যিলকদ-১৪৩২   ||   অক্টোবর-২০১১

আধুনিক শিক্ষিত দ্বীনদার :ত্যাগ সারল্য ও বিড়ম্বনা

ওয়ারিস রববানী

 

দ্বীনদার বলতে সাধারণভাবে এখন আমরা বুঝি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দ্বীনের ওপর অনুশীলনে অভ্যস্ত মানুষ। ইবাদত-আমল, বেশভূষা ও চালচলনে যারা ফরয ওয়াজিব ও সুন্নতের ওপর আমল করতে সচেষ্ট থাকেন, তারাই দ্বীনদার হিসেবে পরিচিত। এ সমাজে এ রকম দ্বীনদার মহলের মাঝে দুটি শ্রেণীর অস্তিত্বই বড় রকমভাবে দৃশ্যমান। একটি শ্রেণী হচ্ছেন দেশের আলেমসমাজ, যারা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং দ্বীনী বিষয়ে শিক্ষাদানসহ দ্বীনী বিভিন্ন জিম্মাদারি পালনের মাঝেই জীবন অতিবাহিত করছেন। অপর শ্রেণীটি হচ্ছেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এমন মুসলিম ভাইয়েরা, যারা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শিক্ষা গ্রহণ না করলেও দ্বীনী দাওয়াত, দ্বীনী কোনো শায়খ কিংবা পরিবেশের স্পর্শে পরবর্তীতে দ্বীনী জীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন। তাদের অনেকেই পারিবারিক পরিবেশ ও প্রতিকূল কর্ম পরিবেশের মধ্যেও দ্বীনের বাস্তব অনুশীলনে জীবন অতিবাহিত করছেন। একই সঙ্গে দ্বীনী কাজেও তারা নিষ্ঠার সঙ্গে সময় ও মেহনত দিচ্ছেন। আলেম না হয়েও দ্বীনদার আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনের কাজে নিমগ্ন ভাইদের জীবন বহু কুরবানী ও মেহনতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনদার ভাইদের কিছু জরুরি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হবে।

তাদের জীবনে সবচেয়ে বড় দিকটি হচ্ছে তারা দ্বীনদারির জীবনে প্রবেশ করেছেন এবং এ জীবনধারা নিয়েই চলছেন। আধুনিক শিক্ষিত অপর বহু মানুষের তুলনায় আল্লাহ তাআলার দয়ায় তারা একটি সুন্দর ও সৌভাগ্যময় জীবন পেয়েছেন। বহু গাফেল মুসলিমের জীবনে সেটা সম্ভব হয়নি। নিঃসন্দেহে এটা তাদের বড় সৌভাগ্য ও সাফল্য। কিন্তু এর সঙ্গে একটি সীমাবদ্ধতার কথাও মনে রাখার বিষয় যে, তারা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ করা এবং দ্বীনী ব্যক্তিত্বের অব্যাহত সংস্পর্শ ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ক্রমিক আত্মিক-মানসিক পরিচর্যা লাভ করার সুযোগ পাননি। এ কারণে সচেতনভাবে না হলেও  দ্বীনকেন্দ্রিক অনুভূতি ও জীবনচর্চায় তাদের অনেককে সূক্ষ্ম ও স্থূল কিছু বিড়ম্বনায় পড়ে যেতে দেখা যায়। কখনো কখনো ছোটখাটো সে বিড়ম্বনায় অনঢ় হয়ে থাকার কারণে সেটি বড় রকম বিচ্যুতিতেও পরিণত হয়। এভাবে দ্বীনদারির জীবনে      বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির একটি জটিল ঘুর্ণাবর্ত তৈরি হয়। তাই সুস্থ দ্বীনদারির জীবনের জন্যেই এসব বিড়ম্বনা ও বিচ্যুতি থেকে মুক্ত থাকা ও মুক্ত হওয়ার জন্য কিছু আলোচনা দরকার।

দুই.

