রজব ১৪৪৩ || ফেব্রুয়ারি ২০২২

সুলতানা পারভীন - রাজশাহী

৫৬৩৫. প্রশ্ন

রাজশাহী অঞ্চলে মৃত ব্যাক্তিকে (মহিলা) যেভাবে গোসল করানো হয় তা মাসআলার কিতাবে পাওয়া যায় না। যেমন-

(ক) যাকে দিয়ে ইস্তেঞ্জা করানো হয় তাকে আর সেখানে থাকতে দেয়া হয় না। সে নাকি নাপাক হয়ে গেছে। গোসল না করে সে আর কোনো কিছু স্পর্শ করতে পারবে না।

(খ) গোসল শেষে চোখে সুরমা দেওয়া হয়, নাকে কানে তুলা গুঁজে দেওয়া হয়।

(গ) সারা শরীরে তিনবার করে সাবান দেওয়া হয়।

(ঘ) নানান রকম গীত গাওয়া হয়।

(ঙ) গোসল শেষে হাত তুলে মুনাজাত করা হয়।

এসব কাজ কি ঠিক?

উত্তর

(ক) মৃত ব্যক্তিকে যিনি ইস্তেঞ্জা করাবেন (ইস্তেঞ্জার জায়গা পরিষ্কার করবেন) তার নাপাক হয়ে যাওয়ার ধারণাটি ভুল। সুতরাং এ কারণে তাকে সেখানে আর থাকতেই না দেওয়া এবং তাকে নাপাক মনে করা সবই ভুল ও কুরসমের অন্তর্ভুক্ত। এসব ধারণা ও কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

প্রকাশ থাকে যে, মৃত ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি গোসল দেবে সে-ই তাকে ইস্তেঞ্জা করাতে পারবে। এর জন্য ভিন্ন লোকের প্রয়োজন নেই। -কিতাবুল আছল ১/৪৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৭; ফাতহুল কাদীর ১/৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭০

(খ) মৃত ব্যক্তির চোখে সুরমা লাগানো নিষেধ। হাদীস শরীফে মৃতকে সিঁথি বা সৌন্দর্যবর্ধনমূলক কোনো কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আর নাকে কানে তুলা দেওয়ার বিষয়টিও শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কোনো কোনো ফকীহ তা ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই বলেছেন। তাই কেউ দিলে বাড়াবাড়ি করার প্রয়োজন নেই। -কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ৩৮১, ৩৮২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩, ২/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৮

(গ) মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার সময় একবার সাবান দেয়াই যথেষ্ট। তিনবার নিয়ম করে সাবান দেবে না। সুন্নত মনে না করে পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে দিলে সমস্যা নেই। তবে পুরো শরীরে তিন বা ততোধিক বার পানি ঢালার কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। হযরত উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

تُوُفِّيَتْ بِنْتُ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ لَنَا: اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا، أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، إِنْ رَأَيْتُنّ.

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে যায়নাব রা.-এর ইন্তেকাল হলে তিনি আমাদের বললেন, তোমরা তার পুরো শরীরে তিনবার, পাঁচবার অথবা প্রয়োজনে আরো বেশিবার পানি ঢালো। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৫৭)

(ঘ) মৃত ব্যক্তির শোকে গীত গাওয়া ও সম্মিলিতভাবে কান্নাকাটি করা নিষিদ্ধ। এগুলো হাদীস শরীফে নিষিদ্ধ নিয়াহার অন্তর্ভুক্ত। হযরত উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَهَانَا عَنِ النِّيَاحَةِ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়াহা থেকে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১২৭)

মোল্লা আলী আলকারী রাহ. নিয়াহার ব্যাখ্যায় বলেন, নিয়াহা হল মৃত ব্যক্তির জন্য নারীদের একত্রিত হয়ে সমস্বরে ক্রন্দন করা, মৃতের শোকে শ্লোক-কবিতা আবৃত্তি করা, মৃতের প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করতঃ বিলাপ করা ইত্যাদি। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৮৮)

(ঙ) গোসল শেষে হাত তুলে মুনাজাত করা বিদআত। মৃতের জন্য সম্মিলিতভাবে দুআ করার শরীয়তসম্মত পন্থাই হল জানাযার নামায। তাই গোসলের পর মুনাজাতের এই প্রথাটি পরিহার করতে হবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৫

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন