শাবান-রমযান ১৪২৮   ||   সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০০৭

ঈদ ও শাওয়াল : কিছু কথা

মুহাম্মাদ ত্বহা হুসাইন

যে সমস্ত ভাগ্যবান মানুষ রোযা রাখার সৌভাগ্য অর্জন করেছে, বিশেষত ভরা চৈত্রের কাঠ ফাটা রোদে পুড়ে ফসলের মাঠে লাঙল কাঁধের ক্লান্ত শ্রান্ত অথচ বিরামহীন কৃষক বা দুমুঠো অন্নের সন্ধানে মাটি কেটে বা খাল-বিল চষে বেড়ানো লবেজান দিনমজুর কিংবা ডাল ভাতের যোগান দিতে ঘামের সাগরে ভাসা রিকশাওয়ালার মতো সহজ সরল রোযাদার মুমিন বান্দাকে বেলা শেষে ইফতারের আনন্দ মুহূর্তটির কথা একবার জিজ্ঞাসা করে দেখো। জেনে দেখো কি অপার সুখ ও শান্তির মেঘমালা সন্ধ্যাবেলায় নেমে আসে। একগ্লাস স্বচ্ছ পানি, একটি খেজুর কিংবা দুদানা চনা মুড়ির সে কি স্বাদ আর আহ্লাদ! সে কি মজা আর তৃপ্তি!! কত নিষ্পাপ সেই আনন্দ, কত নির্মল সেই হাসি। রোযাদার ছাড়া পৃথিবীর কোন দিগ্বিজয়ীর চোখে-মুখে এমন আনন্দের ঢেউ খেলা করে কি? হায়! রোযাদারের সেই মুহূর্তের আনন্দ অনুভূতির যদি একটি চিত্র অংকন করা যেতো।

মুমিন বান্দা পুরো মাসের ত্রিশ দিনই এই আনন্দ উপভোগ করতে থাকে। এভাবে পুরো একটি মাস সিয়াম ও সংযম সাধনার পর চূড়ান্ত ইফতার বা ঈদুল ফিতরের সময় মুমিন বান্দার আনন্দ ও সুখানুভূতি কেমন হবে? এ জন্যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোযাদার ব্যক্তির আনন্দ উপভোগের দুটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, একটি ইফতারের (দৈনিক ইফতার ও ঈদুল ফিতরের) সময়, অপরটি স্বীয় প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়। -বুখারী, হাদীস ১৯০৪; মুসলিম, হাদীস ১১৫১

উৎসব শুধুই উৎসব নয়

শাবানের শেষে পশ্চিমাকাশে উদিত হওয়া বাঁকা চাঁদের মধ্য দিয়ে যে ইবাদতের শুভ সূচনা হল, রমাযানুল মুবারকের শেষে অপর এক ফালি চাঁদের আগমনে ঈদগাহে দুরাকাত নামাযের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায়ের মধ্য দিয়ে সেই ইবাদতেরই শুভ সমাপ্তি ঘটে। তারাবীহ আর ঈদুল ফিতর দুটিই ইবাদত। ঈদুল ফিতরকে নিছক একটি আনন্দ উৎসব ভাবা হলে এর মাহাত্যকে চরমভাবে খাটো করা হবে। বস্তুত ঈদুল ফিতর রমাযানের পরিপূর্ণতার উপর আল্লাহ প্রদত্ত একটি বিশেষ নিআমত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই নিআমত বা ইবাদতের উপলব্ধি আমাদের মন থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। ভিন জাতির বড় দিনের আনন্দ উৎসব আর হোলির আনুষ্ঠানিকতার সাথে যেন আমরা ঈদুল ফিতরকে একাকার করে ফেলছি। ঈদ উদযাপনের নামে সপ্তাহব্যাপী যেসব অনুচিত ও গর্হিত কাজে আমরা জড়িয়ে পড়ি, তা দেখে শয়তানও বুঝি লজ্জা পায়! আমি গোঁড়া বা কট্টরপন্থি নই। নির্মল আনন্দ প্রকাশের বিরোধীও আমি নই। সারাজীবন মলিনতা ও বিষন্নতার ছাপ চেহারায় ফুটিয়ে রাখতে হবে- এমন অযৌক্তিক দাবীও আমি করছি না। ইসলামও করেনি। বরং আনন্দ প্রকাশের জন্যেই তো ইসলাম ঈদুল ফিতরের প্রবর্তন করেছে। তবে এই আনন্দ ও হাসি-খুশি হতে হবে স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও নির্মল। ধর্ম ও বিবেকের সীমা লংঘন না করে। অন্যথায় হাসি-আনন্দের এই ইবাদতও উল্টো পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

