وحدة الأمة واتباع السنة উম্মাহর ঐক্য : পথ ও পন্থা মতভিন্নতার মাঝেও সম্প্রীতি রক্ষা, সুন্নাহসম্মত পন্থায় সুন্নাহর প্রতি আহবান
গত ২৩ রবিউস সানী ১৪৩৩ হিজরী, মোতাবেক ১৭ মার্চ ২০১২ ঈ. শনিবার কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার উদ্যোগে ‘উম্মাহর ঐক্য : পথ ও পন্থা’ শিরোনামে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়কের পক্ষ থেকে যে প্রবন্ধটি উপস্থাপিত হয়েছিল তা হুবহু বা তার সারসংক্ষেপ আলকাউসারে প্রকাশের জন্য অনেক বন্ধু/পাঠক জোর আবেদন জানিয়েছেন। সেমিনারে উপস্থিত বন্ধুরা প্রবন্ধটি পুস্তক আকারে পেলেও আলকাউসারের অধিকাংশ পাঠকের কাছে তা পৌঁছেনি। এজন্য সামান্য পরিবর্তন-পরিমার্জনের পর প্রবন্ধটির সারসংক্ষেপ আলকাউসারে প্রকাশ করা হচ্ছে। এটি প্রবন্ধের চতুর্থ কিস্তি। যাদের কাছে মূল প্রবন্ধটি রয়েছে তাদের জন্যও তা উপকারী হবে বলে আশা রাখি।
বর্তমান সংখ্যা ও আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত আলোচনা মূলত উক্ত প্রবন্ধের পরিবর্ধিত ও সম্পাদিত দ্বিতীয় সংস্করণ, যা গত ৪ রজব, ’৩৩ হি., মোতাবেক ২৬ মে ’১২ ঈ. একই স্থানে অনুষ্ঠিত সেমিনারের (দ্বিতীয় পর্ব) উপলক্ষে প্রস্ত্তত করা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা এটিকে উপকারী করুন। আমীন।-সম্পাদক
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ফুরূয়ী ইখতিলাফের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ির কারণ
সব যামানার আলিমগণ ফুরূয়ী বা শাখাগত মাসাইলের মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে যে ভারসাম্যপূর্ণ কর্মপন্থা নির্দেশ করেছেন বর্তমান মুসলিমসমাজে, বিশেষত এ উপমহাদেশে তা মর্মান্তিকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সম্প্রীতি, উদারতা ও নম্রতার পরিবর্তে এ ধরনের মতভেদের ক্ষেত্রগুলোতে বাড়াবাড়ি ও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। এর কারণ কী? এ বিষয়েও আলিমগণ লিখেছেন। বর্তমান প্রবন্ধে এ বিষয়েও কিছু আলোকপাত করা মুনাসিব মনে হচ্ছে।
বাড়াবাড়ির কারণ অনেক। আমি এখানে কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করব ইনশাআল্লাহ।
১. একমুখী অধ্যয়ন ও অসম্পূর্ণ অধ্যয়ন
ইখতিলাফী বিষয়ে যিনি মত প্রকাশ করতে চান, নিজের পথ ও পন্থার দিকে আহবান করতেই চান এবং অন্যের পথ ও পন্থার উপর আপত্তি করতেই চান, তার প্রথম কর্তব্য, বিষয়টি গভীরভাবে অধ্যয়ন করা । এ বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে যা কিছু লেখা হয়েছে তা গভীর মনযোগ ও পূর্ণ ন্যায়নিষ্ঠার সাথে অধ্যয়ন করা। কিন্তু দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে আমরা চরম উদাসীন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের অধ্যয়ন একমুখী। সেও অসম্পূর্ণ ও পরনির্ভর অধ্যয়ন। অথচ এ অধ্যয়নের ভিত্তিতে আমরা মত প্রকাশ করি সম্পূর্ণ মুহাক্কিক; বরং মুজতাহিদসুলভ ভঙ্গিতে!
কিছু উদাহরণ
১. অতি নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে দেওয়া হয় যে, ‘বিতরের নামায তিন রাকাত পড়া ভিত্তিহীন। কিংবা তা কেবল জয়ীফ হাদীসে আছে!’
