শাবান-রমযান ১৪৪৪   ||   মার্চ-এপ্রিল ২০২৩

কুরআন মাজীদের বক্তব্যে
সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগা

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

সবাই জীবনে সুখী হতে চায়। সৌভাগ্যবান হতে চায়। নিরাপদে, স্বস্তিতে, শান্তি ও প্রশান্তিতে জীবন যাপন করতে চায়। সেজন্য প্রত্যেকেই তার বুঝ ও বুদ্ধি অনুযায়ী চেষ্টা করে। সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী মেহনত করে। যোগ্যতা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হয়। কিন্তু সুখ ও সৌভাগ্যের সংজ্ঞা সবার কাছে এক হয় না। ফলে প্রত্যেকে তার পরিচিত সংজ্ঞা অনুযায়ী সুখ চায়। নিজেদের বুঝ ও বিবেচনা অনুযায়ী সৌভাগ্য লাভের আশা করে।

সুখী ও সৌভাগ্যবান মানুষ বলতে সমাজে এমন লোকদেরকে বোঝানো হয়, জাগতিক জীবনে যাদের প্রায় সকল চাহিদা পূর্ণ হয়। কাক্সিক্ষত অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান থাকে। সম্মান ও মর্যাদা এবং ক্ষমতা ও পদ-পদবী থাকে।

সবাই জানে, উপরোক্ত সকল বিষয় পূর্ণাঙ্গরূপে কারো পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্য এসব বিষয়ে যে যতটা অগ্রসর থাকে, তাকে ততটা সুখী ও সৌভাগ্যবান মনে করা হয়। 

কোনো সন্দেহ নেই দুনিয়ার এ জীবন ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়াবী জীবনের সুখ-দুঃখ ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়া কেন্দ্রিক সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্যও ক্ষণস্থায়ী। সেজন্য প্রকৃত সুখ ও সৌভাগ্য হবে সেটাই, যা দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতে লাভ হবে কিংবা চিরস্থায়ী জীবন আখেরাতে লাভ হবে।

বিচার দিবসে সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগা

কুরআন মাজীদে প্রকৃত সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের কথা আলোচনা করা হয়েছে। হাশর দিবসের প্রসঙ্গে উল্লেখিত হয়েছে সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগাদের কথা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন

 یَوْمَ یَاْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ اِلَّا بِاِذْنِهٖ فَمِنْهُمْ شَقِیٌّ وَّ سَعِیْدٌ، فَاَمَّا الَّذِیْنَ شَقُوْا فَفِی النَّارِ لَهُمْ فِیْهَا زَفِیْرٌ وَّ شَهِیْقٌ، خٰلِدِیْنَ فِیْهَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ اِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیْدُ، وَ اَمَّا الَّذِیْنَ سُعِدُوْا فَفِی الْجَنَّةِ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ عَطَآءً غَیْرَ مَجْذُوْذٍ.

... (সেদিন) তাদের মধ্যে কতক হবে দুর্ভাগা, আর কতক হবে সৌভাগ্যবান।

যারা দুর্ভাগা হবে, তারা থাকবে আগুনে। সেখানে তাদের চিৎকার ও আর্তনাদ শোনা যাবে। তারা তাতে থাকবে চিরকাল যতদিন বিদ্যমান থাকবে আকাশণ্ডলী ও পৃথিবী; যদি না আপনার রব অন্য কিছু ইচ্ছা করেন।...

আর যারা সৌভাগ্যবান হবে, তারা থাকবে জান্নাতে। তাতে তারা থাকবে চিরকাল যতদিন বিদ্যমান থাকবে আকাশণ্ডলী ও পৃথিবী; যদি না আপনার রব অন্য কিছু ইচ্ছা করেন। (আর তাদেরকে দেওয়া হবে) নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। সূরা হুদ (১১) : ১০৫-১০৮

এখানে প্রকৃত সৌভাগ্যবানদের পরিণাম যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি উল্লেখ করা হয়েছে প্রকৃত দুর্ভাগাদেরও পরিণতি।

প্রকৃত সৌভাগ্যবান তারা, যারা চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ করবে। চিরস্থায়ী সুখ ও চিরকালীন আবাস লাভ করবে। সেখানে তারা পাবে এমন সবকিছু, যা তারা কামনা করে। তাদের থাকবে অত্যুচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। তাদেরকে স্পর্শ করবে না কোনো দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী।

