জনৈকা শিক্ষিকা - উত্তরা, ঢাকা

৪৩৬০. প্রশ্ন

বর্তমানে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে মাসিক স্রাব বন্ধ করে রাখা যায়। তাই অনেক মহিলা রমযান মাসের সবগুলো রোযা রাখার জন্য ঔষধ সেবনের মাধ্যমে স্রাব বন্ধ করে রাখে। বিশেষত হজ¦ চলাকালীন হায়েয আসলে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই অধিকাংশ মহিলা হজে¦র সময়গুলোতে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে স্রাব বন্ধ করে রাখে, যেন হজে¦র আমলগুলো কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সম্পাদন করা যায়। এজন্য হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি-

ক. ঔষধ সেবনের মাধ্যমে এভাবে ঋতুস্রাব বন্ধ করে রাখা কি জায়েয আছে?

খ. এ অবস্থায় কি সে নামায, রোযা ও তাওয়াফ ইত্যাদি আদায় করতে পারবে? যদি পারে তাহলে পরবর্তীতে এগুলো কাযা করা লাগবে কি না?

দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ওষুধ সেবনের কারণে হলেও একজন মহিলা যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ তার মাসিক স্রাব চালু না হবে ততক্ষণ তাকে নামায-রোযা করে যেতে হবে এবং এ অবস্থায় সে তাওয়াফও করতে পারবে। আর সে যেহেতু পবিত্র অবস্থাতেই নামায-রোযা ইত্যাদি পালন করেছে তাই পরবর্তীতে তাকে এ সময়ের নামায-রোযার কাযা করতে হবে না। আর এজাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু এটি কোনো উত্তম পন্থাও নয়। বিশেষ ওজর না থাকলে স্বাভাবিক নিয়মে চলাই উচিত।

আর এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এজাতীয় ঔষধ সেবনের কারণে কারও শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরবর্তী জটিলতা এড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১২১৯, ১২২০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৯৯; জামিউ আহকামিন নিসা ১/১৯৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/৩০৮

শেয়ার লিংক

ওমর ফারুক - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৪৩৬১. প্রশ্ন

বর্তমানে অধিকাংশ ট্রেনেই নামায আদায়ের ব্যবস্থা থাকে। তবে ট্রেন চলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া বেশ কষ্টকর। কারণ ঝাঁকুনির দরুণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাছাড়া নামায পড়া অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে কেবলা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় সফরকালে ট্রেনে নামায পড়ব কীভাবে? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

ফরয নামায যথাসাধ্য দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয। তাই ট্রেনে সফরকালেও যথাসম্ভব দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চেষ্টা করবে। দাঁড়িয়ে নামায পড়া বেশি কষ্টকর হলে কিংবা সম্ভবই না হলে বসে পড়ার অবকাশ আছে। আর নামাযে কেবলার দিক ঠিক রাখা ফরয। তাই ট্রেনে নামায শুরু করার পূর্বে কেবলার দিক সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারপর নামায পড়বে। নামায পড়া অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে নামাযী তা বোঝা মাত্রই কেবলার দিকে ঘুরে যাবে। কেননা কেবলার দিক পরিবর্তনের কথা জানা সত্ত্বেও নামাযী যদি কেবলার দিকে না ঘুরে তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে শুরুতে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর পর যদি নামায পড়া অবস্থায় ট্রেন কেবলার দিক থেকে ঘুরে যায় এবং নামাযী তা জানতে না পারার কারণে সেভাবেই নামায পড়ে নেয় তাহলে নামায হয়ে যাবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৪৫৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৩০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৯১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৫; রদ্দুল মুহতার ২/১০১; ইলাউস সুনান ৭/২১২

শেয়ার লিংক

সালমান আবদুল্লাহ - নারায়ণগঞ্জ

৪৩৬২. প্রশ্ন

বর্তমানে আমাদের দেশের কোথাও কোথাও দেখা যায়, মসজিদে ঈদের নামায পড়া হয়। অথচ ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি যে, ঈদের নামায ঈদগাহেই পড়া হয়। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে মসজিদে ঈদের নামায পড়ার বিধান কী?

 

উত্তর

ঈদের নামায ঈদগাহে ও খোলা মাঠে পড়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীন সকলেই ঈদের নামায ঈদগাহে পড়তেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلّى.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঈদের নামাযের জন্য) ঈদগাহে যেতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫৬)

হযরত আলী রা. বলেন-

الْخُرُوجُ إِلَى الْجَبّانِ فِي الْعِيدَيْنِ مِنَ السّنّةِ.

দুই ঈদে (ঈদের নামাযের জন্য) খোলা মাঠে যাওয়া সুন্নত। (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী, হাদীস ৪০৪০)

তাই মাঠে পড়ার ব্যবস্থা থাকলে বিনা ওজরে মসজিদে ঈদের জামাত করা সুন্নতের খেলাফ হবে। তবে বিনা ওযরে মসজিদে ঈদের নামায আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে শহরে ঈদগাহ কম বিধায় অধিকাংশ মসজিদে ঈদের জামাত হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়া বা বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে মসজিদে ঈদের নামায পড়লে সুন্নতের খেলাফ হবে না। ওযরের সময় মসজিদে পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فِي يَوْمِ عِيدٍ، فَصَلّى بِهِمُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلَاةَ الْعِيدِ فِي الْمَسْجِدِ.