অথচ একাধিক সহীহ হাদীস, অনেকগুলো আছারে সাহাবা এবং মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের কর্মগত ইজমার দ্বারা তিন রাকাত বিতরের পদ্ধতি প্রমাণিত।
আরো বলা হয় যে, ‘তিন রাকাত যদি পড়তে হয় তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে বসবে না। তিন রাকাত এক জলসায় পড়বে!’
যারা এ ধরনের কথা বলেন তারা যদি বিতরের প্রসঙ্গটি ‘শরহু মাআনিল আছার’ ও ‘শরহু মুশকিলিল আছার’ থেকেও অধ্যয়ন করতেন এবং নসবুর রায়ার হাশিয়া ‘বুগয়াতুল আলমায়ী’ ও ‘কাশফুস সিত্র আন মাসআলাতিল বিত্র’ (মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার শাহ কাশ্মিরি) পাঠ করতেন, অন্তত মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ.-এর কিতাব ‘‘ইখতিলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুসতাকীম’’ থেকেই পাঠ করতেন তাহলেও তাদের এ ধরনের কথা বলতে দ্বিধা হত।
যেখানে সহীহ মুসলিমসহ অনেক হাদীসের কিতাবে সহীহ হাদীসে এই সাধারণ মূলনীতি বলা হয়েছে যে, ‘নামাযের প্রতি দুই রাকাতে আত্তাহিয়্যাতুর বৈঠক আছে’ সেখানে দলীল ছাড়া এই ফতোয়া দেওয়ার দুঃসাহস কীভাবে হয়, উপরন্তু হাদীস অনুসরণের নামে?!
‘বিতরের নামাযকে মাগরিবের মত বানিও না’-এই হাদীসের পূর্বাপর না দেখেই কেউ ব্যাখ্যা করেছে, ‘বিতরের নামাযে প্রথম বৈঠক করবে না, করলে সালাম ফেরাও।’ এরপর এ ব্যাখ্যারই তাকলীদ করা হচ্ছে। অথচ এ হাদীসের ব্যাখ্যাও হাদীসের মধ্যেই আছে। তা হচ্ছে বিতরের আগে দু’ চার রাকাত নফল নামায অবশ্যই পড়বে। মাগরিবের মত শুধু তিন রাকাত পড়বে না। দেখুন : শরহু মাআনিল আছার ও হাশিয়া নাসবুর রায়া।
দুই জলসা ও এক সালামে তিন রাকাত বিতর সম্পর্কে হাদীস ও আছারের দলিল জানার জন্য মাসিক আলকাউসারের জুমাদাল উলা ’৩১ হি. (মে ’১০ ঈ.) সংখ্যা থেকে যিলকদ-যিলহজ্ব ’৩১ হি. (নভেম্বর ’১০ ঈ.) পর্যন্ত সংখ্যাগুলো দেখা যায়।
২. বলা হয়ে থাকে, ‘কুনূতের বিভিন্ন দুআ আছে তবে اللهم إنا نستعينك الخ দুআটি নেই।’
অথচ তা মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (খন্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১০৫-১২০); মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা (খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫১৮, খন্ড : ১৫, পৃষ্ঠা : ৩৪০-৩৪৪); কিয়ামুল লায়ল, মুহাম্মাদ ইবনে নাসর আলমারওয়াযী (পৃষ্ঠা : ২৯৬-৩০২) এবং আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকীসহ (খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২১০) একাধিক হাদীসের কিতাবে আছে। আদ্দুররুল মানসুরের পরিশিষ্টেও কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া আছে।
৩. বলা হয়ে থাকে, ‘দুআ কুনূতের আগে তাকবীরের দলীল হাদীসের কিতাবে নেই।’
অথচ ‘শরহু মুশকিলিল আছার’ তাহাবীতে (খন্ড : ১১, পৃষ্ঠা : ৩৬৫-৩৭৮) দুইজন বড় সাহাবীর আমল বর্ণিত হয়েছে।
৪. বলা হয়ে থাকে, ‘মেয়েদের নামাযের পদ্ধতিও পুরুষের মতোই। উভয়ের নামাযের পদ্ধতি আলাদা হওয়ার কথা ভিত্তিহীন। এটা শুধু হানাফিদের মাযহাব।’
অথচ বাস্তবতা এই যে, নারী-পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি অভিন্ন হওয়ার বিষয়ে আমাদের জানামতে কোনো দ্ব্যর্থহীন সহীহ হাদীস বা আছার নেই। অথচ কিছু সাহাবী ও অনেক তাবেঈ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে উভয়ের নামাযের পদ্ধতি আলাদা হওয়া প্রমাণিত। একটি মারফূ মুরসাল হাদীসও আছে, যাকে একাধিক আহলে হাদীস আলিম শাওয়াহিদ ও সমর্থক বর্ণনার কারণে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। এ প্রসঙ্গে নবাব সিদ্দিক হাসান খানের ‘‘আউনুল বারী’’ও দেখা যেতে পারে (খন্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৫২০, দারুর রশীদ হলব, সুরিয়া; খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৮৪-১৮৫, দারুন নাওয়াদির, বৈরুত, হাদীস : ২৫২)