ইসলামী ঈদের স্বাতন্ত্র

এক ঘেঁয়ে জীবনধারা থেকে কিছু সময়ের জন্য মন ও মননকে স্বাধীন করে মুক্ত মনে হাসি-খুশি করা একটি মানবিক চাহিদা। এ মানবিক চাওয়া থেকেই বিভিন্ন জাতি-গোত্রে বিভিন্ন উৎসবের জন্ম নিয়েছে। আর ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম বলে মানবিক এই চাহিদাকে আরো বেশি সম্মান করে বছরে দুটি ঈদ-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার প্রবর্তন করেছে। কিন্তু এ দুটি ঈদেও রয়েছে ইসলামের বিশেষ কিছু স্বাতন্ত্র। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে শুধু একটি বিষয়েই আলোকপাত করতে চাই। একটু ভাবলেই আমরা দেখতে পাই, বিশ্বের বিভিন্ন জাতির সব উৎসব মূলতঃ বিগত দিনের স্বরণীয় ঐতিহাসিক কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। খৃস্টানদের বড় দিন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বা যীশুখ্রীস্টের জন্মদিবসকে কেন্দ্র করে পালন করা হয়। যদিও বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে তাঁর জন্মদিনের তারিখ নিশ্চিতভাবে পৃথিবীর কারো জানা নেই। এবং তাঁর (যুগের) প্রায় চারশ বছর পর কথিত এই পঁচিশে ডিসেম্বরকে অদ্ভুতভাবে তাঁর জন্মদিন ধার্য করে উৎসব পালন শুরু হয়। তেমনি ইহুদীরা হযরত মুসা আলাহিস সালাম ও বনী ঈসরাইলের মুক্তি আর ফেরাউনের লোহিত সাগরে ডুবে মরার দিনকে কেন্দ্র করে উৎসব পালন করে থাকে। এমনিভাবে হিন্দুদের হোলি উৎসবসহ বারো মাসে তেরো পার্বণ আর বৌদ্ধদের কঠিন চীবর দানোৎসব সহ সবকিছু ঐতিহাসিক কোনো না কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে।

ইসলামের ইতিহাসে এ ধরনের বরং এর চেয়ে শতগুণ বেশী শৌর্য-বীর্যের গৌরব গাঁথা এবং তাৎপর্য বহুল ঐতিহাসিক ঘটনার কোনো অভাব ছিল না যাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর উৎসব করা যেত। পৃথিবী কেন, উভয় জগতের আকাশে সৌভাগ্যের সিতারা তো সেদিনই উদিত হয়েছিল যেদিন সরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে তাশরীফ এনেছিলেন। বা পৃথিবীর বুকে সর্বশেষ ওহী অবতরণের দ্বার যেদিন উন্মুক্ত হয়েছিল, হেরার রোশনীতে আলোকিত হয়েছিল পৃথিবী অথবা মদীনা তাইয়েবার আকাশে পতপত করে যেদিন ইসলামী ঝাণ্ডা উড়েছিল। কিংবা যেদিন তিনশ তেরোর কাফেলার সামনে নত হয়েছিল কুফরের আত্মম্ভরী মস্তক। মক্কা বিজয়ের যে ঐতিহাসিক দিনে মক্কার ছাদে হযরত বিলালের কণ্ঠ থেকে পৃথিবী শুনেছিল আল্লাহু আকবারের ধ্বনি। ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এসব ঐতিহাসিক দিনগুলোর মধ্যে কোন দিনটি যীশুখ্রীস্টের জন্ম দিবসের তুলনায় কম গুরুত্বের ছিল?

কিন্তু ইসলামের স্বাতন্ত্র এখানেই যে, পুরো উম্মাহর ঈদ উদযাপনের জন্য এমন কোনো দিনকে নির্ধারণ করেনি। বরং এর জন্য পহেলা শাওয়াল ও দশই জ্বিলহজ্বের দুটি দিনকেই ইসলাম বেছে নিয়েছে। যে দুটি দিনের সাথে স্পষ্টত ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার সম্পৃক্ততা বা যোগসূত্র নেই। দুই ঈদ প্রতি বছর এমন দুটি দিনকে কেন্দ্র করে আসে যখন মুমিন মুসলমানরা সম্মিলিতভাবে দুটি মহান ইবাদত সম্পন্ন করে। ঈদুল ফিতর সেই সময় আসে যখন মুমিনরা পুরো একটি মাস সিয়াম সাধনা মাধ্যমে একটি তরবিয়তী কোর্স সম্পন্ন করে রূহানী নূরে নূরান্বিত হয়। ঈদুল আযহা তখন উদযাপন করা হয় যখন আরেকটি বার্ষিক ইবাদত-হজ্ব সম্পন্ন হয়। লাখো মুসলমান আরাফার ময়দানে তাওবা-ক্ষমা প্রার্থনা করে একটি নবজীবন লাভ করে, আর হজ্বে অংশ নিতে না পারা মুসলমানরা কুরবানী করে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়। এভাবে ইসলাম তার অনুসারীদেরকে ঈদ উদযাপনের জন্য পুরনো দিনের কোনো ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারবার আনন্দে মেতে উঠার চেয়ে তরতাজা, সতত বর্তমান ও নগদ প্রাপ্তির উপর উৎসব উদযাপনে আগ্রহী করে তুলেছে। এতে মূলত এ শিক্ষাই প্রদান করা হয়েছে যে, তোমাদের আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ সেসব কাজ, তোমরা নিজেরাই হাল-যামানায় যা আঞ্জাম দেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছ, শুধু ওইসব কর্মকাণ্ড নির্ভর উৎসব নয় যা তোমাদের পূর্ব পুরুষরা করে গিয়েছেন। -যিকর ও ফিকর পৃ. ৫০-৫৩

ঈদ সংস্কৃতি

পুরো রমাযান মাসই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের ভরপুর মৌসুম। আর শেষ দশক তো হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মুবারক রজনী লাইলাতুল কদর ও ইতেকাফের মতো পুণ্যবান আমলের  কারণে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রমাযানের শুরু থেকে আরম্ভ করে বিশেষত শেষ দশকের অতি মুবারক সময়গুলোতে ঈদের বাজারের বেপর্দগী, গান বাজনাসহ অসংখ্য অসামাজিক কর্মকাণ্ডে এমনভাবে ডুবে যাই, পুরো বছরে মিলেও আমরা এমন অপসংস্কৃতিতে হয়তো লিপ্ত হই না। আমাদের সংস্কৃতির কি দশা, রাস্তায় বেরোলেই তা দেখা যায়। হায়রে লাইলাতুল কদরের কদর! ঈদ কার্ড সংস্কৃতির অপ্রয়োজনীয়তা আর অর্থহীনতার কথা কিইবা বলব। আর সেই ঈদ কার্ড যদি হয় নায়ক-নায়িকা-মডেলদের রং বেরংয়ের ছবি সমৃদ্ধ, তখন তা শুধু অহেতুক কাজই থাকে না বরং তার প্রচার-প্রসার নাজায়েযও বটে। হরেক রকমের ঈদ কার্ডের দোকান নিয়ে বসা আমাদের উৎসাহী তরুণ সমাজের দিনরাত বিকট শব্দে গান-বাজনার দ্বারা রমাযানের শেষ দশকের মূল্যবান মুহূর্তগুলো কতটা কলুষিত হয়, তা নিয়ে সচেতন মহল যদি একটু ভাবতেন! বিটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেল এবং আমাদের (!) সিনেমাজগত বিনোদনের নামে সপ্তাহব্যাপী যেসকল জিনিস দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করে- তা ভেবে খুব অবাক হই। আফসোস লাগে যখন এদের এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেখি- মহান পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মহা সমারোহে মুক্তি পাচ্ছে... এটাই কি ঈদের মাহাত্য? এতে কি নিহিত ঈদের পবিত্রতা?

