জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩০   ||   জুন ২০০৯

না রী : নিরাপত্তার জন্য আইন

বখতিয়ার

নারীদের প্রতি যৌন হয়রানি বা নির্যাতন বন্ধে হাইকোর্ট গত ১৪ মে বৃহস্পতিবার একটি রায় দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র এবং চলার পথসহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের প্রতি না করার মতো কিছু আচরণ ও আচরণধারা উল্লেখ করে ওই রায়ে বলা হয়েছে এসব আচরণ করা হলে তা যৌন নির্যাতন বলে সাব্যস্ত হবে। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দীকীর সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ যৌন হয়রানি রোধে একটি নীতিমালা তৈরি করতে এই রায় দেন। এ বিষয়ে সংসদে কোনো আইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগের এই রায়টিকেই আইনের ন্যায় বাধ্যতামূলক মেনে চলতে বলা হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, অচেনা মেয়েকে সুন্দরী বলা যাবে না। তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। ই-মেইল বা ফোনে মেয়েদের বিরক্ত করা যাবে না। মেয়েদের উত্যক্ত করা যাবে না। তাদের উদ্দেশ করে উস্কানিমূলক কথা বলা যাবে না। কর্মক্ষেত্রে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। ইঙ্গিতপূর্ণ কিছুও করা যাবে না। কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করার জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি থাকবে, যার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য হবেন নারী।

নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের মতো আইনী পদক্ষেপ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। হাইকোর্ট বিভাগ সমাজের ভেতর থেকে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি বন্ধে যে ইতিবাচক মানসিকতার নজির রেখেছেন সুস্থ চিন্তার সব মানুষ এর সুফল কামনা করেন। নারী আর পুরুষের মাঝে চিরায়ত যে ব্যবধান ও দুর্বলতার মাত্রা বিদ্যমান সেই গভীর বাস্তবতাটি এই রায়ে কিছুটা হলেও ফুটে ওঠেছে। এটিও এই রায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মাঝে প্রয়োজনীয় সব আড়াল ও ব্যবধানের আবরণ খুলে দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সঙ্গে কাজ করা ও চলার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখতেই পান না, তারা এই রায়টি ঘোষণার কারণ ও রায়টির আদ্যান্ত বিশ্লেষণ করে একটু দেখতে পারেন। এতে তারা তাদের চিন্তার ত্রুটিটা ধরতে পারবেন। দ্বিতীয়ত নারীর প্রতি বহিরাঙ্গনে যেসব যৌন হয়রানিমূলক আচরণ হয় অথবা হওয়ার আশংকা থাকে, ভেতর থেকে তার কার্যকারণগুলো নিয়েও ভাবা দরকার। পরিবেশের সব ক্ষেত্র ও আয়োজনে নারীর আকর্ষক রূপ-সৌন্দর্য্যের পসরা সাজিয়ে রেখে নারীর মর্যাদাকে অসমীচীন আঁচড়ের উর্ধ্বে রাখা কতটা সম্ভব এটাও দেখা দরকার। মিডিয়া, ফিল্ম, স্যাটেলাইট চ্যানেল, বিলবোর্ড, ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকা, ফ্যাশন ও প্রত্যক্ষ বিচরণ ক্ষেত্রে নারীর সৌন্দর্য্যকে আকর্ষক ও উত্তেজক করে পরিবেশন করা হতে থাকবে আর নারীকে কেবল আইন করে সব রকম বিড়ম্বনা ও হয়রানি থেকে মুক্ত রাখা যাবে-এটা মনে হয় বাস্তবানুগ চিন্তা নয়। হাইকোর্টের রায় সমাজের সামনে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ভেতর-বাহির, বাস্তবতা-কার্যকারণ সব তলিয়ে দেখে সমাজপতি ও সমাজনিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বড় রকম করণীয় ঠিক করে নিতে পারেন। তাতে নারী অনেক উপকৃত হবে, সমাজও সুস্থ থাকবে। হিজাব বা পর্দার মাঝে নারীর নিরাপত্তার জন্য কত বড় মন্ত্র যে লুকিয়ে আছে অনুশীলনকারীরাই কেবল তা বুঝতে পারেন। মূলত নারীর জন্য পর্দার ব্যবস্থা না করে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আর কোটি টাকার ক্যাশ পথের ওপর খোলা রেখে দিয়ে তা সংরক্ষিত থাকার চিন্তা করা সমান পর্যায়ের বিষয়। #  

 

 

advertisement