রবিউল আউয়াল ১৪২৮   ||   এপ্রিল ২০০৭

আল বাইয়্যিনাত-এ প্রকাশিত মওজু রেওয়ায়াত
আরও তথ্য ও পর্যালোচনা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

আলহামদুলিল্লাহ, গত সংখ্যায় মওলুদখানী: হক আদায়ের না হক পন্থা: ইতিহাস ও বর্ণনার সঠিক পর্যালোচনা শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পাঠকবৃন্দের সামনে পেশ করেছিলাম। সে প্রবন্ধে রাজারবাগীদের আলবাইয়্যিনাত পত্রিকার একটি প্রতারণাও উন্মোচন করা হয়েছিল যে, তারা কীভাবে মওলুদখানীর ফযীলত প্রসঙ্গে বিভিন্ন মওজু রেওয়ায়াতকে ইবনে  হাজার মক্কী রহ. ও তার কিতাব আননিমাতুল কুবরার নামে চালিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। আমি গত সংখ্যায় তাদের উদ্ধৃতিতে যে চার-পাঁচটি জাল ও মওজু রেওয়ায়াত উল্লেখ করে তা ভিত্তিহীন ও মওজু প্রমাণ করেছি, সেগুলো ছাড়া আরও জাল রেওয়ায়াত সে প্রবন্ধে রয়েছে।

হযরত উমার রা. (২৩ হি.), হযরত আলী রা. (৪০ হি.) শাইখ জুনাইদ বাগদাদী রহ. (২৯৭ হি.) শাইখ মারূফ কারাখী রহ. (২০০ হি.) শায়খ সাররী সাক্বাতী রহ. (২৫৩ হি.) এবং ইমাম  ফখরুদ্দীন রাযী রহ. (৫৪৩-৬০৬ হি.)-এর নামে জালকৃত আরও কিছু রেওয়ায়াত সে প্রবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে। এই ভিত্তিহীন রেওয়ায়াতগুলোর মাধ্যমে তারা মওলুদখানী ও তার ফযীলতের  বৈধতা প্রমাণ করতে চেয়েছে। এই রেওয়ায়াতগুলোর সঙ্গেও সংযুক্ত আছে সেই নকল আননিমাতুল কুবরার উদ্ধৃতি।

রেওয়ায়াতগুলো উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করছি না।

কেননা, যে কোনো সচেতন পাঠক নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে সামান্য চিন্তা করলেই সে রেওয়ায়াতগুলোর ভিত্তিহীনতা বুঝতে সক্ষম হবেন।

এক. ওই বর্ণনাগুলোর সঙ্গে কোনো সনদ বা নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস ও সীরাত-গ্রন্থের  উদ্ধৃতি উল্লেখিত হয়নি। কোনো নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থের উদ্ধৃতিও নেই। আর আগেই প্রমাণ করা হয়েছে যে, আননিমাতুল কুবরার যে উদ্ধৃতি বর্ণনাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে তা ওই নামে জালকৃত একটি পুস্তিকার উদ্ধৃতি। আসল নিমাতুল কুবরায় ওই রেওয়ায়াতগুলোর কোনো নামনিশানাও নেই। অতএব এই উদ্ধৃতি যোগ করা একটি নির্জলা প্রতারণা।

দুই. যাদের নামে মওলুদখানীর এসকল মনগড়া ফযীলত চালিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা মওলুদখানী উদ্ভাবিত হওয়ার অনেক আগের মানুষ। কেননা তারা মওলুদখানীর পুরানো বা মূল সংস্করণ মীলাদ মাহফিল উদ্ভাবিত হওয়ার কয়েকশ বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাহলে তারা কি কবর থেকে উঠে এসে  মওলুদখানীর ফযীলত বয়ান করে গেলেন?

যাদের নামে এই কথাগুলো চালানো হয়েছে তাদের মধ্যে ফখরুদ্দীন রাযী রাহ. ৬০৬ হিজরীতে  অর্থাৎ মীলাদ মাহফিলের শৈশবকালে ইন্তিকাল করেছেন। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ নেই যে, সে সময় হিরাত অঞ্চলে এই রেওয়াজ পৌঁছেছিল। এ অঞ্চলেই ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী শেষ বয়সে অবস্থান করেছিলেন। আর মওলুদখানী তো সেসময় পর্যন্ত অস্তিত্বই লাভ করেনি। ফখরুদ্দীন রাযী রহ. এর তাফসীরে  কাবীর এবং আরও অনেক কিতাব মুদ্রিত অবস্থায় রয়েছে। কিছু কিতাব পাণ্ডুলিপি আকারেও আছে। আলবাইয়্যিনাতওয়ালারা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে তাদের অবশ্য কর্তব্য হবে তার নামে বলা কথাগুলো তার নিজস্ব রচনাবলি থেকে কিংবা বিশুদ্ধ উদ্ধৃতিতে কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে  বের করে দেখানো।

তিন. আলবাইয়্যিনাত ওয়ালারা আননিমাতুল কুবরা’—নামে জালকৃত পুস্তিকাটির অনেকগুলো ফটোকপি তাদের দফতরে রেখেছে। তাদেরকে ওই রেওয়ায়াতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে কিংবা এ বিষয়ে কোনো কিতাব তালাশ করলে তারই এক কপি হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং এ সাইজের একটি পুস্তিকার সাধারণ মুল্যের  চেয়ে বেশি মূল্য আদায় করা হয়। ওই রকম একটি কপি আমার কাছেও রয়েছে। এটা সেই জালকৃত আন নিমাতুল কুবরা, যার আলোচনা বিগত সংখ্যায় করেছি। তবে এই কপিতে مكتبة ايشيق شارع دار الشفقة এই ঠিকানা লেখা আছে।

এই প্রকাশনীটিও مكتبة الحقيقة নামক প্রকাশনীর সমগোত্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং উভয়টিই ইস্তাম্বুলের ফাতিহ অঞ্চলে অবস্থিত।

এই বাঁধাইকৃত কপিটিতে  আরও দুটি জিনিস সংযুক্ত রয়েছে। একটি হল মীলাদ মাহফিলের বিধান প্রসঙ্গে জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ.-এর একটি পুস্তিকা। এ পুস্তিকার একটি হস্তলিখিত কপির ফটোকপি সেখানে সংযুক্ত আছে। অথচ এটি মুদ্রিত আকারে সুয়ূতী রাহ.-এর কিতাব আলহাভী-এর প্রথম খণ্ডে حسن المقصد في عمل المولد নামে প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মুদ্রিত কপির বদলে একটি হস্তলিখিত কপি থেকে কেন ফটোকপি নেওয়া হল তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। হস্তুলিখিত কপিটিতে জনৈক মুহাম্মাদ জুনাইদ ছীলানী এর নাম এবং ১/১১/১৯৭৬ তারিখ লেখা আছে। যাহোক যে কথাটি পাঠকবৃন্দের সামনে আরজ করতে চাই তা হল, আলবাইয়্যিনাতওয়ালারা তাদের আননিমাতুল কুবরা নামক পুস্তিকার উদ্ধৃতিতে সুয়ূতী রহ. এর নামে যে কথাগুলি চালানোর চেষ্টা করেছে তার নিজের রচিত পুস্তিকার কোথাও সেগুলোর অস্তিত্ব নেই। ওই পুস্তিাকায় বরং পরিষ্কার লেখা আছে যে, প্রচলিত মীলাদ মাহফিল বিদআত এবং এটাও লেখা আছে যে, সর্বপ্রথম বাদশা মুজাফফর উদ্দীন (মৃত্যু : ৬৩০ হি.) এটি উদ্ভাবন করেন। -আলহাভী ১/২৫১-২৫২, আল বাইয়্যিনাতওয়ালাদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত কপির ৭৫-৭৬, ৮০, ৮৮ পৃষ্ঠা

