জুমাদাল উলা ১৪২৮   ||   জুন ২০০৭

বীরত্ব ও সাহসিকতার একটি চিত্র

জুমানা

ইসলামের ইতিহাসে ত্যাগ-তিতিক্ষার যেমন অনবদ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে তেমনি রয়েছে বীরত্ব ও সাহসিকতার অসাধারণ নযীর। এ ক্ষেত্রে মুসলিম নারীগণও পিছিয়ে ছিলেন না। তারা যেমন মাতৃস্নেহে সন্তান লালন করেছেন তেমনি প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণ করেছেন। একটি দৃষ্টান্ত :

১৩ হিজরী শতাব্দী। মুসলিম বাহিনী আজনাদীন এর পথে এগিয়ে চলেছে। মূল বাহিনী নিয়ে সামনে আছেন হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ রা.। পিছনে রসদপত্র ও নারীদের নিয়ে হযরত আবু  উবাইদা  ইবনুল জাররাহ রা.।

এতদিন তারা দামেশকের কেল্লা  অবরোধ করে ছিলেন, কিন্তু সম্প্রতি দূত মারফত সংবাদ এসেছে যে, আজনাদীন নামক স্থানে নব্বই হাজার রোমক সৈন্য একত্রিত হতে চলেছে। এই সংবাদ পেয়ে মুসলিম বাহিনীর দুই কর্ণধার আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ ও খালেদ ইবনে ওয়ালিদ সিদ্ধান্ত নিলেন, শাম অঞ্চলের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত মুসলিম সেনাবাহিনীকে একত্রিত করে আজনাদীন অভিমুখে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এ সিদ্ধান্তের পর তারা দামেশক, কেল্লার অবরোধ উঠিয়ে বাহিনী নিয়ে আজনাদীন অভিমুখে রওনা হলেন।

এতদিন যারা দুর্গ ফটক বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান করছিল তারা দেখল, মুসলিম বাহিনী অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছে  এবং মূল বাহিনী নিয়ে খালেদ ইবনে ওয়ালিদ অগ্রগামী হয়েছেন। তারা এটাকে সূবর্ণ সুযোগ মনে করল এবং পেছনের রসদবাহী দলটির উপর আক্রমণ করে বসল। এদিকে ঘটল আরেক বিপদ। রোম-সম্রাট দামেশকের অবরুদ্ধ লোকদের সাহায্যার্থে একটি সেনাদল প্রেরণ করেছিল, তারাও ঠিক ওই মূহূর্তেই অকুস্থলে এসে পেঁৗছল। ফলে মুসলিম বাহিনী দুই দিক থেকে আক্রান্ত হল। কিন্তু এই বিভীষিকাময় মুহূর্তেও তারা সাহস হারালেন না, প্রবল বিক্রমে উভয় দিকের আক্রমণ প্রতিহত করতে লাগলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই তাদের মূল মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল সামনের বাহিনীর দিকে। কেল্লার কাফেররা এই সুযোগে পিছনের দলটিকে পরাস্ত করে নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করে দুর্গাভিমুখে রওনা হল।

বিমূঢ় মুসলিম নারীগণ কর্তব্য স্থির করতে পারছিলেন না। এ সময় খাওলা রা. অন্যান্য নারীদের সম্বোধন করে এক জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন, বোনেরা, তোমরা কি এই কাফেরদের হাতে নিজেদের সমর্পণ করবে? আরব জাতির বীরত্ব ও সাহমিতকার মুখে তোমরা কি কলঙ্ক লেপন করতে চাও? এর চেয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা বহুগুণে শ্রেয়। তার এই সামান্য কথা যেন সবার রক্তে আগুন ধরিয়ে দিল। কালবিলম্ব না করে খাওলা ছুটলেন। পিছনে রয়েছেন উম্মে আবান বিনতে উতবাহ, সালামা বিনতে নুমান ইবনে মুকাররিন এবং আরও কজন সাহসী নারী। তারা তাবুর খুঁটি নিয়ে কাফেরদের আক্রমণ করে বসলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিস্মিত কাফেরদের ৩০ জন লাশে পরিণত হল এবং অন্যরা মুসলিম নারীদের উপর আক্রমণ করল। মুসলিম নারীগণও প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। ততক্ষণে মূল মুসলিম বাহিনীও সামনের শত্রট্টবাহিনীকে পরাস্ত করে পিছনের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ পেলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হল। মুসলিম বাহিনী পুনরায় আজনাদীন’-এর দিকে এগিয়ে চলল।

 

 

advertisement