এরপর তা শুধু হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত নয়, চার মাযহাবের ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত। আহলে হাদীস আলেমদেরও অনেকে এই ফতোয়া দিয়েছেন। কেউ কেউ এ বিষয়ে আলাদা পুস্তিকাও লিখেছেন।
যেমন দেখুন, মাওলানা আবদুল হক হাশেমী মুহাজিরে মক্কী-এর পুস্তিকা-
نصب العمود في تحقيق مسألة تجافي المرأة في الركوع والسجود والقعود
এ বিষয়ে মাসিক আলকাউসারের রবিউস সানী ’২৬ হিজরী (জুন ’০৫ ঈ.) সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধটি নবীজীর নামায (মাকতাবাতুল আশরাফ বাংলাবাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত)-এর পরিশিষ্টেও যুক্ত হয়েছে।
আমি শুধু ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর বক্তব্য উল্লেখ করছি। তিনি বলেছেন-
وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسوله صلى الله عليه وسلم، وأحب للمرأة أن تضم بعضا إلى بعض، وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأسترما يكون لها، وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها.
আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর রাসূলও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সিজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে, পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের পূর্ণ হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরাপুরি হেফাযত হয়।-কিতাবুল উম্ম, শাফেয়ী ১/১৩৮
ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর বক্তব্যটি যেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা.-এর বাণীরই ব্যাখ্যা। নারীর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন- تجتمع وتحتفز খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৭৯৪
৫. বলা হয়ে থাকে, ‘বুকের উপর হাত বাঁধার কথাই সহীহ হাদীসে আছে আর তা বুখারীর হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত।’
অথচ সহীহ বুখারীর কোনো হাদীস দ্বারা তা প্রমাণ হয় না। ইবনে খুযায়মার যে হাদীসে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা আছে তাতে মুআম্মাল ইবনে ইসমাইল নামক একজন রাবী আছেন, যাকে স্বয়ং ইমাম বুখারী রহ. ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন।
পাঠকবৃন্দকে মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহর দুটি প্রবন্ধ পাঠ করার আবেদন করব, যা তিনি এ বিষয়েই লিখেছেন। দুটো প্রবন্ধই মাসিক আলকাউসার যিলহজ্ব ’৩২ হি. (নভেম্বর ’১১ হি.) ও মুহাররম ’৩৩ হি. (ডিসেম্বর ’১১ ঈ.) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
৬. বলা হয়ে থাকে, ‘জোরে আমীন বলার হাদীস সহীহ বুখারীতে আছে।’
অথচ সহীহ বুখারীতে ইমাম বুখারী শিরোনাম দিয়েছেন জাহর বা জোরে আমীনের, কিন্তু তাতে এমন একটি হাদীসও নেই, যাতে জাহরের কথা আছে।
ওখানে যে হাদীসগুলো আছে তাতে আমীন বলার ফযীলত উল্লেখিত হয়েছে এবং এ কথা আছে যে, ইমাম-মুকতাদী উভয়েরই আমীন বলা উচিত। কিন্তু জোরে বলার কথা নেই।
৭. বলা হয়ে থাকে, ‘ইমামের পেছনে মুক্তাদির ফাতিহা পড়া ফরয-এই হাদীস সহীহ বুখারীতে আছে।’
অথচ সহীহ বুখারীতে ইমাম বুখারী এ ধরনের শিরোনাম যদিওবা লিখেছেন, কিন্তু তাতে এমন কোনো হাদীস নেই, যাতে মুক্তাদিকে ফাতিহা পড়ার আদেশ করা হয়েছে।
