মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান - চাঁদপুর

১১৪৫. প্রশ্ন

আমাদের একটি সমিতি আছে। আমাদের গ্রামের মানুষ বিভিন্ন সংস্থা হতে সুদযুক্ত ঋণ গ্রহণ করে। আমরা চাচ্ছি যেন তারা সুদ হতে বাঁচতে পারে। তাই আমরা সমিতির পক্ষ হতে হালাল পন্থায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে তাদেরকে অর্থ প্রদানের চিন্তা করছি। যাতে তারা ও সমিতি উভয়পক্ষই উপকৃত হতে পারে। অতএব, মুফতী সাহেবের নিকট নিবেদন এই যে, আমাদেরকে এর একটি হালাল ও সহজ পন্থা বলে দিবেন।

উল্লেখ্য আমরা বর্তমানে দুটি পদ্ধতিতে এ কার্যক্রম চালু করেছি। পদ্ধতিগুলো শরীয়ত সম্মত কিনা জানালে বাধিত হব।

পদ্ধতি-১ : কারো টাকার প্রয়োজন হলে আমরা সমপরিমাণ মূল্যে তার কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ ক্রয় করি এবং মূল্য তাকে প্রদান করি। অতঃপর একই মজলিসে পুনরায় সে আমাদের থেকে কিস্তিতে পূর্ব মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে তা ক্রয় করে নেয়। এক্ষেত্রে অধিক কিস্তি হলে মূল্য বেশী হয় আর কম কিস্তি হলে মূল্য তুলনামূলক কম হয়।

পদ্ধতি-২ : কারো টাকার প্রয়োজন হলে আমরা কোন মাল ক্রয় করে উক্ত মাল তার নিকট কিস্তিতে কিছু লাভসহ বিক্রি করি। এক্ষেত্রেও কিস্তি বেশী হলে লভ্যাংশ বেশী দিতে হয় আর কিস্তি কম হলে লভ্যাংশ কম দিতে হয়।

উত্তর

১. না, এ পদ্ধতির কারবার জায়েয নয়। এটি সুদী কারবারের একটি ভিন্ন রূপ।

২. প্রশ্নের বিবরণ অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে। যার টাকার প্রয়োজন তার নিকট কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করার কথা লিখেছেন। এতে তো তার টাকার প্রয়োজন ফুরালো না, বরং উল্টো সে আরো ঋণী হয়ে গেল। বিস্তারিত জানালে উত্তর দেওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য, শরীয়তসম্মতভাবে বিনিযোগ করতে চাইলে এ সম্পর্কে অবগত কোন বিজ্ঞ মুফতীর কাছে গিয়ে ভালভাবে জেনে নিতে হবে।

-সুনানে আবু দাউদ ২/৪৯০, মুসনাদে আহমদ ২/২০৭, ফাতহুল কাদীর ৬/৩২৪, আল কিফায়া ৬/৩২৩, ইলাউস সুনান ১৪/১৭৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইসমাঈল - ভোটাল, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর

১১৪৬. প্রশ্ন

আমাদের মা এবং তিনভাই দুবোন রেখে মুহতারাম আববা পরজগতে পাড়ি জমান। তাঁর ইন্তিকালের পর বড়ভাই ও আমি আর্থিক সংকটাপন্ন সংসারের হাল ধরি। এক পর্যায়ে বড় ভাই বিয়ে করেন এবং কিছুদিন পর তিনি ভাবীকে নিয়ে সাংসারিকভাবে আলাদা হয়ে যান। তবে সহায়-সম্পত্তি অবণ্টিত থাকে অদ্যাবধি। তাই আলাদা হওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব একা আমার ওপর এসে পড়ে; মাঠে কাজ কর্মের মাধ্যমে ছোট-ভাই বোনের লেখাপড়ার ব্যয়-ভারসহ সংসার চালাতে থাকি। এভাবে সংসার চলছে না বিধায় আলাদা হওয়া বড়ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করি যে,  ভাই! আপনি রাজী হলে কিছু পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে সৌদী গেলে হয়ত ভাইবোনের লেখাপড়াসহ সংসার ভালভাবে চলবে। আর যথাসম্ভব আপনাকে সহযোগিতা করা হবে। ভাই এতে রাজী হয়ে জমি বিক্রির সময় রেজিস্ট্রীতে অংশ গ্রহণ করে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, বিদেশ গিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও সুবিধে করতে পারিনি; বরং জেলে গিয়ে জেল খেটে চলে আসতে হয়েছে। দেশে এসে পুনরায় মাঠে কাজ-কর্মের মাধ্যমে সংসার চালাতে থাকি, এক পর্যায়ে বিয়ে করি। কিছুদিন পর ব্যক্তিগতভাবে করজ করে শ্বশুরালয়ের সহযোগিতায় আবার বিদেশ যাই। এবার প্রাথমিক অবস্থার তুলনায় কিছু ভাল থাকায় ছোট ভাই বোনের লেখাপড়া করানো, আংশিক করজ পরিশোধ করাসহ সংসার পরিচালনা করি। পাশাপাশি বড়ভাইকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করতে থাকি এবং বিবাহিত অসহায় বোনদের সাহায্য করি। কিছুদিন পর পুনরায় জেলে গিয়ে অবশেষে দেশে চল আসতে হয়। বর্তমানে আমি দেশে সম্পূর্ণ বেকার। বড় ভাইসহ আমাদের আর্থিক অবস্থা বরাবরের মত এখনও সংকটাপন্ন। বড়ভাই বর্তমানে পূর্বেকার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রিলব্ধ টাকা চাচ্ছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে আমার ভাই সে জমি বিক্রি লব্ধ টাকা থেকে কোন ভাগ পাবেন কিনা? যদি পেয়ে থাকেন তাহলে বর্তমান মূল্যে নাকি যখন বিক্রি করেছি সে মূল্য হিসেবে? এ ব্যাপারে শরীয়তের ফয়সালা জানাতে আপনার সুমর্জি কামনা করছি।

উল্লেখ্য যে, (১) আমার এবং বড়ভাইয়ের আর্থিক অবস্থা বরাবর সংকটাপন্ন।

(২) বড় ভাই আলাদা হওয়ার পর ছোটভাই বোনের লেখাপড়া পরিচালনাসহ সাংসারিক ব্যয়ভার আমি একাই সম্পূর্ণ বহন করেছি এবং সংসারের উন্নতির জন্যই এবং ভাইকে সহযোগিতার মানসেই জমি বিক্রি করেছি।

(৩) সে সময় আমি অবিবাহিত ছিলাম।

(৪) বিবাহিত বোনদেরকে আমি একাই সহযোগিতা করেছি।

(৫) জমি বিক্রিলব্ধ টাকা মোটেই আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করিনি এবং বিদেশ গিয়েও কিছুই করতে পারিনি।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ যদি সত্য হয় তাহলে আপনি যেহেতু পরিবারের খরচ নির্বাহের উদ্দেশ্যে পরিবারের পক্ষ থেকেই বিদেশ গেছেন তাই এর পিছনে ব্যয় হওয়া টাকা পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে গণ্য হবে।

অতএব বিদেশে যাওয়ার জন্য বিক্রয়কৃত জমির মূল্যের অংশ এখন কারো জন্য দাবী করা বৈধ নয় এবং সে দাবী পূরণ করাও আপনার ওপর জরুরি নয়।

শেয়ার লিংক

মুহা. আব্দুল কাদের - পূর্বধলা, নেত্রকোনা

১১৪৭. প্রশ্ন

কোন ইসলামী সমিতি যদি জনগণ থেকে গরীবদের জন্য টাকা উঠিয়ে উক্ত সমিতিতে গোরাবা ফান্ড খোলে এবং উক্ত সমিতি গরীবদের ভাগে যে লভ্যাংশ আসে তা গরীবদেরকে দিয়ে দেয় এবং এক সময় আসলটাও দিয়ে দেয় তাহলে তা জায়েয হবে কি? আর গরীবদের টাকা দিয়ে ব্যবসা করার কারণ হল যেহেতু যে পরিমাণ টাকা উঠল তা যদি দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে একবারেই শেষ ও গরীবদের একবারই উপকার হয় আর যদি ব্যবসা করে লভ্যাংশ উক্ত নিয়মে দেওয়া হয় তাহলে বার বার গরীবদের ফায়দা হয়।

উত্তর

সমিতির প্রশ্নোক্ত পরিকল্পনার কথা দাতাদেরকে জানিয়ে তাদের থেকে যদি নফল সাদকা সংগ্রহ করা যায় তবে সে টাকা দিয়ে সমিতির প্রতিনিধিগণ ব্যবসা করতে পারবে। এক্ষেত্রে সমিতি ইনসাফভিক্তিক পারিশ্রমিক নিতে পারবে। তবে গরীবদের উপর যেন কোন প্রকার জুলুম না হয় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গরীবদের মূল টাকা ও লাভ পুরোটাই আমানত হিসাবে হেফাজত করতে হবে।

কিন্তু প্রশ্নোক্ত পরিকল্পনার কথা দাতাদের না জানিয়ে গরীবদের উদ্দেশ্যে নেওয়া নফল দান দ্বারাও ব্যবসা করা বৈধ হবে না। তদ্রূপ যাকাত, ফেতরা এবং অন্যান্য ওয়াজিব দানের টাকা দ্বারাও ব্যবসা করা জায়েয হবে না। এ সকল টাকা যতদ্রুত সম্ভব গরীব-মিসকীনকে পৌঁছে দেওয়া জরুরি।

শেয়ার লিংক

হেলাল - ঢাকা

১১৪৮. প্রশ্ন

আমার এক আত্মীয়ার বয়স ৩০/৩২ বছর হবে। কিন্তু এখনো তার বিয়ে হয়নি, কারণ তার সামনের দাঁতগুলো অস্বাভাবিক বড় এবং সামনের দিকে বেরিয়ে থাকে। তাই যে ছেলেই তাকে দেখে ফিরে যায়। এখন তার আববা চাচ্ছে, সার্জারী করে দাঁতগুলোকে কেটে কিছু ছোট করে ভেতর দিকে নিতে। এখানে আমার প্রশ্ন হলো, তার একাজটি জায়েয হবে কি না?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে ঐ মহিলার দাঁতগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা জায়েয হবে।

-শরহে সহীহ মুসলিম ২/২০৫, উমদাতুল ক্বারী ২২/৬৩, জামে আহকামুন নিসা ৪/৪১৬

শেয়ার লিংক

লোকমান -

১১৪৯. প্রশ্ন

জনাব মুফতী সাহেব! আমার একটা ডেইরী ফার্ম আছে তাতে ৭০-৮০টি গরু আছে। আমি এগুলোর দুধ বিক্রি করে ব্যবসা করি এবং এ গরুগুলোর খাওয়া-দাওয়ার পুরো খরচ আমাকেই বহন করতে হয়।

এখানে আমার প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে আমাকে কি উক্ত গরুগুলোর যাকাত দেওয়া লাগবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্তক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত ডেইরী ফার্মের গরুর যাকাত দিতে হবে না। অবশ্য, দুধ বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা যদি নেসাব পরিমাণ হয় তাহলে তার যাকাত দিতে হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৫, ফাতহুল কাদীর ২/১২৬, আদ্দুরুল মুখতার ২/২৭৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২, ১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/২১৩

শেয়ার লিংক

শোয়াইব - ঢাকা

১১৫০. প্রশ্ন

আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। আমার ওপর কোন বছর যাকাত ফরয হয়, আবার কোন বছর ফরয হয় না। কিন্তু আমি প্রতি বছর কুরবানী করি। সেদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, যে বছর আপনার ওপর যাকাত ফরয হয় না সে বছর আপনার কুরবানী করা লাগবে না। এখানে আমার প্রশ্ন হলো, আসলে ইমাম সাহেবের কথা ঠিক কি না? বাস্তবে কতটুকু সম্পদ থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হয়? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।

উত্তর

উক্ত ইমাম সাহেবের কথাটি ঠিক নয়। কারণ, যাকাত ও কুরবানী উভয়টি পৃথক পৃথক ইবাদত এবং উভয়ের নেসাবের হিসাবের ধরনও ভিন্ন। একটি ফরয না হয়ে থাকলে অপরটি করতে হয় না, এমন ধারণা ঠিক নয়। বরং যার কাছে কুরবানীর দিনগুলোতে সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকবে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য, কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে সোনা-রূপার অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্যের সাথে সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র, এসব কিছুর মূল্য ধর্তব্য হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৬/২৮০, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩, আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

শেয়ার লিংক

আলী হায়দার - ফেনী

১১৫১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার কিছু লোকের ধারণা এই যে, ফিৎরা আদায়ের ক্ষেত্রে একজন গরীব লোককে পূর্ণ এক ফিৎরা দিতে হয়। এর অংশ অর্থাৎ এক ফিৎরা কয়েকজনকে ভাগ করে দিলে ফিৎরা আদায় হয় না। তাদের এই ধারণা কি সঠিক? এবং এক্ষেত্রে শরীয়তের মাসআলা কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

একটি ফিৎরা পুরোটা একজন গরীবকে দেওয়া জরুরি নয়। এক ফিৎরা কয়েকজনকে ভাগ করেও দেওয়া জায়েয আছে। তবে উত্তম হল, একজনকে একটি ফিৎরার কম না দেওয়া।

-হাশিয়াতুত্ত্বাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ৩৯৫, ফাতাওয়া খানিয়া, বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৭৩, আলবাহরুর রায়েক ২/৪৪৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রিয়াজুল ইসলাম - ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ

১১৫২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক পাষন্ড স্বামী তার স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে, যার দরুণ স্ত্রী মারা যায়। এখন অনেকে বলছে যে, ঐ স্ত্রী শহীদ, আর স্ত্রীর গুনাহ স্বামীর উপর দিয়ে যাবে একথাটি কতটুকু সত্য? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী মহিলাটি হুকমী শহীদ। অর্থাৎ সে আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবে। তবে গোসল ও কাফনের ক্ষেত্রে তার সাথে স্বাভাবিক মৃতের ন্যায় আচরণ করা হবে। জিহাদের শহীদের মত তাকে গোসল ছাড়া দাফন করবে না। উল্লেখ্য যে, হাদীস দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, যদি কোন ব্যক্তি কারো ওপর অত্যাচার করে, তাহলে কিয়ামত দিবসে অত্যাচারীর নেকী থেকে তার জুলুম অনুযায়ী সাওয়াব অত্যাচারিত ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যদি অত্যাচারী ব্যক্তির নেকী না থাকে বা শেষ হয়ে যায়, তাহলে অত্যাচারিত ব্যক্তির গুনাহ থেকে নির্ধারিত পরিমাণ গুনাহ জালেমকে দেওয়া হবে।

-সহীহ মুসলিম ২/৩২০, আলজামে লিআহকামিল কুরআন ৬/১৩৭, হেদায়া ১/১৮৩, বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৬৫, আলমাজমূ ৫/২২৪

শেয়ার লিংক

রফিক -

১১৫৩. প্রশ্ন

একই মসজিদে তারাবীর একাধিক জামাত করার হুকুম কি?

