যিলহজ্ব ১৪৪৪   ||   জুলাই ২০২৩

তাওবাকারীদের জন্য ৪০টি উপদেশ

শায়েখ সুলতান ইবনে আবদুল্লাহ আলউমারী

তাওবাকারীদের দেখলে, আল্লাহর দিকে তাদের প্রত্যাবর্তন দেখলে, সরল পথের ওপর তাদের চলার প্রচেষ্টা দেখলে মন আনন্দিত হয়। আল্লাহর শুকরিয়া যে, তাওবাকারী নারী-পুরুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

এই নেককার মানুষগুলোর জন্য আনন্দ সত্ত্বেও কিছু কিছু মানুষের বেলা দেখা যায়, তাওবার পরও তাদের দ্বারা এমন সব কাজকর্ম হচ্ছে, এমন এমন কথা ও আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে, যা থেকে বোঝা যায় তাদের তাওবার মাঝে ত্রুটি বা কমতি রয়েছে। মনে হয় যেন তাওবা কাকে বলে তা-ই তারা বুঝতে পারেননি। যা থেকে তাওবা করলেন তার দাবি কী সেটা তারা ধরতে পারেননি। এমনটা হওয়া অস্বাভাবিকও নয়। কারণ তাওবার জগৎ তাদের কাছে নতুন। তাই তাওবাকারীদের জন্য কিছু উপদেশ-পরামর্শ লিপিবদ্ধ করেছি, যা ইনশাআল্লাহ তাওবার পথে তাদেরকে উপকার করবে, তাদের পথ আলোকিত করবে। পথ চলা মসৃণ ও ত্রুটিমুক্ত করবে, তাদেরকে এস্তেকামাত ও অবিচলতার সাথে সঠিক গন্তব্যে উপনীত করবে।

১. প্রথমেই শুকরিয়া আদায় করুন- আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওবার তাওফীক দিয়েছেন। হারাম কাজে লিপ্ত অবস্থায় আল্লাহ আপনার রূহ কবজ করেননি।

২. মনে করুন, ইতিপূর্বে আপনি ছিলেন মৃত। হেদায়েতের নূরের মাধ্যমে আল্লাহ আপনাকে জীবিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

اَوَ مَنْ کَانَ مَيْتًا فَاَحْيَيْنٰهُ وَ جَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا يَّمْشِيْ بِهٖ فِي النَّاسِ کَمَنْ مَّثَلُهٗ فِي الظُّلُمٰتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا.

একটু বল তো, যে ব্যক্তি ছিল মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য এক আলোর ব্যবস্থা করেছি, যার সাহায্যে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, সে কি ওই ব্যক্তির মতো হতে পারে, যার অবস্থা এই যে, সে অন্ধকার দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা থেকে সে কখনও বের হতে পারবে না? -সূরা আনআম (৬) : ১২২

৩. আল্লাহ বান্দার তাওবায় খুব খুশি হন। যেমনটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

للهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ الْمُؤْمِنِ، مِنْ رَجُلٍ فِي أَرْضٍ دَوِّيَّةٍ مَهْلِكَةٍ، مَعَهُ رَاحِلَتُهُ، عَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ، فَنَامَ فَاسْتَيْقَظَ وَقَدْ ذَهَبَتْ، فَطَلَبَهَا حَتَّى أَدْرَكَهُ الْعَطَشُ، ثُمَّ قَالَ: أَرْجِعُ إِلَى مَكَانِيَ الَّذِي كُنْتُ فِيهِ، فَأَنَامُ حَتَّى أَمُوتَ، فَوَضَعَ رَأْسَهُ عَلَى سَاعِدِهِ لِيَمُوتَ، فَاسْتَيْقَظَ وَعِنْدَهُ رَاحِلَتُهُ وَعَلَيْهَا زَادُهُ وَطَعَامُهُ وَشَرَابُهُ، فَاللهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ مِنْ هَذَا بِرَاحِلَتِهِ وَزَادِهِ.

আল্লাহ তাআলা মুমিন বন্দার তাওবায় ওই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন, যে নির্জন মৃত্যু-উপত্যকা পাড়ি দিচ্ছে। সঙ্গে আছে তার সাওয়ারি। সওয়ারিতে আছে খাবার ও পানি। সে ঘুমিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখে, সাওয়ারি চলে গেছে। সে সওয়ারির খেঁাজে বের হল। একপর্যায়ে তার পিপাসা পেল। মনে মনে বলল, যেখানে ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। মৃত্যু আসা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকি। সে মৃত্যুর জন্য কাত হল। ঘুম ভাঙতেই দেখল, তার কাছে তার সওয়ারি হাজির। সওয়ারির ওপর তার পাথেয়, খাবার ও পানি রয়েছে। এই লোক সওয়ারি ও পাথেয় ফিরে পেয়ে যতটুক না খুশি -তার চেয়ে বেশি খুশি হন আল্লাহ তাআলা বন্দার তাওবায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৪৪

৪. আপনি জানেন তো, আন্তরিক তাওবাকারীর পাপ আল্লাহ তাআলা পুণ্য দিয়ে বদলে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

اِلَّا مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّاٰتِهِمْ حَسَنٰتٍ.