হাঁ, لا صلاة إلا بفاتحة الكتاب (ফাতিহা ছাড়া কোনো নামায নেই) হাদীসটি আছে, কিন্তু এতে তো মুক্তাদির কথা নেই। এই হাদীসের ব্যাপকতায় মুক্তাদি শামিল কি না-তা একটি ইজতিহাদী বিষয়। ইমাম বুখারী ও কোনো কোনো ইমামের ইজতিহাদ অনুসারে মুক্তাদিও শামিল। আবার অন্য অনেক ইমামের মতে অনেক দলিলের ভিত্তিতে মুক্তাদির বিধান আলাদা।
৮. বলা হয়ে থাকে যে, ‘তারাবী আট রাকাত হওয়ার দলীল সহীহ বুখারীতে আছে।’
অথচ সহীহ বুখারীতে আছে ‘সালাতুল লায়ল’ সংক্রান্ত হাদীস। এর ব্যাখ্যা তারাবীর দ্বারা করা ঐসকল বন্ধুর নিজস্ব ইজতিহাদ। তাদের যুক্তি, তারাবী ও তাহাজ্জুদ একই নামাযের দুই নাম। এগারো মাসের তাহাজ্জুদ রমযান মাসে তারাবী হয়ে যায়। এই দাবির পক্ষে তাদের কাছে কোনো আয়াত, হাদীস বা আছারে সাহাবা নেই। এটা তাদের একান্ত নিজস্ব ইজতিহাদ, যা ইমাম বুখারীর ইজতিহাদ থেকেও আলাদা।
ইমাম বুখারী রাহ. প্রথম রাতে তারাবী পড়তেন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ। তারাবীর প্রতি রাকাতে বিশ আয়াত পড়তেন এবং পুরা কুরআন খতম করতেন। এবার হিসাব করে দেখুন তারাবী যদি আট রাকাত করে পড়া হয় তাহলে প্রতি রাকাতে বিশ আয়াত করে পড়ে পুরা রমযানে, তা ত্রিশ দিনের হলেও, খতম করা সম্ভব কি না।
৯. যে বিনা ওজরে সময়মত ফরয নামায পড়েনি তার উপর কাযা জরুরি হওয়া স্বীকৃত ও সর্বজনবিদিত। এ বিষয়ে জুমহুর উম্মতের ইজমাও রয়েছে। কিন্তু অনেক বন্ধুকে অতি জোড়ালোভাবে বলতে দেখা যায়, ‘ঐ ব্যক্তির কাযা আদায়ের বিধান নেই।’
আমি মনে করি, এটা হাদীস অনুসরণের নামে শায ও বিচ্ছিন্ন মত এবং দলিলবিহীন; বরং দলিলবিরোধী মতামত প্রচার করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাদের খেদমতে আরজ, তারা যেন এই মাসআলাটি অন্তত ইমাম ইবনে আব্দিল বার (৪৬৩ হি.)-এর আলইসতিযকার কিতাবে (খন্ড ১, পৃষ্ঠা : ৩০০-৩০১, باب النوم عن الصلاة) পাঠ করেন। আর আদবের সাথে আরজ করব যে, এ বিষয়ে কি শুধু এ হাদীসটি যথেষ্ট নয়-
اقضوا الله، فالله أحق بالوفاء
আল্লাহকে (তাঁর পাওনা) পরিশোধ কর। কারণ আল্লাহই সর্বাধিক হকদার (তাঁর) পাওনা পরিশোধের।
এবং فدين الله أحق أن يقضى
তাহলে আল্লাহর ঋণ তো পরিশোধের অধিক হকদার।
মাসিক আলকাউসারের উদ্বোধনী সংখ্যায় (মুহাররম ১৪২৬ হি., ফেব্রুয়ারি ’০৫ ঈ.) এ বিষয়ে মাশাআল্লাহ একটি সারগর্ভ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
১০. কেউ তো চরম দুঃসাহস প্রদর্শন করে বলেছেন, ‘বিনা অযুতে কুরআন স্পর্শ করা সম্পূর্ণ জায়েয।’ তাদের দাবি, এটা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস নেই। অথচ
لا يمس القرآن إلا على طهر
(পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করবে না)-এই হাদীস শুধু সহীহই নয়, অর্থের দিক থেকে মুতাওয়াতির। আর এ বিষয়ে জুমহুর উম্মতের ইজমা আছে। ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. এ বিষয়েও সংক্ষেপে অতি সারগর্ভ আলোচনা করেছেন। আলইসতিযকারে (খন্ড ৮, পৃষ্ঠা : ৯-১৩, باب الأمر بالوضوء لمن مس القرآن) তাঁর আলোচনাটি দেখে নেওয়া যায়।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনে হাযম রা.কে যে পত্র দিয়েছিলেন তাতে অন্য অনেক বিধানের সাথে এই বিধানও ছিল যে, অযুহীন কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। পত্রের এ অংশ মুয়াত্তা মালিকেও রয়েছে। ইবনে আবদিল বার রাহ. এই পত্রখানা সম্পর্কে লেখেন-
وكتاب عمرو بن حزم هذا قد تلقاه العلماء بالقبول والعمل، وهو عندهم أشهر وأظهر من الإسناد الواحد المتصل، وأجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا الطاهر.
