রজব ১৪৪৫   ||   জানুয়ারি ২০২৪

হযরত প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান রাহ. ছিলেন আল্লাহর একজন বিশিষ্ট ওলী

অধ্যাপক গিয়াসুদ্দীন আহমদ

نحمده ونصلي على رسوله الكريم.

আহ! আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন হামীদুর রহমান ছাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।

আল্লাহ তাআলার এই প্রিয় মানুষটি ইন্তেকালের দুদিন পরই ঢাকার একটি ইসলাহী মাহফিলে কথা বলতে গিয়ে অধম কেঁদেই ফেললাম। সে মাহফিলে, ‘আজ আমাদের শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাধারণ-অসাধারণ মানুষের মাথার তাজ, আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি, এ দেশের খ্যাতিমান প্রাণপুরুষ আল্লাহর ওলী হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান ছাহেবের ইন্তেকাল হয়ে গেল এই দুদিন আগে।

এ দেশে তাঁর জুড়ি নেই। এদেশে তাঁর মতো মানুষের জন্ম আর হবে কি না একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। ব্যস, আল্লাহ তাআলাই রহম করার মালিক। তিনি মারহুমীনদের নেক ও যোগ্য উত্তরসূরি আমাদের মাঝে তৈরি করে দিন।

সেদিনকার মাহফিলে অধমের প্রায় সমস্ত আলোচনা প্রফেসর হযরতকে নিয়েই হল। মাহফিলে উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘আজ আপনারা এখানে এসেছেন ইসলাহী বয়ান শুনতে। কিন্তু এ বিষয়ে হযরত প্রফেসর ছাহেবের মূল্যবান বয়ান কোথাও শুনতে পাবেন কি? আপনাদের মাঝে যারা তাঁর বয়ান কোনোদিন শুনেছেন, একমাত্র তাঁরাই বুঝতে পারবেন, ইসলাহী বয়ান কাকে বলে। তিনি বেঁচে থাকতে প্রতি শনিবার বাদ মাগরিব তাঁর বয়ান হত বিভিন্ন ঘরোয়া মজলিসে।

২।

হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহ.-এর অনেক দ্বীনী কাজের যোগ্যতার সঙ্গে ইসলাহী কাজের যোগ্যতাও বহু উচ্চ মার্গে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি একাধারে প্রখ্যাত বুযুর্গ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. এবং তাঁরই শায়েখ হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী রাহ.-এর ধাঁচে গড়া তাঁর সর্বশেষ খলীফা হযরত মাওলানা আবরারুল হক ছাহেব রাহ.-এর খলীফা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে ছিলেন। হযরত হাকীমুল উম্মতের এমন দুজন খলীফার খলীফা হওয়ার সৌভাগ্য বহু উচ্চমানের কথা। তাই হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহ.-এর বহু খলীফার মাঝে আলেম উলামাও অনেক আছেন।

সিলসিলায়ে এমদাদিয়া আশরাফিয়ার মহান ব্যক্তিত্ব হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলতেন, ‘কেউ যদি দরবেশ হতে চাও, তবে অমুক অমুকের কাছে যাও, আর যদি প্রকৃত মানুষ হতে চাও তবে আমার কাছে আস।বলা বাহুল্য, হযরত হাকীমুল উম্মত (نورالله مرقده)-এর এ কথা অত্যধিক অর্থবোধক, যার ব্যাখ্যার অবকাশ এখানে নেই।

সংক্ষেপে বলি, এরকম একজন প্রকৃত মানুষই ছিলেন আমাদের প্রফেসর হযরত রাহ.।

৩।

হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান রাহ. সম্পর্কে আমার মতো অধম কী লিখবে? তাঁর দ্বীনদারী, পরহেযগারী ও দ্বীনী ও দুনিয়াবী জ্ঞানগরিমা সম্পর্কে লেখার যোগ্যতা আমার নেই। তবে দুজনের মধ্যকার সম্পর্কের কথাটা একটু বলে নিই। আমার জীবনের ত্রিশ বা চল্লিশের কোঠায় লালবাগ মাদরাসায় দেখতাম, হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ.-এর আশেপাশে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও পাঁচকল্লি টুপি পরিহিত এক মওলভী ঘোরাফেরা করছেন। সহাস্য বদনে তাঁর সাথে অতি উৎসাহে হযরতের ইশারা ইঙ্গিতে সাড়া দিচ্ছেন। জানার  কৌতূহল হল, লোকটি কে? মসজিদ-মাদরাসার বাইরে হযরতের সঙ্গে বা দূরে যখন হাঁটেন, তখন পায়ে রাবারের জুতা। হায়রে! সরলতার এক আজীব নমুনা। পরিচয় না জেনে কয়দিন থাকা যায়। কাকে যেন জিজ্ঞাসা করে জানলাম, প্রফেসর হামীদুর রহমান। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপক, হযরতের খলীফা। আমার চোখ তো কপালে গিয়ে উঠল। হযরতের সঙ্গে অধমের ইসলাহী সম্পর্ক থাকায় অধমও কাছে ধারে থাকি। মনে হল, তাঁরও কৌতুহলআমি কে। যাক, অনতিবিলম্বেই পরিচয় হয়ে গেল। হাসিমুখে উভয়ের সালাম ও মুসাহাফা হল। অধিকন্তু তিনি জানতে পারলেন, আমি অধম শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহ.-এর জামাই। ব্যস, সরলতার আতিশয্যে দুলাভাই ডাকতে শুরু করে দিলেন। সেইসঙ্গে পীরভাই তো ছিলামই।

প্রফেসর হামীদুর রহমান রাহ.-এর জ্ঞান-গরিমার কথা বলতে গিয়ে আমাদের উভয়ের পয়-পরিচয়ের কথা এসে গেল। বয়সে আমরা সমবয়স্ক। তিনি ৮৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করলেন, আমার বয়সও বর্তমানে ৮৫ বছর। বিগত কয়েক বছর ধরে আত্মীয়তার সূত্রে তিনি আমার তালই হয়েছিলেন। তার আগে জীবনের বেশির ভাগ সময় তাঁর সঙ্গে দ্বীনী ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল। আর পীরভাই হওয়ার পূর্বে তিনি তো ভাই-ই, দ্বীনী ভাই। কিন্তু দুই ভাইয়ের সম্পর্কের ব্যবধানটা আকাশ ও পাতালের।

৪।

হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান ছাহেব রাহ. আমাদের মতো মাদরাসায় পড়ুয়া লোক ছিলেন না। তিনি জীবনের শুরু থেকে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির পথ পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু মাদারযাদ ওলীর রঙে রঙ্গিন হওয়ায় তিনি জীবনের প্রথম থেকেই আল্লাহওয়ালাদের সোহবতে থেকেছেন। প্রখ্যাত আল্লাহর ওলী হযরত হাফেজ্জী হুযুরের সঙ্গ পাওয়াতে এবং তাঁর সোহবতে থেকে তাঁর জীবনের রং বড় মাপের ওলীর রঙে রঙিন হয়ে গিয়েছিল।

হযরত হাফেজ্জী হুযুরের ইন্তেকালের পূর্বে হযরতেরই মাধ্যমে হযরত মাওলানা আবরারুল হক ছাহেব রাহ.-এর সাহচর্য লাভ করেন। হযরত হাফেজ্জী হুযুরের ইন্তেকালের পর হযরত মাওলানা আবরারুল হক হারদূঈ রাহ.-এর সোহবত তথা সাহচর্য প্রফেসর ছাহেবকে  দাওয়াতুল হকের কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্বীনী ও ইসলাহী জগতের শীর্ষদেশে নিয়ে গিয়ে ছিল। এ দেশে হযরত মাওলানা ফজলুর রহমান রাহ.-এর পরই প্রফেসর ছাহেব হলেন হারদূঈ হযরতের দ্বিতীয় খলীফা অথবা মাওলানা সালাহ উদ্দীন ছাহেবের পর তৃতীয় খলীফা।

এই উভয় শায়েখের খলীফা হওয়ার সাআদাত (সৌভাগ্য) ইংরেজি শিক্ষিতদের মাঝে প্রফেসর হযরতেরই। প্রথম দিকে এদেশে যখন হযরত আবরারুল হক হারদূঈ রাহ. তাশরীফ আনতেন তখন আমরা দেখেছি, হযরত মাওলানা ফজলুর রহমান ও প্রফেসর হামীদুর রহমানই হতেন হারদূঈ হযরতের চোখের মনি। লোকে বলে, ‘রতনে রতন চেনে

