জুমাদাল উলা ১৪২৮   ||   জুন ২০০৭

মারকাযে দিন-রাত

২৯/০২/১৪২৮ হি., ১৯/০৩/২০০৭ ইং

মারকাযের আমীনুত তালীম মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব আজ বি. বাড়িয়া গেলেন। সেখানে মাদরাসা রহীমিয়া কাসেমুল উলূম তেলীনগর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রথমে উস্তাদদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন এবং মাদরাসার খোঁজখবর নিয়েছেন। এরপর মুহতামিম সাহেবের অনুরোধে প্রত্যেক জামাতে গিয়ে দরসে পঠিত কিতাবাদি থেকে  বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। কিছু তালিবুল ইলমের উত্তর শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

হাজিরা খাতাগুলো দেখার সময় কয়েকজন ছাত্রের নামের সঙ্গে অনুপস্থিতির চিহ্ন দেখে তিনি বলেছেন, একটি সবকে অনুপস্থিত থাকার কারণে যে বেবরকতী হয়, তা যদি কোনো তালিবুল ইলম বুঝত তাহলে তার অভিভাবকরা চেষ্টা করেও এবং উস্তাদদের থেকে ছুটি মঞ্জুর করিয়েও তাকে এক ঘণ্টার জন্য অনুপস্থিত রাখতে পারত না। কেউ কেউ অসুস্থ থাকার ওযর পেশ করলে তিনি বললেন, গরহাজিরী তো গরহাজিরীই, সেটা যেভাবেই হোক। উদাহরণ দিয়ে বললেন, দা দিয়ে ইচ্ছাকৃত শরীরে কোঁপ দিলে যেমন কাটবে তদ্রূপ অনিচ্ছাকৃত কোঁপ পড়ে গেলেও শরীর কেটে যাবে। সুতরাং অসুস্থ হলেও দরসে গর হাজির থাকবে না। বসে সবক শুনতে না পার দরসগাহের এক পাশে শুয়ে শুয়ে সবক শুনবে। এতেও দেখবে অনেক উপকার হবে। তিনি এ সম্পর্কে মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী রহ. এর উস্তাদদের একটি ঘটনাও বললেন।

কয়েকজনের নামের পাশে খোলার দিন অনুপস্থিত থাকার চিহ্ন দেখতে পেয়ে তিনি খুব আফসোস করে বললেন, তালিবুল ইলমদের জন্য কখনই এটা করা উচিত নয়। খোলার দিন উপস্থিত না হওয়া বড় অন্যায়। একদিন গরহাজির থাকার অর্থ হল এক সপ্তাহ গরহাজির থাকা।

কাফিয়া জামাতে গিয়ে ছাত্রদের থেকে ইবারত পড়া শুনলেন। ইবারত শোনার এক ফাঁকে বললেন, স্পষ্টভাবে ইবারত পড়তে হবে। দাড়ি,কমা বুঝে ইবারত পড়তে হবে। এমন কি স্থান-উপযোগী গলার স্বর মিলাতে হবে, তার আরবী বাক্যটি ছিল,

لا بد أن تكون قراءتك قراءة واضحة، قراءة راشدة.

এরপর বললেন, আমাদের এই দুর্বলতার একমাত্র কারণ হল গাফলত। উদাসীনতা তালিবুল ইলমের স্বভাব হতে পারে না। এটা থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে এবং সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।

শরহুল বিকায়া জামাতের ছাত্রদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তার মধ্যে একটি হল, কিতাবটির পুরা নাম কী? মুসান্নিফের নাম কীওফাত কত হিজরীতে? সাথে যে হাশিয়াটি যুক্ত রয়েছে সেটির নাম কী? মুসান্নিফ কে? মৃত্যু কত সনে ইত্যাদি। তিনি বললেন, এগুলো না জানা থাকলে উস্তাদদের কাছ থেকে জেনে নিবে। সাধারণত মুকাদ্দিমার মধ্যে এগুলো লেখা থাকে। সম্ভব হলে দরসে উস্তাদদের কাছ থেকে পড়ে নিবে। অন্যথায় নিজে মুতালাআ করবে। কোনো কিতাব পড়ার আগে কিতাবটির মুসান্নিফ কে এবং কিতাবটি কোন বিষয়ের, সেটি কি মৌলিক কিতাব না অন্য কোনো কিতাবের শরহসংক্ষিপ্ত আকারে হলেও এগুলো জানা জরুরি।

