মুহাররম ১৪৩১   ||   জানুয়ারী ২০১০

পাশ্চাত্য সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার

আবু তাসনীম

কিছুদিন আগে দৈনিক পত্র পত্রিকায় বৃটেনের এক স্কুলছাত্রের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি চোখে পড়ার পর পুরাতন কিছু পত্রিকা ঘাঁটতে গিয়ে আরেকটি সংবাদ চোখে পড়ল। আগে পুরোনোটাই বলি। বৃটেনের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি তার এক পাকিস্তানী সহকর্মীকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘ওহ আমার ছোট্ট পাকী দোস্ত!’ তার এই সম্বোধনে রাজ পরিবার নাকি অত্যন্ত বিব্রত বোধ করেছে এবং তা চিহ্নিত হয়েছে ‘বর্ণবাদ’ বলে। আর এজন্য প্রিন্স হ্যারিকে জবাবদিহিতারও মুখোমুখি হতে হয়েছে।

সংবাদটি পড়ে আমি অবাক হলাম। এ যুগেও এমনও সূক্ষ্ম বিচার বোধ অভাবিত নয় কি? তবে ঘটনাটি কি না এমন সময়ের যখন ফিলিস্তিনে ব্যাপক গণহত্যা চলছিল। ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় শত শত ফিলিস্তিনী মুসলিম নিহত হয়েছেন এবং কয়েক হাজার নারী ও শিশু চির পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কিন্তু তখন বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র ছিল নির্বিকার। এরই মধ্যে হ্যারির এই সংবাদটি পড়ে মনে পড়ে গেল অনেক দিন আগের একটি ঘটনা। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর কুফার একজন অধিবাসী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে জিজ্ঞাসা করেছিল, ইহরামের কাপড়ে মশার রক্ত লাগলে কোনো অসুবিধা আছে কি না? আবদুল্লাহ ইবনে উমর তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমি কুফা নগরীর অধিবাসী। সঙ্গে সঙ্গে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হল এবং কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা তাঁর সামনে উপসি'ত হল। তিনি বললেন, শোন, শোন, এ কী বলছেন! নবীর দৌহিত্রের পবিত্র রক্তে যাদের হাত রঞ্জিত তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে মশার রক্তে ইহরামের কাপড় নাপাক হয় কি না? সাবাশ! এই না হলে পরহেযগারী!! প্রিন্স হ্যারির সংবাদ থেকে এই ঘটনাটা কেন মনে পড়ল?

যাকগে, নতুন যে খবরটা চোখে পড়েছে তা হল বৃটেনের ১৩ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রের অবিস্মরণীয় কীর্তি! সে ইতিমধ্যে তার গার্লফ্রেন্ডের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছে। আমাদের এক দৈনিক তার উপাধী দিয়েছে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ পিতা! জানি না, যে সাংবাদিকের কলমে এই শিরোনামটা তৈরি হয়েছে তিনি নিজেও সন্তানের পিতা কি না। তবে এদেশের সাধারণ বাবাদের যে তা অত্যন- অবমাননাকর ও অরুচিকর বলে মনে হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ঘটনায় স্বয়ং বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ‘এখন শিশুরা শিশুর পিতা হচ্ছে। এটা বেশিদূর এগুনোর আগেই তা বন্ধ করতে হবে!’ তার উদ্বেগ প্রশংসনীয়। কিন্তু তার সমাজ ও সমাজ ব্যবস্থা কি এই উদ্বেগ কে সমর্থন করে? যে সমাজের কিশোর ও কিশোরী অবাধ যৌনতার অসংখ্য উপাদান তাদের চারপাশের পরিবেশ থেকেই পাচ্ছে সে সমাজের কোনো কর্ণধার যদি বলেন এই অনাচার রোধ করতে হবে তাহলে তার প্রতি করুণা জাগে। তিনি বলেছেন বন্ধ করতে হবে, কিন্তু কীভাবে তা বন্ধ হবে? অশ্লীলতা ও অবাধ যৌনতার সকল পথ খোলা রেখে শুধু তার ফলাফলটুকু ঠেকিয়ে রাখা কি কোনোভাবেই সম্ভব?

আল্লামা ইকবালের একটি পংক্তি মনে পড়ছে। তিনি বলেছেন, ‘দরমিয়ানে কা’ রে দরিয়া তখত বনদম করদায়ি/ বায মি গুয়ী কেহ দামান তর মকুন হুশিয়ার বাশ।’ ‘নদীর স্রোতের মাঝে আমাকে বেঁধে রেখেছ আর বলছ, সাবধান, তোমার পরনের কাপড় যেন ভিজে না যায়।’

তাই অশ্লীলতার সকল পথ খোলা রেখে শুধু পরিণামটুকু ঠেকিয়ে রাখা ঠিক তেমনি অসম্ভব, যেমন অসম্ভব ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের প্রতি সব ধরনের অবিচার অব্যাহত রেখে রাজপরিবার থেকে ‘বর্ণবাদ’ নির্মূল করা! কী নিদারুণ অসঙ্গতি কর্ম ও প্রত্যাশায়! বস্তুত এই অসঙ্গতিই হল মানবতার প্রতি পাশ্চাত্য সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।

 

advertisement