কোনো এক ঈদের দিন তাঁরা বৃষ্টিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৫৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩১৩)

-শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬৯

শেয়ার লিংক

আবদুল কাদির - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪৩৬৩. প্রশ্ন

রমযানে বিতিরের নামাযের প্রত্যেক রাকাতে জোরে কেরাত পড়তে হবে, না শুধু প্রথম দুই রাকাতে? ছোটদের জন্য লেখা একটি বইয়ে শুধু প্রথম দুই রাকাতে জোরে কেরাত পড়ার কথা বলা হয়েছে। এ বক্তব্যটি কি ঠিক? আশা করি দলীল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।

 

উত্তর

রমযানে বিতির নামায জামাতে পড়া সুন্নাত। আর বিতির নামায জামাতে পড়লে এর প্রত্যেক রাকাতেই জোরে কেরাত পড়া ওয়াজিব। এক্ষেত্রে শুধু প্রথম দুই রাকাতে জোরে কেরাত পড়ার কথা ঠিক নয়।

-শরহুল মুনয়া পৃ. ২৯৬, ৪২০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৯

শেয়ার লিংক

তাওহিদুল ইসলাম - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৪৩৬৪. প্রশ্ন

গত বছর রমযানে একদিন আমরা কয়েকজন হাফেয একসাথে তারাবীর নামায আদায় করি। প্রথম চার রাকাতে লম্বা কেরাত পড়ার কারণে অনেক রাত হয়ে যায়। এরপর বাকি ষোল রাকাত দুই সালামে আট রাকাত করে আদায় করে নেই। মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, এক সালামে আট রাকাত আদায় করার দ্বারা আমাদের নামায কি আদায় হয়েছে?

 

উত্তর

আপনাদের উক্ত তারাবীর নামায আদায় হয়েছে। তবে একসাথে আট রাকাত পড়া ঠিক হয়নি। তারাবীর নামায দুই রাকাত করে পড়াই সুন্নত। তাই ভবিষ্যতে এমন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

-মারাকিল ফালাহ পৃ. ২২৫; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩২৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪০৫

শেয়ার লিংক

উম্মে তাকী - ময়মনসিংহ

৪৩৬৫. প্রশ্ন

একদিন শেষ রাতে নফল নামায পড়ছিলাম। এ অবস্থায় আমার মাসিক শুরু হয়ে যায়। প্রশ্ন হল, উক্ত নফল নামায কি পবিত্র হওয়ার পর কাযা করতে হবে?

 

উত্তর

হ্যাঁ, উক্ত নফল নামায পবিত্র হওয়ার পর কাযা করতে হবে। কেননা, নফল নামায শুরু করার পর তা সম্পন্ন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

তবে ফরয নামাযের মধ্যে যদি এমনটি হত অর্র্থাৎ ফরয নামায শুরু করার পর যদি মাসিক শুরু হত তাহলে পরবর্তীতে এর কাযা করা লাগত না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩২; ফাতহুল কাদীর ১/১৫২; আলবাহরুর রায়েক ১/২০৫; রদ্দুল মুহতার ১/২৯১

শেয়ার লিংক

আবু দাউদ - মাদারীপুর

৪৩৬৬. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে যে হাফেযদ্বয় খতম তারাবিহ পড়ান তারা অধিকাংশ সময় কেবল আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। একবার জিজ্ঞাসা করা হলে তাদের একজন বললেন, খতম তারাবিতে দরূদ শরীফ ও দুআ মাছূরা না পড়ার অনুমতি আছে।

এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানিয়ে কৃতজ্ঞ  করবেন।

 

উত্তর

তারাবির নামাযেও শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুর পর দরূদ শরীফ ও দুআয়ে মাছূরা পড়া সুন্নত। তাই ওযর ছাড়া এ সুন্নত ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে দরূদ শরীফ তো বেশি তাকিদপূর্ণ সুন্নত। তাই মুসল্লিদের কষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তা ছাড়া যাবে না। আর দুআয়ে মাছূরা লম্বা মনে হলে সংক্ষিপ্ত কোনো দুআ পড়া যায়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৫; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৮৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪০৭

শেয়ার লিংক

শিহাব সাকিব - হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ

৪৩৬৭. প্রশ্ন

একদিন বাড়িতে থাকা অবস্থায় যোহরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পরও নামায না পড়ে সফরে বের হয়ে যাই। পরে কোনো জটিলতার কারণে সফর অবস্থায়ও নামাযটি পড়া হয়নি। জানার বিষয় হল, মুকীম অবস্থায় ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে এখন আমাকে কি চার রাকাতের কাযা করতে হবে, নাকি দুই রাকাতের কাযা করলেই চলবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ওয়াক্তের শেষের দিকে আপনি মুসাফির ছিলেন তাই দুই রাকাতের কাযা করবেন, পূর্ণ চার রাকাতের নয়। কেননা কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে তা আদায়ের ক্ষেত্রে  ওয়াক্তের শেষের অবস্থা ধর্তব্য হয়। ওয়াক্তের শেষে যদি সে মুকীম থাকে তাহলে মুকীমের নামায কাযা করতে হয়। আর মুসাফির থাকলে মুসাফিরের নামায।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৯; মাজমাউল আনহুর ১/২৪৩; বদায়েউস সানায়ে ১/২৬৬

শেয়ার লিংক

আহমাদ জারিফ - ফরিদপুর

৪৩৬৮. প্রশ্ন

গত মাসে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সপরিবারে কলকাতা গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময়ই পনের দিনের বেশি অবস্থানের ইচ্ছা ছিল। ভিসাও ছিল বিশ দিনের। কিন্তু আটদিনেই মোটামুটি কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় আর দুইদিন থেকে দেশে ফেরার ইচ্ছা করি। প্রথমে তো পনের দিন থাকব এই ভিত্তিতে মুকীম হিসেবে পূর্ণ নামাযই পড়েছি। কিন্তু আটদিন পর যখন স্পষ্ট হয়ে গেল, পনের দিন থাকা হচ্ছে না তখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই যে, এখন কসর করব নাকি আগের মতই পূর্ণ নামায পড়ব। পরে এ কথা ভেবে বাকি দু’দিনও পূর্ণ নামায পড়েছি যে, চার রাকাতের জায়গায় দুই রাকাত পড়লে তো নামাযই হবে না, তবে দুই রাকাতের জায়গায় চার রাকাত পড়লে অন্তত নামায হয়ে যাবে।

মুফতী সাহেবের কাছে আমার জিজ্ঞাসা হল, পরবর্তী দুই দিন কসর না করে পূর্ণ নামায পড়া কি ঠিক হয়েছে?