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই নবউদ্ভাবিত মীলাদ মাহফিল যদি সব ধরনের গর্হিত ও আপত্তিকর কার্যকলাপ থেকে মুক্ত থাকে তবে ইমাম সুয়ূতী একে বিদআতে হাসানা বলে মত প্রকাশ করেছেন। তার এ মত কতদূর সঠিক এটি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।

মীলাদ মাহফিল বা মওলুদখানী বিদআতে সাইয়িআহ কি বিদআতে হাসানা, এবং শরয়ী পরিভাষার কোনো বিদআতকে হাসানা নামে আখ্যায়িত করা  সঠিক কি না এ প্রসঙ্গ এ মুহূর্তে আমার আলোচ্য  বিষয় নয়। এখানে যে বিষয়টি প্রমাণ করা  উদ্দেশ্য  তা হল, এ কাজটি নব উদ্ভাবিত হওয়ার এবং সপ্তম  শতাব্দীর বিদআত হওয়ার ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই।

পাঠকমহল আশ্চর্যবোধ করবেন যে, এরা একদিকে খুলাফায়ে রাশেদীন, কয়েকজন বিশিষ্ট তাবেয়ী এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীর সুফিয়ায়ে কেরামের নামে মওলুদখানীর কিছু মনগড়া ফযীলত  একটি নকল পুস্তিকার উদ্ধৃতিতে বয়ান করছে অন্যদিকে এ পুস্তিকার সঙ্গে সুয়ুতী রহ. এর ওই রিসালাটি সংযুক্ত করছে যে রিসালায় তিনি মীলাদ অনুষ্ঠানকে সপ্তম শতাব্দীর  বিদআত বলে উল্লেখ  করেছেন। তাহলে কি তারা এটাই স্বীকার করে নিচ্ছে না যে, উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে মওলুদখানীর ফযীলত বিষয়ক যে রেওয়ায়াতগুলো তারা উল্লেখ করেছে তা সব সপ্তম শতাব্দীর পরের তৈরি অর্থাৎ মওজূ?

সুয়ূতী রহ.-এর উক্ত পুস্তিকায় একথাও বারবার উল্লেখিত হয়েছে যে, মীলাদ মাহফিলের বৈধতার জন্য তা সব ধরনের গর্হিত কার্যকলাপ থেকে মুক্ত থাকা অপরিহার্য। আজকালের মাহফিলগুলোতে  কি এ শর্ত রক্ষা করা হয়? অপব্যয় পর্দাহীনতা, ছবি ও গানবাজনা ইত্যাদি থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র  মীলাদ ও সীরাত সম্পর্কে ভিত্তিহীন ও মওজু রেওয়ায়াত বর্ণনা করা এবং নানা শিরকী কবিতা আবৃত্তি করা পর্যন্ত কোন কাজটি রয়েছে যা এসব মাহফিলে করা হয় না? এরপর এসবের সঙ্গে ঈদ শব্দ সংযুক্ত করে মুসলিম সমাজে দুই ঈদের সঙ্গে তৃতীয় ঈদের  উদ্ভাবন কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ও শিক্ষার প্রকাশ্য বিরোধিতা নয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন, মুসলমানদের ঈদ দুইটি ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (উদ্বৃতিসমূহের জন্য দেখুন আলকাউসার অক্টোবরনভেম্বর সংখ্যা, ০৬ ইং পৃ. ১৩-১৪)

হাবীবে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্মদিন সোমবারে রোযা রাখতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২/১৯৭-১৯৮

তাহলে রোযা আর ঈদ একত্রিত হয় কীভাবে?

