শাওয়াল ১৪৪৪   ||   মে ২০২৩

কুরআনের ডাক
ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি নাও

মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ

আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি চাও। হুট করে কারও ঘরে ঢুকে যেও না। কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّٰي تَسْتَاْنِسُوْا وَ تُسَلِّمُوْا عَلٰۤي اَهْلِهَا ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ،فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِيْهَاۤ اَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتّٰي يُؤْذَنَ لَكُمْ وَ اِنْ قِيْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ اَزْكٰي لَكُمْ  وَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ.

হে মুমিনগণ! নিজ গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ কর ও তার বাসিন্দাদেরকে সালাম দাও। এ পন্থাই তোমাদের জন্য শ্রেয়। আশা করা যায়, তোমরা লক্ষ রাখবে। তোমরা যদি তাতে কাউকে না পাও, তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া না হয়, তাতে প্রবেশ করো না। তোমাদেরকে যদি বলা হয়, ফিরে যাও তবে ফিরে যেও। এটাই তোমাদের পক্ষে শুদ্ধতর। তোমরা যা কিছুই কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। সূরা নূর (২৪) : ২৭-২৮

এ আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি চাইতে ও সালাম দিতে বলা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করলে সেই ঘরের লোকদের নানারকম কষ্ট ও অসুবিধা হয়। এতে ইসলামের ফরয বিধান পর্দা ও সতরও লঙ্ঘিত হয়। এটা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার সয়লাবের অন্যতম বড় কারণ।

অনুমতি কীভাবে গ্রহণ করতে হবে আয়াতে তাও শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম হল, বাইরে থেকে আসসালামু আলাইকুম বলবে। শুধু গলা খাকারি বা এটা সেটা বলে আওয়াজ দেবে না। যদি মনে হয় ঘরের ভেতরে যে আছে, সে সালাম শুনবে না, তবে করাঘাত করবে বা বেল চাপবে। তারপর কেউ বেরিয়ে এলে তাকে আগে সালাম দেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি না মিলবে, ততক্ষণ প্রবেশ করবে না।

আবার দীর্ঘক্ষণ ধরে করাঘাত করতে থাকবে না। দুই-[তিনবার আওয়াজ  দেওয়ার পরেও যদি ঘরের লোকদের কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়া যায়, তাহলে ফিরে আসবে। অনেকের স্বভাব হল, দুই-তিনবার আওয়াজ করার পরে যদি ভেতর থেকে সাড়া না আসে, তাহলে ঘরে কেউ আছে কি না জিজ্ঞেস করতে করতে ঘরের ভেতরে ঢুকে যায় অথবা উঁকিঝুকি মারতে থাকে। এতে ঘরের লোকদের বাড়তি অসুবিধায় পড়তে হয়। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের এ সংক্রান্ত অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে তাঁরা কারও ঘরে যাওয়ার পরে উচ্চৈঃস্বরে সালাম দিয়েছেন, জবাব না পেলে তিনবার সালাম দিয়েছেন। তারপরও উত্তর না এলে ফিরে গেছেন। উমর রা.-এর ঘরে গিয়ে আবু মূসা আশআরী রা.-এর সালাম দেওয়া এবং সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর ঘরে গিয়ে নবীজীর সালাম দেওয়ার ঘটনাদুটি তো অনেক প্রসিদ্ধ।

হাদীসের কিতাবে এও বর্ণিত হয়েছে, সালাম না দিয়ে শুধু আমি বলাটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করতেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, জাবের রা. নবীজীর ঘরে গিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলে নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, কে?

জাবের রা. বললেন আমি

তাঁর এই কেবল আমি বলাটা নবীজী অপছন্দ করেছিলেন।

অবশ্য সালাম দেওয়ার পরে সাহাবায়ে কেরাম প্রয়োজন হলে নিজের নাম বলতেন।

একই ঘরের লোকদেরও অন্যের ব্যক্তিগত কামরায় প্রবেশের আগে অনুমতি নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও সালাম দেওয়া সর্বোত্তম। কোনো রকম সতর্ক না করেই অন্যের কামরায় হুট করে ঢুকে পড়া কিছুতেই উচিত নয়।

আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন

يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لِيَسْتَاْذِنْكُمُ الَّذِيْنَ مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ وَ الَّذِيْنَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنْكُمْ ثَلٰثَ مَرّٰتٍ  مِنْ قَبْلِ صَلٰوةِ الْفَجْرِ وَ حِيْنَ تَضَعُوْنَ ثِيَابَكُمْ مِّنَ الظَّهِيْرَةِ وَ مِنْۢ بَعْدِ صَلٰوةِ الْعِشَآءِ ثَلٰثُ عَوْرٰتٍ لَّكُمْ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَ لَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌۢ بَعْدَهُنَّ طَوّٰفُوْنَ عَلَيْكُمْ بَعْضُكُمْ عَلٰي بَعْضٍ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰيٰتِ وَ اللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ، وَ اِذَا بَلَغَ الْاَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَاْذِنُوْا كَمَا اسْتَاْذَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰيٰتِهٖ وَ اللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ.

হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখনও সাবালকত্বে পৌঁছেনি সেই শিশুগণ যেন তিনটি সময়ে (তোমাদের কাছে আসার জন্য) অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের আগে, দুপুর বেলা যখন তোমরা পোশাক খুলে রাখ এবং ইশার নামাযের পর। এ তিনটি তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। এ ছাড়া অন্য সময়ে তোমাদের ও তাদের প্রতি কোনো কঠোরতা নেই। তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তো সার্বক্ষণিক যাতায়াত থাকেই। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের কাছে আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

আর তোমাদের শিশুরা সাবালকত্বে উপনীত হলে তারাও যেন অনুমতি গ্রহণ করে, যেমন তাদের আগে বয়ঃপ্রাপ্তগণ অনুমতি গ্রহণ করে আসছে। এভাবেই আল্লাহ নিজ আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা নূর (২৪) : ৫৮-৫৯

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নাবালক বুঝমান শিশুদের অনুমতির জন্যও তিনটি সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সাধারণত এ সময়গুলোতে মানুষের পোশাক পরিপাটি থাকে না। আর নাবালক ছাড়া অন্যদের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করেননি। অর্থাৎ তারা যখনই অন্যের কামরায় প্রবেশ করবে, তখনই অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে। এক্ষেত্রে শিথিলতা ইসলামী শিষ্টাচার বহিভূর্ত। ঘরের ছোট-বড় সকল সন্তানকে তাদের পরস্পরের ও মা-বাবার ঘরে প্রবেশের এ ইসলামী আদব শিক্ষা দেওয়া অতীব জরুরি। 

অনুমতি নেওয়ার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয় নিজের মা-বাবার কামরায় প্রবেশ করার সময়। অথচ কুরআন কারীমে সন্তানের ব্যাপারেই বলা হয়েছে, তারা যেন মা-বাবার ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে। এক সাহাবী নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি আমার মায়ের ঘরে প্রবেশের সময়ও কি অনুমতি নেব?

নবীজী বললেন, তুমি কি তাকে উলঙ্গ দেখতে পছন্দ করবে?

তিনি বললেন, না।

নবীজী বললেন, তাহলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করো। (দ্র. মারাসিলে আবু দাঊদ, পৃষ্ঠা ৩৩৬)

 

 

advertisement