 

উত্তর

সফরে গিয়ে কোথাও পনের দিন অবস্থানের নিয়ত করলেই মুকীম হয়ে যায়। সুতরাং এরপর পনের দিনের আগেই নিজ এলাকায় ফেরার ইচ্ছা করলেও যতক্ষণ ঐ এলাকায় অবস্থান করবে সে মুকীমই থাকবে। তাই আপনিও পনের দিন পূর্ণ হওয়ার আগে দেশে ফেরার নিয়তের কারণে মুসাফির হয়ে যাননি, বরং মুকীমই ছিলেন। এ হিসেবে ঐ দুই দিন পূর্ণ নামায পড়া ঠিকই হয়েছে। তবে দ্বীনী কোনো বিষয়ে অনুমান করে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। বিজ্ঞ আলেমদের থেকে জেনে আমল করবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৫/১৭৫

শেয়ার লিংক

তাশরীফ - বরিশাল

৪৩৬৯. প্রশ্ন

আমি একদিন এক লোককে দেখলাম, নামায শেষ করে বের হওয়ার জন্য সে দরজার দিকে যাচ্ছে। কিছুদূর গিয়ে পুনরায় বসে পড়েছে। অতপর সিজদা ও বৈঠকের পর সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করেছে। ব্যাপারটি তার কাছে জানতে চাইলে  সে বলল, আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব ছিল। আমি তা আদায় করতে ভুলে গিয়েছি। আর মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত যেহেতু ভুলে যাওয়া সাহু সিজদা আদায়ের সুযোগ থাকে তাই স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে আমি তা আদায় করে নিলাম। জানতে চাই, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে সাহু সিজদা আদায় করার দ্বারা কি তার নামায ত্রুটিমুক্ত হবে? উল্লেখ্য, লোকটি নামায নষ্ট হওয়ার মত কোনো কাজ না করেই সিজদা করেছে।

 

উত্তর

লোকটির সাহু সিজদা আদায় হয়েছে। কেননা সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি যদি ভুলক্রমে সাহু সিজদা না করে সালাম ফিরিয়ে ফেলে এবং নামায নষ্ট হওয়ার মত কোনো কাজ না করে তাহলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত সাহু সিজদা করে নেওয়ার সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে কেবলার দিক থেকে সিনা ঘুরে গেলেও সাহু সিজদা সহীহ হয়ে যাওয়ার কথা ফকীহগণ বলেছেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/৯১

শেয়ার লিংক

ফয়জুল্লাহ - কুমিল্লা

৪৩৭০. প্রশ্ন

কুরবানী ঈদে আমি তিন-চার দিনের জন্য চাঁদপুর থেকে ঢাকায় আসি। আমি জানতাম মুসাফিরের উপর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব নয়। তাই আমি মুসাফির অবস্থায় বিভিন্ন সময় মুকীম ইমামের পেছনে নামায পড়লেও তাকবীরে তাশরীক বলিনি। পরবর্তীতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে জানতে পারলাম, মুসাফির, মুকীম ইমামের একতেদা করলে তার উপরও তাকবীরে তাশরীক ওয়াজিব হয়ে যায়। জানতে চাচ্ছি, তার কথাটি কি সঠিক? সঠিক হলে আমার করণীয় কী?

 

উত্তর

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী মুসাফির ব্যক্তির উপরও তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। চাই একাকী নামায আদায় করুক কিংবা কোনো মুকীম বা মুসাফিরের একতেদা করুক সকল ক্ষেত্রে তাকে তাকবীরে তাশরীক বলতে হবে। তাই আপনার তাকবীরে তাশরীক না বলা ভুল হয়েছে। আর তাকবীরে তাশরীকের যেহেতু কোনো কাযা নেই তাই ঐ তাকবীর এখন আর আদায় করা যাবে না। এজন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯

শেয়ার লিংক

আম্মার - বসুন্ধরা, ঢাকা

৪৩৭১. প্রশ্ন

একবার কুরবানী ঈদে লঞ্চডুবিতে অনেক মানুষ মারা যায়। নিহতদের উদ্ধারের পর আত্মীয়-স্বজনরা এসে যার যার লাশ নিয়ে যায়। অবশেষে এমন কিছু লাশ থেকে যায়, যাদের ঠিকানা ও স্বজনদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তখন স্থানীয়রা প্রতিটি লাশ গোসল দেওয়া ছাড়াই কাফন পরিয়ে জানাযার নামাযের পর দাফন করে দেয়।

আমার জিজ্ঞাসা হল, মৃত্যুর পর নদীতে থাকার পরও কি গোসল দেওয়ার প্রয়োজন আছে? যদি থেকে থাকে তাহলে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গোসল দেওয়া ছাড়া জানাযার নামায পড়া কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

জীবিতদের উপর ফরয দায়িত্ব মৃত ব্যক্তিকে গোসল  দেওয়া। তাই পুকুর বা নদীতে পাওয়া  গেলেও তাকে গোসল দেওয়া কর্তব্য। তবে নদী থেকে উঠানোর সময় যদি গোসলের উদ্দেশ্যে পানিতে নাড়া চাড়া দেওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে গোসল দেওয়ার ফরয আদায় হয়ে যায়। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জানাযার নামায শুদ্ধ হয়ে গেছে।

কেননা, জানাযার নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হল লাশ পবিত্র হওয়া। আর পানিতে পাওয়ার কারণে লাশ পবিত্র ধরা হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০০; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৪১; আলবাহরুর  রায়েক ১/৬৫