সবশেষে নূরানী মক্তবের ছাত্রদের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের কাছ থেকে তেলাওয়াত শুনলেন। অনেককে আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহর মশক করিয়েছেন। বিভিন্ন দুআ শুনিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন। সবাইকে মনোযোগ সহকারে পড়া-শুনা করতে এবং উস্তাদদের কথা মান্য করতে বলেছেন। কারও সঙ্গে যাতে বেয়াদবী না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন। জাগীর বাড়ি যাওয়া আসার সময় এবং সেখানে অবস্থানের সময় আদাবুল মুআশারার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে বলেছেন। সবশেষে দুআর মাধ্যমে মজলিস সমাপ্ত হয়েছে।

৩০/০২/১৪২৭ হি., ২০/০৩/২০০৭ ইং

আজ প্রফেসর হামিদুর রহমান সাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর মারকাযে তাশরীফ আনার তারিখ ছিল। তিনি সাথীদের নিয়ে সকাল সাড়ে সাতটার  দিকে আগমন করেন। আজিমপুরের মজলিসে হযরতের কাছ থেকে দাওয়াতের  তারিখ নির্ধারণ করার সময় প্রথমে কিছু নসীহত করার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে নাস্তা করার আবদার জানানো হলে তিনি বললেন, তাহলে শুধু নাস্তার দাওয়াত। প্রফেসর হযরত সাধারণত তাকাল্লুফ পরিহার করার তাগিদ করে থাকেন। সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করা হয়েছে। নাস্তার মজলিসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। কুরআন মজীদের ইংরেজী অনুবাদসমূহের কথা আসলে শায়েখ তাকী উদ্দিন হেলালী রহ.-এর অনুবাদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তার ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছেন। শেষে অন্য আরেক জায়গায় উপস্থিত হওয়ার ওয়াদা থাকায় বিলম্ব না করে সেখানে তাশরীফ নিয়ে গেছেন।

১১/০৩/১৪৫৮ হি., ৩১/০৩/২০০৭ ইং

গতকাল রাতে মারকাযের আমীনুত তালীম সাহেব এক তালিবুল ইলমের  মাধ্যমে জানতে পারলেন, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী দামাত বারাকাতুহুম মারকাযে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন । একথা শুনে তিনি আজ ফযরের আগে মারকায থেকে বের হন এবং ইস্তেকবালের উদ্দেশ্যে ফযরের পর পরই ওলীপুরী দা. বা.-এর সাথে মিরপুর জামেউল উলুম মাদরাসায় সাক্ষাত করেন। তিনিও উক্ত মাদরাসার বার্ষিক সভায় তাশরীফ এনেছিলেন। শরীর কিছুটা অসুস্থ থাকার কারণে সকাল দশটার দিকে মারকাযে আসার কথা বললেন। যথারীতি দশটার সময়ে মারকাযে তাশরীফ আনলেন এবং মারকাযের কার্যক্রম সম্পর্কে জানলেন। অতঃপর দারুল মুতালাআয় জমায়েত ছাত্রদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ নসীহত করলেন। তিনি তাঁর আলোচনায় বর্তমানে প্রচলিত কয়েকটি ভ্রান্ত দল সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়েছেন এবং তাদের অসারতা প্রমাণ করার জন্য কয়েকটি দলীলও পেশ করেছেন। তার দীর্ঘ বয়ানে তালিবুল ইলমের উদ্দেশে একটি মূল্যবান নসীহত ছিল। তিনি বলেন, ইলমের মূল হল তাকওয়া। যে যত বেশি তাকওয়া অর্জন করতে পারবে আল্লাহর কাছে সে তত দামী হবে এবং মহা পুরস্কার লাভ করবে । দুনিয়াতে কেউ পড়ালেখায় এক নম্বর হল কিন্তু তাকওয়া অর্জন হল না  তাহলে এই এক নম্বর হওয়া আখেরাতে কোনো কাজে দিবে না। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন। আমীন।

 

 

advertisement