যিলকদ ১৪৩৩   ||   অক্টোবর ২০১২

প্রফেসর হযরতের সাথে আমেরিকা সফর

মুহাম্মাদ আদম আলী

একজন আল্লাহওয়ালার সাথে কোথাও সফরে যেতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমারও এরকম একটা সফর করার তৌফিক হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুযূর (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং হযরত মাওলানা আবরারুল হক (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান (দামাত বারাকাতুহুম)-এর সাথে আমেরিকা সফরে তিন জনের একজন ছিলাম আমি, তৃতীয়জন ছিলেন নেওয়ায আমীন সাহেব। এটা ছিল একটা মোবারক সফর। সফরে দেশের মানুষ এবং ইসলাম সম্পর্কে আমার অনেক অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে। নিজের আপারগতা নিয়েই কিছু বন্ধু-বান্ধবের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সফরের কিছু অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ আমার চেষ্টাকে কবূল করুন। আমীন।

পূর্বকথা

আমার বড় ভাই মোঃ মনির হোসেন (টিপু) আমেরিকায় গিয়েছেন প্রায় উনিশ বছর আগে। নিউইয়র্কে ছিলেন দীর্ঘদিন। সেখানেই বিয়ে করেছেন। এখন পরিবার নিয়ে ডালাসে থাকেন। ব্যবসা করেন। খুবই মিশুক। যে কোন সমস্যায় তাকে পাওয়া যায়। আমি ২০১০ সালের জুন মাসে আমার এই ভাইকে দেখতে প্রথম আমেরিকা যাই। সফরেই মনের মধ্যে প্রবল ইচ্ছা হয়, হযরতকে আমেরিকা নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। বড় ভাই সে সময় আমার সম্পর্কে তার দ্বীনি বন্ধুদেরকে এত বেশী বলেছিলেন যে, তারা সবাই আমার কাছ থেকে কিছু দ্বীনি কথা শোনার জন্য একটা মাহফিলের মত আয়োজন করেন। প্রায় দশ-বারজন এক বাসায় জমা হয়েছিলেন। আমারতো বয়ান করার কোনো যোগ্যতা নেই। আমি এই সুযোগে হযরতকে আগেই বলে রেখেছিলাম যে, টেলিফোনে তিরিশ মিনিট বয়ান করতে হবে। আমি সেটা মাহফিলে শোনাব। সময় মতো সব কিছু হয়েছিল।

২৫ জুন ২০১০। সকালে ফজরের পরে হযরত বাংলাদেশ থেকে টেলিফোনে বয়ান করেছেন। আর আমি লাউড স্পিকারে সে বয়ান সবাইকে শুনিয়েছি। সেদিন নিজেকে পুথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান বলে মনে হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। আমি মনে করি, হযরতের এই বয়ানের বরকতেই আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

ভিসা প্রসেস

২০১১ সালের জুন মাসের কোনো এক সময় আমি প্রথম টিপু ভাইকে আমার ইচ্ছার কথা বলি। তিনি তার পরিচিত দ্বীনি বন্ধুদের, বিশেষ করে হযরতের ছাত্রদের কাছে ব্যাপারে সহযোগিতা চান। তখন ইঞ্জিনিয়ার শিবলী এবং ইঞ্জি. হাফিয ভাই এগিয়ে আসেন। তারা হযরতের ভিসা প্রসেসের জন্য খুব কাজ করেছেন। আমেরিকায়মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকাসংক্ষেপে মুনা (MUNA) নামে একটা সংগঠন আছে। ইঞ্জিনিয়ার হাফিজ ভাই সংগঠনের পরিচালকদের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি তাদেরকে হযরতের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং কাজ সম্পর্কে বলাতে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মুনাআমেরিকার বিভিন্ন শহরে সারা বছর ধরে ইসলামের উপর