শেয়ার লিংক

সাওফয়ান আহমাদ - ফরিদপুুর

৪৩৭২. প্রশ্ন

আমাদের বাজার মসজিদে এক ব্যক্তি নিয়মিত রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেন। গত বছর একদিন ইতিকাফ অবস্থায় তার এক আত্মীয়ের সাথে কথা বলতে বলতে ভুলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যান। পরে ইতিকাফের কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই মসজিদে প্রবেশ করেন। তখন কেউ বলেছে, মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার কেউ বলেছে, সে যেহেতু ভুলে বের হয়ে গেছে তাই তার ইতিকাফ নষ্ট হয়নি। যেমন ভুলে খেয়ে ফেললে রোযা ভাঙ্গে না।

আমরা এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর

ঐ ব্যক্তির ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে। এতেকাফকারী মসজিদ থেকে ভুলে বের হলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যায়। এটি রোযার মত নয়। তাই ইতিকাফকে রোযার সাথে

তুলনা করা ঠিক হবে না। দ্বীনী কোনো বিষয় জানা না থাকলে বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নেওয়া কর্তব্য। না জেনে নিজ থেকে মন্তব্য করা অন্যায়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৮; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২০

শেয়ার লিংক

আবদুস সালাম বিন আবুল বাশার - হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ

৪৩৭৩. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ভবনটি পুরাতন হয়ে যাওয়ায় গত বছর পুনঃনির্মাণের জন্য ভাঙা হয়। আপাতত নামায পড়ার জন্য পাশে অবস্থিত মুতাওয়াল্লী সাহেবের জায়গায় টিনশেড দিয়ে একটি অস্থায়ী মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ঈদ-জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্তের নামায এই অস্থায়ী মসজিদেই আদায় করা হয়। এলাকার বিরোধের কারণে এখন পর্যন্ত নতুন ভবনের কাজ শুরু করা যায়নি। জানার বিষয় হল, সামনের রমযানে এ অস্থায়ী মসজিদে ইতিকাফে বসা সহীহ হবে কি না? সহীহ না হলে মহল্লাবাসী সুন্নত ইতিকাফ কীভাবে আদায় করবে

 

উত্তর

সুন্নাত ইতিকাফের জন্য শরয়ী মসজিদ হওয়া জরুরি। অস্থায়ী নামায-ঘরে ইতিকাফ সহীহ নয়। তাই ইতিকাফকারীগণ অন্য কোনো মসজিদে গিয়ে ইতিকাফ করবেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২২৫; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৪৭

শেয়ার লিংক

তুফায়েল আহমদ - কানাইঘাট, সিলেট

৪৩৭৪. প্রশ্ন

গত ১৫ রবিউল আওয়াল রোযা রাখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রাতের বেলায় শরীরটা খারাপ লাগায় রাখব কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। তাই আর রাতে রোযার নিয়ত করতে পারিনি। সকালে কিছুটা সুস্থতা অনুভব হলে রোযা রাখার মনস্থ করি এবং দ্বিপ্রহরের আগেই নিয়ত করে ঐ দিনের রোযা রাখি। কিন্তু ইফতারের পর হঠাৎ স্মরণ হয় যে, আমি

রোযার নিয়ত করার আগেই ফজরের পর ভুলে পানি পান করেছিলাম। জানার বিষয় হল, ভুলে পানি পান করার পর নিয়ত করে এভাবে রোযা রাখা সহীহ হয়েছে কি না? সহীহ না হলে আমাকে কি উক্ত রোযার কাযা করতে হবে?

উত্তর

সকাল হওয়ার পর নফল রোযার নিয়ত করার অবকাশ থাকলেও সুবহে সাদিকের পর ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেললে ঐদিন আর রোযার নিয়ত করা যায় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ দিনের রোযা সহীহ হয়নি। আর এটা যেহেতু রোযাই হয়নি তাই এর কাযাও করা লাগবে না।

উল্লেখ্য, দিনের বেলায় রোযার নিয়ত সহীহ হওয়ার বিষয়টি দ্বিপ্রহরের পূর্বের সাথে নয়; বরং সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মাঝখানের সাথে সম্পৃক্ত। আর এ দুইয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। রোযা সহীহ হওয়ার জন্য দিনের মধ্যখানের আগেই নিয়ত করে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬; হশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৪, ৩৭৭

শেয়ার লিংক

মাহমুদ হাসান - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৩৭৫. প্রশ্ন

রমযানে যখন বিমানে সফর করা হয় তখন ইফতারের সময় নিয়ে বেশ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। কারণ, যে দেশ থেকেই সফর শুরু হয় এক সময় দেখা যায়, সে দেশের সময় অনুযায়ী সূর্যাস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু বিমান যমিন থেকে কয়েক হাজার ফিট উপরে থাকায় স্পষ্টভাবেই সূর্য দেখা যায়। বিশেষ করে বিমান যখন পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে  যেতে থাকে। যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বিমানে উঠল। এক্ষেত্রে বিমান যেহেতু পশ্চিম দিকে যাচ্ছে তাই দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা সূর্য চোখের সামনে থাকে। অথচ বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী সূর্যাস্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। এক্ষেত্রে বিমানের যাত্রীদের যদি সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাহলে দেখা যায় কখনো কখনো রোযার সময় প্রলম্বিত হয়ে ২০-২২ ঘণ্টাও হয়ে যায়। তাই হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এ ধরনের অবস্থায় আমরা কখন ইফতার করব? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন
 

উত্তর

বিমানের যাত্রীগণ নিজেরা যখন সূর্যাস্ত হতে দেখবে তখনই ইফতার করবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিদেশের আকাশে থেকে বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী ইফতার করা যাবে না এবং যে এলাকার আকাশের উপর বিমান আছে সেখানের স্থলভাগের হিসেবেও নয়। এক্ষেত্রে যদি রোযা ২০-২২ ঘণ্টারও হয়ে যায় তবুও সূর্যাস্ত না দেখে ইফতার করা যাবে না। তবে হ্যাঁ, কোনো ব্যক্তি যদি উক্ত অবস্থায় রোযা পুরা করতে গেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে তাহলে সে রোযা ভেঙে ফেলতে পারবে এবং পরে এ রোযার কাযা করে নিবে।

উল্লেখ্য যে, সফর অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক শুরু হয় অর্থাৎ রাতের শেষ ভাগে যদি কেউ সফরে থাকে তাহলে শুরু থেকেই তার জন্য রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে সে এর কাযা করে নিবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৫; খিযানাতুল আকমাল ১/৩২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৬৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪২০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৯১

শেয়ার লিংক

সাইফুল্লাহ - সাভার, ঢাকা

৪৩৭৬. প্রশ্ন

আমার একজন বয়স্কা বিবাহিতা মেয়ে আছে। সে প্রতি বছর ঈদে আমাদের বাড়িতে আসে। এবার ঈদুল ফিতরের দিন যখন আমি অন্য সন্তানদের সদাকাতুল ফিতর আদায় করছিলাম তখন আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি যে, আমার ঐ মেয়ের সদাকাতুল ফিতরও কি আমাকে আদায় করতে হবে? কারণ তার বর্তমান যাবতীয় খরচ তো আমিই বহন করছি।

হুযুরের কাছে এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানতে চাচ্ছি।

 

উত্তর

প্রাপ্তবয়স্ক বুঝমান সন্তানের সদাকাতুল ফিতর আদায় করা বাবার উপর ওয়াজিব নয়। তাই আপনার ঐ মেয়ের সদাকাতুল ফিতর আপনার আদায় করা জরুরি নয়। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সে নিজের সদাকাতুল ফিতর নিজেই আদায় করবে। অবশ্য আপনি যদি তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেন তবে তা আদায় হয়ে যাবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৪৫

শেয়ার লিংক

আবদুল মাজীদ - আকুয়া, ময়মনসিংহ

৪৩৭৭. প্রশ্ন

গত বছর আমার এক দরিদ্র আত্মীয় ময়মনসিংহ সরকারী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আমি তাকে হাসপাতালে দেখতে যাই। তার নিকট টাকা না থাকায় সে প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনতে পারছিল না। তখন আমি যাকাত আদায়ের নিয়তে তাকে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ফল কিনে দেই। জানার বিষয় হল, আমি তাকে যে ঔষধ ও ফল কিনে দিয়েছি তা যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে কি?

 

উত্তর

আপনার ঐ আত্মীয় যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে যাকাত আদায়ের নিয়তে ঔষধ ও ফল কিনে দেওয়া ঠিক হয়েছে এবং এর দ্বারা আপনার যাকাতও আদায় হয়েছে। কেননা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের নিয়তে কোনো দ্রব্য প্রদান করলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। তবে টাকা না দিয়ে কোনো বস্তু দিলে গরীবের প্রয়োজনে আসে এমন কিছু দেওয়াই উচিত।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৫৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৮

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ সালেহ - মাদারীপুর

৪৩৭৮. প্রশ্ন

আমি ব্যবহারের জন্য একটি পুরাতন গাড়ি কিনেছি। ইচ্ছা আছে, ভালো দাম পেলে বিক্রি করে দিব। ইতিমধ্যে এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন আমার অন্যান্য সম্পদের সাথে ঐ গাড়ীরও কি যাকাত দিতে হবে?
 

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ গাড়ির যাকাত দিতে হবে না। কেননা আপনার প্রাথমিক ইচ্ছা, গাড়িটি ব্যবহার করা। আর ব্যবহারের নিয়তে ক্রয় করা বস্তুর যাকাত দিতে হয় না।

প্রকাশ থাকে যে, পণ্য ক্রয়ের সময় একমাত্র বিক্রির নিয়ত করলে তা ব্যবসার মাল হিসেবে গণ্য হয় এবং তখনই তা যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৮; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রিজওয়ানুল হক - মুহাম্মাদপুর

৪৩৭৯. প্রশ্ন

আমি মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে ব্যবসা করছি। আমাদের পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত মুহাম্মাদপুরে সাত তলা একটি বাড়ি আছে। এক তলায় আমরা থাকি, বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া। দুইটি ফ্ল্যাটে আমাদের দুই আত্মীয় ভাড়া থাকে। তারা ঠিকমত ভাড়া পরিশোধ করে না। কখনো দুই-তিন মাসের ভাড়াও বাকি পড়ে থাকে। আত্মীয় হওয়ায় চাপও দিতে পারি না। আমি সাধারণত ডিসেম্বরে ব্যবসার বাৎসরিক হিসাবের পাশাপাশি যাকাতেরও হিসাব করে ফেলি। এখন প্রশ্ন হল, বকেয়া বাড়ি ভাড়ার যাকাতের হিসাব কীভাবে করব?
 

উত্তর

বাড়ি ভাড়া উসূল না হওয়া পর্যন্ত তা যাকাতের হিসাবে আসবে না। যখন উসূল হবে তখন  যাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। অতএব হস্তগত হওয়ার পর যাকাতযোগ্য অন্যান্য সম্পদের সাথে বছরান্তে এর যাকাত দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, যাকাতের হিসাব করতে হয় চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী। আর চান্দ্রবর্ষ সৌরবর্ষ থেকে বছরে এগার দিন কম হয়ে থাকে। তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৮, ২০৩; মিনহাতুল খালিক ২/২০৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৫

শেয়ার লিংক

তানঈম - সাভার, ঢাকা

৪৩৮০. প্রশ্ন

গত মাসে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য একটি কাফেলা নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে আমিও ত্রাণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে ত্রাণ বিতরণের পূর্বেই সেই টাকাগুলো আমার যাকাত বাবদ আদায়ের নিয়ত করি। জানতে চাই, এভাবে নিয়ত করার দ্বারা কি আমার যাকাত আদায় হয়েছে? উল্লেখ্য, উক্ত কাফেলা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে।
 

