রজব ১৪৪৫   ||   জানুয়ারি ২০২৪

প্রশ্নোত্তর

আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]

 

প্রশ্ন ৯২. সূরা মুজাদালার শুরুতে যে নারীর আলোচনা রয়েছে, তিনি কে? আর বিস্তারিত ঘটনাটি কী?

উত্তর : সূরা মুজাদালার শুরুতে যে নারীর কথা বলা হয়েছে, তিনি হযরত খাওলা বিনতে সালাবা রা.।

বিস্তারিত ঘটনাটি হল, খাওলা রা. ছিলেন হযরত আওস ইবনে সামেত রা.-এর স্ত্রী। আওস রা. একবার রাগের বশে স্ত্রীকে বলে ফেললেন, তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মতো (অর্থাৎ আমি তোমাকে আমার জন্য মায়ের পিঠের মতো হারাম করলাম)। স্ত্রীকে লক্ষ করে এরূপ বলাকে যিহার বলা হয়। সেকালে এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যেত। আওস ইবনে সামেত রা. যদিও যিহার করে ফেলেছিলেন, কিন্তু এরপরই তিনি এজন্য অনুতপ্ত হলেন। এদিকে খাওলা রা. পেরেশান হয়ে সমাধানের জন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছুটে যান এবং এ বিষয়ে বিধান জানতে চান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে এখনো আমার কাছে কোনো বিধান আসেনি। তবে এ সম্ভাবনা প্রকাশ করলেন যে, তিনি তার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে গেছেন। খাওলা রা. বললেন, আমার স্বামী তো আমাকে তালাক দেয়নি। কিন্তু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই একই সম্ভাবনা প্রকাশ করলেন আর খাওলা রা.-ও একই প্রতিউত্তর করলেন। তার এই বারবার একই কথা বলে যাওয়াকে কুরআন মাজীদে বাদানুবাদ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে খাওলা রা. আল্লাহ তাআলার কাছেও ফরিয়াদ করলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার সাহায্য প্রার্থনা করি, আমার এই বিপদে। তিনি বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলেন, হে আল্লাহ! আমি আমার এ বিপদের কথা আপনাকেই জানাই। তিনি এভাবে ফরিয়াদ করে যাচ্ছিলেন, এরই মধ্যে আয়াত নাযিল হয়ে গেল এবং যিহারের বিধান ও যিহার প্রত্যাহার করার নিয়ম জানিয়ে দেওয়া হল। যা পরবর্তী আয়াতগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। (দ্র. মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২৭৩১৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২১৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪২৭৯; সূরা মুজাদালার ১-৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর, তাফসীরে তবারী, তাফসীরে ইবনে কাসীর)

প্রশ্ন ৯৩. একটি বাংলা তাফসীরগ্রন্থে ইবনে আরাবীনামে একজনের উদ্ধৃতি দেখেছি। তিনি কে? তার পরিচিতি জানতে চাচ্ছি। আরেকটি বিষয় হল, একজন বললেন, এটা ইবনুল আরাবী হবে, ইবনে আরাবী নয়। আচ্ছা, ইবনুল আরাবী আর ইবনু আরাবী কি একজনই? তাহলে উভয়টির মধ্যে সঠিক নাম কোন্টি? আর যদি দুজন হয়, তাহলে উভয়জনের পরিচয় জানতে চাই।

উত্তর : ইবনুল আরাবী আর ইবনু আরাবী দুইজন। একজন হলেন আবু বকর ইবনুল আরাবী। আরেকজন হলেন মুহিউদ্দীন ইবনু আরাবী। উভয়ই আন্দালুসের মানুষ ছিলেন। আবু বকর ইবনুল আরাবী ছিলেন একাধারে কাযী, ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির এবং মালেকী মাযহাবের একজন ইমাম। তিনি হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দীর মানুষ। তাঁর ইন্তেকাল ৫৪৩ হিজরীতে। তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব আহকামুল কুরআন, আলআওয়াসিম মিনাল কাওয়াসিম, আরিদাতুল আহওয়াযী (জামে তিরমিযীর ভাষ্যগ্রন্থ) ইত্যাদি। তাফসীরের কিতাবাদিতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাঁর কথা উদ্ধৃত করা হয় এবং ইবনুল আরাবী বলে সাধারাণত তাঁকেই বোঝানো হয়। তবে ইবনুল আরাবী নামে আরো কেউ কেউ রয়েছেন। স্মর্তব্য যে, বাংলা গ্রন্থাদিতে অনেক জায়গায় আবু বকর ইবনুল আরাবীকে ইবনে আরাবী লেখা হয়ে থাকে।