আর প্রকৃত দুর্ভাগা তারাই হবে, যারা সেই জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে এবং নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের ভয়ানক আগুনে। যেখানে থাকবে বিভিন্ন রকমের আযাব ও গযব এবং চিৎকার ও আহাজারি।

দুনিয়াতে তাদের পরিচয়

সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগাদের এই বিভাজন তো হবে আখিরাতে। কিন্তু দুনিয়াতে তাদের পরিচয় ও পরিচিতি কী হবে? কেমন হবে তাদের চিন্তা ও কর্মনীতি? সে প্রসঙ্গেও কুরআন মাজীদে একাধিক আয়াত রয়েছে। তন্মধ্যে মৌলিক বক্তব্যসম্পন্ন একটি আয়াত রয়েছে সূরা ত্ব-হায়। তাতে সর্বপ্রথম মানব ও নবী হযরত আদম আ. এবং তাঁর জীবনসঙ্গিনী হাওয়া রাযিয়াল্লাহু আনহাকে দুনিয়াতে পাঠানোর সময় যে নসীহত করা হয়েছিল সেই প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন

قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِیْعًۢا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّفَاِمَّا یَاْتِیَنَّكُمْ مِّنِّیْ هُدًی فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَایَ فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشْقٰی.

তোমরা উভয়ে এখান থেকে নিচে নেমে যাও। তোমরা একে-অন্যের শত্রু।

পরবর্তীতে যদি তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে কোনো হেদায়েত পৌঁছে, তখন যে ব্যক্তি আমার হেদায়েত অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না। সূরা ত্ব-হা (২০) : ১২৩

এখান থেকে বোঝা যায়, সৌভাগ্যবান তারাই, যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত হেদায়েতের অনুসরণ করে। আর দুর্ভাগা তারা, যারা সেই হেদায়েতের অনুসরণ করে না। হেদায়েত মানে নির্দেশনা। সঠিক পথের দিশা। সঠিক গন্তব্য ও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যাভিমুখী পথনির্দেশ।

স্পষ্ট কথা যে, প্রত্যেক মুমিনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য হল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি; গন্তব্য জান্নাত। এই লক্ষ্য ও গন্তব্যের সঠিক নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা নবী রাসূলগণের মাধ্যমে নাযিল করেছেন। এরপর নির্দেশ করেছেন সেই হেদায়েতের পূর্ণ অনুসরণ করতে। যারা অনুসরণ করেছে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشْقٰی  তারা বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না।

নসীহত বিমুখতা

উক্ত আয়াতের পরেই আল্লাহ তাআলার হেদায়েত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন

وَ مَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِیْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِیْشَةً ضَنْكًا وَّ نَحْشُرُهٗ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ اَعْمٰی......

যে ব্যক্তি আমার উপদেশ (ও পথনির্দেশ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাব অন্ধ করে। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে উঠালেন কেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম।

তিনি বলবেন, এভাবেই তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ তাই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে। সূরা ত্ব-হা (২০) : ১২৪-২৫

কিয়ামতের দিন যাকে অন্ধ করে উঠানো হবে এবং যাকে আল্লাহ তাঁর রহমত ও দয়া থেকে সরিয়ে রাখবেন তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে আছে?

সংকটময় জীবন

লক্ষ করার বিষয় হল, আল্লাহ তাআলার ঘোষণায় আছে তার দুনিয়ার জীবনও হবে সংকীর্ণ। আর যে ব্যক্তি সংকীর্ণ ও সংকটময় জীবনের অধিকারী হবে, সে তো দুনিয়াবী দৃষ্টিতেও হবে দুর্ভাগা।

তার দুনিয়ার জীবন সংকটময় কীভাবে হবে সে বিষয়ে আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী রাহ. লেখেন