প্রফেসর ছাহেব হুযুরের প্রথম শায়েখ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. জীবিত থাকাকালে প্রফেসর ছাহেব শায়েখের সোহবত সদা এমন আঁকড়ে থাকতেন এবং বৃদ্ধাবস্থায় শায়খের দ্বীনী কাজে এমন সহায়ক হতেন যে, প্রফেসর ছাহেবকে হযরত শায়েখের যিন্দা লাঠিবলা হত।

আমরা দেখেছি, গণ্যমান্য লোকজন যখন শায়েখের দরবারে মহামূল্যবান দ্বীনী নসীহত শুনতে আসতেন, তখন বয়সজনিত কারণে প্রিয় শায়েখের কথা একটু অস্পষ্ট হত বলে প্রফেসর ছাহেব হুজুরই শায়েখের দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন। শায়েখের দ্বীনী বক্তব্য যতই গভীর অর্ধবোধক হোক, প্রিয় শিষ্য সাথে সাথে তা উপলব্ধি করে মেহমানদের সামনে এমনি স্পষ্টভাবে সাবলীল প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করতেন, যাতে মেহমানগণ মুগ্ধ ও আপ্লুত হতেন। বিদেশী মেহমানদের সামনে হযরত শায়েখের দ্বীনী ও রাজনৈতিক বক্তব্যকে প্রিয়তম শিষ্য হযরত প্রফেসর ছাহেব অনর্গল ইংরেজি ভাষায় এমনই স্পষ্টভাবে পেশ করতেন, যাতে বিদেশী মেহমানগণ শায়েখের বক্তব্য হযরত প্রফেসর ছাহেবের ইংরেজিতে শুনে অভিভূত হয়ে যেতেন।

প্রসঙ্গত হযরত শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক ছাহেব রাহ.-এর মুখে প্রফেসর হযরতের দ্বীনী বিষয়াদির বা টহফবৎংঃধহফরহম এবং শায়েখের দোভাষী হিসেবে কি বাংলা কি ইংরেজি ভাষায় তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের কথা শুনুন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রফেসর হামীদুর রহমান এক আজীব মানুষ! তাঁর মতো ভাষাবিদ অত্যন্ত বিরল! আমার বক্তব্যকে তিনি দেশী-বিদেশীদের সামনে বাংলা বল, ইংরেজি বলযেকোনো ভাষায় এমনি সাবলীল ও শ্রুতিমধুর কণ্ঠে পেশ করেন যে, আমরা অবাক হয়ে যাই।

অন্য এক সময় প্রফেসর ছাহেবের আলোচনা আসলে শায়খুল হাদীস রাহ. বলে উঠলেন, ‘আরে, প্রফেসর হামীদুর রহমান ছাহেব তো আল্লাহ ওয়ালা আলেমদের সোহবতের বরকতে আমাদের আলেমদেরও অনেককে ছাড়িয়ে গেছেন।

আমি অধমের যতদূর মনে পড়ে, হযরত শায়েখ রাহ. এ কথা বলেছিলেন, প্রফেসর ছাহেবের দ্বীনদারী, পরহেযগারী ও আমল, এবং প্রফেসর ছাহেব হুযুরের দ্বীনের تفقه বা সমঝ-বুঝ লক্ষ করে।

৫।

আল্লাহু আকবার! একজন ইংরেজি শিক্ষিত মানুষ, একজন ইউনিভার্সিটি প্রফেসরও এমন আল্লাহর ওলী হয়! আমি অধম শতবার বলি, ‘তাঁর উদাহরণ তিনি নিজেই।