ঈদ মুবারক, তবে...

ঈদুল ফিতরের মুবারকবাদ তাদেরই প্রাপ্য যারা রমাযানুল মুবারকের রোযা রেখেছে। কুরআন মজীদের হিদায়াত থেকে বেশি বেশি উপকৃত হয়েছে, কুরআন পড়েছে, বুঝেছে এবং সে অনুযায়ী পথ চলতে চেষ্টা করেছে। এবং রমাযানুল মুবারক একজন মুমিনকে তাকওয়া ও খোদাভীতির যে সবক ও তারবিয়াত দিয়েছে, যে ব্যক্তি পুরো বছর তার উপর অবিচল থাকার অঙ্গীকার করেছে।

তার চেয়েও বেশি মুবারকবাদ সেই ব্যক্তিই পেতে পারে যে পুরো মাসে পাওয়া এই তরবিয়তকে ঈদের প্রথম বেলাতেই ভেতর থেকে উগলে ফেলে দেয়নি, বরং বাকি এগার মাসও এর প্রভাবে প্রভাবিত থাকে, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। আচ্ছা, যে ব্যক্তি শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খুব ভালো ও উন্নত খাদ্য আহার করল, কিন্তু তা পেটে গিয়ে স্থির হওয়ার আগেই গলার ভিতর আঙ্গুল দিয়ে তা মুহূর্তেই উগলে ফেলল এই খাদ্য কি তার শরীরের কোন উপকারে আসবে?

কিন্তু যে বদনসীব হতভাগা রোযার সৌভাগ্য ও স্বাদ থেকে বঞ্চিত হল, সে পুরস্কার প্রাপ্তির এই অপার আনন্দ ও খুশির অনুমান করবে কিভাবে? এই দিনে তার আনন্দই কী, দুঃখই বা কীসে? যে যত ঈদ মুবারকই বলুক আর শুনুক, সবই প্রাণহীন শব্দ ও মর্মহীন সম্ভাষণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

ফিরনি-সেমাইয়ের ঈদ

দোষটা আমাদের এখানেই যে, শরীয়ত নির্দেশিত বিশেষ দিবস-রজনীকে কেন্দ্র করে আমরা তা উদযাপনের জন্য মনগড়া কিছু কর্মকাণ্ডকে নির্দিষ্ট করে ফেলি। ফিরনি-সেমাইয়ের আয়োজন, ঈদ মুবারক বলে কোলাকুলি আর ঈদের নামাযের পরে মৃত মুরুব্বীদের কবর যিয়ারত, ঈদের বখশিশ এর কোনোটিই মন্দ কাজ নয়। কিন্তু বিপত্তিটা তখন বাঁধে যখন আমরা এসব কাজকে ঈদের দিনের সাথে নির্দিষ্ট করি, এ দিনেরই অবশ্য করণীয় আমল বলে ভাবি এবং বছরের এই দিনেই শুধু এ ব্যাপারে উৎসাহী হই। এ বিষয় নিয়ে ভাবলে অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যায়। আর পটকবাজি, আতশবাজি এবং গান বাজনা ছাড়া আনন্দ প্রকাশ কি সম্ভব নয়?

