রবিউল আখির ১৪৪৫   ||   নভেম্বর ২০২৩

প্রশ্নোত্তর

[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]

 

প্রশ্ন ৮৭. ইহুদীদের কিছু মানুষকে বানর বানিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি কী?

উত্তর : ইহুদীদের কোনো একটি দল সাগরের তীরে বসবাস করত এবং মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদের জন্য শনিবারে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। প্রথমদিকে তারা শনিবারে মাছ না ধরলেও ছলচাতুরী করে মাছ আটকে রাখত। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলার বিধান অমান্য করে প্রকাশ্যেই এদিন মাছ ধরা শুরু করল। তাদের মধ্যকার ভালো লোকেরা তাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করল। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করল না। পরিণামে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দিলেন এবং তাদের আকৃতি বিকৃত করে তাদেরকে বানর ও শূকর বানিয়ে দিলেন। সূরা বাকারা (২) : ৬৫-৬৬; সূরা মায়েদা (৫) : ৬০ এবং সূরা আরাফের (৭) : ১৬৩-১৬৬ নম্বর আয়াতে এ ঘটনাটির এতটুকুই বর্ণিত হয়েছে।

ঐতিহাসিকদের মতে তারা লোহিত সাগর থেকে উদ্ভূত আকাবা উপসাগরের তীরবর্তী আইলা নামক স্থানে বসবাস করত। যা বর্তমানে মিশর ও সৌদি আরব সংলগ্ন দক্ষিণ জর্ডানে অবস্থিত। তবে ঘটনাটি কোন্ যুগের- তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে। শূকর ও বানরে পরিণত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়ে যায়। (কাসাসুল কুরআন, সিওহারবী, পৃ. ৪৬-৬০)

বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর, তাফসীরে তবারী, তাফসীরে ইবনে কাসীর

 

প্রশ্ন ৮৮. হুজুর, আমি জেনারেল শিক্ষিত। আমি উলূমুল কুরআন শাস্ত্রের নাম শুনেছি। এ শাস্ত্রে কী কী বিষয়ে আলোচনা থাকে, জানতে চাচ্ছি।

উত্তর : উলূমুল কুরআন অনেক বিস্তৃত একটি শাস্ত্র। কুরআন কারীম সম্পর্কিত বহু বিষয় এ শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অনেকগুলো আবার স্বয়ং এত বিস্তৃত যে, সেগুলো স্বতন্ত্র শাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এভাবে উলূমুল কুরআন শাস্ত্রের প্রায় শতাধিক শাখাগত শাস্ত্র রয়েছে। উলূমুল কুরআন শাস্ত্রে যেসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-

১। ওহী কী ও কেন এবং ওহীর প্রকারভেদ।

২।  تاريخ القرآن  (তারীখুল কুরআন) তথা কুরআন নাযিলের সূচনা ও ইতিহাস এবং أسباب النزول  (আসবাবুন নুযূল) তথা বিভিন্ন সূরা ও আয়াত নাযিলের কারণ ও প্রেক্ষাপট। সেইসঙ্গে  المكي والمدني  (আলমাক্কী ওয়ালমাদানী) তথা মাক্কী ও মাদানী আয়াত ও সূরার বিস্তারিত বিবরণ।

৩।  إعجاز القرآن  (ইজাযুল কুরআন) তথা কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও অলৌকিকতা এবং فضائل القرآن (ফাযাইলুল কুরআন) তথা বিভিন্ন আয়াত ও সূরার ফযীলত।

৪। أحكام القرآن (আহকামুল কুরআন) তথা কুরআনের বিধিবিধান।

৫। تاريخ تدوين القرآن (তারীখু তাদবীনিল কুরআন) তথা কুরআন সংকলনের ইতিহাস এবং মুসহাফ প্রস্তুত করার বিস্তারিত বিবরণ।

৬।  علم القراءة  (ইলমুল কিরাআত) তথা কুরআনের বিভিন্ন কেরাত এবং পাঠরীতি নিয়ে আলোচনা।

৭। علم التجويد (ইলমুত তাজবীদ) তথা তাজবীদ সংক্রান্ত শাস্ত্র।

৮। علم عدد آي القرآن (ইলমু আদাদি আয়িল কুরআন) তথা আয়াত সূরার সংখ্যা এবং শুরু শেষ নিয়ে আলোচনা।

৯।  الوقف والابتداء  (আলওয়াকফু ওয়ালইবতিদা) তথা আয়াত আয়াতাংশের কোথায় থামা যাবে বা যাবে না- সে সংক্রান্ত আলোচনা।

১০। কুরআন কারীম এবং উলূমুল কুরআন সম্পর্কে বিভিন্ন আপত্তি তার খণ্ডন।

১১। طبقات المفسرين (তবাকাতুল মুফাসসিরীন) তথা সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কারা হাফেয মুফাসসির ছিলেন এবং তাবেয়ীদের থেকে নিয়ে যুগে যুগে কারা মুফাসসির ছিলেন তার বিবরণ।

১২। علم أصول التفسير (ইলমু উসূলিত তাফসীর) তথা কুরআন তাফসীরের নীতিমালা।

১৩। علم التفسير (ইলমুত তাফসীর) তথা তাফসীরশাস্ত্র; তাফসীরগ্রন্থ রচনা সংকলনের ইতিহাস এবং বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ নিয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনা।

আরও বিস্তারিত জানার জন্য আপনি উলূমুল কুরআন সংক্রান্ত কোনো একটি গ্রন্থ দেখতে পারেন।

 

প্রশ্ন ৮৯. কুরআনে আবু লাহাবের স্ত্রীকে অভিসম্পাত করার কারণ কী? সে কে ছিল?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামকে আবু লাহাবের স্ত্রী কষ্ট দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যাতায়াতের পথে সে কাঁটা বিছিয়ে রাখত এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে সে নিন্দা ও কুৎসা রটিয়ে বেড়াত। আবু লাহাবের স্ত্রী ছিল আবু সুফিয়ান রা.-এর বোন। তার নাম ছিল আরওয়া। সে উম্মে জামীল নামে পরিচিত ছিল। (দ্র. সূরা লাহাবের তাফসীর, তাফসীরে তবারী, তাফসীরে ইবনে কাসীর) 

 

 

advertisement