সেমিনারসহ নানারকম সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তখন কাছাকাছি সময়ে ০২ অক্টোবর ২০১১ তারিখে লস এঞ্জেলসে পেসিফিক জোনের রিজিওনাল কনভেনশন ছিল। পরবর্তীতে মুনার পক্ষ থেকে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে হযরতের জন্য একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। এই আমন্ত্রণপত্র হাতে পাবার পর আমি ২০১১ সালের জুলাই মাসে হযরতের জন্য অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ করে ইউএস এম্বেসিতে জমা দেই। নির্দিষ্ট তারিখে ইন্টারভিউ হলেও ভিসা সাথে সাথে হয়নি। অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের পর প্রায় চার মাস পর অনলাইনে জানতে পারি যে, হযরতের ভিসা হয়েছে। মাল্টিপল এন্ট্রির সুবিধাসহ পাঁচ বছর মেয়াদের ভিসা। সে কি আনন্দ আমার! আলহামদুলিল্লাহ। ততদিনে অক্টোবরের মুনার প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেছে।

সফরের শুরু

সবকিছু বিবেচনা করে সফরের সময় নির্ধারণ করতে কয়েক মাস লেগে যায়। তাছাড়া ২০১১ সালের শেষ দিকে হযরত হজ্জ থেকে ফিরে শারীরিক সমস্যায় পড়েন। শেষ পর্যন্ত অপারেশন করা হয়। সুস্থ হতে প্রায় তিন মাস লাগে। ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৭ মে পর্যন্ত সফরের সময় নির্ধারণ করা হয়। বত্রিশ দিনের সফর। আমাদের মূল মেজবানরা থাকেন ডালাসে। প্রথমে শুধু ডালাসের  চিন্তাই মাথায় ছিল। নিউইয়র্কে হযরতের ছোট ভাই মুহাম্মাদ মাশহুদুর রহমানের বড় মেয়ে জামাতা থাকেন। এজন্য নিউইয়র্কেও যাওয়ার প্লান করা হল। হযরত বুয়েটে ছাবিবশ বছর ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে এসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর এই ডিপার্টমেন্টের ছাত্ররাই আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছে বেশী। -মেইলের কল্যাণে চারিদিকে হযরতের সফরের খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন আমেরিকার আরো অনেক শহর থেকে আমন্ত্রণ আসতে থাকে। শেষপর্যন্ত নিউইয়র্ক, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলস, সান ফ্রান্সিসকো এবং ডালাস শহর থেকে মেজবানদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করা হয়।

প্রথমে নিউইয়র্ক শহরে সাত দিন তারপর নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলস, সান ফ্রান্সিসকো সবখানে এক দুই দিনের সফর। পরিশেষে ডালাসে ১০ দিন থেকে বাংলাদেশ ফিরে আসার টিকেট করা হয়। অনেক বড় সফর, অনেক পরিকল্পনা।

আমার ব্যক্তিগত প্রস্ত্ততির সঙ্গে হযরতের খোঁজখবর রাখছিলাম। হযরত খুব ব্যস্ত। আমেরিকা আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও হযরতের কাছে এর আলাদা কোনো মাহাত্ম্য আছে বলে মনে হল না। অনেক লম্বা সফর। এজন্য আমেরিকা রওনা হবার আগে হযরতকে ঢাকার বাইরে সফর কমাতে অনুরোধ করা হয়। তিনি রাজী হননি। সব প্রোগ্রাম ঠিক রাখলেন। কিছু অতিরিক্ত প্রোগ্রামও দিলেন।

এপ্রিলের শুরুতে বি.বাড়িয়া (শহীদ বাড়িয়া), হবিগঞ্জ সিলেটে পাঁচ দিনের প্রোগ্রাম দিলেন। আমিও সেই প্রোগ্রামে হযরতের সাথে ছিলাম। এটা ছিল একটা কঠিন সফর। প্রথমে বি.বাড়িয়া। পরদিন হবিগঞ্জ। সেখানে চুনারুঘাটে চন্দনা গ্রামে একটা ফসলি ক্ষেতের মাঝে একটি মক্তব হবে। এজন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে হবে। হযরত আসবেন জেনে সিলেটের বিখ্যাত আলেম ওয়ায়েজ মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন সাহেবকেও দাওয়াত করা হয়েছে। তারা দুজনে মিলে মাটি কেটে মক্তবের কাজের উদ্বোধন করেন।