বাহ্যিকভাবে যদিও তার কাছে বিপুল ধন-সম্পদ ও ভোগ-বিলাসের সামগ্রী থাকে, তবে তার অন্তরে অল্পেতুষ্টি ও তাওয়াক্কুলের গুণ না থাকার কারণে সর্বাবস্থায় কেবল দুনিয়ার লোভ, অধিক সম্মান, সম্পদ ও উন্নতি লাভের চিন্তা এবং যে কোনো সময় অভাবে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কায় সে থাকে উৎকণ্ঠিত। সে কখনোই অর্থার্জনের লোভ-লালসা থেকে বের হতে পারে না। উপরন্তু বয়সের আধিক্য, শারীরিক দুর্বলতা ও  নিশ্চিত মৃত্যুর চিন্তা এবং যে কোনো প্রেক্ষাপটে সকল ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় তার জন্য স্বতন্ত্র অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্য তাদের অনেককেই দেখা যায়, রাতদিনে মাত্র দুয়েক ঘণ্টা কিংবা সর্বোচ্চ তিন চার ঘণ্টা ঘুমাতে পারে। অনেকে নানা দুশ্চিন্তায় অসহ্য হয়ে জীবনের উপর মৃত্যুকে প্রাধান্য দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য এবং বাস্তব জীবনের বহু অভিজ্ঞতা এ সত্যের সাক্ষ্য দেয় যে, দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর যিকির ও তাঁর নির্দেশ পালন ছাড়া কিছুতেই কারো অন্তরে সুখ ও শান্তি অর্জন হয় না। তাফসীরে উসমানী, পৃষ্ঠা : ৪২৭ [ঈষৎ পরিবর্তিত]

এখানে সংকীর্ণ জীবনের যে ব্যাখ্যা উল্লেখিত হয়েছে তা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখার মতো। একটু খেয়াল করলেই বুঝে আসবে আমাদের জীবনও তেমনই সংকীর্ণ কি না, যে সংকীর্ণতার কারণ হল আল্লাহর স্মরণ ও নসীহত-বিমুখতা!

আরেক আয়াতে প্রকৃত দুর্ভাগার কর্ম ও পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন

...سَیَذَّكَّرُ مَنْ یَّخْشٰی، وَ یَتَجَنَّبُهَا الْاَشْقَی، الَّذِیْ یَصْلَی النَّارَ الْكُبْرٰی، ثُمَّ لَا یَمُوْتُ فِیْهَا وَ لَا یَحْیٰی.

যে ব্যক্তি (আল্লাহকে) ভয় করে সে অবশ্যই উপদেশ গ্রহণ করবে। আর তা থেকে দূরে থাকবে কেবল সেই ব্যক্তি, যে চরম দুর্ভাগা। যে প্রবেশ করবে মহাঅগ্নিতে। তারপর সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না। সূরা আলা (৮৭) : ৯-১৩

এখানেও দুর্ভাগা বলা হয়েছে এমন ব্যক্তিকে, যে আল্লাহর হেদায়েত ও নির্দেশনা মোতাবেক জীবন যাপন করে না। দ্বীনী উপদেশ ও নসীহত থেকে দূরে থাকে। ঈমান, আমল, ইবাদত ও আখেরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সবশেষে তার পরিণতি বলা হয়েছে, মহাঅগ্নি অর্থাৎ জাহান্নাম।

মুত্তাকী ও দুর্ভাগা

প্রকৃত সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগাদের সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ভাষায় আল্লাহ তাআলা বলেন

...فَاَنْذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظّٰی، لَا یَصْلٰىهَاۤ اِلَّا الْاَشْقَی، الَّذِیْ كَذَّبَ وَ تَوَلّٰی، وَ سَیُجَنَّبُهَا الْاَتْقَی، الَّذِیْ یُؤْتِیْ مَالَهٗ یَتَزَكّٰی.

... অতএব আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিলাম লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে। তাতে নিপতিত হবে কেবল সেই ব্যক্তি, যে চরম দুর্ভাগা। যে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

আর তা থেকে অবশ্যই রক্ষা পাবে সেই ব্যক্তি, যে পরম মুত্তাকী। যে তার ধন-সম্পদ দান করছে আত্মশুদ্ধির জন্য। সূরা লাইল (৯২) : ১৪-১৮

এখানে দুর্ভাগার বিপরীতে আনা হয়েছে মুত্তাকীর কথা। বলা হয়েছে, মুত্তাকী সেই লেলিহান অগ্নি থেকে রক্ষা পাবে, যাতে নিপতিত হবে কেবল চরম দুর্ভাগা।

এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় ভাগ্যবান ও সৌভাগ্যবান কারা এবং হতভাগা ও দুর্ভাগা করা।

