জুমাদাল উলা-জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৫   ||   ডিসেম্বর ২০২৩

একটি কুরআনী আদব ॥
সমষ্টিগত কাজে অনুপস্থিতির জন্যও অনুমতি প্রয়োজন

মুহাম্মাদ এনামুল হাসান

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاللهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ اِذَا كَانُوْا مَعَهٗ عَلٰۤي اَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوْا حَتّٰي يَسْتَاْذِنُوْهُ  اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَاْذِنُوْنَكَ اُولٰٓىِٕكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ رَسُوْلِهٖ فَاِذَا اسْتَاْذَنُوْكَ لِبَعْضِ شَاْنِهِمْ فَاْذَنْ لِّمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَ  اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ.

মুুমিন তো কেবল তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে আন্তরিকভাবে মানে এবং যখন রাসূলের সাথে সমষ্টিগত কোনো কাজে শরীক হয় তখন তাঁর অনুমতি ছাড়া কোথাও যায় না। (হে নবী!) যারা তোমার অনুমতি নেয়, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সত্যিকারভাবে মানে। সুতরাং তারা যখন তাদের কোনো কাজের জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায় তখন তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হয় অনুমতি দিও এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দুআ কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতিক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা নূর (২৪) : ৬২

গাযওয়ায়ে আহযাবের সময় আরবের মুশরিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে মদীনায় আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে।  তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম কাফেরদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পরিখা খনন করেন। পরিখা খনন কাজে সাহাবায়ে কেরামের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং অংশগ্রহণ করেন। মুনাফিকরা প্রথমত খনন কাজে শরীক হতে চাইত না। পরিস্থিতির চাপে কখনো এসে গেলে লোক দেখানোর জন্য সামান্য কাজ করে চুপিসারে সরে পড়ত। এর বিপরীতে সাহাবীগণ অক্লান্ত পরিশ্রম  সয়ে কাজ করে যেতেন। কখনো প্রয়োজন দেখা দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রস্থান করতেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতদুটি অবতীর্ণ হয়।

আয়াতে বলা হয়েছে, সত্যিকারের মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং রাসূলের কাছে যখন কোনো সমষ্টিগত কাজের জন্য একত্রিত হয় তখন সেখান থেকে তাঁর অনুমতি ছাড়া কোথাও চলে যায় না। যদি যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তাঁর কাছে অনুমতি চায়। যদি অনুমতি পায় তাহলে যায়, আর নয়তো নিজের ব্যক্তিগত কাজের ওপর সমষ্টিগত কাজকে প্রাধান্য দেয়। 

অধিকন্তু যখন অনুমতি নিয়ে সেখান থেকে যায়, তো উল্লসিত মনে যায় না; বরং ভেতরে একটা পেরেশানি কাজ করে- আমার এ যাওয়াটা দুনিয়াকে আখেরাতের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না তো? গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি ছুটছি না তো? আমি যেটাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছি, সেটা কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ? এই পেরেশানি থেকে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা-প্রার্থনা করতে থাকে।

আয়াতে অনুমতির যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা শুধু  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসের জন্যেই খাস নয়; বরং আলেম-উলামা, ইমাম-উস্তায, পীর-মাশায়েখ, মা-বাবা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, পরিবারের মুরব্বী, প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দ প্রমুখ দায়িত্বশীলদের মজলিসের ক্ষেত্রেও এই আদব অনুসরণীয়। তারা কোনো কাজের জন্য সবাইকে একত্রিত হওয়ার আদেশ দিলে তা পালন করা উচিত। অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে চলে যাওয়া উচিত নয়। এটাই ইসলামী সামাজিকতার দাবি। 

এ আয়াত থেকে আরো বোঝা গেল, মা-বাবা, উস্তায ও প্রতিষ্ঠান পরিচালক থেকে অনুপস্থিতির জন্য কিংবা প্রস্থানের জন্য অনুমতি চাওয়া- ব্যক্তির জন্য অমর্যাদাকর নয়; বরং এর মাধ্যমে ব্যক্তির সম্মান আরো বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এই অনুমতি নেওয়াকে ঈমানের একটি আলামত বলা হয়েছে। বিপরীতে দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়াকে বলা হয়েছে মুনাফিকের আলামত।

এ আয়াত থেকে আরো বোঝা গেল, দ্বীনী কাজে অনুপস্থিত থাকার জন্য শুধু অনুমতি প্রার্থনাই যথেষ্ট নয়; বরং অনুমতির পাশাপাশি ভিন্নভাবে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করতে হবে। কারণ, হতে পারে, আমি যে কাজের জন্য এ দ্বীনী কাজ থেকে অনুপস্থিত থাকতে চাচ্ছি, তা প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এছাড়াও অনুমতির আরো অনেক উপকারিতা আছে। এর মাধ্যমে সম্মিলিত কাজে ঐক্য রক্ষা হয়। রক্ষা হয় অন্যান্য সহকর্মীদের মন। আল্লাহ তাআলা  আমাদেরকে আমলের তাওফীক দান করুন। [দ্র. সূরা নূর (২৪), আয়াত ৬২-এর তাফসীর- তাফসীরে কুরতুবী; তাফসীরে মাযহারী; বয়ানুল কুরআন; মাআরিফুল কুরআন; তাফসীরে উসমানী; তাওযীহুল কুরআন] 

 

 

advertisement