ঐদিন বিকেলে চুনারুঘাটের নরপতি গ্রামে আরেকটি মক্তব দেখতে গিয়েছি আমরা। এরপর সিলেট। সেখানে কয়েকটি প্রোগ্রাম সেরে ফেরার পথে আবার বি.বাড়িয়ায় প্রোগ্রাম। সেখানে হযরতের পরিচিত এক ড্রাইভারের বাড়িতে সন্ধ্যার পর প্রোগ্রাম। ড্রাইভার সাহেবের নাম আবদুল মতিন। অসুস্থ। এখন আর গাড়ি চালাতে পারেন না। তার বাড়ি বি.বাড়িয়ার চিরকুট গ্রামে। তার গ্রামে যেতে হযরতের অনেক কষ্ট হয়েছে। গাড়িতে গিয়ে আবার অনেক দূর হাঁটতে হয়েছে। গ্রামের পথ। দূর্বাঘাস আর রাস্তায় জমা পানির মধ্যে পা ফেলা মুশকিল। তারপর ছিল রাতের অন্ধকার। ঘন গাছে-ঘেরা পুকুরের পাড়ে বাড়ি। বাড়ির উঠানে সামিয়ানা টাঙ্গানো। আয়োজন ভালোই ছিল। গ্রামের মাহফিল। রাত গভীর না হলে জমে না। লোকজন বলতে আমরা কয়েকজন সফরসঙ্গী। পরবর্তীতে কাছাকাছি মাদ্রাসা থেকে খবর পেয়ে কয়েকজন আলেম এসে শামিল হয়েছিলেন।

এশার নামাযের পর  মাহফিল শুরু হল। হযরত প্রথমে স্থানীয় আলেমদের বয়ান করতে দেন। তারপর তিনি কিছু নসিহত করে যখন মাহফিল শেষ করেন তখন রাত প্রায় দশটা। সেখান থেকে ফিরে রাতে হোটেলে থেকে পরদিন ঢাকা।   

ফেরার পথে হযরত খুব ক্লান্ত ছিলেন। কিন্তু চেহারায় তার ছাপ নেই। তাঁর কাছে আমেরিকা সফর আর সিলেট সফরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবখানে দ্বীনের কাজই আসল, আল্লাহর সন্তুষ্টিই মুখ্য। তা সে যেখানেই হোক। সিলেট থেকে ফিরে সহসাই একদিন সময় হয়ে যায় আমাদের আমেরিকা সফরের।

ঢাকা থেকে দুবাই

২৫ এপ্রিল ২০১২। ফজরের পর থেকেই প্রস্ত্ততি। এটা কোনো আনন্দ ভ্রমণ নয়। একজন আল্লাহওয়ালার সাথে ধর্মীয় সফর। হযরতের সাথে সফর মানেই আত্মিক সংশোধনের এক মহা সুযোগ। এজন্য পরিবারও খুশি।

ইংরেজী শিক্ষিতদের ধর্মীয় কাজে বাহবা পেতে বেশী সময় লাগে না। একটু ভালো কাজ করলেই প্রশংসার ফুলঝুরি ঝরতে থাকে। নেভীর অফিসার নামায পড়ে! এটাই তো অনেক। আহা! দাঁড়ি-টুপি আছে। পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। কত ধার্মিক! হযরত বলেন, ‘‘বাহ্যিক সুরত ধরতে একজনের বেশী দিন লাগে না। কিন্তু মনের সংশোধন করতে অনেকের কয়েক যুগেও কিছু হয় না।’’ আমার হচ্ছে সেই অবস্থা। আমি আশা ছাড়ি না। একদিন ঠিকই ভালো হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ!

আমরা আসরের নামাযের পর পর এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হলাম। রাত নয়টা তিরিশ মিনিটে আমিরাতের ফ্লাইট। আমরা প্রথমে যাব দুবাই। সেখানে দুই ঘন্টার ট্রানজিট। তারপর আর এক ফ্লাইটে নিউইয়র্ক যেতে হবে।