এতো গেল একটি পুস্তিকার কথা। সেই বাঁধাইকৃত বইটিতে অন্তর্ভুক্ত দ্বিতীয় জিনিসটি হল মিসরের ইউসুফ নাবহানী রহ. কৃত জাওয়াহিরুল বিহার এর তৃতীয় খণ্ডের কয়েকটি পৃষ্ঠার ফটোকপি। আল্লাহর কি শান, এই পৃষ্ঠাগুলোতেও (পৃ. ৯২) পরিষ্কার লেখা রয়েছে

أول من أحدثه الملك المظفر صاحب إربل

অর্থাৎ সর্বপ্রথম এ বিষয়টি তথা মীলাদ-অনুষ্ঠান উদ্ভাবন করেন ইরবিল অঞ্চলের শাসক বাদশাহ মুজাফফর উদ্দীন। এই সংযুক্তির মাধ্যমেও আলবাইয়্যিনাত ওয়ালারা নিজেরাই তাদের সেই পুস্তিকার রেওয়ায়াতগুলো জাল ও ভিত্তিহীন হওয়ার ঘোষণা দিল। কেননা, এই রেওয়ায়াত গুলো সহীহ হলে মীলাদ মাহফিল ও মওলুদখানী সপ্তম শতাব্দীর বিদআত না হয়ে সাহাবী-তাবেয়ীযুগের সুন্নত হত। কিন্তু যখন তা নয়; বরং উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে এবং খোদ আলবাইয়্যেনাতওয়ালাদের স্বীকারোক্তি অনুসারেও মীলাদ-অনুষ্ঠান ও মওলুদখানী পরবর্তী যুগের উদ্ভাবিত বিদআত তাহলে এতে আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে, উল্লেখিত বর্ণনাগুলো মওজু তথা জাল। বস্তুত নিজেদের মিথ্যাচারের জালে যারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়ে তাদের মিথ্যাচার প্রমাণের জন্য আর কোনো দলীলের প্রয়োজন পড়ে না।

চতুর্থ কথা

চতুর্থ ও সর্বশেষ কথা হল এরা তাদের মনগড়া রেওয়ায়াতগুলোর সঙ্গে শুধু নকল আননিমাতুল কুববার উদ্ধৃতি সংযুক্ত করেছে অথচ প্রবন্ধের শেষে উৎসগ্রন্থ শিরোনামে চারটি গ্রন্থের নাম দিয়েছে।

-       আননিমাতুল কুবরা আলাল আলাম, ইবনে হাজার মক্কী

-      জামেউল ওয়াসাইল

-      সুবুলূল হুদা  ফি মাওলিদিল মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

-      সুবুলূল হুদা ওয়ার রাশাদ (টীকা : ১)

প্রথম কিতাব আননিমাতুল কুবরা সম্পর্কে তো আমি বিস্তারিত লিখেছি যে, এটি প্রকৃত আননিমাতুল কুবরা নয়; বরং এ নামের একটি জাল কিতাব। ইবনে হাজার মক্কী হাইতামী কৃত প্রকৃত আননিমাতুল কুবরার পাণ্ডলিপি দারুল কুতুবিল মিছরিইয়া, কায়রোতে সংরক্ষিত রয়েছে। আমাদের কাছে এর ফটোকপি  রয়েছে। সেই গ্রন্থে ওই সব রেওয়াতের নাম নিশানা ও নেই।