এসব বিড়ম্বনা ও বিচ্যুতির বেশ কিছু ক্ষেত্র ও চিত্র চোখে পড়ে। একটি হচ্ছে, দ্বীনের পথে অগ্রসর নতুন কোনো আধুনিক শিক্ষিত ভাই অনেক সময় তার দ্বীনদারির মাপকাঠিকে অধীনস্থ,

পরিবারভুক্ত ও সম্পর্কিত সবার জন্য দ্বীনদারির মাপকাঠি সাব্যস্ত করে নেন। এতে নানা ধরনের সমস্যা হয়। ধরা যাক, দ্বীনদারির জীবনে প্রবেশের পর তাহাজ্জুদ আদায়ের অনুশীলনে একজন পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। দিন-রাতের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে নির্দিষ্ট কিছু আমলে সফল অভ্যস্ত মানুষরূপে গড়ে উঠেছেন। এটা নিঃসন্দেহে তার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু দেখা যায়, তার সঙ্গে সম্পর্কিত কিংবা তার পরিবারভুক্ত অন্যদেরকে এ অনুশীলনে আনতে তিনি এতটাই রূঢ় ও কঠোর হয়ে উঠছেন যে, অন্যদের মাঝে হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক নয়। দ্বীনদারির দৃশ্যমান চূড়ান্ত কোনো স্তরে যাওয়ার নিজের সাফল্য ও চেষ্টাটা প্রশংসনীয়। কিন্তু একই বিষয়ে অন্যদের ওপর চূড়ান্ত চাপাচাপিটা অন্যদের জন্য বেশিরভাগ সময়ে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। দ্বীনদারির পথে অন্যদের পর্যায়ক্রমে অগ্রসরতার গতি ও আগ্রহ এতে হোঁচট খায়। এটা অনেক সময় পরিণতিতে অন্যদের

অ-দ্বীনদারি ও নিজের তীব্র হতাশার উপলক্ষেও পরিণত হয়। এটি বেশ বড় একটি বিড়ম্বনার বিষয়। একইভাবে দ্বীনদারির ক্ষেত্রে নিজের কোনো অভ্যস্ত ও পছন্দনীয় রীতি বা রুচিকে অপরের জন্য জরুরি মনে করার মধ্য দিয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। কোনো শায়খের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কিংবা দ্বীনী-দাওয়াতী কোনো মেহনতের সঙ্গে জড়ানো অথবা নির্দিষ্ট কোনো মনীষীর চিন্তা ও রচনার প্রভাব গ্রহণের বিষয়ে একজনের মাঝে গভীর আগ্রহ ও নিবেদন বিদ্যমান। নির্দিষ্ট সেই আগ্রহ ও নিবেদন তিনি অন্যদের মাঝে না দেখলে তার দ্বীনদারির সঠিকতা বা পূর্ণাঙ্গতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে থাকেন। আমার দ্বীনদারির জন্য এই ধারাটাকে এত উপকারী ও জরুরি অবস্থায় পেয়েছি ও জেনেছি, তিনি সেটা গ্রহণ করছেন না কেন, তাহলে তো তার মাঝে দ্বীনদারিই আসেনি-এরকম একটা প্রান্তিক চিন্তায় ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্যের প্রতি কু-ধারণার একটি চোরাপথও তৈরি হয়। যেটি আসলে নিজের জন্যই ক্ষতিকর।

এ ধরনের বিড়ম্বনার অপর একটি দিক হচ্ছে, নিজেকে দ্বীনদার মনে করেও দ্বীনের অজানা যে যে বিধান পরবর্তীতে নিজের রুচি ও আগ্রহের পরিপন্থী প্রমাণিত হয়, কারো কারো পক্ষে সেটা মানতে না পারা। বিষয়টি জানা কিংবা জানানোর পর নিজের রুচিমতো না হওয়ায় সেটিকে গ্রহণ করতে না পারার জন্য বিপরীত বিচিত্র প্রশ্ন দাঁড় করানো ও যুক্তি খোঁজার পেছনে লেগে যাওয়া। লেনদেন, সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলোতেই এ ব্যাপারটা বেশি ঘটে থাকে। দ্বীন এ রকম বিধান দিয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে দ্বীনের মেজাজ ও রুচি এ রকম-এতটুকু সিদ্ধান্ত কারো কারো মানসিক সন্তুষ্টি ও প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট হয় না।

