যিলকদ-যিলহজ্ব ১৪২৮   ||   ডিসেম্বর ২০০৭

পাঠকের পাতা

শুরু হোক আমাদের প্রত্যয়দীপ্ত পথ চলা

ভাবতে বড় দুঃখ লাগে যে, বর্তমান যুগে আমরা ইলমে ওহীর চর্চার বিষয়টিকে এতই সাধারণ মনে করি যে, এর জন্য আমরা তেমন সময় দিতেও প্রস্তুত নই। কওমী মাদরাসার পড়তে এসে আমরা অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আর বলে থাকি, কী হবে এখানে পড়ে? কী লাভ এত দীর্ঘ সময় ব্যয় করে? এ শিক্ষায় নেই কোনো সার্টিফিকেট। নেই কোনো সরকারি মূল্যায়ন। তাই সরকারি চাকুরীও তেমন মেলে না এ শিক্ষায়।

এ যদি হয় আমাদের দুর্ভাবনা তাহলে আমাদের ভাগ্যে লাঞ্ছণা ছাড়া আর কীইবা জুটতে পারে? আমরা কি স্মরণ করতে পারি না আসহাবে সুফফার তালিবদের কথা? ইলমে ওহীই ছিল যাদের জীবনের পরম লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলাই ছিলেন যাদের একমাত্র সহায়। তারাতো অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে দ্বীনী ইলমের চর্চা করেছেন। ত্যাগের ইতিহাস রচনা করে গেছেন। বস্তুত তারাই স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন পৃথিবীর বুকে।

আমরা কি ইলমের জন্য তাদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে সাহসিকতার সাথে সামনে এগুতে পারি না? মহান আল্লাহর কাছে আমাদের যে বিপুল প্রতিদান তার সামনে পার্থিব ধন-দৌলতের কীইবা মূল্য আছে?

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, আজ আমাদের অনেকের লক্ষ্য চূড়ান্ত নয়। তাই আমাদের কোনো গন্তব্যও নেই। আমাদের নিজস্ব যোগ্যতায় পড়েছে চরম ভাটা। কোনো রকম দাওরা ফারেগ হতে পারলেই হল। ইলমী চিন্তা ও গবেষণা থেকে বহু দূরে সরে পড়ি। আমাদের অনেকের মধ্যে এমন কি হালাল-হারামেরও কোনো ভেদাভেদ থাকে না। অথচ মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর মতে দাওরা পাশ করার অর্থ হল, মাত্র ইলমের চাবি গ্রহণ করা। যে চাবি দ্বারা ইলমের দ্বার খুলে ইচ্ছেমত ইলম অর্জন করে নিতে পারে। এরপর কর্মের বিশাল ময়দানে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমরা কর্মের ময়দানে বড়ই দুর্বল ও অসহায়। তাই আমাদের অলসতা ও অদূরদর্শিতার সুযোগে বাতিল শক্তিগুলো দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বামপন্থী কলামিস্ট ও বাতিলপন্থীরা মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে ও আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে চলেছে। এমনকি আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব নিয়েও বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। অথচ আমরা নিরব নিস্তব্ধ। পার্থিব জীবন আমাদেরকে যেন গ্রাস করে ফেলেছে। তাই পৃথিবীর সবচে মর্যাদাবান শ্রেণী হয়েও আমরা আজ অপমানিত, লাঞ্ছিত।

আমরা এক বিশাল জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও সর্বত্রই আজ মিথ্যার জয়গান। হক্ব কথা বলার মানুষ আজ বড় কম। আমরা যেন জড়পদার্থ হয়ে পড়েছি।

এ অবস্থার প্রতিকারের জন্য আবারো আমাদেরকে শির উঁচিয়ে জাগতে হবে। ধরতে হবে জাতির হাল। নিজেদের আদর্শবান, যোগ্য সৈনিকরূপে গড়ে উঠতে হবে। দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে সর্বপ্রকার অলসতা ছেড়ে দিয়ে সকল বাঁধা দুপায়ে দলে এ তুফান পাড়ি দিতে হবে। হতে হবে ইসলামের যোগ্য ও নিঃস্বার্থ সেবক। এই একই লক্ষ্যে একই আকাক্সক্ষায় নতুন করে শুরু হোক আমাদের প্রত্যয়দীপ্ত পথচলা।

মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

 

তাঁদের প্রিয় কিতাব

<br> আমাদের আলোর পথের রাহবার

বাংলাদেশে বর্তমানে উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে ও সম্পাদনায় বেশ কয়েকটি ইসলামী মাসিক পত্রিকা বের হয়। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে মোট কয়টি পত্রিকা বের হয় তার সঠিক সংখ্যা আমার জানা নেই। আলিমদের দ্বারা একটি জাতীয় দৈনিক বের হলে জাতি আরো উপকৃত হত। আল্লাহ এই কাজের জন্য আলেম সমাজকে তাওফীক দান করুন। আফসোসের কথা হল, এসব ইসলামী পত্রিকার অধিকাংশ পাঠক কওমী মাদরাসার তালিবে ইলমরা। তাদের শিক্ষা ও সোনালী জীবন গঠনে মনোযোগী দৃষ্টি রাখা এ পত্রিকাগুলোর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। প্রিয় আলকাউসার পরে আগমন করেও মাদরাসার তালিবে ইলমদের জন্য শিক্ষার্থীদের পাতা ও শিক্ষা পরামর্শ নামে বিভাগ জারী রেখে ছাত্রদের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছে। এই বিভাগ দুটি থেকে ছাত্রদের কতটুকু ফায়দা হচ্ছে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। গত কয়েক সংখ্যায় শিক্ষার্থীদের পাতায় বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও মনীষী মুফতী তকী উসমানী দা. বা.-এর বিভিন্ন বিষয়ে তার প্রিয় কিতাব নিয়ে যে আলোচনা করা হল তা সত্যি ছাত্রদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ এক দিক-নির্দেশনা, যা অনুসরণে সফলতা ইনশাআল্লাহ ধরা দিবে। তাই আলকাউসার কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন, আগামী কোনো সংখ্যায় থেকে মাওলানা আব্দুল মালেক ছাহেবসহ বাংলাদেশের বড় বড় আলেমদের প্রিয় কিতাব সম্পর্কে তাদের সুন্দর অনুভূতি জানতে চাই।

বাংলাদেশি উলামায়ে কেরামের প্রিয় কিতাব নিয়ে আলোচনার সময় বর্তমান বাজারে যে সমস্ত দরসী-গায়রে দরসী কিতাব পাওয়া যায় বা লিখা হয়েছে তা নিয়ে ও আলোচনার করলে আরো ফায়দা হবে বলে মনে করি। কারণ একই বিষয়ের উপর বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ বই লেখার কারণে অনেক সময়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। অনেক সময়ে আলেমরাও এই বিভ্রান্তির জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। এ বিষয়ে মাওলানা আব্দুল মালেক ছাহেবের একটি তাহকীকী নজর কামনা করি।

আল মমিন ইবনে আব্দুল হাই

ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকা-১২০৪

 

 

advertisement