার সাথে রাত্রি যাপনও করেনি। আমার জানার বিষয় হল, আমার ছেলে তো তার স্ত্রীর মোহর আদায় করেনি।

এখন আমার জন্য আমার ছেলের রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে তার স্ত্রীর মোহর আদায় করা লাগবে কি না? কেননা আমার ছেলে তার স্ত্রীর সাথে এক রাত্রিও থাকেনি এবং আমরাও তাকে উঠিয়ে আনিনি। শুধু বিবাহের আকদ এবং কাবিননামা হয়েছে মাত্র। জানালে খুব উপকৃত হতাম।

উত্তর

স্বামী-স্ত্রীর মিলনের দ্বারা যেমনিভাবে পুরো মোহর আবশ্যক হয়ে যায়, তেমনি মৃত্যুর দ্বারাও স্ত্রী পূর্ণ মোহরের অধিকারী হয়ে যায়। তাই আপনার ছেলের স্ত্রীকে পূর্ণ মোহরই আদায় করতে হবে এবং সে চার মাস দশ দিন (স্বামী মৃত্যুর) পূর্ণ ইদ্দত পালন করবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৮৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ৩/২০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৫১; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১০২

শেয়ার লিংক

সোহাগ - কলাবাগান, ঢাকা

৫৬৪০. প্রশ্ন

আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এক লোক তার স্ত্রীকে বায়েন তালাক দেয়। তারা শরীয়তের মাসআলা না জানার কারণে প্রায় দুই মাস স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে অবস্থান করে। এ সময়ের মধ্যে ঐ মহিলার দুটি ঋতুস্রাব অতিবাহিত হয়ে যায়। এখন ঐ মহিলা মাসআলা জানার পর স্বামী থেকে আলাদা হয়ে গেছে এবং স্বামীর সাথে আর সংসার করতে চাচ্ছে না। সে অন্যত্র বিবাহ করতে চায়। তাই সে জানতে চাচ্ছে, সে কি এখন অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে?

উত্তর

বায়েন তালাক হয়ে যাওয়ার পর যেহেতু না জেনে ঐ মহিলা তার তালাকদাতা স্বামীর সাথে একত্রে থেকেছে তাই এক্ষেত্রে সে তার থেকে আলাদা হওয়ার পর থেকে ইদ্দত পালন শুরু করবে। (অর্থাৎ ঋতুমতি হলে পূর্ণ তিনটি ঋতু¯্রাব আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত)এভাবে আলাদা হওয়ার পর থেকে ইদ্দত পালন শেষ হওয়ার পর ঐ মহিলা চাইলে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

উল্লেখ্য, বায়েন তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে অবস্থান করা সম্পূর্ণ হারাম। তালাকের পরেই মাসআলা জেনে নেওয়া আবশ্যক ছিল। এখন বিগত দিনের গুনাহের জন্য উভয়কে আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৩; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/১৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৮; ফাতহুল কাদীর ৪/১৫১; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১৮

শেয়ার লিংক

রাবেয়া - যশোর

৫৬৪১. প্রশ্ন

আমার স্বামী সৌদি আরবের রিয়াদে চাকরি করতেন। দুই মাস আগে অফিসে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। হঠাৎ করেই তার সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু তখনও আমরা কিছু জানতে পারিনি। প্রায় তিন সপ্তাহ যাবৎ সৌদি দুতাবাসে অনেকবার খোঁজ নেওয়ার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি।

জানার বিষয় হল, এখন আমি কবে থেকে ইদ্দত গণনা করব?