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার যাকাত আদায় হয়েছে এবং এক্ষেত্রে যাকাতের নিয়ত করা সহীহ হয়েছে। কারণ, আপনি যাকাতের টাকা মওজুদ থাকা অবস্থায়ই যাকাতের নিয়ত করেছেন। আর যাকাতের টাকা গরীবের হাতে দেওয়ার পর তার খরচ করার আগ পর্যন্ত তাতে দাতার যাকাতের নিয়ত করা সহীহ। তাই আপনার ঐ নিয়ত করা সহীহ হয়েছে এবং এর দ্বারা আপনার যাকাত আদায়  হয়ে গেছে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২১০; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮

শেয়ার লিংক

ওয়াহীদুজ্জামান - সদর, কুমিল্লা

৪৩৮১. প্রশ্ন

আমার স্ত্রীর উপর হজ¦ ফরয হয়ে আছে। কিন্তু বর্তমানে আমি দেশের বাইরে (আরব আমিরাতে) আছি। আমরা দু’জন একসাথে হজ¦ পালন করব। বাংলাদেশ থেকে আমার স্ত্রীকে শ্বশুর সৌদি এয়ারলাইন্স পর্যন্ত দিয়ে যাবেন আর আমি এদিক থেকে তাকে রিসিভ করব। এখন হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, বাংলাদেশ থেকে বিমানে সৌদি আসতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। এমতাবস্থায় এই অল্প কয়েক ঘণ্টা মাহরাম ছাড়া সফর করতে কি কোনো প্রকার অসুবিধা আছে?
 

উত্তর

মহিলাদের জন্য মাহরাম পুরুষ ব্যতীত সফরসম দূরত্বে বের হওয়া জায়েয নয়। এছাড়া হাদীস শরীফে মহিলাদেরকে মাহরাম ব্যতীত হজে¦র সফরে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لاَ يَخْلُوَنّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ، وَلاَ تُسَافِرَنّ امْرَأَةٌ إِلّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ، فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، وَخَرَجَت امْرَأَتِي حَاجَّةً، قَالَ : اذْهَبْ فَحُجّ مَعَ امْرَأَتِكَ.

কোনো পুরুষ যেন অপর মহিলার সঙ্গে একাকী অবস্থান না করে। আর কোনো মহিলা যেন তার মাহরাম ব্যতীত সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। আর আমার স্ত্রী হজ¦যাত্রী। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ¦ করতে যাও। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০০৬) অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لَا تَحُجّنّ امْرَأَةٌ إِلّا وَمَعَهَا ذُو محْرمٍ.

কোনো মহিলা যেন মাহরাম ব্যতীত হজ¦ না করে। (সুনানে দারাকুতনী, হাদীস ২৪৪০)

আর কয়েক ঘণ্টার সফর হলেও এটি হাজার হাজার মাইলের দূরত্ব। যেখানে আপনার স্ত্রীর সাথে কোনো মাহরাম থাকবে না। এছাড়া বর্তমান হজ¦-আইন অনুযায়ীও কোনো মহিলা ভিসা পেতে হলে তার সাথে মাহরাম থাকা আবশ্যক। হজ¦ এজেন্সিগণ অনেক সময় ভুয়া মাহরাম দেখিয়ে থাকে। যা মিথ্যা ও প্রতারণার শামিল।

অতএব আপনার উচিত, দেশে এসে স্ত্রীকে নিয়ে হজে¦ যাওয়া অথবা এখান থেকে কোনো মাহরামের মাধ্যমে তার সৌদি পৌঁছার ব্যবস্থা করা।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১১০; আত্তাজরীদ, কুদূরী ৪/২১৭০; রদ্দুল মুহতার ২/১২০; আলকিফায়া শরহুল হেদায়া ২/২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৮

শেয়ার লিংক

উছমান গনি - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৩৮২. প্রশ্ন

 গত দুই বছর পূর্বে আমার বাবা হজে¦র ইরাদা করেন। তাঁর উপর হজ¦ ফরয ছিল। কিন্তু হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি  একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এভাবে প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়। ফলে একসময় আব্বা সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে আমাদেরকে বদলী হজ¦ করানোর ওসিয়ত করেন। এ ঘটনার কিছুদিন পরই আব্বা ইন্তিকাল করেন।

আব্বার রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ প্রায় ২,৩০,০০০/- (দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকার মত হয়। কিন্তু এ টাকা দিয়ে বর্তমানে কাউকে হজে¦ পাঠানো যাচ্ছে না। তাই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একজন আলেমের সাথে আলোচনা করি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কেউ যদি স্বেচ্ছায় এ টাকার সাথে আর (বাকি) সামান্য টাকা নিজে বহন করে বদলী হজ¦ করে তাহলেও হয়ে যাবে।

আমাদের এ আলোচনা মসজিদে হওয়াতে আরও কয়েক ব্যক্তি তা শুনছিল। তন্মধ্যে একজন এগিয়ে এসে নিজ থেকেই বলে যে, আপনি যদি ২,৩০,০০০/- টাকা দেন তাহলে বাকি টাকা দিয়ে আমি আপনার বাবার বদলী হজ¦ করতে পারি।

তাই হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত আলেমের কথা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি যদি বাকি টাকা নিজ থেকে দিয়ে হজ¦ করেন তাহলে কি আমার বাবার ফরয হজ¦ আদায় হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় বাকি টাকা দিয়ে আপনার বাবার পক্ষ থেকে হজ¦ আদায় করে তাহলে আপনার বাবার বদলী হজ¦ আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ২,৩০,০০০/- টাকাতেও কোনো কোনো এজেন্সি হজে¦ নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তারা সুযোগ-সুবিধা কম দিয়ে থাকে। আর হজে¦র মূল খরচ (রেজি. ফি, টিকেট ও মুআল্লিম ফি ইত্যাদি) তো এ টাকার মধ্যেই হয়ে যায়। তাই আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ বদলীকারী দিলেও কোনো সমস্যা নেই।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩১১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৮৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৩০