তবে কেউ তাওবা করলে, ঈমান আনলে এবং সৎকর্ম করলে, আল্লাহ এরূপ লোকদের পাপরাশিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৭০

৫. আপনি তো জানেন, আল্লাহ তাআলা আন্তরিক তাওবাকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

اِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ.

আল্লাহ তাআলা তাওবাকারীদের ভালবাসেন। -সূরা বাকারা (২) : ২২২

৬. তাওবার ক্ষেত্রে সততা অবলম্বন করুন। এক সাহাবীকে বলা নবীজীর সেই কথা স্মরণ করুন-

إِنْ تَصْدُقِ اللهَ يَصْدُقْكَ.

আল্লাহর সঙ্গে সততা অবলম্বন করলে আল্লাহ্ও তোমাকে সততার প্রতিদান দেবেন। -সুনানে নাসাঈ, হাদীস ১৯৫৩

৭. খারাপ বন্ধুদের থেকে দূরে থাকুন। তাদের সঙ্গে উঠা-বসা করবেন না। মোবাইল থেকে তাদের নম্বর মুছে ফেলুন। তাদের কথা মনে করিয়ে দেয় এমন সব কিছু সরিয়ে ফেলুন। কারণ, তারাই প্রাণঘাতী বিষ। আচার-আচরণে তাদের সঙ্গে ঢিলেমি করলে কখনো না কখনো আপনাকে তাদের পথে নিয়ে যাবে।

৮. আল্লাহর কাছে দৃঢ়তা লাভের দুআ করুন। নবীজীর এ দুআর প্রতি গভীর মনোযোগ দিন-

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ.

হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তর আপনার দ্বীনের ওপর সুদৃঢ় করুন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫২২

৯. নিজের মাঝে আল্লাহর ভয়ের দিকটি প্রবল করে তুলবেন না। মনে রাখবেন, আল্লাহ তাআলা ব্যাপক ক্ষমার অধিকারী। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

اِنَّ  رَبَّکَ وَاسِعُ  الْمَغْفِرَةِ.

নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমাশীল। -সূরা নাজম (৫৩) : ৩২

وَ اِنِّيْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ.

যে তওবা করে আমি তার জন্য পরম ক্ষমাশীল। -সূরা তাহা (২০) : ৮২

১০. অতীতের সব গুনাহের স্মৃতি থেকে মুক্ত হয়ে যান। যেমন ছবি, হারাম এ্যাপস, মোবাইলে থাকা হারাম ভিডিও ক্লিপ মুছে ফেলুন। এগুলো তাওবার প্রতি আপনার ঐকান্তিকতার প্রমাণ বহন করে।

১১. প্রথম দিকে গোনাহ পরিহার কঠিন লাগবে। কিন্তু নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন, ধৈর্য ধরুন। আল্লাহ তাআলার এ বাণী স্মরণ করুন-

وَ مَنْ يَّتَّقِ اللهَ  يَجْعَلْ لَّهٗ  مَخْرَجًا.

যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ তৈরি করে দেবেন। -সূরা তালাক (৬৫) : ২

১২. নেককারদের সঙ্গে মেলামেশার সময় মনে রাখুন, নেককার যুব সমাজের সবাই নিষ্পাপ নয়। তাদের মাঝে উত্তম, সর্বোত্তম যেমন আছে, তেমনি দুর্বল ও খারাপ স্বভাবেরও আছে। সুতরাং পেরেশান হবেন না। বিষ্মিত হবেন না। কারণ, ধর্তব্যের বিষয় হল, জীবনব্যবস্থা ও দ্বীন; ব্যক্তি নয়।

১৩. হেদায়েতের শুরু লগ্নেই পরিবার ও সমাজের সঙ্গে আপনার আচরণ বদলে ফেলুন। কারণ, অবিচলতার ফলাফল হল, উন্নতির দিকে পরিবর্তিত হওয়া।

১৪. শুরুটা করুন সুদৃঢ়ভাবে, নেক কাজে হোন উঁচু হিম্মতের অধিকারী।

১৫. সুন্নত আদায়ে যত্নবান হোন। এ অভ্যাস আপনার ঈমান ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি করবে। এটা আপনার প্রতি আল্লাহর মহব্বতের কারণ। ঈমানের স্বাদ লাভের মাধ্যম।

১৬. নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের সীরাত ও নেককারদের ঘটনা পড়ন। এ কাজটি আপনাকে দ্বীনের উপর অবিচল রাখবে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْکَ مِنْ اَنْۢبَآءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهٖ فُؤَادَکَ.

