জুমাদাল উলা ১৪২৮   ||   জুন ২০০৭

একটি ভয়াবহ চিন্তাগত ভুল
সংস্কৃতি সম্পর্কে কি ইসলামের কোনো নির্দেশনা নেই?

কিছু মানুষের মনে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, ইসলাম সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু বলেনি। অথচ ইসলাম হল পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। ইসলামের রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কৃতি। তাই যারা ইসলামের কালেমা পড়েছে তাদের দ্বীন যেমন ইসলাম তেমনি ইসলামী সংস্কৃতিই হল তাদের সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি ছাড়া অন্য কোনো ধর্মীয় সংস্কৃতি তো দূরের কথা, কোনো অঞ্চল বা গোত্র-বংশ ভিত্তিক সংস্কৃতিও তাদের সংস্কৃতি হতে পারে না। তবে কোনো অঞ্চলের প্রচলিত কোনো মুবাহ বা উপকারী রীতি-নীতিকে ইসলাম কখনো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে না। এজন্য ইসলাম  গ্রহণের পরও সেসব রীতি-নীতি অনুসরণ করতে বাধা নেই। আর এ জাতীয় বিষয়গুলো সংস্কৃতির প্রকৃত অনুষঙ্গও নয়।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, বাংলা ভাষায় কথা বলা, লুঙ্গি পড়া, ভাত-মাছ খাওয়া ইত্যাদিকে যদি বাঙালী সংস্কৃতির অংশ গণ্য করা হয় তবে যেহেতু এই জিনিসগুলো ইসলামী তাহযীবের পরিপন্থী কিছু নয় তাই ইসলাম গ্রহণের পর এগুলো পরিহার করতে হবে এমন কোনো কথা ইসলামে নেই।

তবে বাৎসরিক উৎসবগুলো সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ  অংশ। এ সম্পর্কে ইসলামের একটি ভিন্ন দর্শন রয়েছে। এ বিষয়ক ইসলামী নির্দেশনাগুলো ইসলামের সেই দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

إن لكل قوم عيدا، وهذا عيدنا.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেছিলেন তখন মদীনাবাসীর বাৎসরিক দুটি উৎসব ছিল। হযরত এ  উৎসব  সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। মদীনাবাসী উত্তরে বলল, এ দুটি উৎসব অনেক আগে থেকে আমাদের এ অঞ্চলে পালিত হয়ে আসছে। হযরত বললেন

إن الله قد أبدلكم خيرا منها عيد الفطر وعيد الأضحى.

আল্লাহ এ উৎসবের পরিবর্তে তোমাদেরকে উত্তম ছুটি উৎসব দান করেছেন। তা হল ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।

লক্ষ করার বিষয় এই যে, মদীনাবাসীকে একথা বলা হয়নি যে, ঠিক আছে ওই  দুটি উৎসব হল তোমাদের দেশীয় বা গোত্রীয় উৎসব আর  ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা হল ইসলামী উৎসব। ওই দুটি হল মদীনার বা আউস-খাযরাজ গোত্রের সংস্কৃতি আর এই দুটি হল মদীনাবাসীর ইসলামী সংস্কৃতি। অতএব দু্ই বিবেচনায় দুই উৎসব পালিত হবে। এমন কথা রাসূলুল্লাহ বলেননি; বরং স্পষ্ট করে বলেছেন যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ওই দুটির পরিবর্তে এই দুটি দান করেছেন।

আজকাল একশ্রেণীর মানুষকে এই বিভ্রান্তি ছড়াতে দেখা যায় যে, অমুক উৎসব আমরা বাঙালী হিসেবে পালন করি আর অমুক উৎসব মুসলমান হিসেবে। বলাবাহুল্য, এটা একটা ভয়াবহ বিভ্রান্তি।

ইসলামের নীতি এই যে, মানুষ প্রথমে যে সংস্কৃতিরই থাকুক না কেন ইসলাম গ্রহণের পরে একমাত্র ইসলামী সংস্কৃতিই তার সংস্কৃতি। যারা মনে করে ইসলাম শুধু ধর্ম-কর্মের নাম আর সংস্কৃতি হল প্রত্যেক অঞ্চলভিত্তিক নিজস্ব বিষয় ইসলামে এ বিষয় কোনো আদর্শ বা নির্দেশনা নেই তারা না ইসলামকে জানে আর না সংস্কৃতির অর্থ বুঝে।

 

 

advertisement