সেদিন খারাপ আবহাওয়ার জন্য দেরী হচ্ছিল। তখন আমি একটু সুযোগ পেলাম। আমার বিবি ঘরে বানানো কিছু কেক আর স্যান্ডউইচ দিয়েছিলেন। পরিমাণে কম ছিল বলে সবার সামনে হযরতকে খাওয়াতে পারিনি। এই সুযোগে হযরতকে খেতে অনুরোধ করলাম। তিনি সামান্য কিছু খেলেন এবং খাবারের খুব প্রশংসা করলেন। তারপর দোয়াও করলেন। অন্যের সামান্য উপকারের বদলা দিতে তার চেয়ে অগ্রণী আর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। 

রাত দশটায় প্লেনে বোর্ডিং শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত প্লেন ছাড়ে রাত এগারটায়। সারাদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। টেনশনও ছিল। প্লেনে বসার পর খুব ভাল লাগছিলো। আমি হযরতের পাশেই বসতে পারলাম। আমার কাছে একটা পকেট পিসি ছিল। সফরের কিছু নোট লেখার জন্যেই এটা কিনেছিলাম। সেটাতে অবসরে পড়ার জন্য ধর্মীয় কিছু -বুক কপি করে এনেছিলাম। হযরত সেখান থেকে একটা বই (Men Arround the Messenger) কিছু সময় পড়লেন, কিছুক্ষণ ডায়েরী লিখলেন। স্থানীয় সময় রাত একটা পঞ্চাশ মিনিটে আমরা দুবাই পৌঁছি। এয়ারপোর্টে হযরতের জন্য হুইল চেয়ার বুক করা ছিল। এয়ারপোর্টের একজন কর্মী সেটা নিয়ে অপেক্ষা করার কথা। আমরা কয়েকজনকে দেখলাম হুইল চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হযরতকে দেখে একজন এগিয়েও এল। কিন্তু সেটা তিনি ব্যবহার করলেন না। বরং আমাদের কাছ থেকে একটা হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে বহন করতে লাগলেন। আমাদের শতনাকে তিনি ফিরিয়ে দিলেন। আর বললেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ আমার হাঁটতে কোন অসুবিধা নেই।’’

ঢাকায় দেরী হওয়ার কারণে দুবাইতে আমাদের ট্রানজিট দুই ঘন্টার পরিবর্তে এক ঘন্টা হয়েছে। তাড়াতাড়ি করে পরবর্তী ফ্লাইট ধরতে হবে। আমেরিকায় যাবে এরকম একজন বাংলাদেশী আমাদের সহযোগী  হলেন। প্লেনেই তার সাথে পরিচয়। তিনি পেশায় ড্রাইভার। বাংলাদেশ থেকে বিয়ে করে স্ত্রীকে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিবি সেখানে পুরোপুরি আমেরিকান হয়ে যাচ্ছে দেখে সংসার ভাঙ্গার ভয়ে দেশে রেখে ফিরছেন!

দুবাই থেকে নিউইয়র্ক

প্লেনে উঠার কিছুক্ষণ পরেই ফজরের নামাযের সময় হয়ে যায়। কিন্তু যাচ্ছি তো পশ্চিমে। সময় হয়েও হচ্ছে না। প্লেনের একদম পেছনে জানালার পাশেই ক্রুদের বসার সিট। সিটগুলো ভাজ করা। ফলে খানিকটা জায়গা ফ্রি হয়ে আছে।  ক্রুরা ব্যস্ত। হযরত সেখানে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। একসময় দিগন্তের রক্তিম আভা দেখে নিশ্চিত হলেন যে, ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে। অনেকের কাছে প্লেনে নামায পড়া কঠিন। যারা পড়েন, তারা বেশীরভাগ অযু করতে চান। অযু করতে গিয়ে প্লেনের ক্রুদের ঝামেলায় ফেলে দেন। প্লেনে একে তো বেশি পানি থাকে না। আবার ক্রুরাও ওযুর পানির অনুমতি দেয় না। ফলে এখানে তায়াম্মুম করা জায়েজ আছে।