জামউল ওয়াসাইল নামে যে গ্রন্থটি প্রসিদ্ধ তা হল মোল্লা আলী ক্বারী রহ. কৃত শামাইলের ভাষ্য। এই গ্রন্থটি মিসর থেকে (১৩১৮ হি,) দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এরপর পাকিস্তান থেকেও মুদ্রিত হয়েছে। এই গ্রন্থটিও আমি আদ্যোপান্ত পড়েছি। এতেও  সে সব রেওয়ায়াতের চিহ্নমাত্র নেই। এরপর সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুসতফার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কী কিতাব এবং এর রচয়িতা কে তা আমাদের জানা নেই। হতে পারে এটিও প্রথমটির মতো আরেকটি জাল পুস্তিকা কিংবা জাল রেওয়ায়াতে পরিপূর্ণ কোনো অখ্যাত কেতাব। আলবাইয়্যিনাতওয়ালা দেরকে এ পুস্তিকা সম্পর্কে  জিজ্ঞেস করা হলেও তারা কিছু বলতে প্রস্তুত হয়নি। অপ্রাসঙ্গিক নানা কথা বলে পাশ কাটিয়ে গেছে। অনেক পীড়াপীড়ির পর তাদের একজন বলেছে যে, এটি সুয়ূতী রহ.-এর কিতাব। অথচ সুবুলুল হুদা নামক সুয়ূতী র.-এর যে কিতাব রয়েছে তা হল সিয়ার বিষয়ক, (কাশফুয যুনুন ২/৯৭৮) মীলাদ বিষয়ক নয়।

আর সুয়ূতী রহ. নিজেই যখন তার হুসনুল মাকসিদ নামক রচনায়  মীলাদকে সপ্তম শতাব্দীর আবিষ্কার বলেছেন তখন জালকৃত আননিমাতুল কুবরার উদ্বৃতিতে যে বর্ণনাগুলো সুয়ূতী রহ.-এর নামে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তা-যে তার কোনো কিতাবে থাকতে পারে না এতো বলাই বাহুল্য।

যাহোক যখন অকাট্য দলীল প্রমাণ দ্বারা এবং তাদের নিজেদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই উল্লেখিত রেওয়ায়াতগুলো মওজু প্রমাণিত, তখন সেগুলো সুবুলূল  হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা নামক কোনো  পুস্তিকায় বিদ্যমান বলে যদি ধরেও নেওয়া হয় তাতে কী আসে যায়? মওজু রেওয়াতগুলোতে কোনো না কোনো ভাষায় অথবা কোনো না কোনো কাগজে লিখিত থাকেই। তাতে কি এগুলো সহীহ হয়ে যায়। কোনো বর্ণনা সহীহ হওয়ার প্রথম শর্ত রেওয়ায়াতটির মতন (বক্তব্য) বাতেল না হওয়া, দ্বিতীয় শর্ত হল কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে গ্রহণযোগ্য সনদে উল্লেখিত হওয়া। যা ওই রেওয়াতগুলোতে বিদ্যমান নেই।

চতুর্থ গ্রন্থটি অর্থাৎ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ হল সীরাত বিষয়ে মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ সালেহী শামী ( মৃত্যু ৯৪২ হি.) এর রচনা। এর প্রথম খণ্ডে ৩৬২ থেকে ৩৭৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মীলাদ মাহফিলের আলোচনা রয়েছে। এখানেও স্পষ্ট উল্লেখিত আছে  যে, সর্বপ্রথম ইরবিল-শাসক বাদশা মুজাফফর উদ্দীন (মৃ. ৬৩০ হি.) একে উদ্ভাবন করেন। আলবাইয়্যিনাতওয়লাদের উল্লেখিত রেওয়ায়াতগুলোর কোনো নাম নিশানাও সেখানে নেই।

যে পত্রিকার একটি প্রবন্ধে একশ্বাসে এতগুলো মিথ্যা একত্রিত হতে পারে এবং হাদীসও  সীরাতের মতো নাযুক বিষয়ে  এত নির্জলা মিথ্যা বলা যেতে পারে সেই পত্রিকা এবং পত্রিকা ওয়ালাদের হাশর যে কার সাথে হবে তা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।

(টীকা : ১. উল্লেখ্য, এ কিতাবের নামের মধ্যে الرشاد শব্দটি  আলবাইয়্যিনাতে  الرشدরূপে লিখেছে। এটি কি মুদ্রন জনিত ভুল না আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত প্রয়াস তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।)

 

 

advertisement