জুমাদাল উলা ১৪৩০   ||   মে ২০০৯

মেহরে নবুওয়ত

কাযী মুহাম্মাদ সুলায়মান সালমান মনসুরপুরী রাহ.

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

৭. উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে    জাহশ রা.

তিনি ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আপন ফুপাত বোন। স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আযাদকৃত দাস যায়েদ রা.-এর সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের মধ্যে বনিবনা হল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ রা.কে অনেক বুঝালেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিবাহ অটুট থাকেনি। হযরত যয়নব রা.-এর দুঃখ-বেদনার প্রতিদান আল্লাহ তাআলা এইভাবে দিলেন যে, স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তাঁর বিবাহ দিয়ে দিলেন। ৫ম হিজরীতে এই বিবাহ সম্পন্ন হয়।

ইসলামের দুশমনরা প্রোপাগান্ডা করে যে, একদিন হঠাৎ যয়নবের রা. প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টি পড়ে গিয়েছিল। এরপর তিনি পালিত পুত্রের কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজে বিবাহ করেন। (নাউযুবিল্লাহ)। এরা তিনটি বিষয় লক্ষ করে না : ১. যয়নব রা. ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আপন ফুপাত বোন। তাঁর সামনেই তিনি বড় হয়েছেন। তাঁর রূপ-সৌন্দর্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গোপন ছিল না। ২. যায়েদ রা.-এর সঙ্গে হযরত যয়নব রা.-এর প্রথম বিবাহ স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই দিয়েছিলেন। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তিনি এই বিবাহ দেন। ৩. পালিত পুত্র ইসলামে পুত্র হিসেবে গণ্য হয় না।

উম্মুল মুমিনীনদের মধ্যে সবার আগে, ২০ হিজরীতে,তাঁর ইন্তেকাল হয়।

৮. উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়া রা.

জিহাদে বন্দী হয়েছিলেন। হযরত ছাবেত ইবনে কায়স রা. তার অধিকারী হন। তিনি ছিলেন বিশ বছর বয়সের নওজওয়ান, কিন্তু হযরত জুয়াইরিয়াকে তিনি অর্থের বিনিময়ে মুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। হযরত জুয়াইরিয়া রা. অর্থ-সাহায্যের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে  আসলেন এবং জানালেন যে, তিনি ইসলাম কবুল করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পণের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করে দিলেন। হযরত জুয়াইরিয়া মুক্ত হয়ে যান। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। সে যুদ্ধে এই গোত্রের আরো বহু লোক সাহাবায়ে কেরামের হাতে বন্দী হয়েছিল। সবাই অর্থ পণ পরিশোধ করে মুক্ত হতে চাইলে জটিলতা সৃষ্টি হত। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জুয়াইরিয়া রা.কে নিজ বিবাহে গ্রহণ করার পর সাহাবায়ে কেরাম স্বেচ্ছায় ওই গোত্রের সকল বন্দীকে আযাদ করে দিলেন। কেননা, তাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল।

৫ম হিজরীতে এই বিবাহ হয়েছিল। ৫৬ হিজরীতে হযরত জুয়াইরিয়া    ইন্তেকাল করেন।

৯. উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবীবা রা.

তিনি আবু সুফিয়ান উমাবী রা.-এর কন্যা। পিতা ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যুদ্ধরত, অথচ কন্যা ইসলাম কবুল করে ফেললেন। ইসলামের জন্য অনেক দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করেছেন। তাঁর স্বামীও মুসলমান হয়েছিলেন। স্বামী-স্ত্রী হাবাশায় হিজরত করলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে স্বামী মুরতাদ হয়ে গেল। এই মুমিনা নারীর জন্য এটা ছিল মর্মান্তিক বিপদ। ইসলামের জন্য স্বদেশ-স্বজন ত্যাগ করে প্রবাস জীবন গ্রহণ করলেন। স্বামীর সঙ্গটুকু ছিল শেষ আশ্রয়, এটাও টুটে গেল। এই অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিজ বিবাহে গ্রহণ করেন। ৫ম হিজরীতে হাবাশাতেই এই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল।

৪৪ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

১০. উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা রা.

ইতিপূর্বে তাঁর দুই বিবাহ হয়েছিল। তাঁর এক বোন ছিলেন হযরত হামযা রা.-এর স্ত্রী, আরেক বোন হযরত আববাস রা.-এর এবং তৃতীয়জন হযরত জাফর তয়্যার রা.-এর স্ত্রী। এক বোন হযরত খালেদ ইবনুল ওয়ালীদ রা.-এর জননী। হযরত আববাস রা. তাঁর সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। চাচার কথায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বিবাহ করেন। ৭ম হিজরীতে এই বিবাহ সম্পন্ন হয়।

এই সব বিবাহ ওই আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে হয়েছিল যাতে একজন মুসলিম পুরুষের জন্য সমতা রক্ষার শর্তে সর্বাধিক চার বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

৫১ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

 

১১. উম্মুল মুমিনীন ছফিয়্যাহ রা.

তিনি বনূ নযীরের গোত্রপতি হুয়াই বিন আখতাব-এর কন্যা। তাঁর মার নাম দ্বররা। তাঁর আসল নাম ছিল যয়নব। প্রথম স্বামী সালমান ইবনে মুসলিম। এই স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয়। দ্বিতীয় স্বামীর নাম কিনানা। খায়বরের যুদ্ধে বন্দী হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নীত হন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আযাদ করে নিজ বিবাহে গ্রহণ করেন এবং নাম রাখেন ছফিয়্যা। ৫০ হিজরীতে তাঁর ইন্তেকাল হয়। #

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

 

 

advertisement