প্রফেসর ছাহেব তো মাদরাসা পড়ুয়া ছিলেন না। এর পরও এত ইলম তিনি কোথা থেকে হাসিল করেছিলেন? যখন আল্লাহ তাআলার অপার রহমতে আল্লাহ ও রাসূল প্রেমে তাঁর অবগাহন করার সৌভাগ্য হল, তখন কি তিনি তাঁর মাহবুবে হাকীকীদ্বয়ের পবিত্র কালাম (কুরআন-হাদীস) না বুঝে থাকতে পারেন? এই দুই কালাম বোঝার জন্য তিনি মাদরাসা ছাত্রের মতো আরবী ইলম হাসিলে লেগে গেলেন। সকল ছেলেকেই তো তিনি আলেম বানিয়েছেন। নিজে পড়েছেন ইংরেজি, হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আর ছেলে-মেয়েদের বানিয়েছেন হাফেজে কুরআন ও আলেম-আলেমা। ছেলেরা যখন আলেম হতে লাগল তাদেরকেও বললেন, ‘আমার ইলম হাসিলের পথে তোমরা আমাকে সহযোগিতা করবে। এ পথ চলায় আমি যে ভুল করি, তা তোমরা অসংকোচে ধরিয়ে দেবে।

মোটকথা, এ সাধনায় তিনি এমন সিদ্ধি লাভ করলেন যে, পবিত্র কুরআন হাকীমের শিক্ষক হয়ে গেলেন। শিশুদেরকে পড়াতে তাঁকে দেখেছি আমি। বুয়েট মসজিদে পবিত্র কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা পড়াতে দেখেছি। নিজে তাঁর দরসে বসেছি।

৬।

আপন ছেলে-মেয়েদের সর্ব প্রথমে হাফেজে কুরআন করার উদ্দেশ্যে প্রফেসর হযরত নিজ বাসাতে একজন হাফেজ শিক্ষক রেখে হাফেজিয়া মাদরাসা আরম্ভ করেছিলেন। প্রথম দিকে তাঁর এবং অধমের ছেলেরা হিফজ পড়ত বলে তার সে মাদরাসা বুয়েট কোয়ার্টার থেকে আজিমপুরে৩০, শেখ সাহেব বাজার রোডে অধমের বাসায় স্থানান্তরিত করেন। অবশেষে তিনি তার সে মাদরাসাকে আজিমপুর ছাপড়া মসজিদে স্থানান্তরিত করেন। তখন তাঁর ও আমাদের প্রিয়তম শায়েখ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. প্রফেসর ছাহেবের নামের অংশ রহমানথেকে উক্ত মাদরাসার নামকরণ করেন হাফেজিয়া রহমানিয়া মাদরাসা

প্রফেসর হযরত রাহ. এ হাদীস বিলক্ষণ জানতেন— ‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়েছে এবং তার হুকুমের ওপর আমল করেছে, তার মাতাপিতাকে কিয়ামতের দিন এমন একটি তাজ পড়ানো হবে, যার আলো সূর্যের আলো থেকেও অধিক উজ্জ্বল হবে।... যখন মাতাপিতার এত মর্তবা হবে তখন যে ব্যক্তি স্বয়ং কুরআন শরীফ পড়বে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন) তার সম্বন্ধে তোমাদের কী ধারণা? অর্থাৎ তার মর্তবা অসীম ও অতুলনীয়।

প্রফেসর ছাহেব হুজুর বুখারী শরীফের এই মশহুর হাদীসও জানতেন

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَه.

যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ শিক্ষা করে ও শিক্ষা দেয় সে-ই তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম।

পবিত্র কুরআন ও হাদীসের এমন সব মর্তবা ও ফযীলত জানার পর তিনি (প্রফেসর ছাহেব) কি পারতেন নিজে কুরআন-হাদীসের ইলম হাসিল না করে থাকতে এবং ছেলেদের আলেম না বানিয়ে যেতে? ওলী-আওলিয়ার সোহবতে থেকে সারা জীবনের সাধনায় প্রফেসর ছাহেব হুজুর পবিত্র কুরআনের যে কত বড় সাধক হয়েছিলেন তা তাঁর কুরআনের ডাক ও আমাদের জীবন’ (মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে প্রকাশিত) পুস্তকখানি পড়লে আন্দায করা যায়। প্রসঙ্গত পাঠক-পাঠিকাদের অনুরোধ করি, প্রফেসর ছাহেবের তাযকিরাতুল আখিরাহকুরআনের ডাক ও আমাদের জীবনকিতাবদুটি মনোযোগের সাথে পড়তে। প্রফেসর ছাহেব হুজুরকে যারা দেখেছেন এবং তাঁর বেলায়াতের মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাঁদের পক্ষে তাঁকে অন্তর দিয়ে না ভালবেসে থাকার উপায় নেই। আর আল্লাহর ওলীকে যে ব্যক্তি ভালবাসে সেও আল্লাহর ভালবাসার পাত্র হয় বলে জানি। আল্লাহ! তোমার এই ওলীর ভালবাসা আমাদের অন্তরে ঢেলে দাও এবং তাঁর আদর্শের অনুসরণ করে আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ায় কামিয়াব কর, যেমন তোমার হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে দুআ শিখিয়েছেন

