যিলকদ-১৪৩২   ||   অক্টোবর-২০১১

সেকেলে কুসংস্কার, একেলে কুসংস্কার

শামীমা বিনতে নূর

আমাদের পরিচিত একজন ভদ্রলোক আছেন, যার নাম শুনলে সবাই অবাক হয়ে জানতে চায়, তার বাবা-মা এমন অরুচিকর নাম রাখলেন কী করে? তার পরিবারের লোকদের কাছে শুনেছি, তার মার সন্তান বাঁচত না। হয় মৃত সন্তান প্রসব করতেন কিংবা জন্মের পর সন্তান মারা যেত। গ্রামের লোকজনের পরামর্শে তারা অনাগত সন্তানের নাম ঠিক করলেন ...। ঝাড়ু, জুতা, ফেলনা ইত্যাদি। বিভিন্ন নামের

প্রস্তাব ছিল কিন্তু তার বাবা-মা এমন একটি নাম রাখলেন, যা সকল প্রস্তাবকে ডিঙিয়ে গেল। তারা এটা করেছেন

সন্তানের মঙ্গল কামনা থেকে। তাদের বিশ্বাস, বিশ্রি ও অশ্লীল নাম রাখলে সন্তান তাদের বেঁচে যাবে।

গ্রামের শিক্ষাহীন আরো অনেকের কাছে শুনেছি যে, অরুচিকর নাম রাখলে সন্তান বেঁচে যায়। বলাবাহুল্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা বাস্তব হয় না, কিন্তু যে সন্তানকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখবেন কাকতালীয়ভাবে তার যখন এরূপ বিশ্রি নাম রাখা হয় তখন তা ঘটনা হয়ে যায় এবং মানুষ তা খুব মনে রাখে ও প্রচার করে। যাইহোক, শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান মানুষ এগুলোকে কুসংস্কারই মনে করে থাকেন।

দুই. বছর কয়েক আগের ঘটনা। আমার ছোট মেয়েটি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আইসিডিডিআরবিতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করা হয়। একপর্যায়ে মায়েদের ডাকা হল। আমরা গিয়ে বসলাম। একজন মহিলা এলেন এবং শিক্ষকের ভঙ্গিতে বলতে লাগলেন, আপনারা বাচ্চাকে স্যালাইন খাইয়েছেন তো? সবাই জবাবে বলল, হ্যাঁ। মহিলাটি বললেন, তারপরও পায়খানা বন্ধ হয়নি তাই না? সবাই বলল, না, বন্ধ হয়নি।

তখন তিনি বললেন, শোনেন, স্যালাইনের দায়িত্ব হল বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখা, পায়খানা বন্ধ করা নয়। স্যালাইন কি তার দায়িত্ব পালন করেছে? অধিকাংশ মা বললেন, হ্যাঁ করেছে। তবে কিছু মা চুপ করে রইলেন। তারপর তিনি খিচুড়ি রান্নার পদ্ধতি শেখালেন।

কাউন্সিলিং শেষে বাচ্চা নিয়ে বাসায় চলে এলাম। কিন্তু ভদ্র মহিলার ঐ কথাটা আমার মনে দাগ কেটে রইল-স্যালাইনের দায়িত্ব বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখা।

এত বাচ্চা তাহলে ডায়রিয়ায় মারা যায় কেন? স্যালাইন তো খুবই সহজলভ্য। মিডিয়ার কল্যানে স্যালাইনের প্রয়োজন সম্পর্কেও সবাই সচেতন। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়ান না এমন দৃষ্টান্ত এখন পাওয়া যাবে না।

তাহলে স্যালাইন শিশুর প্রাণরক্ষা করে-এই বিশ্বাস কি সঠিক হতে পারে?

তিন. এখানে দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে একটি মিল আছে। সেটা হচ্ছে কুসংস্কার। প্রথমটিকে একবাক্যে সবাই কুসংস্কার বলে স্বীকার করবে, কিন্তু দ্বিতীয়টিকে হয়ত অনেকেই কুসংস্কার বলবেন না।  অথচ দুটোই অবাস্তব বিশ্বাস। স্যালাইন শিশুর পানি-শূন্যতা পূরণ করে। কিন্তু জীবন রক্ষা করে? জীবন তো রক্ষা করেন আল্লাহ তাআলা। স্যালাইন তো একটা উপকরণমাত্র। আর উপকরণ তখনই কাজ করে যখন আল্লাহর হুকুম হয়। এ কারণেই যে শিশুটি বাঁচবে তাকে স্যালাইন খাওয়ানোর পর দেখা যাচ্ছে, সে বেঁচে গেছে। তাই বলে কি স্যালাইনই তাকে বাঁচিয়েছে?

প্রথম ঘটনাটিও তো ঠিক একই রকম। এখানেও দেখা যাচ্ছে আজেবাজে নাম রাখার কারণে সন্তান বেঁচে যাচ্ছে। তাই বলে কি বিশ্বাস করব, আজেবাজে নামের কারণেই সন্তান বেঁচে যায়?

তো প্রথমটি অশিক্ষিত মানুষের কুসংস্কার আর দ্বিতীয়টি হল শিক্ষিত ও আলোকিত বলে যারা পরিচয় দেন তাদের কুসংস্কার। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাযত করুন এবং সর্বাবস্থায় ঈমানের উপর থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

 

advertisement