জুমাদাল উলা-১৪৩২   ||   এপ্রিল-২০১১

কুরআন মজীদের মর্যাদা রক্ষা করুন

মাওলানা হারুনুর রশীদ শ্রীপুরী

কুরআন মজীদ গোটা বিশ্ব মানবতার জন্য আল্লাহ তাআলার মহা নেয়ামত। ইনসান ও ইনসানিয়্যাতের মুক্তি ও সফলতা এই মহা নেয়ামতের যথাযথ মর্যাদা দানের মাঝেই নিহীত। ইতিহাস সাক্ষী, যেদিন থেকে মুসলিম জাতি কুরআন মজীদের সাথে ওয়াফাদারি ছেড়ে দিয়েছে সেদিন থেকেই তাদের অধঃপতনের সূচনা হয়েছে। আরব ভূমি থেকে ভৌগলিক দূরত্ব, ভূ-খন্ডের বিভিন্নতার কারণে সৃষ্ট ভাষার ভিন্নতা, বিশ্বরাজনীতির পট পরিবর্তন, অর্থনৈতিক জটিলতা, সমাজ-সভ্যতার বিবর্তন, সর্বোপরি মুসলমানদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে মুসলিমজাতি এখন কুরআন থেকে অনেক দূরে। এ পরিস্থিতি অনেক আগ থেকেই, তবে দিন দিন তা আশঙ্কাজনক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। সৃষ্ট এ পরিস্থিতি নিয়ে বহু পূর্বেই আলেমগণ ভেবেছেন। এ পরিস্থিতিতে কুরআনকে জীবন-ঘনিষ্ট করণের উপায় সম্পর্কেও চিন্তা করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে কিছু দূরদর্শী আলেম বিন্ন ভাষী পাঠকের জন্য কুরআনের অনুবাদের সিদ্ধান্ত নেন। ভারতবর্ষে শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহ. সর্বপ্রথম এ কাজ করেন। নিঃসন্দেহে তখনকার সময়ে এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল। পরবর্তীতে শাইয়খুল হিন্দ রাহ.সহ আরও অনেকে এই দ্বীনী খেদমত করেছেন। এখন বিশ্বের অনেক ভাষায়ই কুরআনের অনুবাদ হয়ে গেছে। বাংলা ভাষায়ও বেশ কিছু অনুবাদ হয়েছে এবং তা পাঠক মহলে সমাদৃত। 

২. কুরআনের শব্দ ও মর্ম দুটোই স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত। কুরআন মজীদের প্রতিটি শব্দের রয়েছে আলাদা মাহাত্ম। আর দশটা গ্রন্থের মতো এখানে শুধু মর্মই উদ্দেশ্য নয়। আর এ কারণেই না-বুঝেও কুরআন মজীদের তেলাওয়াত করলেও ছওয়াব হয়। এ বৈশিষ্ট্য একমাত্র কুরআন মজীদের। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, আরবী পাঠ ছাড়া শুধু অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা আদৌ শরীয়তসিদ্ধ  কোনো কাজ নয়। এতে কুরআনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।

বাংলাভাষাভাষী পাঠকের সুবিধার্থে আজকাল কুরআন মজীদের বাংলা উচ্চারণ প্রকাশিত হচ্ছে। এটাও শরীয়ত সমর্থন করে না। বাংলা বানানে আরবী উচ্চারণ যথাযথ প্রকাশ পায় না; বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা অর্থের বিকৃতি ঘটায়। একজন মুসলিমের কাছে এইটুকু দাবি কি খুব বেশি যে, সে কুরআন পাঠ করা শিখবে? জীবন যিনি দান করেছেন তার কালাম শেখার জন্য জীবন থেকে এইটুকু সময়ও আমরা বের করতে পারি না?

সাহিত্যপ্রেমী কিছু লোক বিভিন্ন ভাষায় কুরআন মজীদের কাব্যানুবাদও করেছেন। কিন্তু কুরআন সাহিত্য চর্চার গ্রন্থ নয়। এবং কুরআনকে জীবন-ঘনিষ্ট করণের যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে কুরআনের অনুবাদ শুরু হয়েছিল তাও এর উপর নির্ভরশীল নয়। তাই এ কাজটাও বৈধ নয়। কুরআন নিজেই কুরআন সম্পর্কে বলছে, (তরজমা) এটা কোনো কবির কালাম নয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা, বোঝা, সে অনুযায়ী আমল করা এবং কুরআনের মর্যাদা রক্ষা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

 

 

advertisement