হযরতের হ্যান্ড ব্যাগ উপরের লাগেজ কেবিনেটে। তাতে মাটির টুকরা আছে। কিন্তু নামাতে কষ্ট হবে ভেবে প্লেনের ক্রুর কাছে হযরত তায়াম্মুমের জন্য একটা মাটির টুকরা চাইলেন। আমিরাতের প্লেনে তায়াম্মুমের জন্য মাটির টুকরা এর আগেও আমি পেয়েছি। অবশ্য সেটা হজ্জের সফর ছিল। এবার ক্রুরা আমাদের কথা শুনে বেশ অবাক হল। মাটির একটা ছোট টুকরা - এই কথাটা ইংরেজীতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে বলা হল। কিন্তু তারা সেটা বুঝতে পারছে না। মনে হল, তায়াম্মুম নামটাও কখনো শুনেনি। পরে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘তোমরা কি মুসলমান?’’ তারা বলল, ‘না আমি একটু অবাকই হলাম। আমিরাতের ফ্লাইটগুলোতে ভেবেছিলাম মুসলমানই বেশী। ফ্লাইটটিতে মনে হল মুসলমান কোনো পার্সার নেই। শেষ পর্যন্ত আর তাদেরকে বুঝাতে পারলাম না। তখন হযরতের ব্যাগ থেকে মাটির টুকরাটা বের করে আমরা তায়াম্মুম করলাম। আমাকে নিয়ে হযরত প্লেনের এক কোণায় ফজরের নামায জামাতে পড়লেন। তারপর আমি কিছু সময় হযরতকে এমন এক হালতে পেলাম, যা বর্ণনা করা কঠিন।

হযরতের নিজস্ব একটা ভাষা আছে। এর নাম দিয়েছেন তিনি পিটহ্যাম (PITHAM) এই পিটহ্যাম দিয়েই তিনি তার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা ডায়েরীতে লেখেন, যা অন্যেরা বুঝতে পারে না। আমাকে সে ভাষা কিছুক্ষণ শেখালেন। অবশ্য আমাকে ভাষাটা আগেও শিখিয়েছেন। আমার পকেটে সব সময় এই ভাষার সাংকেতিক বর্ণমালার ইংরেজী প্রতিশব্দ লেখা একটা কপি থাকে। তখনো ছিল। হযরতের ডায়েরীতে নতুন কোন লেখা পেলেই আবিষ্কারের নেশায় পেয়ে বসে আমাকে। এবার তিনি নিজেই ডায়েরী থেকে অনেক লেখা পড়ে শুনালেন। তারপর কুরআন শরীফের সূরা তাওবা থেকে একটা আয়াত পড়লেন-

انفروا خفافا وثقالا وجاهدوا باموالكم وانفسكم فى سبيل الله ذلكم خير لكم ان كنتم تعلمون

 ‘‘তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর (সরঞ্জামের সাথে) এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল জান দিয়ে, এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।’’

- : ৪১

ইংরেজীতেও তরজমা করলেন ("Go forth, whether light or heavy, and strive with your wealth and your lives in the cause of Allah. That is better for you, if you only knew.") তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, খরমযঃ ড়ৎ ঐবধাু (স্বল্প বা প্রচুর) মানে কী? আমি আর কী বলব! হযরত কিছু ব্যাখ্যা করলেন না। আমি অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলাম। আমি ভাবাবেগের এই পরিবেশকে একটা প্রশ্নের জন্য উপযুক্ত সময় মনে করলাম। আমি হযরতকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘আপনার আমেরিকার এই সফরের ব্যাপারে অনুভূতি কী?’’ ভেবেছিলাম হযরত কিছু বলবেন না। একটু থেমে তিনি বললেন, ‘‘আমার কোনো যোগ্যতা নেই। আমি কোনো স্কলার নই, আলেমও নই। তারপরেও এটা আল্লাহ পাকের ইচ্ছা, যদি তিনি চান আমার কাছ থেকে কাজ নিতে পারেন-এজন্য যাওয়া।’’

একসময় জন এফ কেনেডি (জেএফকে) এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার সময় হয়ে এল।