উত্তর

স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর খবর না পেলেও স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ইদ্দত শুরু হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামী যেদিন মৃত্যুবরণ করেছেন সেদিন থেকেই আপনার ইদ্দত গণনা করতে হবে। তাই আপনি অন্তঃসত্ত্বা না হলে স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে চার মাস দশ দিন আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০১; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৮; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৫২০

শেয়ার লিংক

আবদুর রশীদ - মিরপুর, ঢাকা

৫৬৪২. প্রশ্ন

আমি ব্যাংক থেকে ব্যবসার জন্য টাকা উত্তোলন করি এভাবে-

আমি প্রথমে আমার দোকানের কিছু নির্দিষ্ট মাল ভাউচারের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করি। এরপর ব্যাংকের প্রতিনিধির নিকট ওই দামে বিক্রি করে হস্তান্তর করে দিই এবং তাকে বলি, আপনি কি মাল বুঝে পেয়েছেন? তখন সে বলে, হাঁ, আমি বুঝে পেয়েছি। কিন্তু মাল দোকানেই থাকে; তারা দোকান থেকে মাল নেয় না। তারপর ব্যাংকের প্রতিনিধি বলে, আমি এখন মাল বিক্রি করে দিব। তখন আমি বলি, কত দামে বিক্রি করবেন? তখন তারা বলে, আমরা আপনার কাছ থেকে এত টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন বেশি দামে বিক্রি করব। তখন মূল্য নির্ধারণ করে তার কাছ থেকে বাকিতে বেশি দাম দিয়ে আমিই পণ্যগুলো কিনি এবং বলি, আমি আপনাদের টাকা মাসিক অথবা সাপ্তাহিক কিস্তিতে নির্ধারিত সময়ে আদায় করে দিব। এভাবে টাকা উত্তোলন করা জায়েয হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া জায়েয হবে না। আর কোনো ব্যাংক এভাবে লেনদেন করে বলেও শোনা যায় না। এক্ষেত্রে নিজ দোকানের মাল বিক্রয়ের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ক্রয়-বিক্রয়ের নয়, বরং ক্রয়-বিক্রয়ের নাম ব্যবহার করে ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত নেয়ার একটা অপকৌশল মাত্র। ক্রয়-বিক্রয় এখানে উদ্দেশ্য নয়। এক্ষেত্রে যার পণ্য তার কাছেই থেকে যাচ্ছে। মাঝে টাকা ধার দিয়ে অতিরিক্ত ভোগ করা হচ্ছে; যা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৬; ফাতহুল কাদীর ৬/৩২৪; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৬/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৩২৫; শরহুল মাজাল্লা ২/৪৫৪

শেয়ার লিংক

জহিরুল ইসলাম - উত্তরা, ঢাকা

৫৬৪৩. প্রশ্ন

আমার একটি মুরগির ফার্ম আছে। সেখান থেকে প্রতিদিন শতশত ডিম সাপ্লাই হয়। নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ী আমার থেকে ডিম নেয়। তারা সাধারণত নগদ টাকা দিয়েই ডিম নেয়। তবে মাঝেমধ্যে টাকা দিতে একটু বিলম্ব করে। সে লক্ষ্যে আমি তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা জামানত রাখি। যাতে কখনো টাকা দিতে দেরি করলে আমি ওই টাকা থেকে আমার পাওনা উসুল করে নিতে পারি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমার জন্য জামানত রাখা সহীহ কি না? এবং ওই টাকা আমি নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারব কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য ডিম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে টাকা নেওয়া বৈধ। তবে এ টাকা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না। কেননা এ টাকা বন্ধকী বস্তুর হুকুমে। আর বন্ধকি বস্তু ব্যবহার করা নাজায়েয। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ مَسْعُودٍ فَقَالَ: إِنّ رَجُلًا رَهَنَنِي فَرَسًا فَرَكِبْتُهَا قَالَ: مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا.

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার নিকট এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি তাতে আরোহণ করেছি। (এর হুকুম কী?) তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তুমি এতে আরোহণ করে যে উপকার লাভ করেছ তা সুদের  অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ১৫০৭১)

সুতরাং আপনার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা হেফাজত করে রেখে দিতে হবে। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী মূল্য পরিশোধে বিলম্ব করলে ওই টাকা থেকে আপনি আপনার পাওনা নিয়ে নিতে পারবেন।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/১৫৫; আলইনায়া শরহুল হেদায়া ৯/৮৭; আলবাহরুর রায়েক ৮/২৪৪; মাজমাউল আনহুর ৪/২৮২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৩/১৪৩