এতে নিজেদের দ্বীনদারির মাঝে মারাত্মক বিচ্যুতির ছিদ্রপথ সৃষ্টি হয়। নিজেকে পুরোপুরি দ্বীনদার মনে  করার পরও যখনই দ্বীনের কোনো বিষয় নিজের রুচির সঙ্গে না মিলে তখনই সেই বিধানটিকে আমলযোগ্য মনে করা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। হালাল-হারাম, ফরয-ওয়াজিব সবক্ষেত্রেই ব্যাপারটি ঘটতে পারে। শিক্ষা-দীক্ষা, বেড়ে ওঠা ও চিন্তার ক্রমাগ্রসরতার ক্ষেত্রগুলোতে গভীরভাবে দ্বীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা এবং পরে দ্বীনী জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলে নিজের রুচি ও দ্বীনের আহকামের সামঞ্জস্য বিধান একটি অতি দুরূহ বিষয়ে পরিণত হয়। নিজে নিজে খুঁজলে এর কোনো সমাধান পাওয়া সহজ হয় না। এতে দ্বীনের সঙ্গে দিনদিন নিজের বোধ ও রুচির দূরত্ব বাড়তে থাকে, যা আসলেই হতাশাজনক। তাই দ্বীনী বিধান সামনে আসার পর নিজের অসঙ্গিতিশীল রুচির লাগামটাই টেনে ধরতে হবে। অন্য কোনো প্রশ্ন ও যুক্তির পথে যাওয়া যাবে না।

আরেকটি বিড়ম্বনা হলো, দ্বীনদারির জীবন ও দ্বীনের সঙ্গে কিছুটা সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরই দ্বীনী বিষয়ে সমাধানমূলক মতামতদান ও গবেষণার অধিকার নিজের সঙ্গে যুক্ত করার মতো ভুল পথে হাঁটা। এটা বহু ক্ষতি ও বিপর্যয়ের উপলক্ষ তৈরি করে। সাধারণত বৈষয়িক কোনো ব্যাপারেও এ ধরনের অধিকারবোধ সচেতন কেউ লালন করেন না। বিষয় ভিন্ন হলে মতামত দেওয়া থেকে সযত্নে দূরে থাকে সবাই। যার যার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও প্রকৌশলীর বিষয়ে চিকিৎসক এবং চিকিৎসকের বিষয়ে প্রকৌশলী কোনো মতামত দিতে যান না। দিলেও সেটা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অথচ দ্বীনী বিষয়ে যে  কাউকে মতামতদান ও গবেষণায় নিমগ্ন হতে দেখা যায়। দ্বীনী উলূমের বিষয়ে অতি প্রাথমিক জ্ঞানও যার থাকে না, তিনিও গবেষণার অধিকার দাবি করেন। যারা পুরোপুরি বোকা কিংবা দ্বীনী জীবনের সঙ্গে যাদের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই-তাদের এ জাতীয় দাবির ক্ষেত্রে অন্য একটা অর্থ ও তাৎপর্য সবার সামনে উন্মোচিত থাকে। কিন্তু যারা প্রকৃত অর্থেই দ্বীনদার-আধুনিক শিক্ষিত হলেও-তাদের কারো কারো মাঝে এমনতর মনোভাব কিছুটা বিস্ময় ও বেদনার উদ্রেক করে। কারণ এর ফলাফল খুবই দুর্ঘটনাময়। দ্বীনী উলূম তো কোনো ঠুনকো ও পলকা বিষয় নয় যে, দুই-দশ দিনের অবসরে সে উলূম আত্মস্থ করেই যে কেউ মতামত দেওয়া শুরু করতে পারে।

জানতে চাওয়া ও জানা দোষণীয় কোনো বিষয় নয়; বরং উচিত ও প্রশংসনীয়। সেই জানতে চাওয়ার পথে দ্বীনদারির জীবনে অগ্রসর কোনো আধুনিক শিক্ষিত মানুষের পথচলা শুরু হলে সে পথ তো সহজে শেষ হওয়ার কথা নয়। মতামত দেওয়া ও গবেষণা শুরুর মঞ্জিল পর্যন্ত তিনি এত সহজে কীভাবে যাবেন!