ল্যান্ড করার আগে সব সিংগেল প্যাসেঞ্জারদের ইমিগ্রেশনের জন্য দুটি করে ফরম দিয়েছে ক্রুরা। সে হিসেবে আমাদের দুজনের জন্য চারটি ফরম দেয়ার কথা। আমাদেরকে দেয়া হল তিনটি। আমি বললাম, আর একটি ফরম লাগবে। তখন মহিলা ক্রু বলল, ‘‘আমি তোমাকে একটি কমন ফরম দিয়েছি। একই ফ্যামিলির জন্য সেটা একটা হলেই হয়। তিনি তো তোমার পিতা।’’ আমি বললাম, ‘‘তিনি আমার রূহানী (আত্মিক) পিতা। একই ফ্যামিলির নন। আমাদের আরেকটি ফরম লাগবে।’’ মহিলা ক্রুটি কিছুতেই আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে বলে উঠল, ‘‘তুমিই তো তাকে সারাক্ষণ ধরে ধরে হাঁটিয়েছো। তিনি তোমার বাবা নন?’’ অনেক বুঝানোর পর সে আমাকে আর একটি ফরম দিয়েছে। পুরো ব্যাপারটি আমার জন্য ছিল খুব আনন্দের!

 

জেএফকে এয়ারপোর্ট, নিউইয়র্ক (২৬ এপ্রিল ২০১২)

আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অবশেষে নিউইয়র্কের মাটিতে পা রাখলাম। স্থানীয় সময় তখন সকাল নয়টা। প্লেন থেকে হযরত আর আমি আগে নামলাম। নেওয়ায আমীন সাহেব  নামলেন একটু পরে। দাঁড়িয়ে থাকা হযরতের জন্য কষ্টকর। তাই আমরা হাঁটতেই থাকলাম। অনেকক্ষণ বার বার পেছনে তাকিয়েও তাকে দেখা যাচ্ছিল না। আমরা ইমিগ্রেশনের জন্য লাইন ধরলাম। নেওয়ায আমীন সাহেব আমেরিকার পাসপোর্টধারী। আমেরিকানদের জন্য লাইন আলাদা। একটু পরেই তাকে সেখানে দেখা গেল। তিনি খুব সহজেই ঢুকে গেলেন। আমাদের লাইন ছিল একটু লম্বা। অনেকগুলো বুথ থাকাতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। হযরত আগে গেলেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই হযরতের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হয়ে গেল। এবার আমার পালা। আমি এগিয়ে যেতেই আমেরিকান ইমিগ্রেশন অফিসার আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যে, মনে হয় আমি কোনো অপরাধ করে এসেছি। কয়েকবার তাকাল। সে দৃষ্টিতে আমি বুঝে গেলাম আমারটা সহজে হচ্ছে না। আমাকে সে ডেস্ক থেকে নেমে কাছাকাছি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অফিসে নিয়ে গেল। এর আগেরবার যখন আমেরিকায় এসেছিলাম, তখন ইমিগ্রেশন হয়েছিল হিউস্টন এয়ারপোর্টে। সেখানেও আমাকে একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অফিস। একটা আদালতের মত পরিবেশ। চারিদিকে  অনেকগুলো ডেস্ক। প্রতিটি ডেস্কেই পুলিশ। পুলিশের কোমরে

বিভিন্ন কমিউনিকেশন সেট। সংগে একটা পিস্তল। সবাই খুব ব্যস্ত। অফিসের মাঝখানে বসার জায়গা। আমার মতো অনেকেই সেখানে আসামীর মতো বসে আছে। দাঁড়িওয়ালা মুসলমান যুবক, বোরকা-পরা মহিলা এবং অনেক সময় সাধারণ মুসলমানকেও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের নামে আমেরিকায় প্রবেশের পূর্বে এই হোমল্যান্ড সিকিউরিটির জেরার মুখোমু&& হতে হয়। ঠিকমত প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলে এখান থেকেই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। অনেককে এরকম ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে এই পুলিশরাই। এদের অনেক ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে এদেশের সরকার। সুতরাং একটু ভয় তো ছিলই। যদি এখান থেকেই ফিরে যেতে হয়! কি হবে এত সব প্রোগ্রামের? তাহলে কি আমার আসা ব্যর্থ হয়ে যাবে? আমি মনে মনে বেশী বেশী হযরতের শেখানো দু ইয়া সুববূহু, ইয়া কুদ্দূসু, ইয়া গাফুরু, ইয়া ওয়াদূদু পড়ছিলাম। একটু পরেই আমার ডাক এল।

