রজব ১৪২৮   ||   আগস্ট ২০০৭

রজব মাস : যে বিষয়গুলো ভাবা প্রয়োজন

কুরআন মজীদে যে চার মাসকে আরবাআতুন হুরুম বলা হয়েছে মাহে রজব সেই মাসগুলোর অন্যতম। অন্য তিন মাস হল যিলকদ, যিলহজ্ব ও মহররম। এ চার মাসকে আশহুরে হুরুম এজন্য বলা হয় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে এ মাসগুলি অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ।

মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই অতি মূল্যবান। কেননা, এ মুহূর্তগুলির মূল্যায়ণ ও অবমূল্যায়ণের উপরই তার সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে। জীবনের মুহূর্তগুলি মহান আল্লাহর দান। তিনি দেখতে চান কে কত বেশি সৎকর্মের মাধ্যমে এ মুহূর্তগুলিকে সফল করে তোলে। এজন্য জীবনের একটি মুহূর্তও হেলায় বিনষ্ট করা উচিত নয়, পূর্ণ সতর্কতা ও সচেতনতার সঙ্গে তা কাজে লাগানো উচিত।

মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক না কেন সে তার জীবনের কিছু কিছু মুহূর্তকে অত্যন্ত মূল্যবান বিবেচনা করে। তার বিবেচনায় সেই বিশেষ মুহূর্তের সতর্কতা ও সচেতনতা জীবনকে অনেক দূর অগ্রসর করে দেয়। এই সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে সে আনন্দিত হয়, এগুলো হল মানুষের নিজস্ব বিবেচনা, কিন্তু মানুষ এই বিবেচনাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

মহান আল্লাহও তাঁর বান্দাদেরকে এমন কিছু সময় দান করেছেন যে সময়ে তার বাড়তি সতর্কতা ও সচেতনতা কাম্য। এই বাড়তি সচেতনতাটুকু দ্বারা আল্লাহর নৈকট্যের পথে অন্য অনেক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর হওয়া সম্ভব। তাই আল্লাহপ্রেমিক বান্দাগণ এই সময়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আশহুরে হুরুমের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় রজব মাসের মুহূর্তগুলিও সেই বিশেষ মনোযোগের দাবিদার।

এ সময় নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করে নেওয়া এবং আল্লাহর আদেশ ও রাসূলের সুন্নাহ পালনে অধিক যত্নবান হওয়া কর্তব্য। কিন্তু মানুষের প্রকাশ্য দুশমন কীভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে তার একটি দৃষ্টান্ত এ সময় দেখা যায়। এই ফযীলতপূর্ণ সময়ে শরীয়ত মোতাবেক আমল করার পরিবর্তে এক শ্রেণীর মানুষকে দেখা যায় বিভিন্ন বেশরা কাজকর্মে লিপ্ত হতে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল খাজার ডেগ নামক অপসংস্কৃতি। এ মাসে খাজা মুইনুদ্দীন চিশতী রাহ.-এর ইন্তেকালকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিদআতে, এমনকি শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত হয়। এসব শিরক ও বিদআত পূর্ণরূপে বর্জন করা ছাড়া আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে না।

গাইরুল্লাহর নামে কোনো কিছু মান্নত করা, গাইরুল্লাহর নামে কিংবা তার সম্মানের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা, গাইরুল্লাহর কাছে ধনসম্পদ, বিদ্যাবুদ্ধি, সল্লান-সল্লতি ইত্যাদি প্রার্থনা করা কিংবা বিপদ-আপদ, বালা-মুসীবত থেকে মুক্তি চাওয়া ইত্যাদি সবই অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ ও শিরক। কুরআন-হাদীসে এ বিষয়ে মুসলিমদেরকে সাবধান করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এক শ্রেণীর মানুষ এ কাজগুলোতেই বেশি আগ্রহ বোধ করে থাকে। বিশেষত আউলিয়ায়ে কেরামকে কেন্দ্র করে এ জাতীয় কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। প্রকৃত মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই এই সব শিরকী কর্মকাণ্ড পরিহার করতে হবে।

রজবের পর শাবান। এরপরই রমাযান। মাহে রমাযানের পূর্ণ রহমত ও বরকত লাভ করতে এখন থেকেই সচেতন হওয়া কর্তব্য। গুনাহ ছেড়ে নেক আমলের দিকে ধাবিত হওয়ার অত্যন্ত মূল্যবান উপলক্ষ আমাদের সামনে উপস্থিত। এর যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হতে পারি।

*   *   *

বর্তমান সংখ্যা সম্পর্কে দুটি কথা। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী এ সংখ্যা থেকে শুরু হল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আদীব হুজুরের হজ্ব সফরনামাবাইতুল্লাহর মুসাফির। এজন্য আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই আলহামদুলিল্লাহ। আরও রয়েছে ইসলামী গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুবিস্তৃত শাখা তাহকীকুত তুরাস সম্পর্কে আলকাউসার-এর তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক ছাহেবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার। এছাড়া এক গুচ্ছ প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং নিয়মিত সকল বিভাগ। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন।

 

 

advertisement