জাগতিক বিচারে যে অসুখী, অসচ্ছল, গরিব, অতি সাধারণ, মাজলূম ও নিঃস্ব; প্রকৃত বিচারে এবং আখেরাতের হিসাবে সেও হতে পারে চিরসফল, চিরসুখী ও মহাসৌভাগ্যবান। অপরদিকে জাগতিক বিচারে যে বিপুল ধন-সম্পদের মালিক, উচ্চ পদ ও পদবীর অধিকারী, ক্ষমতা ও লোকবলে অতি মাননীয়; প্রকৃত বিচারে এবং আখিরাতের হিসাবে সেও হতে পারে চরম ব্যর্থ, চিরদুঃখী ও নিতান্ত দুর্ভাগা। সেজন্য প্রকৃত সৌভাগ্যবান হওয়ার চেষ্টা করা এবং দৃষ্টিভঙ্গি শোধরানো আমাদের জরুরি কর্তব্য। সবকিছু কেবলই দুনিয়াবী হিসাবে বিবেচনা করার মানসিকতা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

আল্লাহ তাআলার সাথে দুর্ভাগাদের কথোপকথন

জাহান্নামীদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমাদের কাছে তো আমার নসীহত এসেছিল, তোমাদেরকে তো আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনানো হয়েছিল। কিন্তু তোমরা তা অস্বীকার করেছিলে।

জাহান্নামীরা বলবে

رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَیْنَا شِقْوَتُنَا وَ كُنَّا قَوْمًا ضَآلِّیْنَ.

হে আমাদের রব! আমাদের উপর আমাদের দুর্ভাগ্য প্রবল হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা ছিলাম বিপথগামী স¤প্রদায়। সূরা মুমিনূন (২৩) ১০৬

তাদের বিপথগামিতা ও দুর্ভাগ্যের কারণ কী ছিল, সেদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে পরের আয়াতে। আল্লাহ তাআলা বলেন

...فَاتَّخَذْتُمُوْهُمْ سِخْرِیًّا حَتّٰۤی اَنْسَوْكُمْ ذِكْرِیْ وَ كُنْتُمْ مِّنْهُمْ تَضْحَكُوْنَ..

নিশ্চয় আমার বান্দাদের একদল এমন ছিল, যারা বলত, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।

কিন্তু তোমরা তাদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করেছ, এমনকি তারা (অর্থাৎ তাদের উত্ত্যক্তকরণ) তোমাদেরকে আমার স্মরণ পর্যন্ত ভুলিয়ে দিয়েছে। আর তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে গেছ। সূরা মুমিনূন (২৩) : ১০৯-১০

সতর্কবার্তা

আল্লাহ তাআলার হুকুম ও নির্দেশনা অমান্য করা যেমন অপরাধ, তেমনি স্বতন্ত্র একটি অপরাধ হল, আল্লাহর হুকুম ও বিধান মান্যকারীদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা। এমনকি সেই ঠাট্টা ও তামাশা যে কত গুরুতর অপরাধ তাও অনুমান করা যায় এখান থেকে যেআল্লাহ তাআলা জাহান্নামীদেরকে উদ্দেশ্য করে নিজেই এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেবেন। তার আগে কুরআন মাজীদেও বিষয়টি উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছেন।

আমাদের উচিত, উপরোক্ত আয়াতগুলো নিয়ে গুরুত্বের সাথে ফিকির করা। নিজেদের জীবন ও কর্মের হিসাব নেওয়া। সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের জরিপ করা এবং দুনিয়া ও আখেরাতের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

পাশাপাশি একথাও মনে রাখা যে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামীদের উদ্দেশ্য করে বলবেন

اَوَ لَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا یَتَذَكَّرُ فِیْهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَ جَآءَكُمُ النَّذِیْرُ فَذُوْقُوْا فَمَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ نَّصِیْرٍ  .

আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি, যার মধ্যে কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে তা করতে পারত? আর তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীও এসেছিল। অতএব (শাস্তি) আস্বাদন কর। কেননা এমন জালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। সূরা ফাতির (৩৫) : ৩৭

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্যবান হিসেবে কবুল করুন। সব ধরনের দুর্ভাগ্য থেকে হেফাযত করুন আমীন।

 

 

advertisement