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ حُبَّكَ، وَحُبَّ مَنْ يُّحبّك، وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُنِي إِلَى حُبِّكَ.

আয় আল্লাহ! আমাদের অন্তরে তোমার ভালবাসা দাও। এবং যারা  তোমাকে ভালবাসে তাদের ভালবাসা দাও এবং সেই আমলদারি মহব্বত দাও, যা দিলের মধ্যে তোমার মহব্বত পয়দা করবে।

উল্লিখিত বিষয়ের সমাপ্তি পর্বে প্রিয় পাঠকদের বলছি, হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহ. আল্লাহর ওলীদের সোহবতে থেকে আল্লাহর ওলী হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলার রহমতে ছেলে-মেয়েদেরও আল্লাহর ওলী হওয়ার পথে রেখে গেছেন। আমরা সকলে আন্তরিক দুআ করি, ছেলেমেয়েরা পিতার আদর্শে আদর্শবান হোন এবং পিতার অনুসরণ অনুকরণকারী হয়ে পিতার দ্বীনদারী ও পরহেজগারীর নমুনা হোন।

৭।

হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মহান আখলাক সম্পর্কে কিছু লেখার হিম্মত আমার নেই। তবে এ সম্পর্কে অধমের এতটুকু বুঝ-সুঝ আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ صَالِحَ الْأَخْلَاقِ

আমি আখলাকের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্য প্রেরিত হয়েছি।তিনি এসে এর পরম উৎকর্ষতা বা পরিপূর্ণতা সাধন করেছেন। নবীজীর পর চারিত্রিক উৎকর্ষতা তাঁর উম্মতের কার ভাগ্যে কতটুকু সাধিত হয়েছে, তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। হাঁ, আমাদের বর্তমান কালে যাদের আমরা উক্ত মহাগুণে গুণান্বিত হয়েছেন বলে মনে করি, হযরত প্রফেসর সাহেব তাদের অন্যতম।

তাঁর চারিত্রিক সরলতা, উদারতার কথা কী বলব। আমাদের উভয়ের অধ্যাপনার শুরুর দিকের কথা বলছি। তখন হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ.-এর সোহবতে এসে তিনি ইলমে দ্বীন হাসিল করছেন। সমবয়স্ক হলেও প্রফেসর হযরতের সামনে এই অধম কোন্ ছাই; কিন্তু যেহেতু আমার জীবনের লেখাপড়া শুরু হয়েছিল মাদরাসা পড়ার ভেতর দিয়ে, তাই তিনি যখন তখন এসে পড়তেন অধমের বাসায়একা অথবা তার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার মাশহূদুর রহমান সাহেবকে নিয়ে। এসেই বলতেন, দুলাভাই! দ্বীনী কথা কিছু বলে বা পড়ে আমাদের শোনান।

তো আমি আর তাদের কী পড়ে শোনাব! নামকাওয়াস্তে কিছু বলতাম বা শোনাতাম। তিনি কিছু না খেয়েই চলে যেতেন। সাদাসাদি করলে বলতেন বলে মনে পড়ে— ‘খেতে আসিনি, কিছু হাসিল করতে এসেছি। অতএব খাওয়া নিষেধ।

তখনো তার মতো মানুষকে যেখানে আমি দাওয়াত দিয়ে আনতে পারতাম না, সেখানে তার পক্ষ থেকে এ অবস্থা!