উত্তর

একই মসজিদে তারাবীর একাধিক জামাত করা বাঞ্চণীয় নয়। কোন কোন ফকীহ একই মসজিদে তারাবীর একাধিক জামাতকে মাকরূহ বলেছেন। হযরত ওমরের রা. যুগে মসজিদগুলোতে ছোট ছোট একাধিক জামাত হত। তিনি এসবগুলোকে একত্রিত করে বড় এক জামাতে পরিণত করেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক পৃ. ২৫৯ খ. ৪) সুতরাং একই মসজিদে একাধিক জামাত না করে একটি জামাত করাই উচিৎ। কেউ মসজিদের জামাতে শরীক হতে না চাইলে মসজিদের বাইরে বাসা-বাড়ি বা অন্য কোন স্থানে গিয়ে ভিন্ন জামাত করতে পারেন। এতে কোন অসুবিধা নেই।

-মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক ৪/২৫৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১১৬

শেয়ার লিংক

আব্দুর রহমান - ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকা

১১৫৪. প্রশ্ন

আমি একজন নওমুসলিম। বর্তমানে এক মুসলমান ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে আছি। আমি তাকে আববা এবং তার স্ত্রীকে আম্মা বলে ডাকি। বর্তমানে দেশে জাতীয় পরিচয়-পত্রে ও ভোটার তালিকায় আমার জন্মদাতা হিন্দু পিতার স্থলে ঐ মুসলমান ব্যক্তির নাম ব্যবহার করা যাবে কিনা? আর যদি জন্মদাতা হিন্দু পিতার নাম লিখি তাতে কি ঈমানের কমতি হবে? বা দুর্বলতা দেখা দিবে? এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান জানালে কৃতার্থ হব।

উত্তর

জাতীয় পরিচয়পত্রে ও ভোটার তালিকায় নিজ পিতার স্থলে আপনাকে জন্মদাতা পিতার নামই লিখতে হবে। অমুসলিম পিতার নাম ব্যবহার করলে ঈমানের কোন ক্ষতি হবে না। যে সকল সাহাবায়ে কেরামের পিতা মুসলমান ছিল না তাঁরাও মুশরীক পিতার নামের সাথেই পরিচিত হতেন। বিষয়টিকে কেউ দোষের চোখে দেখতেন না।

-সূরা আহযাব ৪,৫, সহীহ বুখারী ২/১০০১, সহীহ মুসলিম ১/৫৭, তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১১৯, তাফসীরে রূহুল মাআনী ১১/১১৯, আহকামুল কুরআন (জাস্সাস রহ.) ৩/৩৫৪, আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৯৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মদ আলী - বাসা-২২/২৩৯, ২৪০, এভি-৫ <br> ব্লক-সি, মিরপুর, ঢাকা

১১৫৫. প্রশ্ন

আমি মুহাম্মদ আলী। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আয়নাল হক সাহেবের বাড়ি বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর বাড়িটি আ. রশিদ সাহেবের কাছে বিক্রির প্রস্তাব করি। চূড়ান্ত প্রস্তাব অনুযায়ী বাড়িটি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বিক্রয় মূল্য সাব্যস্ত হয় এবং ৩ মাসে সকল মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে বায়নানামা হয়। তিনি ৩ মাসে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এদিকে ৩ মাস সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পর বাড়ির মালিক আমাকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ প্রদান করলে আমি রশিদ সাহেবকে জানালে তিনি বাকী টাকা প্রদান করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে আমি আবুল হোসেন সাহেবকে (রশিদ সাহেবের বাসায়)-এর কাছে একই মূল্যে বাড়ি বিক্রির প্রস্তাব করি। আবুল হোসেন সাহেব বাড়িটি ক্রয়ের পর আমাকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ৫০,০০০/- টাকা প্রদান করেন এবং রশিদ সাহেবকে (পূর্বের বায়নাকারী হিসেবে) ১৫,০০০/- টাকা প্রদান করেন। বর্তমানে রশিদ সাহেব সমাজে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন উক্ত ৫০,০০০/- টাকা গ্রহণ করা আমার হারাম হয়েছে। অথচ তিনি নিজেও ১৫,০০০/- হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন। হুজুরের কাছে আবেদন উক্ত সমস্যার বিষয়ে কুরআন-হাদীসের আলোকে আমাকে সমাধান দিয়ে শুকরিয়া আদায় করার সুযোগ দিবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা যদি সত্যি হয় তবে মধ্যস্থকারী হিসেবে উক্ত ৫০,০০০/-  টাকা গ্রহণ করা আপনার জন্য নাজায়েয হয়নি। তাই আপনার এ টাকা গ্রহণকে হারাম বলা ঠিক নয়।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩, ফাতাওয়া খানীয়া ২/৩২৬, আল মুহীতুল বুরহানী ১২/১১৮, তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৩৩৭, ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৫/৪০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল হালীম - মিরপুর, ঢাকা