অর্থাৎ আলিমগণ আমর ইবনে হাযমের এই পত্র সাদরে বরণ করেছেন এবং এ অনুযায়ী আমল করেছেন। এটি তাঁদের কাছে একটি মুত্তাসিল সনদের চেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ও প্রকাশিত। ইসলামী জনপদসমূহের ফতোয়ার স্তম্ভ যেসব ফকীহ (মুজতাহিদ) ও তাঁদের শীষ্যগণ তাঁরা একমত যে, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআনকে স্পর্শ করবে না।-আলইসতিযকার ৮/১০
মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ এ বিষয়েও মাশাআল্লাহ অতি উত্তম ও প্রামাণিক প্রবন্ধ লিখেছে, যা আলকাউসারের সফর ’২৭ হি. (মার্চ ২০০৬ ঈ.) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকবৃন্দের কাছে অনুরোধ, তাঁরা যেন এই প্রবন্ধগুলো অবশ্যই পাঠ করেন।
১১. কেউ কেউ রুকুর সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রাফয়ে ইয়াদাইনের সুন্নতের উপর এত জোর দিয়েছেন যে, এই সুন্নতের সমর্থনে রাফয়ে ইয়াদাইন না করার (এইসব জায়গায় হাত না তোলার) সুন্নত বাতিল করাকে জরুরি মনে করেছেন। তারা নির্দ্বিধায় বলে দিয়েছেন যে, রাফয়ে ইয়াদাইন না করার বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস নেই; কোনো সাহাবী থেকেও এর কোনো প্রমাণ নেই। অথচ খলীফায়ে রাশেদ ওমর ইবনুল খাত্তাব রা., খলীফায়ে রাশেদ আলী ইবনে আবী তালিব রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.সহ কয়েকজন সাহাবী থেকে হাত না তোলার সুন্নত প্রমাণিত। অনেক তাবেয়ীর আমলও এটি ছিল।
জনৈক ব্যক্তি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর সামনে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস পেশ করেছিল যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাফয়ে ইয়াদাইন করতে দেখেছেন। তখন ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছিলেন, যদি ওয়াইল রা. (যিনি ছিলেন একজন আগন্তুক সাহাবী) একবার রাফয়ে ইয়াদাইন করতে দেখেন তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. (যিনি ছিলেন সফরে-হযরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদিম এবং ফকীহ সাহাবী) পঞ্চাশ বার রফয়ে ইয়াদাইন না করতে দেখেছেন।
(দেখুন : আলমুয়াত্তা, মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, পৃষ্ঠা : ৯২; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা ইমাম মুহাম্মাদ ১/৭৫; শরহু মাআনিল আছার তহাবী ১/১৬১; নসবুর রায়াহ লি আহাদীসিল হিদায়া, জামালুদ্দীন যায়লায়ী ১/৩৯৭)
খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত এবং আছারে সাহাবা শরীয়তের উল্লেখযোগ্য দলিল, বিশেষত নামাযের পদ্ধতির ক্ষেত্রে। উপরন্তু এ বিষয়ে সহীহ বা হাসান সনদে একাধিক মারফূ হাদীস রয়েছে।
মুসনাদে আহমদ ও জামে তিরমিযীতে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর সূত্রে যে মারফূ হাদীসটি আছে তাকে খোদ ইমাম তিরমিযী রাহ. ‘হাসান’ বলেছেন। ইবনে হাযম জাহেরী রাহ. ‘সহীহ’ বলেছেন। নিকট অতীতের মশহূর মুহাদ্দিস আহমদ শাকির রাহ. জামে তিরমিযীর হাশিয়ায় লিখেছেন-
هذا الحديث صححه ابن حزم وغيره من الحفاظ وهو حديث صحيح، وما قالوا في تعليله ليس بلعة.