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন বলে আমার বাড়ির ইলেকট্রিসিটির কোনো দুরবস্থা হলে এবং ব্যবস্থার জন্য কোনো অফিসে যেতে হলে, শোনামাত্র বলতেন, চলুন এখনই যাই।

বলাবাহুল্য, তখনই আমাকে তার গাড়িতে নিয়ে গিয়ে কাজ সমাধা করে দিতেন। এ বিষয়ে যত অফিসে যেতাম, গিয়ে দেখতাম সেখানে বড় অফিসার প্রফেসর সাহেবের ছাত্র। আমার যেখানে সেই অফিসাদিতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হত সহজে কিছু করতে পারতাম না, সেখানে তিনি গিয়াসউদ্দিন ভাইয়ের কাজ ঘণ্টায় আঞ্জাম দিয়ে দিতেন।

একটি কথা বলতে ভুলে গেছিতার পায়ে কিন্তু ছিল সর্বদা রাবারের জুতা। ইউনিভার্সিটির ক্লাস নিতেও রাবারের জুতাই থাকত পায়ে। সাদা পাজামা-পাঞ্জামি টুপি তো ছিলই। তার ইউনিভার্সিটি ঢ়ৎবসরংবং বা ময়দানে যখনই যেতাম দেখতাম তার এই রাজকীয় ড্রেস। কোন্ বেটা কী বলবে এই পরোয়াই তার ছিল না। বরং ভার্সিটির বিভাগীয় অগাধ জ্ঞানের ফলে ইউনিভার্সিটিতে মহামান্য ভিসি থেকে শুরু করে সহকর্মী প্রফেসরদের মাঝে ছিল তাঁর মর্যাদা ও অনন্য আসন!

৮।

হযরত প্রফেসর ছাহেব তো এক সময় প্রচুর অর্থ কামাই করতেন, কিন্তু এসব ব্যয় হয়েছে আল্লাহর রাস্তায়। জানাযার নামাযের মাঠে তাঁর সম্পর্কে ঘোষিত হয়েছিল, তিনি কোনো ঘর বাড়ি বা জায়গা জমি রেখে যাননি। যা কামাই করেছেন, দ্বীনের কাজে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। বুয়েটের ভার্সিটি কোয়ার্টার ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে আমৃত্যু ভাড়া বাসায় থেকে গেছেন। অজস্র সম্পদ হাতে এলেও শহরে ঘরবাড়ি কিছু করেননি। গ্রামের বাড়িতে যেটুকু পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল তাতেও করেছেন দ্বীনী স্কুল।

সারা দুনিয়ায় এমন নজীর খুবই কম পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে তাঁর নজীর আমরা খুঁজে পাই হযরত শামছুল হক ফরিদপুরী (ছদর ছাহেব) রাহ.-এর মাঝে। হযরত ছদর ছাহেব হুজুরের মনোভাব ছিল, শহরে বাড়ি-ঘর বানিয়ে এবং এর পেছনে সারা জীবন কিছু না কিছু সময় দিয়ে দ্বীনী কাজের ব্যাঘাত না ঘটানো; বরং জীবনের সবটুকু সময় দ্বীনের কাজে ব্যয় করে পরকালের বৃহত্তর নিআমত হাসিল করা।

বলা বাহুল্য, আল্লাহ তাআলার এ ওলী প্রফেসর ছাহেব রাহ. ছিলেন হযরত ছদর ছাহেবের রূহানী একজন ওয়ারিস। আল্লাহর দ্বীনের জন্য ফেদা ও নিবেদিত। বড় কথা, হযরত ছদর ছাহেব রাহ. যে বলতেন, মানুষের আত্মিক মরয বা ব্যাধির মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাধি হচ্ছে, حب جاهحب مال অর্থাৎ সম্মান ও সম্পদের মোহ। এ দুটো এমনই সর্বনাশা ব্যাধি যে, অন্তর থেকে অন্য সব ব্যাধি ইসলাহী মুজাহাদার ফলে বেরিয়ে গেলেও এই ব্যাধি দুটা বের হয়ে ওঠে না; আর বের হলেও সর্বশেষে বের হয়। হযরত ছদর সাহেব রাহ.-সহ মুসলিহীনে উম্মতের এই সতর্কবাণী থেকে যথাযথ উপকৃত হয়েছেন আমাদের হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি সম্মান বা প্রতিপত্তির মোহ এবং সম্পদ বা অর্থের লোভ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে ইসলাহী জগতে শীর্ষস্থান জয় করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর এই ওলীকে হযরত ছদর ছাহেব রাহ. ও তাঁর অন্যান্য মুরব্বিদের সাথে জান্নাতুল ফিরদাউসের উঁচু মাকামে স্থান দান করুন। আমাদেরকে তাঁদের আদর্শের অনুসরণ করে। তাঁদের পথে চলে তাঁদের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। 

وما توفيقنا الا بالله.