শেয়ার লিংক

উসামা - দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ

৫৬৪৪. প্রশ্ন

আমি আমার এক বন্ধুকে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। শর্ত ছিল, এক বছর পর সে আমাকে মূল টাকার ২০% লাভ দেবে। এই মাসেই আমাদের এক বছর পূর্ণ হবে। ইতিমধ্যে জানতে পারলাম, আমাদের চুক্তিটি সহীহ হয়নি। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় আমরা আমাদের মাঝে লভ্যাংশ কিভাবে বণ্টন করব? আমার বন্ধু পূর্বের শর্তানুযায়ী আমাকে মূল টাকার ২০% লাভ দিতে প্রস্তুত। আমার জন্য কি তা গ্রহণ করা বৈধ হবে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মূল টাকার ২০% লাভ দেওয়ার শর্ত করা নাজায়েয হয়েছে। এ কারণে উক্ত চুক্তি ফাসেদ হয়ে গিয়েছে। তাই আপনার বিনিয়োগকৃত এক লক্ষ টাকার উপর অর্জিত পূর্ণ মুনাফা আপনি পাবেন। আর আপনার বন্ধু এক বছর ব্যবসা পরিচালনার জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক পাবে।

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৭৬৪; কিতাবুল আছল ৪/১২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৫

শেয়ার লিংক

রায়হানুদ্দীন - চাঁদপুর

৫৬৪৫. প্রশ্ন

সাউদী আরবে আমার একটি কম্বলের দোকান আছে। প্রতি মাসে সেখান থেকে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার বা তারও বেশি লাভ আসে। আগে আমিই দোকান পরিচালনা করতাম। এখন চাচ্ছি, নিজে বিশ্রামে থেকে অন্য কাউকে দিয়ে দোকান চালাব। তাই এক ব্যক্তির সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছি যে, দোকানে যা মালামাল লাগবে তা আমি দেব। আপনি দোকানে থাকবেন এবং ব্যবসা করবেন। মাস শেষে আপনি আমাকে লভ্যাংশ থেকে ৯০ হাজার টাকা দেবেন। বাকি যা থাকবে তা আপনার। যেহেতু দোকানটিতে বেশ বেচা-কেনা হয় তাই সেই ব্যক্তি উক্ত চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমাদের উক্ত চুক্তিটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। এক্ষেত্রে বৈধভাবে চুক্তি করতে চাইলে যিনি দোকান চালাবেন তার একটি পারিশ্রমিক নির্ধারিত করে দিতে হবে। আর যা আয় হবে তা পুরোটাই আপনার হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১০; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩১২; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ৪৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ উসামা - পাবনা

৫৬৪৬. প্রশ্ন

কাউকে ফোন করলে অথবা কারো সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ হলে অনেক ক্ষেত্রেই একে-অপরকে একসাথে সালাম দিয়ে ফেলি। একজনকে বলতে শুনেছি, এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালামের উত্তর গণ্য হয়। আবার আরেকজন থেকে শুনলাম এক্ষেত্রে উভয়কেই অপরের সালামের জবাব দিতে হয়। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এক্ষেত্রে শরীয়তের সঠিক সমাধান আসলে কোন্টি?

উত্তর

দুই ব্যক্তি একইসাথে একে-অপরকে সালাম দিলে প্রত্যেকের উপর অপরের সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর যদি আগে-পরে হয়ে যায় তাহলে পরবর্তী সালাম পূর্ববর্তী সালামের জবাব হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পরবর্তীতে কারো জন্যই পুনরায় জবাব দেওয়া আবশ্যক হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৪৬৭

