রজব ১৪২৮   ||   আগস্ট ২০০৭

হযরত মারইয়াম আ. একজন সিদ্দীকাহ ছিলেন

মাসীহ ইবনে মারইয়াম তো কেবল একজন রাসূল। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছেন এবং তাঁর জননী হলেন সিদ্দীকাহ (ঈমান আনয়নকারী ও আল্লাহর ওলী) তারা উভয়েই খাদ্য গ্রহণ করত। দেখুন, আমি কীভাবে তাদের সামনে আমার আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করি, আর দেখুন, কীভাবে তারা সত্য-বিমুখ হয়। -সূরা মাইদাহ ৭৫

এখানে হযরত ঈসা আ. ও তাঁর জননী হযরত মারইয়াম আ.-এর প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এই দুই পুণ্যাত্মা সম্পর্কে ইয়াহুদী ও খৃস্টান জাতি যে সীমালঙ্ঘন করেছে তার প্রতিও এই আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে।

হযরত ঈসা আ. ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর সম্মানিত রাসূল। তাঁর বিভিন্ন মুজিযা ছিল। তাঁর পূর্বেও অনেক রাসূল এসেছিলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকেও বিভিন্ন মুজিযা দান করেছিলেন। হযরত মুসা আ.-এর হাতে নিষ্প্রাণ লাঠি জীবন্ত স্বর্পে পরিণত হত। তাঁর লাঠির আঘাতে সমুদ্র বিদীর্ণ হয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছিল এবং পাথর থেকে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়েছিল। এসবই হয়েছিল হয়েছিল আল্লাহ তাআলার আদেশে এবং এগুলো ছিল মুসা আ.-এর মুজিযা। তদ্রূপ হযরত ঈসা আ.কে মৃতকে জীবিত করার, কুষ্ঠরোগী ও জন্মান্ধকে সুস্থ করার মুজিযা প্রদান করা হয়েছিল। এসবও হত আল্লাহর আদেশে। তাহলে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের মতো হযরত ঈসা আ.ও একজন সম্মানিত রাসূল ছিলেন। এর বেশি কিছু তিনি ছিলেন না। সূরা মাইদাতে (১১৬-১১৭) এসেছে যে, কিয়ামতের  দিন আল্লাহ তাআলা ঈসা আ.কে জিজ্ঞেস করবেন, হে ঈসা! তুমি কি মানুষকে বলেছ, তারা যেন তোমাকে ও তোমার জননীকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে? ঈসা আ. বলবেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি পবিত্র! আমার কখনো এমন কথা বলার অধিকার নেই। আমি যদি এমন কথা বলতাম তবে আপনি অবশ্যই তা জানেন। কেননা আপনি আমার মনের কথাও জানেন।আবার তিনি তা-ও ছিলেন না যা ইয়াহুদীরা তার সম্পর্কে বলে থাকে। একজন রাসূল কখনো আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতার পথে পৃথিবীতে আসেন না।

হযরত মারইয়াম আ. ছিলেন একজন ওলী, পুণ্যশীলা রমণী। তিনি আল্লাহ তাআলার প্রতি ও তাঁর রাসূল ঈসা আ.-এর প্রতি ঈমান এনেছেন এবং সৎকর্ম করেছেন। পুত্র ছিলেন আল্লাহর রাসূল আর জননী ছিলেন তাঁরই সাহাবিয়া। এরূপ রাসূল ও সাহাবীর ধারাবাহিকতা তো তাঁদের পূর্বেও ছিল।

তারা উভয়েই ছিলেন রক্ত-মাংসের মানুষ। দৈহিক সকল ক্রিয়াই তাদের মধ্যে ছিল। তবে তারা আল্লাহর পুণ্যবান বান্দা ছিলেন।

খৃস্টানগণ হযরত মারইয়াম সম্পর্কে যে বিশ্বাস পোষণ করে তিনি কখনো তা ছিলেন না। আবার তিনি সেই অপবাদ থেকেও মুক্ত ছিলেন যা ইয়াহুদীরা তার প্রতি আরোপ করেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, এত স্পষ্ট বর্ণনার পরও তাদের অবস্থা লক্ষ করুন তারা কীভাবে সত্যগ্রহণে বিমুখ রয়েছে। বস্তুত সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও যারা হঠকারিতার পথ অবলম্বন করে তাদের  জন্য রয়েছে অসীম বঞ্চনা।

 

 

advertisement