(হে নবী!) আমি তোমাকে বিগত নবীগণের এমন সব ঘটনা শোনাচ্ছি, যা দ্বারা আমি তোমার অন্তরে শক্তি যোগাই। -সূরা হুদ (১১) : ১২০

১৭. তাওবার পর আপনার কোনো কোনো আত্মীয় অথবা সহপাঠী কিংবা মহল্লার কোনো বন্ধু আপনাকে নিয়ে উপহাস করবে। তাদের প্রতি ভ্রম্নক্ষেপ করবেন না। নবীজী ও সাহাবায়ে কেরামের পথে সুদৃঢ় থাকতে পারা আপনার জন্য গর্ব ও সম্মানের বিষয়।

১৮. মাঝে মাঝে হাসপাতাল, লাশ ধোয়ার ঘর ও কবরস্থানে যাতায়াত আপনার মনকে নরম রাখতে সহায়ক হবে।

১৯. অনলাইনে ওয়াজ, ইসলামী প্রবন্ধ, ফতোয়ার ওয়েব সাইটগুলো তাওবার জন্য উপকারী হতে পারে। আহলে ইলম ও প্রসিদ্ধ আহলে হক দাঈদের ওয়েবসাইটগুলো দেখতে সচেষ্ট হোন। (একথা তার জন্য, যিনি ইন্টারনেটে অভ্যস্ত। অন্যথায় তা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত বই-পুস্তক অধ্যয়ন করুন এবং আলেমদের মজলিস-মাহফিলে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করুন। -অনুবাদক)

২০. ব্যক্তিগত ইবাদতে যত্নবান হোন। যেমন, নফল রোযা, কিয়ামুল লাইল, মাঝে মাঝে ওমরা করা। দ্বীনের ওপর অবিচল থাকতে এসব ইবাদতের বড় প্রভাব রয়েছে।

২১. অবসর সময়গুলো কাটাতে পারেন কুরআন হিফজ করে, তারবিয়াতি মজলিসে যোগ দিয়ে এবং ইলম অর্জন করে।

২২. একটি রুটিন তৈরি করুন। ভবিষ্যত জীবনে সুখী হওয়ার জন্য বিভিন্ন লক্ষ্য স্থির করুন এবং লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকুন। যেমন : কুরআন হিফয শুরু করা। এক বছরের মধ্যেই বিয়ে করা। হক্কানী উলামায়ে কেরামের সাপ্তাহিক বয়ান ও মজলিসে অংশগ্রহণ করা।

২৩. কোনো শায়েখ অথবা তালিবুল ইলমের সঙ্গে পরামর্শ করে চলুন। নিজের সব বিষয় একা একা সমাধান করতে যাবেন না।

২৪. আপনার উপযোগী কোনো যিকিরের মজলিসে অংশগ্রহণ করুন।

২৫. শয়তানের প্রবেশপথগুলোর ব্যাপারে সতর্ক হোন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَ لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ.

তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। -সূরা বাকারা (২) : ২০৮

২৬. অন্যায়ের প্রতিবাদে তাড়াহুড়ো করবেন না। চাই সে অন্যায় আপনার ঘরে, কর্মক্ষেত্রে অথবা আপনার শহরে হোক। আপনার আচার-আচরণে প্রজ্ঞার পরিচয় দিন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَمَنْ يُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِيَ خَيْرًا کَثِيْرًا.

যাকে প্রজ্ঞা দান করা হল, তার বিপুল পরিমাণে কল্যাণ লাভ হল। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৯

২৭. অতীত জীবনকে নতুন জীবনের জন্য শিক্ষা হিসেবে নিয়ে আসুন। যেমন : খারাপ বন্ধুর সঙ্গে উঠাবসা আপনার নষ্টের কারণ হয়েছিল। সুতরাং ভবিষ্যতে খারাপ মানুষের সঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে চলুন।

২৮. হেদায়েতের পর মহামানব হতে অতীতের মহাপাপ বাধা নয়। ভেবে দেখুন, উমর রা. হেদায়েতের আগে কেমন ছিলেন আর হেদায়েত লাভের পর কেমন হয়েছেন। হামযা রা. হেদায়েতের আগে কেমন ছিলেন আর হেদায়েতের পর কীসে পরিণত হয়েছেন। আল্লাহ আপনার তাওবার পরের অবস্থা দেখবেন, আগের অবস্থা নয়।