এর কাছাকাছি আরেকটি বিষয় হল, দ্বীনের নামে প্রচলিত বা হঠাৎ প্রচলন দেওয়া কোনো দুষ্ট ও ক্ষতিকর পদক্ষেপ সম্পর্কে দ্বীনী বিষয়ের অথরিটি-বিশেষজ্ঞ আলেমসমাজ কোনো সতর্কীকরণের অবস্থান গ্রহণ করলে আধুনিক শিক্ষিত দ্বীনদারদের অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বিরক্তি ও ক্ষুব্ধতার সঙ্গে এসব পর্যায়ে বলার চেষ্টা করেন-কেন এসব বিষয়ে বিভাজন ও মাতামাতি? সবই তো ইসলাম। আসলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় সারল্য থেকেই এ ধরনের অভিব্যক্তি তাদের থেকে প্রকাশ পেয়ে থাকে। ইসলামের নামে গজিয়ে ওঠা সবই যে ইসলাম-এটা তারা কীভাবে বুঝলেন! রাজপথে পকেটকাটার বিচিত্র কলাকৌশল সম্পর্কে যার কোনোই ধারণা নেই, সেই গ্রামের সরল মানুষটি পথচলার সময় তার সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকা হাসিমুখ অপরিচিত মানুষটিকে উপকারী বন্ধুই মনে করে বসতে পারেন। এটা একদিক থেকে তার দোষ নয়। সেই উপকারী বন্ধুই একসময় তাকে সর্বস্বান্ত করে সটকে পড়ে। তখন তিনি পথের পাশে বসে হা-হুতাশ করেন। কিন্তু এ জাতীয় পকেট কাটার ঘটনায় ক্ষতি হয় তার একার। আর দ্বীনী বিষয়ে পকেটকাটার জন্য যারা আসে তাদেরকে উপকারী বন্ধু মনে করলে তারা বহু মানুষের দ্বীন-ঈমানের সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এজন্যই বিশেষজ্ঞ আলেমসমাজ বহু ভ্রূ-কুটির পরও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোতে সতর্কীকরণের অবস্থান ত্যাগ করতে পারেন না। আধুনিক শিক্ষিত দ্বীনদারদের মাঝে যারা এটা বুঝতে পারেন না তারা বিরক্ত হলেও তাদেরই কল্যাণের চিন্তা করে সতর্ককারীরা হাতগুটিয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

তিন.

আধুনিক শিক্ষিত কোনো কোনো মানুষ দ্বীনদারির জীবনে গভীরভাবে প্রবেশের পর আরেকটি বিড়ম্বনা তৈরি হয়। সেটি হচ্ছে তারা লেবাস-পোশাক, চালচলন-সবক্ষেত্রে পাক্কা দ্বীনদার মানুষ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় নিয়োজিত হন। এটা করতে গিয়ে তারা সব বিষয়ে তাদের দেখা কাছাকাছি পর্যায়ের কোনো কোনো দ্বীনদারের অনুসরণ শুরু করেন। জীবন-অনুশীলনের সব ক্ষেত্রেই দ্বীনদারি আনার চেষ্টায় তারা দ্বীনদারীর একটা গলদ ভাবমূর্তি বা ধারণা নিজের মনের মধ্যে গেঁথে নেন। তিনি হয়তো যাকে খুব কাছ থেকে দেখছেন, নানা কারণে তার পোশাক-আশাক-অপরিচ্ছন্ন থাকে, হয়তো বাড়িঘরের প্রতি তার খোঁজখবর একটু কম, সময়ানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা উদাসীন। অথচ অনুসারী এই লোকটি আগে ছিলেন উপরের ত্রুটিগুলো থেকে মুক্ত। দেখা যাচ্ছে, দ্বীনদারির জীবনে প্রবেশের পর মাশাআল্লাহ লেবাস-সূরত সব কিছুতে তার তো দ্বীনদারি ঠিকই চলে এসেছে, কিন্তু তার মাঝের আগের গুণগুলো ঝরে গেছে; যেগুলো আসলে দ্বীনদারিরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। দ্বীনদার-এর একটি গলদ ভাবমূর্তি জীবনের সঙ্গে জড়িত দ্বীনদারির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ভুলিয়ে দিয়েছে। আগের জীবনের সবকিছু, এমনকি ভালো গুণগুলোকেও পরিত্যাজ্য ভাবায় ঘটেছে। এটা একদিক থেকে তার বিচ্যুতির ঘটনা, অপর দিক থেকে এটি তার ঘনিষ্ঠদের মাঝে দ্বীনদারি সম্পর্কে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ানোর উপলক্ষ। দ্বীনদারির জীবন আপন করে নেননি-এমন ঘনিষ্ঠরা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন যে, সে তো আগেই ভালো ছিল। এখন তো আউলা-ঝাউলা হয়ে গেল। দ্বীনদারির প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা নেতিবাচক দৃষ্টান্তই কেবল উপহার দেয়। এসব ক্ষেত্রে তাই দ্বীনদারির সঠিক অবয়ব ও ভাবমূর্তি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