শেয়ার লিংক

আবদুল হালিম - রংপুর

৪৩৮৩. প্রশ্ন

হজ্ব করার নিয়তে অনেকদিন আগ থেকেই টাকা জমা করছিলাম এবং একসময় হজ্ব করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা জমাও হয়ে যায়। কিন্তু ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে আমার ঘর-বাড়ি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে হজ্বের জন্য জমানো টাকা দিয়েই এর মেরামত ও সংস্কার করি। হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এতে কি আমার কোনো গুনাহ হয়েছে? এবং আমার জন্য কি হজ্ব করা আবশ্যক? উল্লেখ্য যে, বর্তমানে আমার কাছে হজ্ব করার মত অর্থকড়ি নেই।

 

উত্তর

হজ্বের উদ্দেশ্যে জমাকৃত টাকা দ্বারা ঘর-বাড়ি মেরামত করা অন্যায় হয়নি। এর জন্য গুনাহ হবে না। তবে এক সময় আপনার নিকট (প্রয়োজনাতিরিক্ত) হজ্বের খরচ পরিমাণ টাকা জমা থাকায় আপনার উপর হজ্ব ফরয। তাই ভবিষ্যতে ফরয হজ্ব আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।

-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৪৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/৩২৪; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২০; মাজমাউল আনহুর ১/৩৮৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শামসুল আলম - ময়মনসিংহ

৪৩৮৪. প্রশ্ন

আমার এক প্রতিবেশী এ বছর তার ফরয হজ্ব আদায় করতে যাচ্ছে। আর তার স্ত্রী ইতিপূর্বে তার বড় ভাইয়ের সাথে আপন ফরয হজ্ব আদায় করেছে। এখন আমি চাচ্ছি, সে মহিলার সাথে কথা বলে তাকে দিয়ে আমার বাবার বদলী হজ্ব করাতে। তাই হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এ মহিলাকে দিয়ে বদলী হজ্ব করালে কি তা আদায় হবে?

 

উত্তর

উক্ত মহিলা যেহেতু তার স্বামীর (তথা মাহরাম পুরুষের) সাথেই যাবে তাই তাকে দিয়ে বদলী হজ্ব করালে তা আদায় হবে। তবে বদলী হজে¦র জন্য পুরুষকে পাঠানোই উত্তম।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৫৫; উমদাতুল কারী ৯/১২৮; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৫৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৩

শেয়ার লিংক

আব্দুল্লাহ - ঢাকা

৪৩৮৫. প্রশ্ন

আশা করি ভাল আছেন। দুআ করি, আমার অন্তরের আশা যেন আল্লাহ কবুল করেন। সেটা হল আপনার দীর্ঘ নেক হায়াত এবং সুস্থতা। জনাব! আমার জানার বিষয় হল, আমার চাচী মারা গেছেন ১ বছর হল এবং তার ২ ছেলে ও এক মেয়ে আছে। এখন আমার চাচা একজন মহিলাকে বিবাহ করে এনেছেন এবং সেই মহিলার আবার পূর্বের স্বামী থেকে একটা ছেলে ও একটা মেয়ে আছে। আমার চাচা তার পূর্বের স্ত্রীর ছেলেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ের সাথে এবং পূর্বের স্ত্রীর মেয়েকে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলের সাথে বিবাহ দিয়েছেন। জানার বিষয় হল এটা কি জায়েয হয়েছে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত উভয় বিবাহ সহীহ হয়েছে। এ বিয়েতে শরীয়তের কোনো বাধা নেই।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৬২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/১৪

শেয়ার লিংক

সিরাজুল ইসলাম - আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা

৪৩৮৬. প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে আমার এক প্রতিবেশী ইন্তেকাল করেন। তার আট-দশ বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে। উভয়ে মাদরাসায় পড়াশোনা করে। এছাড়া সংসারে কর্মক্ষম কোনো পুরুষ নেই। লোকটির স্ত্রী এক মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। মাদরাসাটি বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। মহিলাটি প্রতিদিন বিকেলে বাড়িতে চলে আসেন। আর বর্তমানে উক্ত মহিলার সংসারের খরচ চালানোর জন্য তার এ চাকরি ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেই।

প্রশ্ন হল, উক্ত মহিলার জন্য ইদ্দতের সময় এ চাকরি করা জায়েয হবে কি না?

মুফতী সাহেবের কাছে বিনীত নিবেদন, উপরে বর্ণিত মহিলার সার্বিক অবস্থাকে সামনে রেখে শরীয়তের আলোকে সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন। যদি তার জন্য ইদ্দত অবস্থায় উক্ত চাকরি করা জায়েয না হয় তাহলে তার সংসারের খরচ নির্বাহ হবে কীভাবে? এ বিষয়ে শরীয়ত কী বলে?

দয়া করে জানিয়ে উপকৃত করবেন। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

 

উত্তর

কুরআনে কারীমে ইদ্দতরত নারীর প্রতি গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের নির্দেশ এসেছে। তাই একান্ত জরুরত ছাড়া বাইরে বের হওয়া জায়েয হবে না। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি উক্ত চাকরি ছাড়া মহিলাটির চলার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে ইদ্দত অবস্থায় উক্ত চাকরিতে যাতায়াত করা জায়েয হবে। তবে জরুরতের কারণে বের হলেও রাতের বেলা অবশ্যই স্বামীর বাড়ীতেই থাকতে হবে। বাইরে থাকা যাবে না।

-কিতাবুল আছল ৪/৪০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৩; আলইখতিয়ার ৩/২৬৫; মাজমাউল বাহরাইন পৃ. ৫৯৬; ইলাউস সুনান ১১/২৫৫