২৯. হেদায়েতের সঠিক অর্থ বুঝতে হবে। জেনে রাখুন, মধ্যপন্থায় থেকে আপনি মুবাহ কাজ করতে পারেন। তবে সবই হতে হবে শরয়ী নিয়ম-নীতির আলোকে

৩০. ফিতনার জায়গাগুলো থেকে দূরে থাকুন। ফিতনা দুই ধরনের :

ক. শাহওয়াত-কুপ্রবৃত্তি।

খ. শুবুহাত-সংশয়পূর্ণ বিষয়।

এসবের শুরু যেখান থেকে সেখানে ঢিলেমি করবেন না। কারণ, শুরুটাই একসময় শেষে নিয়ে উপনীত করবে।

৩১. ঈমানী সফর করুন। যেমন : আল্লাহওয়ালা মানুষের সঙ্গে ওমরার সফর করুন।

৩২. তাওবাকারী নারী-পুরুষের ঘটনাবলি পড়ন। যেন তাওবার ক্ষেত্রে নমুনা ও অনুসরণযোগ্য বিষয় পাওয়া যায়।

৩৩. দাওয়াতের মূলনীতি, শর্ত, দাঈর গুণাবলি এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে ভালো অনুশীলনের পর আল্লাহর পথে দাওয়াত এবং মানুষকে উপদেশ দিন।

(এর অর্থ এটা নয় যে, এবিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতির আগে কাউকে কোনো প্রকারের দাওয়াত দেওয়া যাবে না; বরং উদ্দেশ্য হল, নিজেকে ইলম, আমল ও হেকমত-প্রজ্ঞায় দাওয়াতের জন্য প্রস্তুত করা। এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। -অনুবাদক)

৩৪. সঠিক পন্থায় ইলম অর্জন করুন, বিজ্ঞ আলেমের কাছে গেলে তিনি আপনাকে ইলম অর্জনের উপযুক্ত মাধ্যম বলে দেবেন।

৩৫. তাওবা সংক্রান্ত হুকুম-আহকাম জেনে নিন। তাওবার আগে হারাম সম্পদ উপার্জন হয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সে সম্পদ মালিকের কাছে ফেরত দিতে হবে। মালিক পাওয়া না গেলে সদকা করে দিতে হবে। এমনিভাবে অন্য আরও মাসআলা থাকতে পারে, যেগুলোর সমাধান প্রয়োজন। ইলম আপনাকে এসব মাসআলার ক্ষেত্রে উপকার করবে।

৩৬. যে কোনো ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও অতিরিক্ত সাহস দেখানো থেকে সতর্ক থাকুন। সাধ্যের মধ্যে অল্প অল্প করে নিয়মিত নেক আমল করুন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ تَعَالَى أَدْوَمُهَا، وَإِنْ قَلَّ.

আল্লাহ্ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হল, যা নিয়মিত করা হয়; যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৮৩

মনে রাখবেন, বাড়াবাড়ি অবনতির পথ তৈরি করে।

৩৭. আল্লাহর ভালবাসায় হৃদয় পূর্ণ করতে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন।

৩৮. সম্ভব হলে দ্রুত বিয়ে করুন। এতে করে নিজেকে পাপ থেকে রক্ষা করা সহজ হবে। কারণ, অবিচলতার পথে সবচেয়ে বিপদজনক বাধা হল, কুপ্রবৃত্তি। খাহেশাত বা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণই সবচে বড় পাপ। যা অন্যসব পাপকে জন্ম দেয়।

৩৯. নতুন নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারসাম্য বজায় রাখুন। প্রত্যেককে যার যার হক বুঝিয়ে দিন।

৪০. আলেমদের থেকেই ফতোয়া নিন। সেসব যুবক থেকে ফতোয়া নিতে সতর্ক থাকুন, যারা কয়েক মাস হল তাওবা করেছে। তাদের কারো সঙ্গে অজ্ঞতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। কত তাওবাকারী এমন আছেন, যারা নতুন তাওবাকারীর কাছে প্রশ্ন করেছে, যার ইলম এখনো পোক্ত হয়নি। ফলে সেসব নতুন তাওবাকারী প্রশ্নকর্তার গোমরাহী ও ধ্বংসে পতিত হওয়ার কারণ হয়েছে।

শেষকথা

সবশেষে মনে রাখবেন, নির্জনের পাপ পতনের কারণ। আর নির্জনের ইবাদত দৃঢ়তা ও অবিচলতার কারণ।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আল্লাহ যেন আপনাকে দ্বীনের ওপর অবিচল রাখেন এবং আপনাকে আপনার সমাজে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেন। 

 

অনুবাদ : ওয়ালিউল্লাহ আবদুল জলীল

 

 

advertisement