জুমাদাল উলা-১৪৩৩   ||   এপ্রিল-২০১২

কয়েকটি জরুরি কথা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

গত ৭ রবিউস সানী ১৪৩৩ হিজরী রোজ বৃহস্পতিবার মাদরাসা আরাবিয়া খেড়িহর (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)-এ হযরত ওয়ালিদ মাজীদ দামাত বারাকাতুহুম ও আসাতিযায়ে কেরামের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে হাযিরির সৌভাগ্য হয়েছিল। আসাতিযায়ে কেরামের নির্দেশে তাঁদের থেকেই শোনা কিছু কথা তালিবানে ইলমের সাথে আলোচনা করা হয়। মাদরাসার এক তালিবে ইলম ভাই বয়ানটির সারসংক্ষেপ লিখে পাঠিয়েছেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ শিক্ষার্থীদের পাতায় তা প্রকাশ করা হল।-তত্ত্বাবধায়ক

হামদ ও সালাম-সালাতের পর

আজ আমি আপনাদের খেদমতে হাজির হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। দীর্ঘ কথা বলব না। এখানে থাকা অবস্থায় আমাদের আসাতিযায়ে কেরাম আমাদেরকে যেসব কথা বারবার বলতেন, সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু কথা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।

আমাদের মধ্যে ইলমের পাশাপাশি হিলম  থাকা প্রয়োজন। এক সাহাবীকে লক্ষ্য করে একদা রাসূলে  কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إن فيك لخصلتين يحبهما الله ورسوله : الحلم والآناة.

 ‘আমি তোমার মধ্যে দুটি গুণ দেখেছি, যা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন। একটি হচ্ছে হিলম। আর অপরটি হল আনাত। হিলম অর্থ, ধৈর্য্য ও সহনশীলতা এবং প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা। আর আনাত অর্থ, চঞ্চলতাশূন্য ধীর শান্ত স্বভাব এবং বিচারবিবেচনার গুণ। এ দুটি গুণ দ্বীন ও দুনিয়ার সব কাজেই কাম্য। তবে তালিবানে ইলমের তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দ্বিতীয় কথা

আমরা মাদরাসায় এসেছি, তাফাক্কুহ ফিদদীন হাসিল করার জন্য। দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করার জন্য। একাজের জন্য সবার আগে আমাদেরকে আসাতিযায়ে কেরামের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। নিছক প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক যেন না হয়। এমন স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যা কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। প্রকৃত মহববত তো কখনো ছুটে যায় না। মহববতের শিকলে যে আটকে যায় সে তো কখনো মুক্তি পায় না।

এক বুযুর্গ কত সুন্দর বলেছেন-

پابند محبت كبهى آزاد نہيں ہے + اس قيد كى آئے دل كوئى ميعاد نہيں ہے.

এখন আমি চারটি বিষয় পেশ করছি। আমরা সকলেই এগুলোর উপর আমল করার ও কায়েম থাকার চেষ্টা করব। এগুলোকে নিজেদের সাধারণ গুণে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ।

প্রথম বিষয় হল, নাযাফত তথা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এটা পশ্চিমারা খুব জানে, কিন্তু তাদের পরিচ্ছন্নতার সাথে পবিত্রতা নেই। আমাদের স্বাতন্ত্র্য এখানেই যে, আমরা পরিচ্ছন্নতার সাথে সাথে পবিত্রতার দিকেও লক্ষ্য রাখি।

ঘরের আঙিনা পরিষ্কার রাখা জরুরি। ভেতরের অংশ তো পরিষ্কার থাকবেই, বাইরের অংশেও যেন কোনো ময়লা না থাকে-সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।  মাদরাসা-ভবনের পিছনের দিকটাও পরিষ্কার রাখা দরকার। কারণ এটা আপনাদের জন্য পিছনের দিক, কিন্তু একজন মানুষ যদি ঐ দিক থেকে আসে তার জন্য তো এটা সামনের দিক। তেমনি পুকুরের এই যে বিশাল ঘাটলা এটা এত পরিষ্কার রাখতে হবে যে, মাদরাসায় প্রবেশ করামাত্র বাইরের কোনো লোক যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে, এখানকার লোকেরা রুচিশীল ও পরিচ্ছন্ন।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমাদের অবলম্বন করতে হবে তা হচ্ছে, তাহারাতে জাহেরা। বা বাহ্যিক পবিত্রতা। অর্থাৎ উভয় প্রকারের হদস থেকে পবিত্র থাকা।

তৃতীয় বিষয় তাহারাতে বাতেনা। অর্থাৎ অন্তরকে সর্ব প্রকারের ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখা। হিংসা-বিদ্বেষ, রিয়া-অহংকার ইত্যাদি সব কিছু পরিহার করা।

চতুর্থ বিষয় নযম ও নসক। অর্থাৎ সবকিছুকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা। সবক্ষেত্রে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলা। আমাদের টেবিলে রাখা কিতাবাদি, বিছানার পাশে রশিতে রাখা জামা-কাপড়, এমনকি দরজার বাইরের জুতাও গুছিয়ে রাখতে হবে। কিছুতেই এলোমেলো করে রাখা যাবে না। এটাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষা ও আদর্শ।

সুনানে আবু দাউদ-এর আদব অধ্যায়ে একটি হাদীস আছে। কোনো এক সফর থেকে ফেরার পর মদীনার সন্নিকটে পৌঁছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন-

إنكم قادمون على إخوانكم فأصلحوا رحالكم وأحسنوا ثيابكم حتى تكونوا كأنكم شامة في الناس، فإن الله لا يحب الفحش ولا التفحش.

অর্থাৎ তোমরা তোমাদের ভাই বেরাদরের নিকট পৌঁছতে যাচ্ছ। সুতরাং নিজেদের বাহন ঠিকঠাক কর এবং পোশাক-পরিচ্ছদ পরিপাটি কর। যেন তোমরা লোকজনের মাঝে সুন্দর অবয়বের তিলক সদৃশ হও।

মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা আবরারুল হক রাহ.-এর মাদরাসার ঘটনা। এক লোক কামরার বাইরে সারিবদ্ধভাবে গুছিয়ে রাখা জুতা দেখে জিজ্ঞাসা করল, হযরত এ জুতাগুলো গুছিয়ে রাখার জন্য কি আলাদা কেউ আছে? হযরত জবাব দিলেন, না; বরং এখানের লোকেরা নিজেদের জুতা খোলার সময়ই তা গুছিয়ে রাখে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলের তাওফীক দান করুন এবং কবুল করুন। আমীন। 

 

 

advertisement