৯।

হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহ. পরিপূর্ণ বার্ধক্য ও রুগ্ণ অবস্থায়ও আল্লাহ-রাসূলের মহব্বতে দ্বীনের প্রসারে লাঠি ভর দিয়ে ছুটে বেড়াতেন। লাঠি ছিল তাঁর লোক, যাদের কাঁধে ভর দিয়ে দিয়ে তিনি গাড়িতে উঠতেন এবং দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে চলতেন। তাঁরই হাতে গড়া নিজের আলেম ছেলেদের ও মেয়ে-জামাইদের বিভিন্ন ইলমী ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত করে রেখে তিনি তাঁর লাঠিদলের ওপর ভর দিয়ে সারা দেশের ডাকে সাড়া দিতেন এবং অমূল্য ভাষণ দান করতেন। আলহামদু লিল্লাহ! সেসব ভাষণ দুটি বড় পুস্তক আকারে সংকলিত হয়েছে। যারা তাঁর সুদূর মাহফিলাদিতে যোগদান করতে পারেননি, তারাও সংকলিত পুস্তকদুটি পড়ে মহা উপকৃত হতে পারেন। গ্রন্থদুটি বাংলাবাজার মাকতাবাতুল আশরাফ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। তা পাঠ করে পাঠকবর্গ হযরত প্রফেসর ছাহেবের দ্বীনী জ্ঞানের গভীরতা, বরং অতলস্পর্শতার কিছুটা হলেও আন্দায করতে পারবেন।

১০।

প্রফেসর হযরত অসুস্থাবস্থায়ও মাহবুবে হাকীকীর ডাকে সাড়া দিয়েছেন এবং প্রতি বছর হজ্ব করেছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে, পবিত্র মক্কা ও রাওযায়ে আতহারের যিয়ারত না করে থাকতে পারতেন না। অসুস্থতার কারণে এমনও হয়েছে, কোনো বছর হজ্ব সমাপনের পর সফর সংক্ষিপ্ত করে চলে আসতে হয়েছে। এসে সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে উঠেছেন।

১১।

দ্বীনী এসব ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁর ইসলাহী কর্মকাণ্ডে প্রফেসর হযরত পিছিয়ে থাকেননি। আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের নিকটস্থ তাঁর বেনাম খানকাহী মজলিসে প্রতি শনিবার যথারীতি হাজির হয়েছেন। সথাসাধ্য ইসলাহী কাজ পরিচালনা করেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর পর উক্ত ইসলাহী মজলিসের কর্মস্থল তাঁর বড় জামাতা মাওলানা হাবীবুর রহমান খান ছাহেবের ব্যবস্থাপনায় ছাপড়া মসজিদেরই একটু পশ্চিমে আমতলা নামক স্থানের খানিক দক্ষিণ দিকে একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়েছে। হযরতের মুতাআল্লিকীন অর্থাৎ তাঁর মহব্বতে তাঁর সঙ্গে জড়িত ছিলেন যারা, তাদের সঙ্গী হয়ে প্রতি শনিবার মাগরিবের পর অথবা কোনো কোনো শনিবার সেখানে গিয়ে নিজের কলবের খোরাক হাসিল করতে পারেন।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত লাভের লোভে হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহ. নবীজীর সুন্নতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন যে, এর আলোচনাক্ষেত্র বাংলাদেশ মজলিসে দাওয়াতুল হকের কোনো মাহফিলে তিনি পারতে অনুপস্থিত থাকতেন না। তাঁর উপস্থিতিতে মজলিসের আমীর হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান দা. বা. পর্যন্ত অশেষ তৃপ্তি লাভ করতেন। কেননা, প্রফেসর ছাহেবের উপস্থিতি মজলিসকে নূরান্বিত করে রাখত। তিনি উপস্থিত থাকলে মাহফিল শেষে আমীর ছাহেব তাঁর দ্বারাই দুআ করাতেন। দাওয়াতুল হকের বার্ষিক মাহফিলে প্রারম্ভিক বক্তব্যও প্রফেসর ছাহেব হুযুরের দ্বারা পেশ করা হত। মাহফিলাদিতে দেখা যেত, তিনি প্রয়োজনের বাইরে একটি কথাও বলছেন না। অন্যদের বয়ান যখন চলত, তখন তিনি একেবারে নির্বাক হয়ে থাকতেন। কোনো সময় আমীর ছাহেব (মাওলানা মাহমুদুল হাসান) প্রফেসর ছাহেবের দিকে চেয়ে হাদীস বলতেন