আমাকে অনেকগুলো তবে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। আগে কবে আমেরিকায় এসেছিলাম, এখন কেন এসেছি, কতদিন থাকবো, কোথায় থাকবো, কোথায় কোথায় যাবো ইত্যাদি। আমি যখন তাকে অনেকগুলো স্টেটে যাওয়ার কথা বললাম, তখন সে বলে, তোমার কাছে কত টাকা আছে? আমি জবাব দিতেই সে খুশী হয়ে যায়। সংগে সংগে আমার পাসপোর্টে সিল মেরে নিউইয়র্কে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দেয়। আমি আলহামদুলিল্লাহ বলতে বলতে হযরতের খোঁজে বের হয়ে যাই। পরে জানতে পেরেছি, যতক্ষণ আমি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অফিসে ছিলাম, হযরত ততক্ষণ আমার জন্য অনবরত দুআ করেছেন। আল্লাহ তাঁর দুআ কবুল করেছেন। আমি বের হয়ে তার যে উজ্জ্বল চেহারা দেখেছি, তার মুখে যে অবারিত আন্তরিক হাসি দেখেছি-তার অভিব্যক্তির কাছে পৌঁছা সহজ নয়। প্রিয়জন হারিয়ে ফিরে পাবার আনন্দে আমিও তখন আত্মহারা।

আমি পৌঁছার আগেই দেখি আমাদের লাগেজ এসে গেছে। সেগুলো নিয়ে এরাইভাল গেইটে পৌঁছতেই আমাদের নিউইয়র্কের হোষ্টদের পেয়ে গেলাম। আমাদের মূল হোষ্ট ছিলেন মাওলানা আহমাদুল্লাহ কামাল। তিনি নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড মসজিদের ইমাম। তার সাথে ছিলেন আমার ভাই মোহাম্মদ মনির হোসেন। তিনি হযরতের সোহবতে কয়েকদিন থাকার জন্য সুদূর ডালাস থেকে ফ্লাই করে নিউইয়র্কে এসেছেন। আর মুনার পক্ষ থেকে ছিলেন মুনার সদরদপ্তরের ইমাম মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাহেব। সবার সাথে মুয়ানাকা করার পর বাইরে বেরুতেই নিউইয়র্কের ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগল। বেশ ঠান্ডা। তাপমাত্রা - ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমি তাড়াতাড়ি হ্যান্ডব্যাগ থেকে হযরতের জন্য শীতের কাপড় বের করে পরতে দিলাম। আমার তেমন কিছু ছিল না। আমি দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলাম। আমেরিকার ব্যস্ত রাস্তায় আমাদের এই প্রথম পথচলা শুরু হল।

(নিউইয়র্ক ২৭ এপ্রিল - ০৩ মে ২০১২)

বাংলাদেশের সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল জামাল সাহেবের বড় ভাই কামাল সাহেব। তিনিও বিমান বাহিনীতে ছিলেন। এয়ার কমডোর হিসেবে রিটায়ার করেছেন। তাবলীগের একজন বড় মুরববী। তার চার ছেলে। সব ছেলেকে হাফেজ-আলেম বানিয়েছেন। তারা আবার সবাই আমেরিকাতে থাকে। তার বড় ছেলের নাম হচ্ছে মাওলানা আহমাদুল্লাহ কামাল। বিয়ে করেছেন হযরতের ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ মাশহুদুর রহমানের বড় মেয়েকে। দুজনই বিশেষ মর্যাদার মানুষ। তারাই আমাদের মূল হোস্ট।

তাদের বাসায় আমরা সাত দিন ছিলাম। লং আইল্যান্ড মসজিদের ঠিক পেছনে বাসা। ভাড়া বাসা। লং আইল্যান্ড এলাকাটা নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত। এর পশ্চিমে ইষ্ট নদী। এখানে ধনীদের বসবাসই বেশী। এজন্য বাসাভাড়াও অনেক।