১১৫৬. প্রশ্ন

গত বছর কুরবানী দেওয়ার জন্য একটি গরু ক্রয় করি। গরুটা বেশ শক্তিশালী, যার কারণে কুরবানীর দিন জবাই করার জন্য শোয়াতে গেলে কসাইদের বেশ কষ্ট হয়। শোয়ানোর এক পর্যায়ে তার পেছনের বাম পা নিচে পড়ে ভেঙ্গে যায়। তারপরেও তারা শোয়াতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ৩-৪ ঘণ্টা পর আরও লোক মিলে গরুটা শোয়াতে সক্ষম হয় এবং তারপর জবাই দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমার এক বন্ধু বলল, তোমার কুরবানী আদায় হয়নি। কেননা, জবাই করার পূর্বেই প্রাণীটার পা এমনভাবে ভেঙ্গে গেছে, যার কারণে তা হাঁটতে পারে না। আবার সে মুহূর্তে জবাই করা হয়নি। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আসলেই কি আমার কুরবানী আদায় হয়নি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কুরবানী শুদ্ধভাবে আদায় হয়েছে। কুরবানীর পশু জবাই করতে গিয়ে তার পা ভেঙ্গে গেলে সে পশু দিয়ে কুরবানী করাতে কোন বাধা নেই।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৩, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, আল ইনায়া ৮/৪৩৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৭, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৫, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

শেয়ার লিংক

মামুন - নোয়াখালী

১১৫৭. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে তারাবীর নামাযের পর ইমাম সাহেব তিলাওয়াতকৃত আয়াতসমূহের সারমর্ম পেশ করেন। নামাযের মাঝে তিলাওয়াতে সিজদা আদায়ের পর যদি বয়ানের সময় উক্ত আয়াত পুনরায় তিলাওয়াত করেন তাহলে পুনরায় সিজদা করতে হবে কিনা? 

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তিলাওয়াতকারী এবং শ্রোতা সকলকে পুনরায় তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করতে হবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৮৩, ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮, আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৩, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫, আলবাহরুর রায়েক ২/১২৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৫

শেয়ার লিংক

আব্দুল্লাহ তৈয়্যব - ঢাকা

১১৫৮. প্রশ্ন

আজ থেকে প্রায় বিশ বছর পূর্বে আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তি থেকে বিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল। ঋণ গ্রহণের পর গ্রহিতা কোন কারণে দরিদ্র হয়ে যায়। যার দরুণ তার জন্য ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এদিকে ঋণগ্রহিতা দরিদ্র হয়ে গেলেও তার তা আদায়ের ইচ্ছা ও দাতার তা প্রাপ্তির আশা ছিল। এখন দীর্ঘ বিশ বছর পর গ্রহিতা সমুদয় ঋণ আদায় করে দিচ্ছে। প্রশ্ন হল এখন দাতার উপর এই টাকার বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায় করা জরুরি কিনা? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণদাতা চাইলে প্রাপ্ত বিশ হাজার টাকার বিগত সবগুলো বছরের যাকাত আদায় করে দিতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রে এ টাকার বিগত বছরের যাকাত না দেওয়ারও অবকাশ রয়েছে।

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৪, বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯৯, আলমুদাওয়ানাতুল কুবরা ১/২২১, আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭

শেয়ার লিংক

আনোয়ার - বরিশাল

১১৫৯. প্রশ্ন

বাড়ির হেফাযতের জন্য আমার কুকুর পালার খুব প্রয়োজন। এদিকে আশ্বিন মাসে অধিকাংশ কুকুর পাগল হয়ে যায়। এদেরকে খাসী বানিয়ে দিলে এমনটি হয় না, তাই আমি এরূপ করতে চাচ্ছি এতে শরয়ী সমস্যা আছে কিনা?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত পন্থাটি যদি কার্যকরী হয় তবে প্রয়োজনে এরূপ করা জায়েয হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন এর কারণে জন্তুটির খুব বেশি কষ্ট না হয়।

-ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩৫৭, হেদায়া (ফাতহুল কাদীরসহ) ৮/৪৯৭, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৮

শেয়ার লিংক

আনোয়ার - বরিশাল

১১৬০. প্রশ্ন

বিনা ওযরে তারাবীর নামায বসে পড়লে সহীহ হবে কিনা?

উত্তর

সুস্থ ব্যক্তির জন্য তারাবীহর নামায দাঁড়িয়ে আদায় করাই সুন্নত। বিনা ওযরে বসে আদায় করলে সুন্নত অনুযায়ী আদায় হবে না। তবে কেউ দাঁড়িয়ে পড়ার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও বসে আদায় করলে তারাবীহ আদায় হয়ে যাবে, তবে দাঁড়িয়ে পড়ার অর্ধেক সওয়াব হবে।

-ফাতাওয়ায়ে খানিয়া ১/২৪৩, আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৫, বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৭, আলমাবসূত লিস্সারাখসী ২/১৪৭,আলবাহরুর রায়েক ২/৬৩, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮

শেয়ার লিংক

মোতাওয়ালী - মসজিদ কর্তৃপক্ষের পক্ষে

১১৬১. প্রশ্ন

একটা জামে মসজিদ প্রথমে কাচাঘর ছিল ৪/৫ বছর পর তা পাকা করা হয়। ১০/১২ বছর পর বর্তমানে মসজিদের তেমন কোন আয়ের উৎস না থাকায় এবং আশেপাশে স্বচ্ছল ও দ্বীনদার লোকদের সংখ্যা খুবই কম-থাকায় মসজিদের খরচ চালাতে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এই অবস্থায় মসজিদ-কর্তৃপক্ষ মসজিদের খরচ চালাবার জন্য মসজিদের নিচ তলায় পরিবর্তন করে দোকান, মেস ইত্যাদি করে মসজিদ পরিচালনা করার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করার চিন্তা করছে। শরীয়ত অনুযায়ী এটা কতটুকু জায়েয অথবা নাজায়েয মেহেরবানী করে জানাবেন।