ইবনে হাযম এবং আরো কোনো কোনো হাফিযুল হাদীস এই হাদীসকে ‘সহীহ’ বলেছেন। আর একে ‘মা’লূল’ সাব্যস্ত করার জন্য আপত্তিকারীরা যা কিছু বলেছেন বাস্তবে সেগুলো ইল্লত নয়।-জামে তিরমিযী ২/৪১
১২. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে তাকবীর বিষয়ে এক মাসনূন তরীকা এই যে, অতিরিক্ত তাকবীর বারোটি । দ্বিতীয় মাসনূন তরীকা (যা আমাদের মতে অধিক শক্তিশালী), অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি। প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর তিন তাকবীর, অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমাসহ চার তাকবীর। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাআতের পর তিন তাকবীর, এরপর রুকুর তাকবীর, অর্থাৎ রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর।
কোনো কোনো বন্ধুকে বলতে শোনা যায়, হাদীসে শুধু বারো তাকবীরের আমল পাওয়া যায়। দ্বিতীয় তরীকা কোনো সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। কেউ কেউ তো এমনও লিখেছেন যে, ঐ বিষয়ে কোনো হাদীসই নেই।
বুঝতে পারছি না, এ জাতীয় অবাস্তব দাবি সম্পর্কে কী বলা যায়। পাঠকবৃন্দকে শুধু এই অনুরোধ করব, তাঁরা যেন দ্বিতীয় মাসনূন তরীকার দলিল, হাদীস ও আছার জানার জন্য মাসিক আলকাউসার রমযান-শাওয়াল ’২৬ হি. সংখ্যায় (২০০৫-এর ভলিউমে) প্রকাশিত ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর বিষয়ক প্রবন্ধটি মনোযোগের সাথে পাঠ করেন। প্রবন্ধটি মাকতাবাতুল আশরাফ, বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘নবীজীর নামাযে’র পরিশিষ্টেও যুক্ত আছে।
এ ধরনের অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। নমুনা হিসাবে এগুলোই যথেষ্ট। এখানে দেখানো উদ্দেশ্য যে, অনেক বন্ধু এ সকল বিষয় এমনভাবে পেশ করে থাকেন যে, ফিকহে হানাফীর অনুসারীদের কাছে এসব বিষয়ে কোনো দলীল নেই। পক্ষান্তরে তাদের কাছে আছে প্রচুর সহীহ হাদীস!