শেয়ার লিংক

আফলাহ - বিজয়নগর

৫৬৪৭. প্রশ্ন

এক ছাত্র তার শিক্ষকের সাবালক ছেলেদেরকে হাদিয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে চকলেট মিমি জাতীয় কিছু দ্রব্য ক্রয় করে। এরপর তা শিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেয়। (কেননা তার ছেলেদেরকে সরাসরি হাদিয়া দেওয়া যায় না) অতঃপর উক্ত শিক্ষকের সাথে কিছু বাচ্চারা দেখা করতে এলে তিনি সেখান থেকে তাদেরকে কিছু চকলেট দিয়ে দেন। তাই জানতে চাচ্ছি, ছেলেদেরকে দেওয়ার আগেই শিক্ষকের জন্য সন্তানদের মালে হস্তক্ষেপ করা জায়েয হয়েছে কি?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিক্ষকের জন্য সেখান থেকে ছাত্রদেরকে কিছু চকলেট দেওয়া দূষণীয় হয়নি; বরং তা জায়েয হয়েছে। কেননা বাবার সংসারে থাকা বালেগ ছেলেদের সম্পদে ন্যয়সংগত হস্তক্ষেপ ও খরচ করার অধিকার পিতার রয়েছে। বিশেষত যে ব্যয় বা হস্তক্ষেপ সন্তানের জন্য ক্ষতিকর নয়, তাতে অসুবিধা নেই।

-উমদাতুল কারী ১৩/১৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৩০৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২৭৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শরীফ - ধানমণ্ডি, ঢাকা

৫৬৪৮. প্রশ্ন

আমার বোনের হারনিয়া অসুখ হয়েছে। অপারেশন করা জরুরি। এখন মহিলা ডাক্তার পাওয়া যায় না। সকলে পুরুষ ডাক্তারের পরামর্শ দিচ্ছে। আমি জানতে চাই, এ ব্যাপারে শরীয়ত কী বলে? পুরুষ ডাক্তার দিয়ে কি তার অপারেশন করা জায়েয হবে?

উত্তর

উক্ত চিকিৎসার জন্য সার্জারি বিভাগের বিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার পাওয়া গেলে এবং তার থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করা নিরাপদ এবং সম্ভব হলে এধরনের মহিলা চিকিৎসককে দিয়েই অপারেশন করাতে হবে। এক্ষেত্রে পুরুষ ডাক্তারকে দেখানো যাবে না। আর যদি বিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার পাওয়া না যায় তাহলে পুরুষ ডাক্তার দিয়েও অপারেশন করা যাবে। জরুরতের কারণে শরীয়ত এর অনুমোদন দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল, রোগী দেখানোর সময় সাথে কাউকে রাখবে এবং অপারেশনের সময় নার্স বা সহযোগী ডাক্তার থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১০/১৫৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭০; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৭৩

শেয়ার লিংক

নাদীম হাইদার - বাড্ডা

৫৬৪৯. প্রশ্ন

আমাদের বাড়ীতে একটি অনুষ্ঠান থাকায় এক দোকানে ৪০ কেজি মুরগির অর্ডার দেই। দোকানদারকে মুরগিগুলো যবাই করে দিতে বলি। সে মুরগিগুলো যবাই করতে শুরু করলে প্রথম কয়েকটি জবাই করার সময় বিসমিল্লাহবলে। পরে বিসমিল্লাহ বলা  ছেড়ে দেয়। তাকে আমি বললাম, আপনি বিসমিল্লাহবলছেন না কেন? সে বলল, একসাথে অনেকগুলো জবাই করলে প্রথমবার বিসমিল্লাহবললেই হয়। পরে আর বিসমিল্লাহনা বললেও চলে। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, ওই ব্যক্তির কথা কি ঠিক? একসাথে অনেকগুলো মুরগি জবাই করার সময় প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহবলা কি জরুরি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ওই ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। একাধিক মুরগি বা পশু জবাই করলেও প্রত্যেকটির জন্য পৃথক পৃথক বিসমিল্লাহবলা জরুরি। অন্যথায় যে পশুর জবাইয়ের পূর্বে বিসমিল্লাহবলা হবে না, সেই পশুর জবাই সহীহ হবে না এবং তা খাওয়া হালাল হবে না।

উল্লেখ্য, হালাল-হারামের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজের ধারণা অনুযায়ী কাজ করা অন্যায়। এসব ক্ষেত্রে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে মাসআলা জেনে নেওয়া আবশ্যক। বিশেষ করে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের তৎসংক্রান্ত মাসায়েল জেনে নেওয়া খুবই জরুরি।

-কিতাবুল আছল ৫/৩৯৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৫৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০২

শেয়ার লিংক