মুহিউদ্দীন ইবনু আরাবী ছিলেন সুফী ও দার্শনিক। তাঁকে আশশাইখুল আকবার বলা হয় এবং তাঁর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করেই সুফীবাদের একটি তরীকাকে আততরীকাতুল আকবারিয়্যা বলা হয়। তিনি হিজরী সপ্তম শতকের মানুষ, ইন্তেকাল ৬৩৮ হিজরীতে। তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব তাফসীরে ইবনে আরাবী, আলফুতূহাতুল মাক্কিয়্যাহ ইত্যাদি। তাঁর তাফসীরগ্রন্থে অনেক ‘শুযূয’ তথা বিচ্চিন্নমত এবং ভ্রান্তি রয়েছে। এগুলো নিয়ে অনেকেই পর্যালোচনামূলক কিতাব বা প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। এর মধ্যে-

تفسير ابن عربي للقرآن حقيقته وخطره

-নামে একটি রিসালা লিখেছেন মুহাম্মাদ হুসাইন আযযাহাবী রাহ.। একথাও স্মর্তব্য যে, মুহিউদ্দীন ইবনু আরাবীর নাম অনেক কিতাবে ইবনুল আরাবী- এভাবেও উল্লেখিত হয়েছে।

(দ্র. তবাকাতুল মুফাসসিরীন ১/১৯৬, ২৪৬; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৫/৪২, ১৬/৩১০, ২০/১৯৭, ২৩/৪৮; তারীখুল ইসলাম, যাহাবী ১১/৮৩৪, ১৪/২৭৩; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৩/১৫৬; তবাকাতুল আউলিয়া ১/৪৬৯)

প্রশ্ন ৯৪. হুজুর, আমি মাদরাসার ছাত্র। আমি তাফসীরে উসমানী, থানভী রাহ.-এর বয়ানুল কুরআন এবং মুফতী শফী রাহ. ও ইদরীস কান্ধলভী রাহ.-এর মাআরিফুল কুরআন সম্পর্কে জানি। এগুলো ছাড়া আরও কিছু উর্দূ তাফসীরগ্রন্থের নাম জানতে চাচ্ছি, যেগুলো খুবই উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করেন।

উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত তাফসীরগুলোর বাইরে তাফসীরে হক্কানীর কথা আলকাউসারের ২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিল সংখ্যায় আনওয়ারুল কুরআনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। তা দেখে নিতে পারেন।

মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী রাহ.-এর তাফসীরে মাজেদীও উপকারী একটি কিতাব। এ কিতাবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে বাতিল মতাবলম্বীদের বিভ্রান্তি এবং ইসলামের ওপর তাদের অভিযোগ-আপত্তি তুলে ধরে চমৎকারভাবে জবাব দেওয়া হয়েছে। কিতাবটি মজলিসে নাশরিয়্যাতে কুরআনসহ একাধিক মাকতাবা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো সংস্করণে মাওলানা আলী মিয়াঁ নদভী রাহ.-এর একটি মূল্যবান ভূমিকাও রয়েছে।

উল্লেখ্য, তাফসীরে মাজেদী সম্পর্কে জানতে আলকাউসারের কুরআনুল কারীম সংখ্যায় এ কিতাব সম্পর্কে প্রকাশিত প্রবন্ধটি পড়ুন। প্রবন্ধের শেষে মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমের একটি গুরুত্বপূর্ণ নোটরয়েছে। মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের তাবসেরেকিতাবেও তাফসীরে মাজেদী সম্পর্কে মাকালা আছে।

মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী রাহ.-এর হেদায়াতুল কুরআন তাফসীরগ্রন্থটিও খুব উপকারী। এটি আট খণ্ডে মাকতাবায়ে হেজায, দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

মাওলানা তাকী উসমানী দামাত বারাকতুহুমের তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন কিতাবটিও অনেক উপকারী। 

 

 

advertisement