আমেরিকার মসজিদের ইমামদের ইমামতির পাশাপাশি অনেক সামাজিক কর্মকান্ডেও ব্যস্ত থাকতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং সাপ্তাহিক ইসলামিক স্কুলে পড়ানোসহ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মুসলমানদেরকে কাউন্সিলিং করতে হয়। এদেশে অমুসলিমদের মধ্যে ইসলামের প্রচার-প্রসার করা, তাদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্যকে তুলে ধরার জন্য একজন ইমামের ব্যক্তিগত চারিত্রিক প্রভাব অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য যারা সচেতন, তাদের জীবন অনেক পরিচ্ছন্ন। আমাদের হোষ্ট সেরকম একজন মানুষ। তার বাড়িতে মেহমান হিসেবে আমার এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এক চমৎকার অভিজ্ঞতা! তার আতিথেয়তা অনেক ক্ষেত্রে সাহাবীদের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।

নিউইয়র্কে শুক্রবার

নিউইয়র্কে পৌঁছার পরের দিনই ছিল শুক্রবার। সেদিন লং আইল্যান্ড মসজিদে ফজরের নামায পড়েছি। এই মসজিদের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে লং আইল্যান্ড মুসলিম সোসাইটি সংক্ষেপে লিমস (LIMS) ইমাম আমাদের হোষ্ট। সুন্নত তরীকায় সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদা এবং সূরা দাহর দিয়ে নামায পড়ালেন। খুব মিষ্টি পড়া। হযরত খুব পছন্দ করলেন। জুমুআর নামাযের আগে হযরতের বয়ান ছিল মাদানি মসজিদে। এটা নিউইয়র্কের ইষ্ট মিডো এলাকায় বাঙ্গালীদের একটি মসজিদ। মসজিদের ইমাম বাংলাদেশী, মাওলানা ফায়েক উদ্দিন। হযরতের এই প্রোগ্রামের ব্যাপারে খুব কাজ করেছেন। প্রথম দিকে মুসল্লী কম ছিল। পরে পুরো মসজিদই ভরে যায়। এটা ছিল নিউইয়র্কে হযরতের প্রথম আনুষ্ঠানিক বয়ান। মুসল্লীরা সব বাঙ্গালী হওয়াতে হযরত বাংলাতেই বয়ান করলেন। এখানে তিনি ঈমানের মূল বিশ্বাস্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। গায়েবী বিষয়সমূহ যে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব নয় তাই ছিল মূল আলোচ্য বিষয়।

আলোচনাটাই এখানে জরুরী। আমেরিকার মুসলমানদের অনেকেই খন্ড বিশ্বাস নিয়ে ধর্ম-কর্ম করছে। পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে অনুসরণ করার যেন কোনো তাগিদ নেই। নামাযের সময় নামায পড়ছে। কিন্তু নিজের ব্যবসাটা হালাল হচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল নেই। দোকানে হারাম জিনিস বিক্রি করছে। সুদ আর ব্যবসার মধ্যে যেমন অনেকে পার্থক্য খুঁজে পায় না, এখানে তেমনি অনেকে ব্যবসায় মালামালের মধ্যে হালাল-হারাম দেখতে চায় না। মাল বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছে। এখন সে মাল শরাব হোক অথবা অন্য কোনো হারাম জিনিস হোক। সামাজিকতার দোহাই দিয়ে নিজের বিশ্বাসকে আড়াল করছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মুআমালাত-মুআশারাতেরও আলোচনা হয়েছে। প্রায় একই বয়ান করেছেন মাগরিবের পরে আবু হুরায়রা মসজিদে। এটা নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটে। এই মসজিদের অফিসিয়াল নাম ইসলামিক সেন্টার অব জ্যাকসন হাইট। সেদিন রাতে বিছানায় যেতে রাত একটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

বাইতুল মোকাররম মসজিদ, এস্টোরিয়া

কমডোর কামাল সাহেবের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা আব্দুল্লাহ। তিনি নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় বাইতুল মোকাররম মসজিদের ইমাম। আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা। মসজিদের পাশেই পরিবার নিয়ে থাকেন। প্রথম দিন থেকেই হযরতের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সাথে জড়িত আছেন। এদেশে কোন আল্লাহওয়ালা এলে তাদের প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করার ব্যাপারে খুবই তৎপর। রাস্তার একদিকে তার মসজিদ, অন্য দিকে একটা গীর্জা। কোনো একদিন গীর্জাটা মুসলমানেরা কিনে ফেলবে ইনশাআল্লাহ। (ক্রমশ)

 

 

advertisement