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত জায়গায় দোকান-মেস ইত্যাদি কোন কিছু বানানো যাবে না। কারণ যে স্থানে একবার মসজিদ হয়ে যায় তাতে অন্য কিছু করার সুযোগ শরীয়তে নেই। বরং নিচ তলা মসজিদ হিসাবেই ব্যবহার করতে হবে। মহল্লাবাসী এবং অন্যন্য মুসল্লীদের কর্তব্য হল মসজিদের যাবতীয় প্রয়োজনীয় খরচাদির ব্যবস্থা করা।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭, মাজমাউল আনহুর ২/৫৯৪, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৩, ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ কিরামত আলী - চৌড়হাস, কুষ্টিয়া

১১৬২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকাতে এক ব্যক্তির সন্তান অসুস্থ হলে সে একটি নির্দিষ্ট ছাগল কুরবানী করার মান্নত করে। কিন্তু কুরবানীর সময় আসার আগেই ছাগলটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে সঙ্গে সঙ্গে তা যবেহ করে গোস্ত গরীবদের মাঝে ছদকা করে দেয়। এখন আমার জানার বিষয় হলো, ঐ ব্যক্তি কি অন্য ছাগল দিয়ে মান্নতের কুরবানী দিতে বাধ্য থাকবে? নাকি মান্নতের কুরবানী তার থেকে রহিত হয়ে যাবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রাণীটি যবেহ করে গোস্ত সদকা করে দেওয়া শুদ্ধ হয়েছে এবং মান্নতও আদায় হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে মান্নতের জন্য অন্য কোন প্রাণী যবেহ করা জরুরি নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, রুদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হাসান মাহমুদ - কাশখালী, মাগুরা

১১৬৩. প্রশ্ন

আমরা জানি, রোযা অবস্থায় কুলি করতে গেলে অসাবধানতা বশত গলাতে পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যায়। তবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না। এখন আমার জানার বিষয় হলো, অসাবধানতা বশত কি পরিমাণ পানি গলাতে চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

রোযা অবস্থায় গলাতে সামান্য পানি ঢুকে পড়লে এমনকি তা দুএক ফোটা হলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে। অসাবধানতা বশত এরূপ ঘটলে পরবর্তীতে রোযাটির শুধু কাযা করে নিতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮, আলইনায়া ২/২৫৮, ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩

শেয়ার লিংক

ডা. আব্দুল্লাহ - মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

১১৬৪. প্রশ্ন

একজন হিন্দু মেয়ে ইসলাম গ্রহণ করে একজন মুসলিম ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সামাজিক কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে তার ইসলাম গ্রহণ ও বিবাহের কথা গোপন রেখেছে এবং আগের মতোই তার মা-মাবার কাছে থেকে তাদের সাথেই খাওয়া-দাওয়াসহ জীবিকা নির্বাহ করছে। এখন প্রশ্ন হলো স্বামী থাকা সত্ত্বেও অমুসলিম পিতার সম্পদ থেকে এভাবে জীবিকা গ্রহণ বৈধ হচ্ছে কি?

উল্লেখ্য, পিতা তার জীবিকার দায়িত্ব বহন করতে সক্ষম। আর মেয়েরও স্বামী ছাড়া ভিন্ন কোন উপায় নেই।

উত্তর

অমুসলিম পিতা-মাতার সম্পদ থেকে মুসলিম সন্তানাদির জীবিকা নির্বাহ অবৈধ নয়। তাই উক্ত মেয়ের জন্যও তার পিতার বাড়িতে খাওয়া-থাকা বৈধ। তবে মেয়েটির নিজের ইসলাম গ্রহণ করার কথা গোপন রাখা ঠিক হচ্ছে না। বিষয়টি প্রকাশ করে দেওয়া এবং সম্পূর্ণ ইসলামী-জীবনযাপন করা তার কর্তব্য। পিতামাতার কাছে থেকে এটি সম্ভব না হলে বা এর ফলে কোন সমস্যা দেখা দিলে মেয়েটি মুসলিম স্বামীর নিকট চলে আসবে এবং স্বীয় কর্তব্য পালন করবে। পরবর্তীতে সমস্যা কেটে গেলে মাতাপিতা ও মাহরাম আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে। এমনকি প্রয়োজনে তাদের সেবা-যত্নও করতে পারবে।

-মুসনাদে আহমদ ৪/৪ হাদীস নং ১৫৬৭৯, বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪৪৯, আদ্দুররুল মুখতার ৩/৬১৪, আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৬১৪

শেয়ার লিংক

ইবনুল হুমাম - ফেনী

১১৬৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার জনৈক ব্যক্তি ট্রেন দুর্ঘটনায় উভয় পা হারায়। বর্তমানে সে হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করে। এখন তার উপর কি মসজিদে গিয়ে জুমার নামায আদায় করা জরুরি? না কি বাড়িতে যোহরের নামায আদায় করলেই চলবে?