চার.

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনদার মানুষের মাঝে যারা দ্বীনী পারিবারিক পরিমন্ডল কিংবা দ্বীনী ব্যক্তিত্ব ও ইদারার পরিবেশের মাঝে বেড়ে উঠার সুযোগ পেয়েছেন তাদের জীবন ও দ্বীন-অনুশীলন চিত্র নানা স্বাতন্ত্রে উজ্জ্বল। তবে যারা ভিন্ন পরিবেশ ও শিক্ষায় বড় হওয়ার পর আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহে দ্বীনদারির জীবনে প্রবেশের সৌভাগ্য পেয়েছেন তাদের কারো কারো দ্বীন-অনুশীলনে উপরের বিড়ম্বনাগুলো বা তার কোনো একটি প্রকাশ পেয়ে থাকে। তাই এগুলো থেকে সযত্নে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে সবাইকে।

এসব বিড়ম্বনার পেছনে আসলে দুটি কারণের ভূমিকা বড়। একটি হচ্ছে, পর্যাপ্ত দ্বীনী ইলমের শূন্যতা এবং দ্বীনী ইলমের অধিকারী মনীষীদের সান্নিধ্যে অবস্থান করে দ্বীনের রুচি ও মেজাজ সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ থেকে দূরে থাকা। এ কারণে দ্বীনের ওপর কখনো কখনো নিজের রুচির প্রাধান্য চলে আসে।

অপর কারণটি হচ্ছে, বিভিন্ন হক (অধিকার বা প্রাপ্য) -এর ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় না রাখা। এক্ষেত্রেও ইলম ও রুচির প্রশ্নটি জড়িত। তারপরও এটিকে একটি স্বতন্ত্র কারণও বলা যায়। ফরয ইবাদতের হক, উপার্জনের হক, পরিবারের সংরক্ষন, সৌহার্দ্য ও সুশিক্ষার হক, দাওয়াতের হক, প্রতিবেশী ও সমাজের হক, শায়খ ও উম্মাহর হক, দ্বীনী কাজ ও জরুরি বৈষয়িক হক-ইত্যাদি হকের মাঝে কখন কোনটির দাবি আগে, কিভাবে হকগুলো আদায় করতে হবে, এর মাঝে ভারসাম্য কিভাবে হবে, এ বিষয়গুলো না বুঝে নিজের মতো করে প্রাধান্য সাব্যস্ত করলে হকের ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য ভেঙ্গে পড়তে পারে। দ্বীনদার তো অবশ্যই, কোনো মুসলমানের জন্যই সেটা

সমীচীন নয়।

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বহু দ্বীনদারের জীবনে যে ত্যাগ ও নিবেদনের মাধুর্য থাকে, সেখান থেকে অসচেতনতাঘটিত সারল্য ও বিড়ম্বনাগুলো দূর করতে সক্ষম হলে দ্বীনী জীবন অনেক সুন্দর হয়ে ওঠবে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

 

 

advertisement