তাছাড়া উপরে উল্লেখিত ৯, ১০ ও ৪ নম্বর মাসআলাটি তো শুধু ফিকহে হানাফীর নয়, জুমহূরে উম্মতের ইজমায়ী মাসআলা। অন্যান্য মাসআলাতেও হানাফী ফকীহগণের সাথে অন্য অনেক ফকীহ একমত। আর প্রত্যেক মাসআলায় ফকীহ সাহাবী ও তাবেয়ীগণের হাওয়ালা তো এখনই উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেই আমি নিবেদন করে থাকি যে, আমার এই বন্ধুরা যদি তাদের অধ্যয়নের পরিধি বিস্তৃত ও গভীর করতেন তাহলে এই বাড়াবাড়ি তাদের মধ্যে থাকত না।
অন্তত এটুকু চিন্তা তো অবশ্যই হতো যে, ওদের কাছেও দলীল আছে; আর আমাদের দলীলগুলোর প্রধান্য ও অগ্রগণ্যতাও এত সুস্পষ্ট নয় যে, একদম মুতাওয়াতির ও অকাট্য বিষয়ের মত এতে ভিন্নমতের কোনো অবকাশই নেই।
২. আংশিক ও অস্বচ্ছ ধারণার উপর পূর্ণ প্রত্যয়
অনেক সময় এমন হয় যে, কোনো কোনো বন্ধুর উসূলে হাদীস ও উসূলে ফিকহের কিছু নীতি ও ধারা সম্পর্কে খুব অগভীর ধরনের জানাশোনা থাকে। নীতিটির স্বরূপ ও তাৎপর্য এবং ভাষ্য ও বিস্তারিত অনুষঙ্গের জ্ঞান থাকে না। উসূলের উপর মুতাকাদ্দিমীনের কিতাবসমূহ গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করার বিষয়ে সচেতনতা থাকে না। শুধু অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ ধারণার উপর ভিত্তি করে বিপরীত পথ ও পন্থা সম্পর্কে কটুক্তি ও সমালোচনার বিরাট সৌধ নির্মাণ করে ফেলা হয়। এরপর ইলমী আলোচনাতেও তাদের মুখে আম লোকের ভাষা ও যুক্তি প্রকাশিত হতে থাকে। যেমন তাদের এ সকল কথা :
ক. সহীহ বুখারী বা সহীহ মুসলিমে নেই
অনেকের মনে দৃঢ় প্রত্যয় আছে যে, ‘যেসকল হাদীস সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমে নেই তা হয়তো সহীহ নয় কিংবা সহীহ হলেও এই দুই কিতাবের সহীহ হাদীসের সমপর্যায়ের নয়।’ এ কারণে কোনো বিষয়ে হাদীস পেশ করা হলে বলে, বুখারীতে দেখান, মুসলিমে দেখান। কিংবা বলে, বুখারী-মুসলিমে এর বিপরীত যে হাদীস আছে তা অধিক সহীহ। সুতরাং ঐ হাদীসের উপর আমল করা উচিত এবং এটা বাদ দেওয়া উচিত!
যাদের উসুলুল ফিকহ ও উসুলুল হাদীসের পোখতা ইলম আছে তারা বোঝেন এটা কেমন স্থূল কথা। কারণ :
ক. ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম দু’জনই পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, তাঁরা তাঁদের ‘কিতাবুস সহীহ’তে যে হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন তা সব সহীহ। তবে সকল সহীহ হাদীস তাঁরা তাঁদের কিতাবে বর্ণনা করেননি এবং বর্ণনার ইচ্ছাও করেননি। এ কথাটি উভয় ইমাম থেকে সহীহ সনদে প্রমাণিত।
ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন-
ما أدخلت في كتابي "الجامع" إلا ماصح، وتركت من الصحاح لحال الطول.
অর্থাৎ আমি আমার কিতাবুল জামি’তে শুধু সহীহ হাদীস এনেছি। তবে গ্রন্থের কলেবর বড় হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় (অনেক) সহীহ হাদীস ত্যাগ করেছি।-আলকামিল, ইবনে আদী ১/ ২২৬; তারীখে বাগদাদ ২/৮-৯
‘‘শুরূতুল আইম্মাতিল খামছা’’য় (পৃ. ১৬০- ১৬৩) ইমাম ইসমাঈলীর সূত্রে ইমাম বুখারীর বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-
لم أخرج في هذا الكتاب إلا صحيحا، وما تركت من الصحيح أكثر.
আমি এই কিতাবে শুধু সহীহ হাদীস এনেছি। আর যে সহীহ হাদীস আনিনি তার সংখ্যা বেশি।
খতীব বাগদাদী রাহ. ‘‘তারীখে বাগদাদে’’ (১২/২৭৩ তরজমা : আহমদ ইবনে ঈসা আততুসতরী) এবং হাযেমী ‘‘শুরূতুল আইম্মাতিল খামসা’’য় (পৃ. ১৮৫) বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম আবু যুরআ রাযী রহ. (যিনি ইমাম মুসলিম রহ. এর উস্তাদ) একবার সহীহ মুসলিম সম্পর্কে বললেন, এর দ্বারা তো আহলে বিদআর জন্য পথ খুলে দেওয়া হল। তাদের সামনে যখন কোনো হাদীস দ্বারা দলীল দেওয়া হবে তখন তারা বলবে, এ তো কিতাবুস সহীহতে নেই!