উত্তর

উভয় পা নেই কিংবা পায়ে চলার শক্তি নেই এমন ব্যক্তির ওপর জুমা ফরয নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি জুমাতে শরীক না হয়ে একাকী যোহরের নামাযও আদায় করতে পারবে। অবশ্য সে মসজিদে গিয়ে জুমার নামায পড়ে নিলে তা আদায় হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৮২, আল বাহরুর রায়েক ২/১৫১, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১০, শরহুল মুনিয়া ৫৪৯, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৪

শেয়ার লিংক

মাওলানা মতিউর রহমান - ময়মনসিংহ

১১৬৬. প্রশ্ন

আমার নিকট যাকাতের নেসাব পরিমাণ টাকা আছে এবং তার ওপর বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু স্ত্রীর মহর-যা নগদ আদায় যোগ্য নয়-এ মহরের পরিমাণ এত যে, তা আদায় করলে টাকার পরিমাণ নেসাব থেকে কমে যাবে। এখন আমার জানার বিষয় হল, যে মহর নগদ আদায় করা জরুরি নয় তা ঋণ হিসাবে কর্তনযোগ্য কিনা?

উত্তর

যে সম্পদের ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে এ সম্পদ থেকেই নগদে স্ত্রীর মহর আদায় করে দিলে কিংবা নগদে আদায়ের উদ্দেশ্যে টাকা গচ্ছিত করে থাকলে নগদ মহর পরিমাণ অর্থ যাকাতের নেসাব থেকে কর্তন করা হবে। আর যদি সে এখন স্ত্রীর মহর নগদ আদায়ের ইচ্ছা না করে থাকে তবে ওই মহরের টাকা যাকাতের নেসাব থেকে কর্তিত হবে না। বরং মহর অনাদায়ী থাকা সত্ত্বেও যাকাতযোগ্য সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে।

-আল বাহরুর রায়েক ২/২০৪, ফাতহুল কাদীর ২/১২০, বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩, আদ্দুররুল মুখতার ২/১২০

শেয়ার লিংক

আকলিমা সুলতানা - কুমিল্লা

১১৬৭. প্রশ্ন

আমি হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাওয়ার পর আমার ছেলে আমাকে একটি সোনার হার দিয়েছে। এখন আমি জানতে চাই ইহরাম অবস্থায় আমি ঐ হার পরতে পারবো কি না?

উত্তর

হাঁ, ইহরাম অবস্থায় আপনি ঐ হার পরতে পারবেন। ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য অলংকার পরিধান করা দোষণীয় নয়।

-সহীহ বুখারী ১/২০৯, মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবা ৪/৩৬৭, বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১০, মানাসিকে মোল্লাআলী ১১৫, রদ্দুল মুহতার ২/৫২৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৫

শেয়ার লিংক

আসকর সরদার - উত্তরা, ঢাকা

১১৬৮. প্রশ্ন

আমি বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি, আমাদের মার্কেটে দৈনিক অনেক গরু যবেহ হয়। আমরা এ উদ্দেশ্যে একজন হুজুর রেখেছি। তিনি প্রত্যহ সকালে এসে যবেহ করেন। অনেক সময় তিনি দুর্বল হয়ে পড়লে তার হাতের সাথে কসাই হাত রেখে দুজনে এক সাথে যবেহের কাজ সম্পন্ন করে। এখন আমার জানার বিষয় হল, ঐ কসাইকেও বিসমিল্লাহ পড়তে হবে কিনা? দলীলসহ বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর

খাদ্যনালী, কণ্ঠনালী ও দুটি শাহরগের মধ্যে যে কোন তিনটির কাটা যদি ঐ হুজুরের হাতেই সম্পন্ন হয়ে যায়, তবে ঐ কসাইয়ের বিসমিল্লাহ পড়া জরুরি নয়। কিন্তু যদি ঐ হুজুরের হাতে অন্তত তিনটির কাটা সম্পন্ন না হয় তাহলে জবাইয়ে সহায়তাকারীকে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। এক্ষেত্রে কোন একজনও বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিলে যবেহ শুদ্ধ হবে না। মনে রাখতে হবে, যবেহের জন্য শক্তিশালী এমন ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেওয়া বাঞ্চণীয় যে একাই পরিপূর্ণ যবেহ সম্পন্ন করতে পারে।

-সুরা আনআম; আয়াত ১২১, সহীহ বুখারী, ২/৮২৭, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ - নেত্রকোনা

১১৬৯. প্রশ্ন

চৌকি বা খাটের উপর নামায পড়া অবস্থায় সামনে দিয়ে কেউ অতিক্রম করলে সে কি গোনাহগার হবে? উল্লেখ্য, চৌকি বা খাট দেড়-দুই ফুট উঁচু হয়ে থাকে।

উত্তর

যেমনিভাবে সমতল যমীনের উপর নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষেধ, তেমনিভাবে চৌকি বা খাটের উপর নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করাও নিষেধ। অবশ্য প্রয়োজনে বসে বসে খাটের সমতলের নিচ দিয়ে কিংবা নামাযীর সামনে সুতরা রেখে অতিক্রম করতে পারবে।