مَنْ صَمَتَ نَجَا.

১২।

দ্বীনী মাহফিলগুলোতে প্রফেসর ছাহেবের বয়ানের যে কী প্রভাব পড়ত, তা প্রকাশের ভাষা আমার নেই। শ্রোতাদের পক্ষেও প্রকাশের ভাষা সবার হত না। তবে যারা যতটুকু উপলব্ধি করতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন, তারা বড়ই সৌভাগ্যবান হতেন।

প্রফেসর হুযুরের বয়ানের আজীব আকর্ষণ ছিল। প্রায় প্রত্যেক বয়ানের শুরুতে তিনি কুরআনে পাকের আয়াত

وَّ ذَكِّرْ فَاِنَّ الذِّكْرٰی تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِیْنَ.

পাঠ করতেন। (আর আপনি নসীহত করতে থাকুন, কেননা নসীহত ঈমানদারদের উপকারে আসে।)

অধমের এক আলেম বান্দাযাদা (মাওলানা হোসাইন আহমদ) বলত, ‘প্রফেসর ছাহেব হুযুরের একটি বিষয়েরই বয়ান বহুবার শুনেছি। কিন্তু যতবার শুনি, ততবারই যেন নতুন মজা পাই।

দাওয়াতুল হকের গোড়ার বানী (প্রতিষ্ঠাতা) মুহিউস সুন্নাহ, হাকীমুল উম্মতের আশরাফী বাগানের বুলবুলি হযরত আল্লামা আজিযুল হাসান মাজযুব রাহ. ছিলেন স্বনামধন্য কবি ও সাহিত্যিক। হযরত হাকীমুল উম্মতের শানে তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। তাঁর একটি কবিতায় হযরত এতই মুগ্ধ ছিলেন যে, মৃত্যুশয্যায় সেই শেরটি পড়তেন, আর বলতেন, ‘খাজা ছাহেব! আমার যদি লাখ টাকা থাকত (সেই জমানার লাখ টাকা) তবে এই শেরখানির বদলে আপনাকে দিয়ে দিতাম। কবিতাটি এই— 

ہر تمنی دل سے رخصت ہو گئی

اب تو آجا اب تو خلوت ہو گئی۔

অর্থাৎ সমস্ত আশা-আকাক্সক্ষা দিল থেকে বিদায় নিয়েছে (চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু  নেই)। দিল খানা সবকিছু থেকে শূন্য হয়ে ওগো প্রিয়তম তোমারই অপেক্ষা করছি। এখন তুমি এসে পড়, তোমার সঙ্গে মিলনের জন্য তোমার এই প্রেমিক প্রস্তুত হয়ে আছে।

হযরত প্রফেসর ছাহেব রাহ.-ও আমাদের সিলসিলার উচ্চ পুরুষ হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত আশরাফ আলী থানভী রাহ.-এর মতো ভাবের সাগরে হয়তো উল্লিখিত কবিতাটি পড়তে পড়তে আপন প্রেমাষ্পদ মাহবুবে হাকীকীর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়েছেন।

إنا لله وإنا إليه راجعون.

আল্লাহ তাআলা এই ওলীকে তাঁর ছায়াতলে জান্নাতুল ফিরদাউসের উঁচু মাকামে স্থান দান করুন। আমাদের সকলকে তার পথের পথিক হয়ে তাঁর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য দান করুনআমীন! ছুম্মা আমীন! 

 

 

advertisement