শাওয়ালের রোযা

ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে করতে শাওয়ালের ছয়টি ফযীলতপূর্ণ রোযার কথা যেন আমরা একেবারে বিস্মৃত না হই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পুরো রমাযান এবং এর সাথে শাওয়ালে ছয়টি রোযা রাখল সে যেন পুরো জীবনই রোযা রাখল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৪

অর্থাৎ একটি নেক আমলের সওয়াব দশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। সে হিসেবে শাওয়ালের ছয়টি সহ প্রায় ছত্রিশটি রোযা রাখা মানে তিনশ ষাট দিনই রোযা রাখা। অতএব যে ব্যক্তি এভাবে প্রতি বছর ছত্রিশটি রোযা রাখল সে পুরো জীবন রোযা রাখল- একথা তো সহজেই অনুমেয়। -ফাতহুল মুলহিম ৩/১৮৭ 

সুতরাং বিলম্ব না করে ঈদুল ফিতরের পর শাওয়ালের প্রথম দিকে অতিরিক্ত এই ছয়টি রোযার ব্যাপারে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত।

তাঁদের ঘরেও ঈদ আসবে কি

ঈদের এই শুভদিনে দিনমজুর আর সমাজের নিম্নবিত্তের মানুষের ঘরেও যাতে হাসি-খুশি আর আনন্দের ছোঁয়া লাগে সেজন্য উচ্চবিত্ত আর মধ্য-বিত্তের মানুষরা ধনী-গরীব, ফকির-বাদশাহ আর রাজা-প্রজার মধ্যকার দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভাঙ্গার জন্য তাদের কাঁধে কাঁধ মিলাতে পারি। শুধু ঈদগাহের মাঠে নয়, ঈদের আগে ও পরে বস্তিতে তাদের বাড়ি আর ঝুপড়িতে গিয়ে গিয়ে নতুন জামাকাপড় আর নগদ টাকা পয়সা দিয়ে তাদের মুখে একটু হাসি ফুটাতে পারি। পূরণ করতে পারি তাদের বাচ্চা-কাচ্চার ঈদের বায়না। দোকানে দোকানে এখানে যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়- মার্কা কাপড় চোপড় দান করার জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে আমার শাহী মহলের সামনে গরীব-মিসকিন আর প্রতিবন্ধীদেরকে মরণসম দীর্ঘ লাইনে দাঁড় করিয়ে জনদরদী সাজার কসরত না করি। কারণ জীবনে যাদের হররোজ রোযা, ক্ষুধায় আসেনি নিদ- এর মত অর্ধমৃতদের সাথে এটা চরম উপহাস।

পরিশেষে কিছু ভাইয়ের কথা স্মরণ না করলে মুমিনের ঈদ পূর্ণতা পাবে বলে মনে হয় না। তাঁরা আমাদের ঐ সব ভাই পুরো রমাযান অতর্কিত গুলীর সাইরেনে যাদের সেহেরী হয়েছিল, খেজুরের বদলে বোমার লোকমা দিয়েই যারা ইফতার সেরেছিল। ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, লেবানন আর বর্তমানে পাকিস্তান কা মতলব কিয়া, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর শ্লোগানে প্রতিষ্ঠিত পাকভূমির সীমান্তে আমাদের সেসব অসহায় ভাইদের জীবনেও কি ঈদ আসবে? তারাও নতুন জামা-কাপড় পরে, তাকবীর ধ্বনি দিয়ে ঈদগাহে সমবেত হতে পারবে তো? তাদের সদা প্রবাহমান রক্ত ও অশ্রুর কালো-লাল দরিয়ার লাগি ঈদগাহে অন্তত আমার দুচোখের কোণ একটু ভিজে ওঠবে কি?

 

 

advertisement