জুমাদাল উলা-১৪৩২   ||   এপ্রিল-২০১১

মিন্ আদাবিল্ ইসলাম-৩

শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর) 

১১. কারো বাড়িতে মেহমান হলে যে কামরায় তোমাকে বসতে বা বিশ্রাম করতে বলা হয় তুমি সেখানে অবস্থান কর এবং দৃষ্টিকে সংযত রাখো। ঘরের সবকিছু এমনভাবে দেখতে আরম্ভ করো না যেন তুমি খানাতল্লাশি করছ। তেমনি বাক্স, থলে, ড্রয়ার বা পর্দা দিয়ে ঢাকা কোনো কিছু তুমি খুলতে যেয়ো না। কারণ তা আদব ও আমানতদারির পরিপন্থী। মেযবান তোমাকে আমানতদার মনে করেই তো মেহমান করেছেন। সুতরাং আমানতদারি রক্ষা করো এবং সাক্ষাতের নিয়মকানুন গুরুত্বের সাথে অনুসরণ করো। তাহলে মানুষের প্রীতি ও সম্মান লাভ করবে।

১২. সাক্ষাতের জন্য উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করবে এবং মেযবানের কাছে অতটুকু সময়ই অবস্থান করবে যা এই সাক্ষাত ও মেযবানের অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সুতরাং কারো আহার-বিশ্রাম বা একান্ত ব্যক্তিগত সময়ে সাক্ষাত করতে যেয়ো না এবং দীর্ঘ সময় বসে থেকে বিরক্ত করো না।

ইমাম নববী রাহ. কিতাবুল আযকার-এর (সালাম সংক্রান্ত বিভিন্ন মাসাইল) অধ্যায়ের শেষ দিকে বলেন, (মুসলিমের জন্য) একটি গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব বিষয় হচ্ছে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও দ্বীনদার মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করা এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখা। সময়-সুযোগ এবং অবস্থা ও পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে এই কাজ করা বাঞ্ছনীয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সাক্ষাতের সময়টি সঠিক হওয়া এবং সাক্ষাতের ধরনও বিরক্তিকর না হওয়া। এ সংক্রান্ত হাদীস ও আছার সবারই জানা আছে।

১৩. মেযবানের নিকট কথা বলতে হলে সংক্ষিপ্ত ভাষায় কথা বলবে এবং স্থান ও পাত্র সম্পর্কে সচেতন থাকবে। তুমি যদি হও মজলিসের কনিষ্ঠ ব্যক্তি তাহলে কেউ প্রশ্ন করার আগ পর্যন্ত তোমার চুপ থাকাই বাঞ্ছনীয়। তবে যদি নিশ্চিত বিশ্বাস হয় যে, তুমি যা বলতে চাচ্ছ তা খুবই উপযুক্ত এবং উপস্থিত ব্যক্তিদের তা পছন্দ হবে তাহলে সংক্ষেপে আদবের সাথে বলতে পার তবে ভাষা, সম্বোধন ও উপস্থাপনে ঐ মজলিসের আদব রক্ষা করা অপরিহার্য।

১৪. কোনো মজলিসে ঢোকার সময় আগে সালাম দিবে। আর মুসাফাহা করতে চাইলে মজলিসের সবচেয়ে গুণী বা সবচেয়ে জ্ঞানী বা সবচেয়ে পরহেযগার বা সবচেয়ে প্রবীণ বা এ জাতীয় কোনো বৈশিষ্ট্যে যিনি অগ্রগণ্য তার সাথে আগে মুসাফাহা করবে। প্রথম সারিতে প্রথমে যাকে দেখলে, ডান দিকে হলেও উত্তম ও অগ্রগণ্য ব্যক্তিকে রেখে তার সাথে আগে মুসাফাহা করতে যেয়ো না। বরং উপস্থিত ব্যক্তিদের মাঝে যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য তাঁর সাথে আগে মুসাফাহা করবে। আর কে সর্বোত্তম তা জানতে না পারলে বা সবাই একই স্ত্তরের হলে সর্বাধিক বর্ষীয়ান ব্যক্তির সাথে আগে মুসাফাহা করবে।  এটা সাধারণত বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বড়কে সম্মান কর, বড়কে সম্মান কর। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, বয়সে যে বড়, তাকে অগ্রাধিকার দাও।-সহীহ বুখারী ও মুসলিম

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

অনুবাদে:  নাজিবুল্লাহ সিদ্দীকুল্লাহ

 

 

advertisement