-সহীহ বুখারী ১/৭১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪, ফাতহুল কাদীর ১/৩৪৫, আলবাহরুর রায়েক ২/১৭, আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল করীম - চৌড়হাস, কুষ্টিয়া

১১৭০. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার একব্যক্তি বিয়ে করার সময় মহরের পরিমাণ উল্লেখ করলেও তা নগদ না বাকী তা উল্লেখ করেনি। এখন তার স্ত্রী তার পরিবার কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে নগদ মহর চাচ্ছে কিন্তু স্বামী তা নগদ দিতে নারাজ। পরবর্তীতে পারিবারিক শালিসে সিদ্ধান্ত হয় যে, এ বিষয়ে শরীয়তের যে ফয়সালা হবে তা সকলে মেনে নেবে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, বিয়েতে যদি মহরের নগদবাকী উল্লেখ না করে তাহলে ঐ মহরের ব্যাপারে শরীয়তের ফয়সালা কি? তা জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলাকে মহর অংশ বিশেষ আদায় করে দিতে হবে এবং তার পরিমাণ নির্ধারিত হবে স্বামীর আর্থিক অবস্থা ও স্ত্রীর সামাজিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। আর অংশ বিশেষ মহর আদায়ের পর অবশিষ্ট মহর বাকী হিসাবে পরিগণিত হবে। তবে স্বামীর আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল হলে অবশিষ্টাংশও দ্রুত পরিশোধ করে দেওয়া শ্রেয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৭৯, আল বাহরুর রায়েক ৩/১৭৮, ফাতাওয়া খানীয়া ১/৩৮৫, আদ্দুররুল  মুখতার  ৩/১৪৪,  আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১৩৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আমীন - ঢাকা

১১৭১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকাতে ধান উঠলে দেখা যায় অনেক কৃষক তাদের ধান দিয়ে বাজারে ব্যবসায়ীর কাছে এই শর্তে বিক্রি করে যে, আজ থেকে পাঁচ মাস পরে ধানের যে বাজারদর থাকবে তাই এর মূল্য। এইভাবে লেনদেন করে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হন। কেননা, পাঁচ মাস পরের বাজারদর মূল্য নির্ধারণের কারণে কৃষক মূল্য বেশী পান। অপরদিকে ব্যবসায়ী এ সময়ে ঐ ধান ব্যবসায় খাটিয়ে লাভবান হন। এখন আমার জানার বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ের বাজারদর হিসাবে মূল্য নির্ধারণ করা হবে এমন চুক্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ কিনা? যদি বৈধ না হয় তাহলে এর কোন বিকল্প ব্যবস্থা শরীয়তে আছে কিনা? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

কেনাবেচা বৈধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, বিক্রি চুক্তির বৈঠকেই মূল্য সুনির্দিষ্ট হওয়া। বৈঠকের শেষ পর্যন্তও যদি মূল্য চূড়ান্ত না হয় তাহলে ঐ ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হয় না। সুতরাং আপনাদের এলাকার ঐ ধরনের কারবারও চুক্তির সময় মূল্য নির্দিষ্ট না হওয়ার কারণে তা নাজায়েয। এ কারবার সহীহভাবে করতে চাইলে বিক্রয়চুক্তির সময়েই পণ্যের মূল্য চূড়ান্ত করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ধানের মূল্য কত হতে পারে তা অনুমান করে সে হিসাবে এখনই চূড়ান্ত মূল্য ঠিক করে নিতে হবে। পরবর্তীতে বাজারমূল্য এর চেয়ে কম বা বেশী হলেও ধানগ্রহিতার উপর নির্ধারিত মূল্যই পরিশোধ করা জরুরি থাকবে।

-সুনানে তিরমিযী ১/২৩৩, আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৪, ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৭, আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬১, ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৩৯

শেয়ার লিংক

জুয়েল - গৌরীপুর, ময়মনসিংহ

১১৭২. প্রশ্ন

জনাব, মাসিক আল কাউসার ডিসেম্বর ২০০৭ ইং সংখ্যায় শাবাব সোসাইটি নামে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পাই যার শ্লোগান হচ্ছে, শরীআহ পরিপালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সেখানে দ্বীনদার শ্রেণীর লোকদেরকে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়ার আহবান করা হচ্ছে। এখন আমার জানার বিষয় হল, আপনার জানামতে উক্ত সোসাইটি আসলেই শরীয়তসম্মতভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি? আমরা কি উক্ত সোসাইটির সদস্য বা প্রতিনিধি হতে পারব? সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত শাবাব সোসাইটি সম্পর্কে আমরা অবগত নই। তারা শরঈ নীতিমালা অনুসরণ করে কি না তাও জানা নেই।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্ত্ত বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করা একটি পত্রিকা কর্তৃপক্ষের জন্য যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়ে উঠে না, এ কথা সবাই জানেন। তবুও আলকাউসার বিজ্ঞাপন প্রচারে শুরু থেকেই সম্ভাব্য সতর্কতা পালন করে আসছে। প্রশ্নোক্ত বিজ্ঞাপনটি সময় স্বল্পতার কারণে বিজ্ঞাপন বিভাগের লোকজন কর্তৃপক্ষকে না দেখিয়েই ছেপে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আলকাউসার এ বিষয়ে আরো সতর্ক থাকবে ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার লিংক