তেমনি ইমাম ইবনে ওয়ারা রাহ.ও সরাসরি ইমাম মুসলিম রাহ.কে সম্বোধন করে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তখন ইমাম মুসলিম রাহ. বলেছেন, আমি এই কিতাব সংকলন করেছি এবং বলেছি, এই হাদীসগুলো সহীহ। আমি তো বলিনি যে, এ কিতাবে যে হাদীস নেই তা জয়ীফ! ....
তখন ইবনে ওয়ারা তার ওজর গ্রহণ করেন এবং তাঁকে হাদীস শুনান।
এই ঘটনা থেকে যেমন বোঝা যায়, ইমাম মুসলিম রাহ. সকল সহীহ হাদীস সংকলনের ইচ্ছাও করেননি তেমনি এ কথাও বোঝা যায় যে, কোনো সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস পেশ করা হলে ‘এ তো সহীহ মুসলিমে নেই’ বলে তা ত্যাগ করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর তরিকা হতে পারে না। একই কথা সহীহ বুখারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
২. ইমাম আবু বকর ইসমায়িলী রহ. (৩৭১ হি.) ‘আল মাদখাল ইলাল মুসতাখরাজ আলা সহীহিল বুখারী’তে হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকে ইমাম বুখারীর রেওয়ায়েত না করার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বুখারী তো তাঁর মানদন্ডে উত্তীর্ণ অনেক সহীহ হাদীসও বর্ণনা করেননি। তবে তা এ জন্য নয় যে, তাঁর দৃষ্টিতে হাদীসগুলো জয়ীফ কিংবা সেগুলোকে তিনি বাতিল করতে চান। তো হাম্মাদ থেকে রেওয়ায়েত না করার বিষয়টিও এরকমই।’-আননুকাত আলা মুকাদ্দিমাতি ইবনিস সালাহ, বদরুদ্দীন যারকাশী ৩/৩৫৩
৩. ইমাম আবু নুয়াইম আসপাহানী রাহ. (৪৩০ হি.) ‘আলমুসতাখরাজ আলা সহীহি মুসলিম’’-এ একটি হাদীসের মান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-
"فإنهما رحمهما الله قد تركا كثيرا مما هو بشرطهما أولى و إلى طريقتهما أقرب"
অর্থাৎ বুখারী মুসলিম এমন অনেক হাদীস ত্যাগ করেছেন, যেগুলো তাদের সংকলিত হাদীস থেকেও তাঁদের নীতি ও মানদন্ডের অধিক নিকটবর্তী।-আলমুসতাখরাজ ১/৩৬
৪. এটি একটি সহজ ও বাস্তব কথা যে, বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হাদীসসমূহের সমপর্যায়ের হাদীস এবং ঐ দুই কিতাবের মানদন্ডে উত্তীর্ণ সহীহ হাদীসের সংখ্যা অনেক। শুধু মুসতাদরাকে হাকিমেই এ পর্যায়ের হাদীস, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.-এর বক্তব্য অনুযায়ী হাজারের কাছাকাছি।-আননুকাত আলা কিতাবি ইবনিস সালাহ
মুসনাদে আহমদ এখন ৫২ খন্ডে বিস্তারিত তাখরীজসহ প্রকাশিত হয়েছে। টীকায় শায়েখ শুআইব আরনাউত ও তার সহযোগীরা সনদের মান সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর হাদীস বিভাগের একজন তালিবে ইলম শুধু প্রথম চৌদ্দ খন্ডের রেওয়ায়েতের হিসাব করেছেন। দেখা গেছে, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ-এই ছয় কিতাবে নেই এমন হাদীসগুলোর মধ্যে : বুখারী ও মুসলিম উভয়ের শর্ত অনুযায়ী ৪০১টি, শুধু বুখারীর শর্ত অনুযায়ী ৬৪টি, শুধু মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী ২১৫টি হাদীস রয়েছে।
এছাড়া সহীহ লিযাতিহী বা সহীহ লিগায়রিহী হাদীসের সংখ্যা ১০০৮টি ও হাসান লিযাতিহী বা হাসান লিগায়রিহী হাদীস ৬১৫টি। এসব সংখ্যা স্বতন্ত্র-অতিরিক্ত হাদীসসমূহের, অর্থাৎ যেগুলোর কোনো মুতাবি বা শাহেদ তাখরীজের বিবরণ অনুযায়ী ছয় কিতাবে নেই।
ইমাম