শেয়ার লিংক

হাসান আহমাদ - আকুয়া, ময়মনসিংহ

৪৩৮৭. প্রশ্ন

কয়েক বছর পূর্বে আমার মা ইন্তিকাল করেন। অতপর আমার পিতা আরেকটি বিবাহ করেন। সৎ মায়ের মা আমাদের এখানে মাঝে মাঝেই বেড়াতে আসেন। আমি তাকে নানী ডাকি এবং তার সামনে যাই। কিছুদিন পূর্বে একজন আলেম বললেন, সৎ মায়ের মায়ের সাথে পর্দা করা জরুরি। ঐ আলেমের কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ আলেম ঠিকই বলেছেন। সৎ মায়ের মাতা মাহরাম নন। সুতরাং তার সাথেও পর্দা করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশে সৎ মা বলা হয়  আপন মা ব্যতীত বাবার অন্য স্ত্রীকে। বাবার স্ত্রী হওয়ার কারণে তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েয। তবে এ কারণে সৎ মায়ের ঊর্ধ্বতন কেউ মাহরামের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

-ফাতাওয়া খাইরিয়া ১/৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১

শেয়ার লিংক

মুখলিছুর রহমান - বছিলা, ঢাকা

৪৩৮৮. প্রশ্ন

আমার এক বন্ধুর দুইটি পিকআপ আছে। আর আমার একটি বড় ট্রাক আছে। বর্তমানে আমার ব্যবসায়িক কাজের জন্য ছোট পিকআপের প্রয়োজন বেশি। বিভিন্ন জায়গায় মাল পাঠাতে ছোট পিকআপ বেশি সুবিধাজনক। আর আমার উক্ত বন্ধু বড় ট্রাক দিয়েও ভালো ইনকাম করতে পারবে। তাই আমি মাসিক হিসাবে আমার ট্রাক তাকে ভাড়া দিয়ে বিনিময়ে তার পিকআপ দুটি ভাড়ায় নিতে চাচ্ছি। অর্থাৎ যার যার মালিকানা বহাল থাকবে। তবে আমার ট্রাক চালিয়ে যা ইনকাম হবে তা সে নেবে। বিনিময়ে তার পিকআপ দুটি আমি ব্যবহার করব। শরীয়তের দৃষ্টিতে এভাবে চুক্তি করার বিধান কী?
 

উত্তর

এভাবে চুক্তি করা অর্থাৎ বাহনের বিনিময়ে বাহন ভাড়া দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। তবে আপনারা উভয়ে টাকার হিসাবে নিজ নিজ বাহনের ভাড়া নির্ধারণ করে নিতে পারেন।

যেমন : বড় ট্রাকের ভাড়া ১০,০০০/- টাকা এবং ছোট দুটি পিকআপের ভাড়া ১০,০০০/- টাকা। এরপর প্রত্যেকের পাওনা ১০,০০০/- টাকা অপরের থেকে পাওনা দ্বারা কর্তনও করতে পারেন।

সুতরাং কোনো মাসে যদি আপনি পিকআপ না নিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে তার ভাড়া দিতে হবে না। কিন্তু সে ট্রাক নিয়ে থাকলে তার ভাড়া আদায় করবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৮; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৫৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২১৮-২২০; মুলতাকাল আবহুর ৩/৫৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন - মহিমাগঞ্জ, গাইবান্ধা

৪৩৮৯. প্রশ্ন

ধান কাটার বা অন্যান্য ফসল তোলার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সাথে আমরা উক্ত ফসলেরই একটা অংশ দেওয়ার চুক্তি করি। অর্থাৎ কথা থাকে, তারা ক্ষেতের ধান বা ফসল তুলে বাড়িতে এনে দেবে, বিঘাপ্রতি তাদেরকে সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান বা ফসল দেওয়া হবে। তো ধান বা ফসল তোলা শেষ হলে তা বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে সেখান থেকে তাদের অংশ নিয়ে যায়। এক ভাই বললেন, এটা নাকি জায়েয নয়। কিন্তু আমি তার কথার কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। তাই আমি জানতে চাই, এ বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিতে সঠিক সিদ্ধান্ত কী?
 

উত্তর

শ্রমিকেরা যে ফসল কেটে আনবে সেখান থেকেই তাদের বিনিময় পরিশোধ করার শর্তে চুক্তি করা সহীহ নয়। কেননা এতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মজুরি পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত বা অনির্ধারিত হয়ে পড়ে। যেমন, কোনো কারণে যদি ধান বা ফসল চিটা হয়ে যায় কিংবা শ্রমিকের আবহেলা ছাড়াই (যেমন : হঠাৎ প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি, আগুনে পুড়ে যাওয়া কিংবা ফসল নিয়ে আসার পথে কোনো দুর্ঘটনায়) ফসল নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তাদের কাটা ফসল নেই বিধায় মালিক তাদের মজুরি দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। অথচ এসব ক্ষেত্রেও শ্রমিক তার ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়ার হকদার। তাই ইসলামী শরীয়তে কর্তিত ফসল থেকেই বিনিময় নির্ধারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হল, ক্ষেত বা বিঘাপ্রতি তাদেরকে কী ধরনের এবং কী পরিমাণ ধান বা ফসল দেওয়া হবে তা নির্ধারিত করে নেওয়া। আর তা এই ফসল থেকেই দেওয়া হবে, তা নিশ্চিত না করা। এভাবে চুক্তির পর পারিশ্রমিক দেওয়ার সময় চুক্তিকৃত শর্তের সাথে মিলে গেলে তাদের কেটে আনা ফসল থেকেও মজুরি পরিশোধ করা যাবে। আবার চুক্তিকৃত পণ্য অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করেও দেওয়া যেতে পারে।

জেনে রাখা দরকার, শরীয়তের প্রতিটি বিধানেই মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। তাই আল্লাহ তাআলার এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি নির্দেশ কারণ খোঁজ করা ছাড়াই পূর্ণ আস্থার সাথে মেনে নেওয়াই মুমিনের কাজ।

-কিতাবুল আছল ৩/৪৩২, ৪৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৫; শরহুল মাজাল্লা ২/৫৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৭

শেয়ার লিংক